আদমকে বলা হলো " ইয়া আদামু আম্বিহুম বিআসমাইহিম, ফালাম্মা আনবাআহুম বিআসমাঈহিম "
অর্থঃ " হে আদম, উহাদিগকে ইহাদের নাম বলিয়া দাও । সুতরাং সে উহাদিগের নাম বলিয়া দিলো
" ।
এবার মহান রাব্বুল আলামিন, ফেরেশতাদেরকে বললেন ' উসজুদু লি আদামা ' অর্থঃ ' আদমের জন্য ( বা আদমকে ) সেজদা কর '
। ' ফাসজুদু ইল্লা ইবলিশা
' অর্থঃ ' সুতরাং তাহারা সেজদা
করিল ইবলিশ ব্যাতীত ' । ফেরেশতাদের সমক্ষে আদম শ্রেষ্ঠতর প্রমাণিত হওয়ার পরই ফেরেশতাদেরকে বলা হলো '
আদমকে সেজদা কর '
। অধম উত্তমের অনুগত
হবে এটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত । হযরত আদম (আঃ) স্বয়ং রাব্বুল আলামীনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে
তাঁরই প্রদত্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ফেরেশতাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী ছিলেন । সেই জ্ঞানী ব্যক্তিটি
কেমন করে তাঁর চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম জ্ঞানে জ্ঞানী ইবলিশের কুমন্ত্রণা গ্রহন করতে পারলেন
? আরো প্রশ্ন আসে,
এখানকার জ্ঞানী আদম
ও প্রথম সৃষ্ট আদম ( যিনি আপন দেহস্থ একটি বিশেষ অঙ্গের ব্যবহার সন্মন্ধেও অজ্ঞ ছিলেন
) তারা কি একই ব্যক্তিত্ব ? যা' হোক ইবলিশ আদমকে সেজদা না-করাতে মহান আল্লাহ্ পাক ইবলিশকে বললেন,
" মা সানাআকা আল্লা তাসজুদা
ইজ আমরতুক " । অর্থঃ " আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম,
তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করিল যে, সেজদা করিলে না ? " জবাবে ইবলিশ বললো ; " আনা খাইরুম মিনহু খালাকতানি
মিন নারিউঁ ওয়া খালাকতাহু মিন তীন " । অর্থঃ " আমি তাঁহার অপেক্ষা শ্রেয়, আমাকে অগ্নি দ্বারা
সৃষ্টি করিয়াছ এবং তাহাকে সৃষ্টি করিয়াছ মাটি দ্বারা "। ইবলিশ অহংকার করলো । তার ধারণামতে মাটির চেয়ে আগুনের মর্যাদা অধিক
। ধারনা করা যায়,
ইবলিশের এমন জ্ঞান
ছিলো না যে, বস্তু নয়,- মর্যাদা হলো বস্তুর গুণের । বস্তুর গুনেই বস্তু মর্যাদা প্রাপ্ত হয় । আদম মাটির তৈরি হলেও
তাঁর গুন যে ইবলিশের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর তা'তো ইতিমধ্যেই প্রমাণিত । অগ্নির ধর্ম দহন করা আর মাটির ধর্ম সয়ে যাওয়া
। আদম আল্লাহ্র গুনে
গুণান্বিত হয়ে সে হয়ে গেছে মৃত্তিকার মতো সহনশীল । অগ্নি দহন করে ও ধ্বংস করে, আর মৃত্তিকা করে সৃষ্টি
ও উৎপাদন । ধ্বংসের চেয়ে সৃষ্টি ভালো । সুতরাং মৃত্তিকার মর্যাদা অগ্নির চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নিঃসন্দেহে
। এ অবস্থায় মহান রাব্বুল
আলামীন বললেনঃ ' ফাহবিত্ব মিনহা ' অর্থাৎ, ' এখান থেকে নামিয়া যাও ' । প্রশ্ন উদয় হয়, কোথা থেকে কোথায় নেমে যাবে ? সে কি কোনো উঁচু স্থান হতে নিচু স্থানে নেমে
যাবে ? আল্লাহ্র নির্দেশ মোতাবেক ইবলিশ নেমে যাবে এটাইতো অনিবার্য । কারন এই মহাবিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের
মালিক আল্লাহ্ । দ্বিতীয় আরেকটি আল্লাহ্ নেই যে, তার নির্দেশ অমান্য করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে ? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়
কোরআন মোতাবেক আমরা দেখতে পাই যে, পরবর্তীতে এই অহংকারী ইবলিশ শয়তানকেও আদম-হাওয়ার সাথে বেহেশতে
বা জান্নাতে স্থান দেয়া হলো ! । হাকিকত হলোঃ- আল্লাহ্র নির্দেশের বাইরে যাবার ক্ষমতা কারো নেই
