Monday, November 30, 2015

মারেফত কী ও কেন?

মারেফত কী ও কেন?
আরবি ‘আরাফা’ শব্দ হতে মারেফত। আরাফা অর্থ হলো জানা, জ্ঞান লাভ করা। মারেফত অর্থ লব্ধ জ্ঞান। মারেফত দিয়ে
জগত ও জীবনের যে কোনো বিষয়ের সম্যক জ্ঞান জানা যায়। স্থুল দর্শন প্রকৃত দর্শন নয়, সূক্ষ্ম দর্শন প্রকৃত দর্শন। জ্ঞানীগণ
সূক্ষ্মতা অবলম্বন করে জীবন ও জগতকে দেখেন, ইহাই মারেফত। লোকেরা যাকে মারেফত বলে মনে করে, আসলে উহা
মারেফত নয়। কারণ অজ্ঞাত বিষয় জানাটাই মারেফত। অজ্ঞাত বিষয়টা অজ্ঞাত থেকে যায় বলে মারেফত জ্ঞান লাভ হয়
না। মারেফতের মূল কেন্দ্রভুমি আপন দেহ-মন। আপন দেহ-মনের পরিচয় পেলে মানুষ তার রবের পরিচয় পায়। রবের
পরিচয় পেলে সে তার সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও ধ্বংসকর্তার সম্যক পরিচয় লাভ করে। যতদিন পর্যন্ত মানুষ এই রবের
পরিচয় না পায়, ততদিন সে দুঃখচμের আবর্তে নিজের দুঃখ নিজে সৃজন করে ঘুরতে থাকে। এ জন্য কোরান বলছে,
ওয়াত্তাকু রাব্বাকুম তোমরা তোমাদের রব সম্বন্ধে সাবধান হও। ইহাই মারেফতের গোপন কথা।
অতএব, বাজারের বিতর্কমূলক তথাকথিত শরিয়তের ধোঁকায় পড়ে পরস্পর আত্মকলহে লিপ্ত হয়ো না। আপন দেহ
হতে আপন রবের মারেফতের দ্বার উদঘাটন করে আল কেতাবের শরিয়ত বুঝে লও, তবেই সকল বিতর্কের অবসান ঘটবে।
মারেফতের গোপন কথা আসলে গোপন নয়। সম্যক গুরুর প্রতি ভক্তিযোগ অথবা জ্ঞানযোগের পথ ধরলেই গোপন কথার
তালা খুলে আল কেতাবের দ্বার খুলে যাবে।
ভালো করে জেনে রাখুন
হাল আমলে বিশেষ করে কিছু মাদ্রাসায় পাস করা আলেম এবং মুফতিরা কথায় কথায় সরল মুসলমান ভাইদেরকে কাফের
ফতোয়া দিয়ে বসেন। অথচ তারা জানেন না যে, ফতোয়া-এ দারুল উলুম (৪৪০/১২)-এ ফতোয়া বিষয়ে কী উপদেশ দিয়ে
সাবধান করে দেওয়া হয়েছে : ‘কাফের ফতোয়া দেবার প্রশড়ব উঠলে দেখতে হবে যে, যদি শতকরা নিরানব্বই ভাগ কাফের
বলার অবকাশ থাকে, কিন্তু মাত্র এক ভাগ কাফের না বলার সম্ভাবনা থাকে, তবে অবশ্যই মুফতি এবং কাজি কাফের
ফতোয়া দিতে পারবে না।’ আদ দুরুল মুখতার নামক ফতোয়ার কেতাবের মুর্তাদ অধ্যায়ের (৩৯৯/৩) ফতোয়াতে স্পষ্ট বলা
হয়েছে যে, ‘কাফের ফতোয়া দেবার যদি অনেক কারণও থাকে, তবুও যদি মাত্র একটি কারণ কাফের না হবার জন্য বাহির
করা যায়, তা হলে কোনো মতেই মুফতি এবং কাজি কাফের ফতোয়া দিতে পারবেন না।’ এটা অত্যন্ত বেদানাদায়ক একটি
বিষয় যে, ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত কিছু আলেমরা একে অপরের উপর যা-তা মন্তব্য করে গেছেন। যেমন আমাদের সুনিড়ব
জামাতের হজরত ইমাম আবু হানিফা-কে তারিখ-ই খতিব নামক কেতারের লেখক খতিব বাগদাদি দাজ্জাল বলেছেন।
হজরত ইউসুফ সাউরি জঘন্য এবং অপাঠ্য সমালোচনা করে গেছেন ইমাম আবু হানিফা-কে। এ রকমভাবে হজরত ইমাম
মালিক-কে কঠোর সমালোচনা করেছেন মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক এবং ইবনে আবি জিব। হজরত ইমাম শাফেয়িকে ইবনে
মুইন। ইত্যাদি বহু নমুনা তুলে ধরা যায়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, হানাফিরা শাফেয়িদেরকে, আবার শাফেয়িরা হানাফিদেরকে যেমন কঠোর সমালোচনা
করেছেন, তেমনি মালেকিরা হাম্বলিদের এবং হাম্বলিরা উপরে বর্ণিত তিন মহান ইমামদেরকে কঠোর সমালোচনা করেছেন
এবং একে অপরকে গোমরাহ বলেছেন।
মহানবির প্রিয় সাহাবা এবং আপন চাচাত ভাই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সুন্দর একটি উপদেশ দিয়ে
গেছেন এই বলে যে, ‘যেখানেই জ্ঞান পাবে তা অর্জন করে নিও। আর ফেকাহ্ শাস্ত্রের পন্তিতদের ঝগড়া এবং সমালোচনা
গ্রহণ করতে যেও না। কারণ, এরা খোঁয়াড়ে বাস করা মানুষরূপী ভেড়ার দল। এরা একে অন্যের উপর চড়াও হয়।’

