Saturday, November 28, 2015

আদমকে বলা হলো


আদমকে বলা হলো " ইয়া আদামু আম্বিহুম বিআসমাইহিম, ফালাম্মা আনবাআহুম বিআসমাঈহিম "

অর্থঃ " হে আদম, উহাদিগকে ইহাদের নাম বলিয়া দাও সুতরাং সে উহাদিগের নাম বলিয়া দিলো "

এবার মহান রাব্বুল আলামিন, ফেরেশতাদেরকে বললেন ' উসজুদু লি আদামা ' অর্থঃ ' আদমের জন্য ( বা আদমকে ) সেজদা কর ' ' ফাসজুদু ইল্লা ইবলিশা ' অর্থঃ ' সুতরাং তাহারা সেজদা করিল ইবলিশ ব্যাতীত ' ফেরেশতাদের সমক্ষে আদম শ্রেষ্ঠতর প্রমাণিত হওয়ার পরই ফেরেশতাদেরকে বলা হলো ' আদমকে সেজদা কর ' অধম উত্তমের অনুগত হবে এটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত হযরত আদম (আঃ) স্বয়ং রাব্বুল আলামীনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাঁরই প্রদত্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ফেরেশতাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী ছিলেন সেই জ্ঞানী ব্যক্তিটি কেমন করে তাঁর চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম জ্ঞানে জ্ঞানী ইবলিশের কুমন্ত্রণা গ্রহন করতে পারলেন ? আরো প্রশ্ন আসে, এখানকার জ্ঞানী আদম ও প্রথম সৃষ্ট আদম ( যিনি আপন দেহস্থ একটি বিশেষ অঙ্গের ব্যবহার সন্মন্ধেও অজ্ঞ ছিলেন ) তারা কি একই ব্যক্তিত্ব ? যা' হোক ইবলিশ আদমকে সেজদা না-করাতে মহান আল্লাহ্‌ পাক ইবলিশকে বললেন, " মা সানাআকা আল্লা তাসজুদা ইজ আমরতুক " অর্থঃ " আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম,

তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করিল যে, সেজদা করিলে না ? " জবাবে ইবলিশ বললো ; " আনা খাইরুম মিনহু খালাকতানি মিন নারিউঁ ওয়া খালাকতাহু মিন তীন " অর্থঃ " আমি তাঁহার অপেক্ষা শ্রেয়, আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছ এবং তাহাকে সৃষ্টি করিয়াছ মাটি দ্বারা "ইবলিশ অহংকার করলো তার ধারণামতে মাটির চেয়ে আগুনের মর্যাদা অধিক ধারনা করা যায়, ইবলিশের এমন জ্ঞান ছিলো না যে, বস্তু নয়,- মর্যাদা হলো বস্তুর গুণের বস্তুর গুনেই বস্তু মর্যাদা প্রাপ্ত হয় আদম মাটির তৈরি হলেও তাঁর গুন যে ইবলিশের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর তা'তো ইতিমধ্যেই প্রমাণিত অগ্নির ধর্ম দহন করা আর মাটির ধর্ম সয়ে যাওয়া আদম আল্লাহ্‌র গুনে গুণান্বিত হয়ে সে হয়ে গেছে মৃত্তিকার মতো সহনশীল অগ্নি দহন করে ও ধ্বংস করে, আর মৃত্তিকা করে সৃষ্টি ও উৎপাদন ধ্বংসের চেয়ে সৃষ্টি ভালো সুতরাং মৃত্তিকার মর্যাদা অগ্নির চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নিঃসন্দেহে এ অবস্থায় মহান রাব্বুল আলামীন বললেনঃ ' ফাহবিত্ব মিনহা ' অর্থাৎ, ' এখান থেকে নামিয়া যাও ' প্রশ্ন উদয় হয়, কোথা থেকে কোথায় নেমে যাবে ? সে কি কোনো উঁচু স্থান হতে নিচু স্থানে নেমে যাবে ? আল্লাহ্‌র নির্দেশ মোতাবেক ইবলিশ নেমে যাবে এটাইতো অনিবার্য কারন এই মহাবিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মালিক আল্লাহ্‌ দ্বিতীয় আরেকটি আল্লাহ্‌ নেই যে, তার নির্দেশ অমান্য করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে ? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কোরআন মোতাবেক আমরা দেখতে পাই যে, পরবর্তীতে এই অহংকারী ইবলিশ শয়তানকেও আদম-হাওয়ার সাথে বেহেশতে বা জান্নাতে স্থান দেয়া হলো ! হাকিকত হলোঃ- আল্লাহ্‌র নির্দেশের বাইরে যাবার ক্ষমতা কারো নেই ইবলিশকে অবশ্যই নেমে যেতে হয়েছিল, তাকে এমন এক নিন্মস্তরের জীবে নেমে যেতে হয়েছিলো যাকে বুকে হেঁটে চলতে হয় এ বিষয়টি পবিত্র বাইবেলের আদি পুস্তকে নিন্মোক্তভাবে বর্ণিত আছেঃ- " পরে সদাপ্রভু ইশ্বর কহিলেন; তুমি এই কর্ম করিয়াছ এই জন্য গ্রাম্য ও বন্যপশুদের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক শাপগ্রস্থ, তুমি বুকে হাঁটিবে এবং যাবজ্জীবন ধুলি ভোজন করিবে আর আমি তোমাতে ও নারীতে এবং তোমার বংশ ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব, সে তোমার মস্তক চুর্ন করিবে এবং তুমি তাহার পাদমূল চুর্ন করিবে " ( আদি পুস্তক ৩;১৪-১৫ )ইবলিশ শাপগ্রস্থ হলো এবং নিন্ম পর্যায়ের জীবে পরিণত হয়ে আদম-হাওয়ার সাথে জান্নাতে বা এদন উদ্যানে বসবাস করতে ছিলো তার বংশধারা এখনো পৃথিবীর মাটিতে ঝুপ-জঙ্গলে ও বনে- বাদারে