। ইবলিশকে অবশ্যই নেমে
যেতে হয়েছিল, তাকে এমন এক নিন্মস্তরের জীবে নেমে যেতে হয়েছিলো যাকে বুকে হেঁটে চলতে হয় । এ বিষয়টি পবিত্র বাইবেলের
আদি পুস্তকে নিন্মোক্তভাবে বর্ণিত আছেঃ- " পরে সদাপ্রভু ইশ্বর কহিলেন;
তুমি এই কর্ম করিয়াছ
এই জন্য গ্রাম্য ও বন্যপশুদের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক শাপগ্রস্থ, তুমি বুকে হাঁটিবে
এবং যাবজ্জীবন ধুলি ভোজন করিবে । আর আমি তোমাতে ও নারীতে এবং তোমার বংশ ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা
জন্মাইব, সে তোমার মস্তক চুর্ন করিবে এবং তুমি তাহার পাদমূল চুর্ন করিবে " ( আদি পুস্তক
৩;১৪-১৫ )। ইবলিশ শাপগ্রস্থ হলো
এবং নিন্ম পর্যায়ের জীবে পরিণত হয়ে আদম-হাওয়ার সাথে জান্নাতে বা এদন উদ্যানে বসবাস
করতে ছিলো । তার বংশধারা এখনো পৃথিবীর মাটিতে ঝুপ-জঙ্গলে ও বনে- বাদারে
বুকে হেঁটে বেড়ায় । লোকালয়ে দৃষ্ট হলেই
মানুষ তাদের মস্তক চুর্ন করে । মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ মোতাবেক আদমকে সেজদা না-করার
অপরাধে বলা হলোঃ ' ফাখরুজু ইন্নাকা মিনাল খাসেরিন ' অর্থঃ ' সুতরাং বাহির হইয়া যাও, তুমি অধমদিগের অন্তর্ভুক্ত ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
। ইবলিশ বললো ;
' আনজিরনি ইলা ইয়াওমি
ইউবআছুন ' অর্থঃ " পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও " ( ইসঃ ফাঃ ) । আবেদনের প্রেক্ষিতে
আল্লাহ্ বললেনঃ " ইন্নাকা মিনাল মুনজেরিন " অর্থঃ " যাহাদিগকে অবকাশ
দেওয়া হইয়াছে তুমি তাহাদিগের অন্তর্ভুক্ত হইলে " ( ইসঃ ফাঃ )। এখানে অন্তর্ভুক্তির
বিষয়টি লক্ষ্যনীয় । অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তখনই আসতে পারে যখন, যে-বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে সে বিষয়টি পুর্ব
থেকেই বিদ্যমান । হঠাৎ করে তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্ট বা গজিয়ে উঠা বিষয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন উঠতে পারে
না । সুরা ' আরাফ ' এর ১৫ নম্বর আয়াতে
বলা হয়েছেঃ " যাহাদিগকে অবকাশ দেওয়া হইয়াছে তুমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইলে
" । তা'হলে ধারনা করা যায়, এরকম অবকাশ দেয়ার ঘটনা আরো ঘটেছে এবং থেকেই ঘটে চলেছে । ইবলিশের ঘটনাটি তখনকার
জন্য সর্বশেষ একটি ঘটনা মাত্র । তা'হলে কি আমরা এমন ধারনা নিতে পারি যে, পৃথিবীতে
মানুষের আবাদ শুরু হয়েছে আরো অনেক আগে
থেকেই ? এরকম আরো আদম ও ইবলিশের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে ? আমরা কি এমন ধারনা নিতে পারি যে, মধ্যযুগীয় এক জ্ঞানী
আদম ও ইবলিশকে আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ ? হযরত আদমকে বলা হলোঃ
" ইয়া আদামুছকুন আনতা ওয়া যাউজাকাল জান্নাত " অর্থঃ " হে আদম তুমি তোমার
সঙ্গিনী সহ জান্নাতে বসবাস কর । " কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ অমান্য করে
হযরত আদমকে সেজদা না করার অপরাধে যে- ইবলিশ শয়তানকে বলা হয়েছিলো ; " ইন্নাকা মিনাল কাফেরিন
" অর্থঃ " তুমি অবশ্যই কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত " সেই কাফেরকেই আদম-হাওয়ার
সাথেই জান্নাতে বসবাস করতে দেয়া হলো । অথচ বিধান মোতাবেক জান্নাত কাফেরদের স্থান হতে পারে না !...।।
No comments:
Post a Comment