মাযার নির্মান সম্পর্কে কোন দলিল আছে কি?
উত্তর:-
★ মাযার নির্মান সম্পর্কে স্পষ্ট দলিল:-
♦কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে,
এবং এভাবে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন এই সব লোক তাদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর তারা বল্লো, ’তাদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ করো! তাদের রব (খোদা)-ই তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল তারা বল্লো, ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।”
— সূরা কাহাফ, ২১ আয়াত]
♦তাফসীরে কবীর
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন,
কেউ কেউ (ওদের মধ্যে) বলেন যে গুহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে আসহাবে কাহাফ আড়ালে গোপন থাকতে পারেন। আরও কিছু মানুষ বলেন, গুহার দরজায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। তাঁদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে এই মানুষগুলো ছিলেন ’আল্লাহর আরেফীন (আল্লাহ-জ্ঞানী), যাঁরা এক আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে বিশ্বাস করতেন এবং নামাযও পড়তেন’।
— তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠ
♦ইমাম রাযী (রহ:) আরও লেখেন:
এবং আল্লাহর কালাম – ‘(এ বিষয়ে) যারা ক্ষমতাশালী’ বলতে বোঝানো হয়ে থাকতে পারে ‘মুসলমান শাসকবৃন্দ’, অথবা আসহাবে কাহাফ (মো’মেনীন)-এর বন্ধুগণ, কিংবা শহরের নেতৃবৃন্দ। ‘আমরা নিশ্চয় তাদের স্মৃতিস্থানের ওপরে মসজিদ নির্মাণ করবো’ – এই আয়াতটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে, ‘আমরা যাতে সেখানে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি এবং এই মসজিদের সুবাদে আসহাবে কাহাফ তথা গুহার সাথীদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করতে পারি’।
— তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা
অতএব, যারা মাযার-রওযা ধ্বংস করে এবং আল্লাহর আউলিয়াবৃন্দের প্রতি বিদ্বেষভাব প্রদর্শন করে, তারা কুরআন মজীদের সূরা কাহাফে বর্ণিত উপরোক্ত সুস্পষ্ট আয়াতের সরাসরি বিরোধিতা করে। অথচ কুরআন মজীদ স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে যে আউলিয়া কেরাম (রহ:)-এর মাযার-রওযা নির্মাণ ও তাঁদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ বৈধ।
মদীনা মোনাওয়ারায় মহানবী (দ:) এবং সর্ব-হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (রা:) ও উমর ফারূক (রা:)-এর রওযা মোবারক সবুজ গুম্বজের নিচে সুশোভিত আছে। সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-ই এই রওযাগুলো নির্মাণ করেন যা শরীয়তের দলিল।
♦তাফসীরে জালালাইন’ শিরোনামের বিশ্বখ্যাত সংক্ষিপ্ত ও সহজে বোধগম্য আল-কুরআনের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থে ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) ও আল-মোহাল্লী (রহ:) লেখেন:
(মানুষেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল), অর্থাৎ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীরা (ওই) তরুণ (আসহাবে কাহাফ)-দের বিষয়ে বিতর্ক করছিল যে তাঁদের পার্শ্বে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করা যায় কি-না। এমতাবস্থায় অবিশ্বাসীরা বলে, তাঁদেরকে ঢেকে দেয়ার জন্যে ইমারত নির্মাণ করা হোক। তাঁদের প্রভু-ই তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। কিন্তু যে মানুষেরা ওই তরুণ আসহাবে কাহাফের বিষয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিলেন, মানে বিশ্বাসীরা, তারা বল্লেন, আমরা তাঁদের পার্শ্বে এবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবো। আর এটি গুহার প্রবেশপথে প্রকৃতই নির্মিত হয়েছিল।
— তাফসীর আল-জালালাইন, ১ম খণ্ড, ৩৮৯ পৃষ্ঠ
♦ইমাম নাসাফী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে নাসাফী’ পুস্তকে লেখেন:
যারা (আসহাবে কাহাফের বিষয়ে) প্রভাবশালী ছিলেন, তারা মুসলমান এবং শাসকবর্গ; এরা বলেন যে গুহার প্রবেশপথে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন, যাতে ‘মুসলমানবৃন্দ সেখানে এবাদত-বন্দেগী করতে পারেন এবং তা (স্মৃতিচিহ্ন) থেকে বরকত আদায় করতে সক্ষম হন’।
— তাফসীর আল-নাসাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮ পৃষ্ঠা
মাযার নির্মানের আরো evidance:-
♦ ইমাম শেহাবউদ্দীন খাফফাজী (রহ:) লেখেন:
(গুহামুখে মসজিদ নির্মাণ) সালেহীন তথা পুণ্যাত্মাবৃন্দের মাযার-রওযার পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণের প্রামাণিক দলিল, যেমনটি উল্লেখিত হয়েছে ‘তাফসীরে কাশশাফ’ পুস্তকে; আর এই দালানের ভেতরে এবাদত-বন্দেগী করা ’জায়েয’ (বৈধ)।”
— ইমাম খাফফাজী কৃত ‘এনায়াতুল কাদী’, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা; দারুস্ সাদির, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত
♦ ইমাম মোহাম্মদ বিন হাসান শায়বানী (রহ:) বলেন,