 বুকে হেঁটে বেড়ায় লোকালয়ে দৃষ্ট হলেই মানুষ তাদের মস্তক চুর্ন করে মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ মোতাবেক আদমকে সেজদা না-করার অপরাধে বলা হলোঃ ' ফাখরুজু ইন্নাকা মিনাল খাসেরিন ' অর্থঃ ' সুতরাং বাহির হইয়া যাও, তুমি অধমদিগের অন্তর্ভুক্ত ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ইবলিশ বললো ; ' আনজিরনি ইলা ইয়াওমি ইউবআছুন ' অর্থঃ " পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও " ( ইসঃ ফাঃ ) আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ বললেনঃ " ইন্নাকা মিনাল মুনজেরিন " অর্থঃ " যাহাদিগকে অবকাশ দেওয়া হইয়াছে তুমি তাহাদিগের অন্তর্ভুক্ত হইলে " ( ইসঃ ফাঃ )এখানে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি লক্ষ্যনীয় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তখনই আসতে পারে যখন, যে-বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে সে বিষয়টি পুর্ব থেকেই বিদ্যমান হঠাৎ করে তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্ট বা গজিয়ে উঠা বিষয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন উঠতে পারে না সুরা ' আরাফ ' এর ১৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ " যাহাদিগকে অবকাশ দেওয়া হইয়াছে তুমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইলে " তা'হলে ধারনা করা যায়, এরকম অবকাশ দেয়ার ঘটনা আরো ঘটেছে এবং থেকেই ঘটে চলেছে ইবলিশের ঘটনাটি তখনকার জন্য সর্বশেষ একটি ঘটনা মাত্র তা'হলে কি আমরা এমন ধারনা নিতে পারি যে, পৃথিবীতে

 মানুষের আবাদ শুরু হয়েছে আরো অনেক আগে থেকেই ? এরকম আরো আদম ও ইবলিশের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে ? আমরা কি এমন ধারনা নিতে পারি যে, মধ্যযুগীয় এক জ্ঞানী আদম ও ইবলিশকে আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ ? হযরত আদমকে বলা হলোঃ " ইয়া আদামুছকুন আনতা ওয়া যাউজাকাল জান্নাত " অর্থঃ " হে আদম তুমি তোমার সঙ্গিনী সহ জান্নাতে বসবাস কর । " কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ অমান্য করে হযরত আদমকে সেজদা না করার অপরাধে যে- ইবলিশ শয়তানকে বলা হয়েছিলো ; " ইন্নাকা মিনাল কাফেরিন " অর্থঃ " তুমি অবশ্যই কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত " সেই কাফেরকেই আদম-হাওয়ার সাথেই জান্নাতে বসবাস করতে দেয়া হলো অথচ বিধান মোতাবেক জান্নাত কাফেরদের স্থান হতে পারে না !...।।

No comments:

Post a Comment