Monday, November 30, 2015

জাকাত

জাকাত


শরিয়তের বিধান মোতাবেক বছরের মোট সম্পদ বা অর্থের উদ্বৃত্তের উপর নির্দিষ্ট শতকরা হারে গরিব মিসকিনকে টাকা-পয়সা
সম্পদের দানকে জাকাত বলে। এ প্রকার জাকাতের বিধান ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। জাকাতের এ বিধানটি ইসলাম ধর্মে
পালনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন আলাহ কোরানুল মাজিদ-এ। গরিব দুঃখী-কাঙাল মানুষ জাকাতের এরূপ অর্থ দ্বারা তাদের দুঃখ
কিছুটা হলেও লাঘব করতে সমর্থ। ইসলামের এই জাকাতের বিধানটি আমাদের অতি সম্মানের চোখে দেখতেই হবে। সকল
মুসলিম নর-নারীকে আলাহর সন্তুষ্টি ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের জন্য এ জাকাতের যথাযথ আদায় অবশ্যই কর্তব্য এবং এতে
দেশের কল্যাণ নিহিত।
হাকিকতে জাকাতের বিধান শুধুমাত্র অর্থের নয়, বরং অর্থের পাশাপাশি মনের মধ্যে জমে থাকা বা আশ্রিত থাকা লোভ-মোহ
বর্জন করাকে বুঝায়। মনের মধ্যে যে অতি লোভনীয় বিষয়সমূহ প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে বিভিনড়বমুখী অপ্রয়োজনীয় দিকে মনকে
বিভক্ত করে তা বর্জন অথবা বাদ দেয়ার নাম হাকিকতের জাকাত। এক কথায় মানবীয় আমিত্বের উৎসর্গের নাম জাকাত।
বস্তুগত কোনো দান, যেমন : টাকা-পয়সা কিংবা অর্থের দানকে হাকিকতে জাকাত হিসাবে গণ্য করা হয় না। শরিয়ত
মোতাবেক যে জাকাতের বিধান রয়েছে তা দ্বারা সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্য হয় একথা অকপটে স্বীকার করতে হবে,
কিন্তু নিজের চরিত্র রচনা করা তথা শুদ্ধি হওয়ার জন্য হাকিকতি জাকাত হতে হয়। তবে শরিয়তি জাকাত ও হাকিকতি যে
জাকাত এই দু’প্রকার জাকাতের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মানুষের মধ্যে হাজারও কু-চাহিদা আঠার মতো লেগেই
থাকে। এ প্রকার খারাপ চাহিদা মন হতে আলাদা তথা বাদ দেয়া সাধকের কর্তব্য। মুক্তির জন্য এসব লোভ-মোহ মুছে ফেলা
কিংবা বাদ দিতে সক্ষম না হলে মানুষের লোভের মাত্রা দিন দিন শুধু বেড়েই যায়। মনের মধ্যে এরূপ লোভ মোহযুক্ত খারাপ
বিষয়সমূহ সহজে বাদ দেওয়া সম্ভব হয় না। এ প্রকার জাকাত মন হতে দিতে হলে মনের সাধনা করা প্রয়োজন আর প্রয়োজন
একজন কামেল গুরু বা মোর্শেদের।
উভয় প্রকার জাকাতের প্রয়োজন। সমাজ গঠনের জন্য অর্থগত জাকাত আর নিজের মনের মধ্যে লাগামহীন চাহিদা, লোভ-
মোহ দূর করতে গুরু বা মোর্শেদ প্রদত্ত সাধনা প্রয়োজন। উভয় প্রকার জাকাতের সেতুবন্ধন হওয়া প্রয়োজন।
আমি যদি অন্যায়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করেই যাই অথবা লোভকে লাগাম না দিয়ে অর্থ পেতেই চাই অথবা পেয়েই ঐ সকল
অবৈধ ধন-রতেড়বর শরিয়ত মোতাবেক জাকাত দিয়েই যাই তবে গরিব-দুঃখী-কাঙাল মানুষের দুঃখ লাঘব তথা দূর করতে সমর্থ
হবো, কিন্তু নিজের আত্মশুদ্ধির পথে কোনো উপকারই হবে না। যার কারণে বড় বড় মুনি ঋষিগণ অর্থের জাকাতের চেয়ে বরং
মনের মধ্যে যে লাগামহীন চাহিদা অদৃশ্য শিকলে বন্দি হয়ে আছে বা শিকলে আবদ্ধ হতে চায় সেগুলোকে গুরুসাধনা দ্বারা বাদ
দেয়াকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। যে সাধক তার জন্য এ প্রকার জাকাতের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাকাতের সাথে সালাতের এক
গভীর সম্পর্ক আছে, যার কারণে কোরান-এ সালাত ও জাকাতের বর্ণনা এক সঙ্গে আসছে। পরিশেষে আবার বলতে চাই যে,
হাকিকি জাকাতটি তখনই হয়, যখন মোর্শেদপ্রদত্ত মোরাকাবা-মোশাহেদা করে। মনের লোভ-মোহ দূর করে মনকে জঞ্জালমুক্ত
করাই জাকাত।
হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র.), আমরা যাঁকে খাজা বাবা বলে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি, তাঁর রচিত
কেতাব দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিন (অনুবাদ করেছেন সম্মানিত জেহাদুল ইসলাম ও ড. সাইফুল ইসলাম খান)-এ জাকাত সম্পর্কে
নবিজির হাদিসের জ্ঞানগভীর ব্যাখ্যা পাই জাকাতের হাকিকত সম্পর্কে এবং তা হলো উক্ত কেতাবের ৪৪২ পৃষ্ঠা এবং জাকাত
সম্পর্কে উক্ত কেতাবের কিছু ব্যাখ্যা নিমড়বরূপ :
জাকাতের হাকিকত
[রাসুল (সা.) আরো বলেন] কাজেই বান্দার প্রধান কর্তব্য হলো নফসানিয়াতের অন্ধকার থেকে মুক্তি অর্জন করে মারেফতে
এলাহি মোতাবেক আকল ও আজাদি হাসেল করা। এতে সে জাকাতে হাকিকি আদায় করার উপযুক্ততা লাভ করবে। শরিয়ত
যে জাহেরি জাকাত ফরজ করেছে তার উদ্দেশ্য হলো ধনী ব্যক্তিগণ জাকাতের অসিলায় গরিব-আতুর ও মিসকিনকে সাহায্য
করবে এবং এতে তাদের অভাব কথঞ্চিত লাঘব হবে।




---ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা -ঈমান আল সুরেশ্বরী।

No comments:

Post a Comment