হযরত ইমাম আবূ হানিফাহ (রহ:) আমাদের জানিয়েছেন এই বলে যে সালিম আফতাস্ আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন: ‘এমন কোনো নবী নেই যিনি কা’বা শরীফে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে নিজ জাতিকে ছেড়ে আসেন নি; আর এর আশপাশে ৩০০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান’।”
— ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’; লন্ডনে Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত; ১৫০ পৃষ্ঠ
♦ ইমাম শায়বানী (রহ:) আরও বলেন,
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) আমাদেরকে জানিয়েছেন এই বলে যে হযরত আতা’ বিন সায়েব (রা:) আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন, ‘আম্বিয়া সর্ব-হযরত হুদ (আ:), সালেহ (আ:) ও শোয়াইব (আ:)-এর মাযার-রওযা মসজিদে হারামে অবস্থিত’।
— ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’
♦ ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন:
মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।
— তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯
♦ মোল্লা আলী কারী ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন:
যে ব্যক্তি কোনো সত্যনিষ্ঠ বোযর্গ বান্দার মাযারের সন্নিকটে মসজিদ নির্মাণ করেন, কিংবা ওই মাযারে (মাক্কবারা) এবাদত-বন্দেগী করেন, অথবা উক্ত বোযর্গের রূহ মোবারকের অসীলায়
(মধ্যস্থতায়) সাহায্য প্রার্থনা করেন, বা তাঁর রেখে যাওয়া কোনো বস্তু থেকে বরকত তথা আশীর্বাদ অন্বেষণ করেন, তিনি যদি (এবাদতে) ওই বোযর্গকে তা’যিম বা তাওয়াজ্জুহ পালন না করেই এগুলো করেন, তবে এতে কোনো দোষ বা ভ্রান্তি নেই। আপনারা কি দেখেননি, মসজিদে হারামের ভেতরে হাতীম নামের জায়গায় হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর রওযা শরীফ অবস্থিত? আর সেখানে এবাদত-বন্দেগী পালন করা অন্যান্য স্থানের চেয়েও উত্তম। তবে কবরের কাছে এবাদত-বন্দেগী পালন তখনই নিষিদ্ধ হবে, যদি মৃতের নাজাসাত (ময়লা) দ্বারা মাটি অপবিত্র হয়ে যায়। ….হাজর আল-আসওয়াদ (কালো পাথর) ও মিযা’য়াব-এর কাছে হাতীম জায়গাটিতে ’৭০জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা’ বিদ্যমান।”
— মিরক্কাত শরহে মিশক্কাত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা
♦ ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন:
মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।
— তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯
♦ ইমাম আবূ হাইয়ান আল-আনদালুসী (রহ:) বলেন:
তাঁদের (আসহাবে কাহাফের) পার্শ্বে ইমারত নির্মাণের কথা যে ব্যক্তি বলেছিল, সে এক অবিশ্বাসী মহিলা। সে গীর্জা নির্মাণের কথা-ই বলেছিল, যেখানে কুফরী কাজ করা যেতো। কিন্তু মো’মেন বান্দারা তাকে থামিয়ে দেন এবং ওর পরিবর্তে মসজিদ নির্মাণ করেন।
— তাফসীরে বাহর আল-মুহীত, ৭ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা
♦ ইবনুল জাওযী, যাকে কট্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘সালাফী’রাও মানে, তিনি উক্ত আয়াতের (১৮:২১) তাফসীরে বলেন:
ইবনে কুতায়বা (রা:) বর্ণনা করেন যে মুফাসসিরীনবৃন্দ মত প্রকাশ করেছিলেন, ওখানে যাঁরা মসজিদ নির্মাণ করেন, তাঁরা ছিলেন মুসলমান রাজা ও তাঁর মো’মেন সাথীবৃন্দ।”
— তাফসীরে যা’য়াদ আল-মাসীর, ৫ম খণ্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা
♦ হযরত ইবনে উমর (রা:) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর হাদীস, যিনি বলেন:
মসজিদে আল-খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা (এক সাথে) বিদ্যমান।
ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) বলেন যে এটি আল-বাযযার বর্ণনা করেন এবং ”এর সমস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-ই আস্থাভাজন”। মানের দিক থেকে এই হাদীস সহীহ। ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) নিজ ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ডে ‘বাবু ফী মসজিদিল্ খায়ফ’ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ #৫৭৬৯ নং হাদীসটি উদ্ধৃত করেন, যা’তে বিবৃত হয়:
মসজিদে খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।
♦ শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এ প্রসঙ্গে বলেন,
এই হাদীসের সনদ সহীহ।
— মোখতাসারুল বাযযার, ১:৪৭৬
আল-কুরআন ও হাদীস শরীফের এই সমস্ত ‘নস’ তথা দালিলিক প্রমাণ থেকে পরিস্ফুট হয় যে আম্বিয়া (আ:) ও আউলিয়া (রহ:)-বৃন্দের মাযার-রওযায় ইমারত নির্মাণ করা ইসলামে বৈধ ও সওয়াবদায়ক কাজ। সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদেরকে ’মুশরিকীন’ বা মূর্তিপূজারী বলে আখ্যা দেয় এই বলে যে মাযার-রওযাগুলো হচ্ছে ‘মূর্তির ঘর’ (নাউযুবিল্লাহ)
♦ এবং স্মরণ করুন, যখন আমি এ ঘরকে (কা’বা শরীফকে) মানবজাতির জন্যে আশ্রয়স্থল ও নিরাপদ স্থান করেছি; আর (বল্লাম), ‘ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে (মাকামে ইবরাহীম নামের পাথরকে যার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কা’বা ঘর নির্মাণ করেন) নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো’; এবং ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে তাকিদ দিয়েছি, ‘আমার ঘরকে পুতঃপবিত্র করো, তাওয়াফকারী, এ’তেকাফকারী এবং রুকু’ ও সেজদাকারীদের জন্যে।” (জ্ঞাতব্য: তাওয়াফের পরে দু’রাকআত নামায ওখানে পড়তে হয়)
