Monday, November 30, 2015

মারেফত কী ও কেন?

মারেফত কী ও কেন?
আরবি ‘আরাফা’ শব্দ হতে মারেফত। আরাফা অর্থ হলো জানা, জ্ঞান লাভ করা। মারেফত অর্থ লব্ধ জ্ঞান। মারেফত দিয়ে
জগত ও জীবনের যে কোনো বিষয়ের সম্যক জ্ঞান জানা যায়। স্থুল দর্শন প্রকৃত দর্শন নয়, সূক্ষ্ম দর্শন প্রকৃত দর্শন। জ্ঞানীগণ
সূক্ষ্মতা অবলম্বন করে জীবন ও জগতকে দেখেন, ইহাই মারেফত। লোকেরা যাকে মারেফত বলে মনে করে, আসলে উহা
মারেফত নয়। কারণ অজ্ঞাত বিষয় জানাটাই মারেফত। অজ্ঞাত বিষয়টা অজ্ঞাত থেকে যায় বলে মারেফত জ্ঞান লাভ হয়
না। মারেফতের মূল কেন্দ্রভুমি আপন দেহ-মন। আপন দেহ-মনের পরিচয় পেলে মানুষ তার রবের পরিচয় পায়। রবের
পরিচয় পেলে সে তার সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও ধ্বংসকর্তার সম্যক পরিচয় লাভ করে। যতদিন পর্যন্ত মানুষ এই রবের
পরিচয় না পায়, ততদিন সে দুঃখচμের আবর্তে নিজের দুঃখ নিজে সৃজন করে ঘুরতে থাকে। এ জন্য কোরান বলছে,
ওয়াত্তাকু রাব্বাকুম তোমরা তোমাদের রব সম্বন্ধে সাবধান হও। ইহাই মারেফতের গোপন কথা।
অতএব, বাজারের বিতর্কমূলক তথাকথিত শরিয়তের ধোঁকায় পড়ে পরস্পর আত্মকলহে লিপ্ত হয়ো না। আপন দেহ
হতে আপন রবের মারেফতের দ্বার উদঘাটন করে আল কেতাবের শরিয়ত বুঝে লও, তবেই সকল বিতর্কের অবসান ঘটবে।
মারেফতের গোপন কথা আসলে গোপন নয়। সম্যক গুরুর প্রতি ভক্তিযোগ অথবা জ্ঞানযোগের পথ ধরলেই গোপন কথার
তালা খুলে আল কেতাবের দ্বার খুলে যাবে।
ভালো করে জেনে রাখুন
হাল আমলে বিশেষ করে কিছু মাদ্রাসায় পাস করা আলেম এবং মুফতিরা কথায় কথায় সরল মুসলমান ভাইদেরকে কাফের
ফতোয়া দিয়ে বসেন। অথচ তারা জানেন না যে, ফতোয়া-এ দারুল উলুম (৪৪০/১২)-এ ফতোয়া বিষয়ে কী উপদেশ দিয়ে
সাবধান করে দেওয়া হয়েছে : ‘কাফের ফতোয়া দেবার প্রশড়ব উঠলে দেখতে হবে যে, যদি শতকরা নিরানব্বই ভাগ কাফের
বলার অবকাশ থাকে, কিন্তু মাত্র এক ভাগ কাফের না বলার সম্ভাবনা থাকে, তবে অবশ্যই মুফতি এবং কাজি কাফের
ফতোয়া দিতে পারবে না।’ আদ দুরুল মুখতার নামক ফতোয়ার কেতাবের মুর্তাদ অধ্যায়ের (৩৯৯/৩) ফতোয়াতে স্পষ্ট বলা
হয়েছে যে, ‘কাফের ফতোয়া দেবার যদি অনেক কারণও থাকে, তবুও যদি মাত্র একটি কারণ কাফের না হবার জন্য বাহির
করা যায়, তা হলে কোনো মতেই মুফতি এবং কাজি কাফের ফতোয়া দিতে পারবেন না।’ এটা অত্যন্ত বেদানাদায়ক একটি
বিষয় যে, ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত কিছু আলেমরা একে অপরের উপর যা-তা মন্তব্য করে গেছেন। যেমন আমাদের সুনিড়ব
জামাতের হজরত ইমাম আবু হানিফা-কে তারিখ-ই খতিব নামক কেতারের লেখক খতিব বাগদাদি দাজ্জাল বলেছেন।
হজরত ইউসুফ সাউরি জঘন্য এবং অপাঠ্য সমালোচনা করে গেছেন ইমাম আবু হানিফা-কে। এ রকমভাবে হজরত ইমাম
মালিক-কে কঠোর সমালোচনা করেছেন মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক এবং ইবনে আবি জিব। হজরত ইমাম শাফেয়িকে ইবনে
মুইন। ইত্যাদি বহু নমুনা তুলে ধরা যায়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, হানাফিরা শাফেয়িদেরকে, আবার শাফেয়িরা হানাফিদেরকে যেমন কঠোর সমালোচনা
করেছেন, তেমনি মালেকিরা হাম্বলিদের এবং হাম্বলিরা উপরে বর্ণিত তিন মহান ইমামদেরকে কঠোর সমালোচনা করেছেন
এবং একে অপরকে গোমরাহ বলেছেন।
মহানবির প্রিয় সাহাবা এবং আপন চাচাত ভাই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সুন্দর একটি উপদেশ দিয়ে
গেছেন এই বলে যে, ‘যেখানেই জ্ঞান পাবে তা অর্জন করে নিও। আর ফেকাহ্ শাস্ত্রের পন্তিতদের ঝগড়া এবং সমালোচনা
গ্রহণ করতে যেও না। কারণ, এরা খোঁয়াড়ে বাস করা মানুষরূপী ভেড়ার দল। এরা একে অন্যের উপর চড়াও হয়।’

No comments:

Post a Comment