— সূরা বাকারাহ, ১২৫ আয়াত, মুফতী আহমদ এয়ার খানের ’নূরুল এরফান’ বাংলা তাফসীর থেকে সংগৃহীত; অনুবাদক: মওলানা এম, এ, মন্নান, চট্টগ্রাম
ইব্রাহীম (আ) যেখানে দাড়িয়ে কাবা ঘর নির্মান করেছিলেন সেই পাথরকে নিদর্শন করে দিয়েছে আল-কুরআন আর যেখানে তিনি শুয়ে আছে সেই মাযারকে ওহাবী সালাফীর দল মুর্তি, বিদাত শিরিকের কথা বলে সুন্নীদের মুশরিক ফতোয়া দএয়। নাউযুবিল্লাহ।
আমরা এবার ‘কবরের আকার-আকৃতি’ বিষয়টির ফয়সালা করবো।
♦হযরত আবূ বকর বিন আইয়াশ (রা:) বর্ণনা করেন: হযরত সুফিয়ান আত্ তাম্মার (রা:) আমাকে জানান যে তিনি মহানবী (দ:)-এর রওযা মোবারককে উঁচু ও উত্তল দেখতে পেয়েছেন।
— সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২৩তম বই, হাদীস নং ৪৭৩
অতএব, মাযার-রওযা ভেঙ্গে ফেলা বা গুঁড়িয়ে দেয়া ‘সালাফী’দের দ্বারা ‘নস’ বা শরয়ী দলিলের চরম অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
♦মহান হানাফী মুহাদ্দীস ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাসসান শায়বানী (রহ:) এতদসংক্রান্ত বিষয়ে গোটা একটি অধ্যায় বরাদ্দ করে তার শিরোনাম দেন ‘কবরের ওপর উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক ও আস্তর’। এই অধ্যায়ে তিনি নিম্নের হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেন:
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) আমাদের কাছে হযরত হাম্মাদ (রহ:)-এর কথা বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (রা:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, কেউ একজন আমাকে জানান যে তাঁরা মহানবী (দ:), হযরত আবূ বকর (রা:) ও হযরত উমর (রা:)-এর মাযার-রওযার ওপরে ‘উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক যা (চোখে পড়ার মতো) বাইরে প্রসারিত ছিল তা দেখতে পেয়েছিলেন এবং তাতে আরও ছিল সাদা এঁটেলমাটির টুকরো।
ইমাম মোহাম্মদ (রহ:) আরও বলেন
আমরা (আহনা’ফ) এই মতকেই সমর্থন করি; মাযার-রওযা বড় স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু তা বর্গাকৃতির হতে পারবে না। এটি-ই হচ্ছে ’ইমাম আবূ হানিফা (রহ:)-এর সিদ্ধান্ত’।
— কিতাবুল আসা’র, ১৪৫ পৃষ্ঠা, Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত
সীমা লঙ্ঘনকারীরা দাবি করে, সকল মাযার-রওযা-ই গুঁড়িয়ে দিতে বা ধ্বংস করতে হবে। এটি সরাসরি সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা, তারা যে হাদীসটিকে এ ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ করে, তা মুশরিকীন (অংশীবাদী)-দের সমাধি সম্পর্কে বর্ণিত, মো’মেনীন (বিশ্বাসী মুসলমান)-দের কবর সম্পর্কে নয়। মাযার-রওযা নির্মাণ বৈধ, কারণ রাসূলুল্লাহ (দ:), সর্ব-হযরত আবূ বকর (রা:) ও উমর ফারূক (রা:) এবং অন্যান্য সাহাবা (রা:)-দের মাযার-রওযা উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা নির্মিত হয়েছিল মর্মে দলিল বিদ্যমান।
♦মুসলমানদের কবর ও মুশরিকীন (অংশীবাদী)-দের সমাধির মধ্যকার পার্থক্য বোঝার জন্যে খেয়াল করবেন:-
১) দেখবেন, খৃষ্টানদের সমাধি সম্পূর্ণভাবে মাটির সাথে মেশানো তথা মাটির সমান, যা ওহাবীরা আমাদের বিশ্বাস করতে বলে এই মর্মে যে, মুসলমানদের কবরও অনুরূপ হওয়া উচিত। [কিন্তু বেশ কিছু হাদীসে ইহুদী ও খৃষ্টানদের বিপরীত করতে আমরা আদিষ্ট হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে মুসলমানদের কবর এক বিঘত পরিমান উচু রাখা সুন্নত (হাদিসে বর্নিত আছে); তবে মাযারের উপর কোনো মূর্তি নির্মাণ করা চলবে না, এমনকি নেইও এই প্রমান কেউ দিতে পারবে না]
২) দ্বিতীয়টি হল যে খৃষ্টানগণ ‘সমাধির ঠিক ওপরে মূর্তি নির্মাণ করেন’। অথচ মুসলমান সূফী-দরবেশদের মাযার-রওযাতে এগুলো করে না।
♦ অন্যান্য হাদিস ও কিতাব সমুহ থেকে প্রমান:-
Proof 1 :-
“হযরত উরওয়া (রা) হতে বর্ণিত,””
তিনি বলেন, ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে (৮৬ হিজরীতে) একবার রাসুলুল্লাহ (সা) এর রওযা মুবারকের এক দিকের দেয়াল ধসে গেলে সাহাবায়ে কেরাম তা মেরামত শুরু করেন। মেরামতের সময় হঠাত এক খানা পা দৃষ্টি গোচর হল। উপস্থিত লোকজন মনে করলেন হয়তোবা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর পা মুবারক হতে পারে। কিন্তু তথায় উপস্থিত হযরত উরওয়া রা: (হযরত আয়েশা রা: এর ভাগিনা) সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, না আল্লাহর কসম, এটা নবী করীম (সা) এর পা মুবারক নয়। এটা তো হযরত উমর (রা) এর পা।” সাহাবা কেরামই সর্ব প্রথম নবী করীম (সা), হযরত আবু বক্কর (রা) ও হযরত ঊমর (রা) এর রওযা পাকা করেছিলেন।
Reference :
♦(বুখারি)
★* হযরত উরওয়া ইবনে আল-যুবায়র (রা:) বর্ণনা করেন হযরত আল-মুসাওয়ের ইবনে মাখরামা (রা:) ও মারাওয়ান ইবনে আল-হাকীম (রা:) হতে এই মর্মে যে, আবূ বাসীর (রা:) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আবূ জানদাল ইবনে সোহায়ল ইবনে আমর (রা:) তিন’শ জন সাহাবী (রা:)-এর উপস্থিতিতে ’সাইফ আল-বাহর’ নামের স্থানে তাঁকে দাফন করেন এবং সেখানে তাঁর মাযার-সংলগ্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন [এই রওয়ায়াত ইমাম আবদুর রাযযাক হযরত মু’আমের (রা:)-এর সূত্রে ও অাবূ এসহাক ‘আল-সীরাহ’ পুস্তকে এবং মূসা ইবনে উকবা ‘মাগাযিয়্যাহ’ কেতাবে বর্ণনা করেন]। এই রওয়ায়াতের এসনাদ সহীহ (বিশুদ্ধ) এবং এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন আস্থাভাজন উলেমাবৃন্দ। এই কাজটি মহানবী (দ:)-এর আড়ালে গোপনে সংঘটিত হতে পারে না; এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (দ:) সেই মাযার অপসারণ বা (ওই সাহাবীর) দেহাবশেষ অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেননি।
★* বিশুদ্ধ রওয়ায়াতে হুযূর পূর নূর (দ:)-এর কথা উদ্ধৃত হয়েছে; তিনি বলেন: “আল-খায়ফ মসজিদে সত্তর জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।” [আল-বাযযার ও আত্ তাবারানী কৃত ‘আল-মু’জাম আল-কবীর’; মোহাদ্দীস ইবনে হাজর নিজ ‘মোখতাসার যাওয়াঈদ আল-বাযযার’ গ্রন্থে এই হাদীসের সনদ ‘সহীহ’ বলেছেন]
এর দ্বারা বুঝা যায় কবর পাকা ছিল। এবং ভেংগে যাওয়ার পর আবার ঠিক করে পাকা করা হয়েছে।
Proof 2, 3, 4 :-
★ হযরত উমর (রা) উম্মুল মুমেনিন হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশ (রা) এর মাজারের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন।
★ উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) মক্কায় অবস্থিত তাঁর ভাই হযরত আব্দুর রাহমান (রা) এর কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেন এবং ওনার কবর জিয়ারত করতেন।
★ তায়েফে অবস্থিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর কবরের উপর বিশিষ্ট তাবীঈ মুহাম্মাদ বিন হানফিয়া (র) গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন।
Reference :-
♦ মুন্তাকা সরহে মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক
♦ বাদায়ে সানায়ে
Sollution 4:- মাযারের উপর গম্বুজ বা ইমারত এর দলিল:-
Proof 5:-
♦মদীনায় আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) কবর :
‘তাবাকাতে ইবনে সা’দ’ ও ‘সিরেয়ে ইবনে হিশাম’-এ একটি রেওয়ায়েত আছে যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ “রাসূল (সাঃ) নিজ গৃহে ঠিক যে কক্ষে তিনি নিজ প্রাণ মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সমর্পণ করেছিলেন, সে কক্ষেই সমাধিস্থ হয়েছেন। এরপর, হযরত আবুবকর ও হযরত ওমর-এ দু’ খলিফাকে ও একে একে সেখানে কবরস্থ করা হয়। অতঃপর এ সবুজ গম্বুজ এর উপর নির্মাণ করা হয়।
Reference :-
[তাবাকাতে ইবনে সা’দ খঃ২ পৃঃ২৯২-২৯৪, সিরায়ে ইবনে হিশাম খঃ৪, পৃঃ৩৪৩]
Proof 6,7,8,9,10 :-
♦ইবনে জাওযি ‘হারাম শরীফে শায়িত মহান ব্যক্তিগন” অধ্যায়ে এবং আযরাকী “আখবারে মাক্কা”-তে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন যার সারসংক্ষপ এরূপ ঃ সকল নবীই যাদের উম্মত ধবংশ হতো মক্কায় আসতেন এবং মুমিনদেরকে নিজের সাথে নিয়ে এবাদত করতেন মৃত্যু পর্যন্ত!
♦হূদ (আঃ), সালেহ (আঃ) ও শুয়াইব (আঃ) ছিলেন তাদের অর্ন্তভুক্ত। রোকন ও মাকামে ইব্রাহীম এবং যমযম ও হিজরে ইসমাঈলের মধ্যবর্তী স্থানে নিরানব্বইজন নবীর কবর আছে। আবুবকর ফকীহ মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, বলেন :
এমন কোন নবী ছিলনা যিনি নিজ গোত্র থেকে পৃথক হয়েছেন অথচ কাবায় আসেননি এবং আমৃত্যু আল্লাহর এবাদত করেননি।
♦হুদ (আঃ) শোয়াইব (আঃ) ও সালেহ (আঃ)-এর কবর যমযম ও মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে।
♦হারাম (কাবা) শরীফে তিনশজন নবীর কবর আছে এবং
♦ইয়েমেনী রোকন ও রোকনে আমওয়াদের মধ্যে সত্তরজন নবীকে দাফন করা হয়েছে।
Reference :
[মোখতাসারু কিতাবুল বোলদান, আবুবকর ইবনে ফকীহ হামেদানী (জন্মঃ৩৪০হিঃ) তোরিল, লিদান মুদ্রিত ১৩০২পৃঃ১৭]
Proof 11,12,13,14 :-
♦মাকতাবে আহলে বাইত (আঃ)-এর হাদীসের কিতাব সমূহেও এগুলোর মত রেওয়ায়েত নিম্নলিখিত রূপে এসেছে :
কুলাইনী (৩২৯ হিজরীতে যার মৃত্যু) উসূলে কাফিতে এবং সাদুক (৩৮১ হিজরীতে যার মৃত্যু) মান লা’ ইয়াহজুরুহুল ফকীহ নামক কিতাবে এলালুশ শারায়া’-
তে এবং ফাইয কাশীনী (মৃত্যু (১০৮৯হি) ওয়াফিতে, মাজলিশি (মৃঃ১১১১) বিহারুল আনোয়ারে বর্ণনা করেছেন যে, (কাফি বর্ণনানুসারে)
♦মাতা হাজেরা ও হযরত ইসমাঈল (আ) এর মাযার হিজরে আছে
[ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ্ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।]
♦অনুরূপ, বর্ণনা করেছেন যে, ‘হিজরে নবীগণের (আঃ) কবর আছে।’
♦হিজরে তৃতীয় রোকনের সীমানায় ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যারা শায়িত।
[ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।]
উত্তর:-
★ মাযার নির্মান সম্পর্কে স্পষ্ট দলিল:-
♦কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে,
এবং এভাবে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন এই সব লোক তাদের (আসহাবে কাহাফ) ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে লাগলো, অতঃপর তারা বল্লো, ’তাদের গুহার ওপর কোনো ইমারত নির্মাণ করো! তাদের রব (খোদা)-ই তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। ওই লোকদের মধ্যে যারা (এ বিষয়ে) ক্ষমতাধর ছিল তারা বল্লো, ‘শপথ রইলো, আমরা তাদের (আসহাবে কাহাফের পুণ্যময় স্থানের) ওপর মসজিদ নির্মাণ করবো’।”
— সূরা কাহাফ, ২১ আয়াত]
♦তাফসীরে কবীর
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে লেখেন,
কেউ কেউ (ওদের মধ্যে) বলেন যে গুহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হোক, যাতে আসহাবে কাহাফ আড়ালে গোপন থাকতে পারেন। আরও কিছু মানুষ বলেন, গুহার দরজায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। তাঁদের এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে এই মানুষগুলো ছিলেন ’আল্লাহর আরেফীন (আল্লাহ-জ্ঞানী), যাঁরা এক আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে বিশ্বাস করতেন এবং নামাযও পড়তেন’।
— তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠ
♦ইমাম রাযী (রহ:) আরও লেখেন:
এবং আল্লাহর কালাম – ‘(এ বিষয়ে) যারা ক্ষমতাশালী’ বলতে বোঝানো হয়ে থাকতে পারে ‘মুসলমান শাসকবৃন্দ’, অথবা আসহাবে কাহাফ (মো’মেনীন)-এর বন্ধুগণ, কিংবা শহরের নেতৃবৃন্দ। ‘আমরা নিশ্চয় তাদের স্মৃতিস্থানের ওপরে মসজিদ নির্মাণ করবো’ – এই আয়াতটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে, ‘আমরা যাতে সেখানে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি এবং এই মসজিদের সুবাদে আসহাবে কাহাফ তথা গুহার সাথীদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করতে পারি’।
— তাফসীরে কবীর, ৫ম খণ্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা
অতএব, যারা মাযার-রওযা ধ্বংস করে এবং আল্লাহর আউলিয়াবৃন্দের প্রতি বিদ্বেষভাব প্রদর্শন করে, তারা কুরআন মজীদের সূরা কাহাফে বর্ণিত উপরোক্ত সুস্পষ্ট আয়াতের সরাসরি বিরোধিতা করে। অথচ কুরআন মজীদ স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে যে আউলিয়া কেরাম (রহ:)-এর মাযার-রওযা নির্মাণ ও তাঁদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ বৈধ।
মদীনা মোনাওয়ারায় মহানবী (দ:) এবং সর্ব-হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (রা:) ও উমর ফারূক (রা:)-এর রওযা মোবারক সবুজ গুম্বজের নিচে সুশোভিত আছে। সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-ই এই রওযাগুলো নির্মাণ করেন যা শরীয়তের দলিল।
♦তাফসীরে জালালাইন’ শিরোনামের বিশ্বখ্যাত সংক্ষিপ্ত ও সহজে বোধগম্য আল-কুরআনের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থে ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) ও আল-মোহাল্লী (রহ:) লেখেন:
(মানুষেরা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল), অর্থাৎ, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীরা (ওই) তরুণ (আসহাবে কাহাফ)-দের বিষয়ে বিতর্ক করছিল যে তাঁদের পার্শ্বে কোনো স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করা যায় কি-না। এমতাবস্থায় অবিশ্বাসীরা বলে, তাঁদেরকে ঢেকে দেয়ার জন্যে ইমারত নির্মাণ করা হোক। তাঁদের প্রভু-ই তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। কিন্তু যে মানুষেরা ওই তরুণ আসহাবে কাহাফের বিষয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিলেন, মানে বিশ্বাসীরা, তারা বল্লেন, আমরা তাঁদের পার্শ্বে এবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবো। আর এটি গুহার প্রবেশপথে প্রকৃতই নির্মিত হয়েছিল।
— তাফসীর আল-জালালাইন, ১ম খণ্ড, ৩৮৯ পৃষ্ঠ
♦ইমাম নাসাফী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে নাসাফী’ পুস্তকে লেখেন:
যারা (আসহাবে কাহাফের বিষয়ে) প্রভাবশালী ছিলেন, তারা মুসলমান এবং শাসকবর্গ; এরা বলেন যে গুহার প্রবেশপথে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন, যাতে ‘মুসলমানবৃন্দ সেখানে এবাদত-বন্দেগী করতে পারেন এবং তা (স্মৃতিচিহ্ন) থেকে বরকত আদায় করতে সক্ষম হন’।
— তাফসীর আল-নাসাফী, ৩য় খণ্ড, ১৮ পৃষ্ঠা
মাযার নির্মানের আরো evidance:-
♦ ইমাম শেহাবউদ্দীন খাফফাজী (রহ:) লেখেন:
(গুহামুখে মসজিদ নির্মাণ) সালেহীন তথা পুণ্যাত্মাবৃন্দের মাযার-রওযার পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণের প্রামাণিক দলিল, যেমনটি উল্লেখিত হয়েছে ‘তাফসীরে কাশশাফ’ পুস্তকে; আর এই দালানের ভেতরে এবাদত-বন্দেগী করা ’জায়েয’ (বৈধ)।”
— ইমাম খাফফাজী কৃত ‘এনায়াতুল কাদী’, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা; দারুস্ সাদির, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত
♦ ইমাম মোহাম্মদ বিন হাসান শায়বানী (রহ:) বলেন,
হযরত ইমাম আবূ হানিফাহ (রহ:) আমাদের জানিয়েছেন এই বলে যে সালিম আফতাস্ আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন: ‘এমন কোনো নবী নেই যিনি কা’বা শরীফে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে নিজ জাতিকে ছেড়ে আসেন নি; আর এর আশপাশে ৩০০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান’।”
— ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’; লন্ডনে Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত; ১৫০ পৃষ্ঠ
♦ ইমাম শায়বানী (রহ:) আরও বলেন,
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) আমাদেরকে জানিয়েছেন এই বলে যে হযরত আতা’ বিন সায়েব (রা:) আমাদের (তাঁর কাছে) বর্ণনা করেন, ‘আম্বিয়া সর্ব-হযরত হুদ (আ:), সালেহ (আ:) ও শোয়াইব (আ:)-এর মাযার-রওযা মসজিদে হারামে অবস্থিত’।
— ইমাম শায়বানীর ‘কিতাবুল আসার’
♦ ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন:
মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।
— তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯
♦ মোল্লা আলী কারী ওপরে উদ্ধৃত আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন:
যে ব্যক্তি কোনো সত্যনিষ্ঠ বোযর্গ বান্দার মাযারের সন্নিকটে মসজিদ নির্মাণ করেন, কিংবা ওই মাযারে (মাক্কবারা) এবাদত-বন্দেগী করেন, অথবা উক্ত বোযর্গের রূহ মোবারকের অসীলায়
(মধ্যস্থতায়) সাহায্য প্রার্থনা করেন, বা তাঁর রেখে যাওয়া কোনো বস্তু থেকে বরকত তথা আশীর্বাদ অন্বেষণ করেন, তিনি যদি (এবাদতে) ওই বোযর্গকে তা’যিম বা তাওয়াজ্জুহ পালন না করেই এগুলো করেন, তবে এতে কোনো দোষ বা ভ্রান্তি নেই। আপনারা কি দেখেননি, মসজিদে হারামের ভেতরে হাতীম নামের জায়গায় হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর রওযা শরীফ অবস্থিত? আর সেখানে এবাদত-বন্দেগী পালন করা অন্যান্য স্থানের চেয়েও উত্তম। তবে কবরের কাছে এবাদত-বন্দেগী পালন তখনই নিষিদ্ধ হবে, যদি মৃতের নাজাসাত (ময়লা) দ্বারা মাটি অপবিত্র হয়ে যায়। ….হাজর আল-আসওয়াদ (কালো পাথর) ও মিযা’য়াব-এর কাছে হাতীম জায়গাটিতে ’৭০জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা’ বিদ্যমান।”
— মিরক্কাত শরহে মিশক্কাত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা
♦ ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহ:) নিজ ‘তাফসীরে তাবারী’ পুস্তকে লেখেন:
মুশরিকরা বলেছিল, আমরা গুহার পার্শ্বে একটি ইমারত নির্মাণ করবো এবং আল্লাহর উপাসনা করবো; কিন্তু মুসলমানগণ বলেন, আসহাবে কাহাফের ওপর আমাদের হক বেশি এবং নিশ্চয় আমরা ওখানে ‘মসজিদ নির্মাণ করবো’ যাতে আমরা ওতে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারি।
— তাফসীরে তাবারী, ১৫:১৪৯
♦ ইমাম আবূ হাইয়ান আল-আনদালুসী (রহ:) বলেন:
তাঁদের (আসহাবে কাহাফের) পার্শ্বে ইমারত নির্মাণের কথা যে ব্যক্তি বলেছিল, সে এক অবিশ্বাসী মহিলা। সে গীর্জা নির্মাণের কথা-ই বলেছিল, যেখানে কুফরী কাজ করা যেতো। কিন্তু মো’মেন বান্দারা তাকে থামিয়ে দেন এবং ওর পরিবর্তে মসজিদ নির্মাণ করেন।
— তাফসীরে বাহর আল-মুহীত, ৭ম খণ্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা
♦ ইবনুল জাওযী, যাকে কট্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘সালাফী’রাও মানে, তিনি উক্ত আয়াতের (১৮:২১) তাফসীরে বলেন:
ইবনে কুতায়বা (রা:) বর্ণনা করেন যে মুফাসসিরীনবৃন্দ মত প্রকাশ করেছিলেন, ওখানে যাঁরা মসজিদ নির্মাণ করেন, তাঁরা ছিলেন মুসলমান রাজা ও তাঁর মো’মেন সাথীবৃন্দ।”
— তাফসীরে যা’য়াদ আল-মাসীর, ৫ম খণ্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা
♦ হযরত ইবনে উমর (রা:) বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর হাদীস, যিনি বলেন:
মসজিদে আল-খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন নবী (আ:)-এর মাযার-রওযা (এক সাথে) বিদ্যমান।
ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) বলেন যে এটি আল-বাযযার বর্ণনা করেন এবং ”এর সমস্ত রাবী (বর্ণনাকারী)-ই আস্থাভাজন”। মানের দিক থেকে এই হাদীস সহীহ। ইমাম আল-হায়তামী (রহ:) নিজ ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকের ৩য় খণ্ডে ‘বাবু ফী মসজিদিল্ খায়ফ’ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ #৫৭৬৯ নং হাদীসটি উদ্ধৃত করেন, যা’তে বিবৃত হয়:
মসজিদে খায়ফের মধ্যে (’ফী’) ৭০ জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।
♦ শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এ প্রসঙ্গে বলেন,
এই হাদীসের সনদ সহীহ।
— মোখতাসারুল বাযযার, ১:৪৭৬
আল-কুরআন ও হাদীস শরীফের এই সমস্ত ‘নস’ তথা দালিলিক প্রমাণ থেকে পরিস্ফুট হয় যে আম্বিয়া (আ:) ও আউলিয়া (রহ:)-বৃন্দের মাযার-রওযায় ইমারত নির্মাণ করা ইসলামে বৈধ ও সওয়াবদায়ক কাজ। সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদেরকে ’মুশরিকীন’ বা মূর্তিপূজারী বলে আখ্যা দেয় এই বলে যে মাযার-রওযাগুলো হচ্ছে ‘মূর্তির ঘর’ (নাউযুবিল্লাহ)
♦ এবং স্মরণ করুন, যখন আমি এ ঘরকে (কা’বা শরীফকে) মানবজাতির জন্যে আশ্রয়স্থল ও নিরাপদ স্থান করেছি; আর (বল্লাম), ‘ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে (মাকামে ইবরাহীম নামের পাথরকে যার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কা’বা ঘর নির্মাণ করেন) নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো’; এবং ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে তাকিদ দিয়েছি, ‘আমার ঘরকে পুতঃপবিত্র করো, তাওয়াফকারী, এ’তেকাফকারী এবং রুকু’ ও সেজদাকারীদের জন্যে।” (জ্ঞাতব্য: তাওয়াফের পরে দু’রাকআত নামায ওখানে পড়তে হয়)
— সূরা বাকারাহ, ১২৫ আয়াত, মুফতী আহমদ এয়ার খানের ’নূরুল এরফান’ বাংলা তাফসীর থেকে সংগৃহীত; অনুবাদক: মওলানা এম, এ, মন্নান, চট্টগ্রাম
ইব্রাহীম (আ) যেখানে দাড়িয়ে কাবা ঘর নির্মান করেছিলেন সেই পাথরকে নিদর্শন করে দিয়েছে আল-কুরআন আর যেখানে তিনি শুয়ে আছে সেই মাযারকে ওহাবী সালাফীর দল মুর্তি, বিদাত শিরিকের কথা বলে সুন্নীদের মুশরিক ফতোয়া দএয়। নাউযুবিল্লাহ।
আমরা এবার ‘কবরের আকার-আকৃতি’ বিষয়টির ফয়সালা করবো।
♦হযরত আবূ বকর বিন আইয়াশ (রা:) বর্ণনা করেন: হযরত সুফিয়ান আত্ তাম্মার (রা:) আমাকে জানান যে তিনি মহানবী (দ:)-এর রওযা মোবারককে উঁচু ও উত্তল দেখতে পেয়েছেন।
— সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২৩তম বই, হাদীস নং ৪৭৩
অতএব, মাযার-রওযা ভেঙ্গে ফেলা বা গুঁড়িয়ে দেয়া ‘সালাফী’দের দ্বারা ‘নস’ বা শরয়ী দলিলের চরম অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
♦মহান হানাফী মুহাদ্দীস ইমাম মোহাম্মদ ইবনে হাসসান শায়বানী (রহ:) এতদসংক্রান্ত বিষয়ে গোটা একটি অধ্যায় বরাদ্দ করে তার শিরোনাম দেন ‘কবরের ওপর উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক ও আস্তর’। এই অধ্যায়ে তিনি নিম্নের হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেন:
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) আমাদের কাছে হযরত হাম্মাদ (রহ:)-এর কথা বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (রা:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, কেউ একজন আমাকে জানান যে তাঁরা মহানবী (দ:), হযরত আবূ বকর (রা:) ও হযরত উমর (রা:)-এর মাযার-রওযার ওপরে ‘উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক যা (চোখে পড়ার মতো) বাইরে প্রসারিত ছিল তা দেখতে পেয়েছিলেন এবং তাতে আরও ছিল সাদা এঁটেলমাটির টুকরো।
ইমাম মোহাম্মদ (রহ:) আরও বলেন
আমরা (আহনা’ফ) এই মতকেই সমর্থন করি; মাযার-রওযা বড় স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু তা বর্গাকৃতির হতে পারবে না। এটি-ই হচ্ছে ’ইমাম আবূ হানিফা (রহ:)-এর সিদ্ধান্ত’।
— কিতাবুল আসা’র, ১৪৫ পৃষ্ঠা, Turath Publishing কর্তৃক প্রকাশিত
সীমা লঙ্ঘনকারীরা দাবি করে, সকল মাযার-রওযা-ই গুঁড়িয়ে দিতে বা ধ্বংস করতে হবে। এটি সরাসরি সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা, তারা যে হাদীসটিকে এ ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ করে, তা মুশরিকীন (অংশীবাদী)-দের সমাধি সম্পর্কে বর্ণিত, মো’মেনীন (বিশ্বাসী মুসলমান)-দের কবর সম্পর্কে নয়। মাযার-রওযা নির্মাণ বৈধ, কারণ রাসূলুল্লাহ (দ:), সর্ব-হযরত আবূ বকর (রা:) ও উমর ফারূক (রা:) এবং অন্যান্য সাহাবা (রা:)-দের মাযার-রওযা উঁচু স্তূপাকৃতির ফলক দ্বারা নির্মিত হয়েছিল মর্মে দলিল বিদ্যমান।
♦মুসলমানদের কবর ও মুশরিকীন (অংশীবাদী)-দের সমাধির মধ্যকার পার্থক্য বোঝার জন্যে খেয়াল করবেন:-
১) দেখবেন, খৃষ্টানদের সমাধি সম্পূর্ণভাবে মাটির সাথে মেশানো তথা মাটির সমান, যা ওহাবীরা আমাদের বিশ্বাস করতে বলে এই মর্মে যে, মুসলমানদের কবরও অনুরূপ হওয়া উচিত। [কিন্তু বেশ কিছু হাদীসে ইহুদী ও খৃষ্টানদের বিপরীত করতে আমরা আদিষ্ট হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে মুসলমানদের কবর এক বিঘত পরিমান উচু রাখা সুন্নত (হাদিসে বর্নিত আছে); তবে মাযারের উপর কোনো মূর্তি নির্মাণ করা চলবে না, এমনকি নেইও এই প্রমান কেউ দিতে পারবে না]
২) দ্বিতীয়টি হল যে খৃষ্টানগণ ‘সমাধির ঠিক ওপরে মূর্তি নির্মাণ করেন’। অথচ মুসলমান সূফী-দরবেশদের মাযার-রওযাতে এগুলো করে না।
♦ অন্যান্য হাদিস ও কিতাব সমুহ থেকে প্রমান:-
Proof 1 :-
“হযরত উরওয়া (রা) হতে বর্ণিত,””
তিনি বলেন, ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে (৮৬ হিজরীতে) একবার রাসুলুল্লাহ (সা) এর রওযা মুবারকের এক দিকের দেয়াল ধসে গেলে সাহাবায়ে কেরাম তা মেরামত শুরু করেন। মেরামতের সময় হঠাত এক খানা পা দৃষ্টি গোচর হল। উপস্থিত লোকজন মনে করলেন হয়তোবা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর পা মুবারক হতে পারে। কিন্তু তথায় উপস্থিত হযরত উরওয়া রা: (হযরত আয়েশা রা: এর ভাগিনা) সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, না আল্লাহর কসম, এটা নবী করীম (সা) এর পা মুবারক নয়। এটা তো হযরত উমর (রা) এর পা।” সাহাবা কেরামই সর্ব প্রথম নবী করীম (সা), হযরত আবু বক্কর (রা) ও হযরত ঊমর (রা) এর রওযা পাকা করেছিলেন।
Reference :
♦(বুখারি)
★* হযরত উরওয়া ইবনে আল-যুবায়র (রা:) বর্ণনা করেন হযরত আল-মুসাওয়ের ইবনে মাখরামা (রা:) ও মারাওয়ান ইবনে আল-হাকীম (রা:) হতে এই মর্মে যে, আবূ বাসীর (রা:) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আবূ জানদাল ইবনে সোহায়ল ইবনে আমর (রা:) তিন’শ জন সাহাবী (রা:)-এর উপস্থিতিতে ’সাইফ আল-বাহর’ নামের স্থানে তাঁকে দাফন করেন এবং সেখানে তাঁর মাযার-সংলগ্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন [এই রওয়ায়াত ইমাম আবদুর রাযযাক হযরত মু’আমের (রা:)-এর সূত্রে ও অাবূ এসহাক ‘আল-সীরাহ’ পুস্তকে এবং মূসা ইবনে উকবা ‘মাগাযিয়্যাহ’ কেতাবে বর্ণনা করেন]। এই রওয়ায়াতের এসনাদ সহীহ (বিশুদ্ধ) এবং এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন আস্থাভাজন উলেমাবৃন্দ। এই কাজটি মহানবী (দ:)-এর আড়ালে গোপনে সংঘটিত হতে পারে না; এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (দ:) সেই মাযার অপসারণ বা (ওই সাহাবীর) দেহাবশেষ অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেননি।
★* বিশুদ্ধ রওয়ায়াতে হুযূর পূর নূর (দ:)-এর কথা উদ্ধৃত হয়েছে; তিনি বলেন: “আল-খায়ফ মসজিদে সত্তর জন আম্বিয়া (আ:)-এর মাযার-রওযা বিদ্যমান।” [আল-বাযযার ও আত্ তাবারানী কৃত ‘আল-মু’জাম আল-কবীর’; মোহাদ্দীস ইবনে হাজর নিজ ‘মোখতাসার যাওয়াঈদ আল-বাযযার’ গ্রন্থে এই হাদীসের সনদ ‘সহীহ’ বলেছেন]
এর দ্বারা বুঝা যায় কবর পাকা ছিল। এবং ভেংগে যাওয়ার পর আবার ঠিক করে পাকা করা হয়েছে।
Proof 2, 3, 4 :-
★ হযরত উমর (রা) উম্মুল মুমেনিন হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশ (রা) এর মাজারের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন।
★ উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) মক্কায় অবস্থিত তাঁর ভাই হযরত আব্দুর রাহমান (রা) এর কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেন এবং ওনার কবর জিয়ারত করতেন।
★ তায়েফে অবস্থিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর কবরের উপর বিশিষ্ট তাবীঈ মুহাম্মাদ বিন হানফিয়া (র) গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন।
Reference :-
♦ মুন্তাকা সরহে মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক
♦ বাদায়ে সানায়ে
Sollution 4:- মাযারের উপর গম্বুজ বা ইমারত এর দলিল:-
Proof 5:-
♦মদীনায় আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) কবর :
‘তাবাকাতে ইবনে সা’দ’ ও ‘সিরেয়ে ইবনে হিশাম’-এ একটি রেওয়ায়েত আছে যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপঃ “রাসূল (সাঃ) নিজ গৃহে ঠিক যে কক্ষে তিনি নিজ প্রাণ মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সমর্পণ করেছিলেন, সে কক্ষেই সমাধিস্থ হয়েছেন। এরপর, হযরত আবুবকর ও হযরত ওমর-এ দু’ খলিফাকে ও একে একে সেখানে কবরস্থ করা হয়। অতঃপর এ সবুজ গম্বুজ এর উপর নির্মাণ করা হয়।
Reference :-
[তাবাকাতে ইবনে সা’দ খঃ২ পৃঃ২৯২-২৯৪, সিরায়ে ইবনে হিশাম খঃ৪, পৃঃ৩৪৩]
Proof 6,7,8,9,10 :-
♦ইবনে জাওযি ‘হারাম শরীফে শায়িত মহান ব্যক্তিগন” অধ্যায়ে এবং আযরাকী “আখবারে মাক্কা”-তে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন যার সারসংক্ষপ এরূপ ঃ সকল নবীই যাদের উম্মত ধবংশ হতো মক্কায় আসতেন এবং মুমিনদেরকে নিজের সাথে নিয়ে এবাদত করতেন মৃত্যু পর্যন্ত!
♦হূদ (আঃ), সালেহ (আঃ) ও শুয়াইব (আঃ) ছিলেন তাদের অর্ন্তভুক্ত। রোকন ও মাকামে ইব্রাহীম এবং যমযম ও হিজরে ইসমাঈলের মধ্যবর্তী স্থানে নিরানব্বইজন নবীর কবর আছে। আবুবকর ফকীহ মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, বলেন :
এমন কোন নবী ছিলনা যিনি নিজ গোত্র থেকে পৃথক হয়েছেন অথচ কাবায় আসেননি এবং আমৃত্যু আল্লাহর এবাদত করেননি।
♦হুদ (আঃ) শোয়াইব (আঃ) ও সালেহ (আঃ)-এর কবর যমযম ও মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে।
♦হারাম (কাবা) শরীফে তিনশজন নবীর কবর আছে এবং
♦ইয়েমেনী রোকন ও রোকনে আমওয়াদের মধ্যে সত্তরজন নবীকে দাফন করা হয়েছে।
Reference :
[মোখতাসারু কিতাবুল বোলদান, আবুবকর ইবনে ফকীহ হামেদানী (জন্মঃ৩৪০হিঃ) তোরিল, লিদান মুদ্রিত ১৩০২পৃঃ১৭]
Proof 11,12,13,14 :-
♦মাকতাবে আহলে বাইত (আঃ)-এর হাদীসের কিতাব সমূহেও এগুলোর মত রেওয়ায়েত নিম্নলিখিত রূপে এসেছে :
কুলাইনী (৩২৯ হিজরীতে যার মৃত্যু) উসূলে কাফিতে এবং সাদুক (৩৮১ হিজরীতে যার মৃত্যু) মান লা’ ইয়াহজুরুহুল ফকীহ নামক কিতাবে এলালুশ শারায়া’-
তে এবং ফাইয কাশীনী (মৃত্যু (১০৮৯হি) ওয়াফিতে, মাজলিশি (মৃঃ১১১১) বিহারুল আনোয়ারে বর্ণনা করেছেন যে, (কাফি বর্ণনানুসারে)
♦মাতা হাজেরা ও হযরত ইসমাঈল (আ) এর মাযার হিজরে আছে
[ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ্ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।]
♦অনুরূপ, বর্ণনা করেছেন যে, ‘হিজরে নবীগণের (আঃ) কবর আছে।’
♦হিজরে তৃতীয় রোকনের সীমানায় ইসমাঈল (আঃ)-এর কন্যারা শায়িত।
[ফুরুয়ে কাফী, কিতাবুল হাজ্জ, ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর হজ্জ অধ্যায় হাদীস নং১৪ খঃ৪, পৃঃ২১০। মান লা ইয়াহজুরুহুল ফাকীহ, কিতাবুল হাজ্জ খঃ২, পৃঃ১২৫ ওয়াফী, কিতাবুল হাজ্জ খঃ৮, পৃঃ২৮ এবং বিহারুল আনওয়ার কিতাবুল নবুওয়াত খঃ৫, পৃঃ ১৪৩ও১৪৪।]
No comments:
Post a Comment