নবীগন ও অলীগন ইন্তেকালের পরও জীবিত থাকেনঃ

নবীগন ও অলীগন ইন্তেকালের পরও জীবিত থাকেনঃ
সহিহ হাদিস থেকেঃ

1→
হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّون.

‘নবীগণ কবরে জীবিত, নামায আদায় করেন’।
★ মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৩৪২৫; 
★ হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী, হাদীস ১-৪

যারা এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন:
১. ইমাম বাইহাকী রাহ. (হায়াতুল আম্বিয়া, পৃ. ৫)
২. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (ফাতহুল বারী  ৬/৬০৫)
৩. হাফেজ ইবনুল মুলাক্কিন রাহ. (আল-বাদরুল মুনীর ৫/২৮৫)
৪. হাফেজ নূরুদ্দীন হাইসামী রাহ. [এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত] (মাজমাউয যাওয়াইদ, ৮/২১১, হাদীস ১৩৮১২)
৫. আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. (ইম্বাউল আযকিয়া বিহায়াতিল আম্বিয়া, আল-হাবী, পৃ. ৫৫৫)
৬. আল্লামা মুনাবী রাহ. (ফায়জুল কাদীর, হাদীস ৩০৮৯)
৭. শাওকানী রাহ. (তুহফাতুয যাকিরীন পৃ. ২৮; নাইলুল আউতার, ৩/২৪৭)
৮. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানীঃ সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস ৬২১;  
৯. আলবানীঃ সহীহুল জামিইস সাগীর; 
১০. আলবানীঃ আলজানাইয; 
১১. আলবানীঃ আত-তাওয়াসসুল।


2→


হযরত আউস ইবনে আউস রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّ مِن ْأَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ، وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ" قَالَ: قَالُوا: يَارَسُولَ اللَّهِ، وَكَيْف َتُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُولُونَ: بَلِيتَ، فَقَالَ: "إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ".

‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি হল জুমার দিন। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, আর এ দিনেই সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করবে। সুতরাং এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে ছালাত ও সালাম পাঠাও। তোমাদের ছালাত আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ বললেন, আমাদের ছালাত আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, তখন যে আপনি (মাটির সাথে মিশে) ক্ষয়প্রাপ্ত (নিঃশেষিত) হয়ে যাবেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন’। (৯)
অর্থাৎ কবরে নবীগণের দেহ দুনিয়ায় জীবিত মানুষের মতই অক্ষত থাকে। এর সাথে রূহের গভীর সম্পর্কও থাকে। ফলে কবরে থেকেও সালাত ও সালাম পাওয়াতে কোনো অসুবিধা হবে না। 

★ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৪৭; 
★ সহীহ ইবনে খুযাইমা,  ৩/১১৮ হাদীস ১৭৩৩; 
★ মুসতাদরাকে হাকেম, ১/২৭৮, হাদীস ১০২৯; 
★ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬১৬২
হাদীসটিকে যারা সহীহ বলেছেন
১. ইমাম হাকেম নিশাপুরী রাহ. বলেন, হাদীসটি বুখারীর শর্তানুযায়ী সহীহ। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১০২৯)
২. ইমাম যাহাবী রাহ. হাকেমের সমর্থন করেছেন। (তালখীসুল মুসতাদরাক লিল ইমাম আয-যাহাবী, আলমুসতাদরাক, হাদীস ১০২৯)
৩. ইমাম নববী রাহ. (আল-আযকার, হাদীস ৩৩২)
৪. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (নাতাইজুল আফকার  ৪/১৮)
৫. হাফেজ ইবনুল কায়্যিম রাহ.। তিনি বলেন, যে এ হাদীসের সনদে গভীর দৃষ্টি দেবে, তার মধ্যে এটি সহীহ হওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকবে না। কেননা এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ, ইমামগণ তাঁদের হাদীস গ্রহণ করেছেন।(১০) -জালাউল আফহাম পৃ.৮১-৮৫;  যাদুল মা‘আদ ১/৩৫৪
৬. হাফেজ ইবনে কাসীর রাহ. (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আহযাব, ৩/৫১৪)
৭. হাফেজ ইবনে আব্দুল হাদী (আছছারিমুল মুনকী পৃ. ২১০) (১১)
৮. শায়খ শুআইব আরনাউত (এর সনদ সহীহ, মুসনাদে আহমদের টীকা, ২৬/৮৪ হাদীস  ১৬১৬২)
৯. ড. মুছতাফা আজমী (সহীহ ইবনে খুযাইমার টীকা হাদীস  ১৭৩৩)
১০. শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ. (সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস ১৫২৭; সহীহু আবি দাউদ, সহীহুত তারগীব, তাখরীজুল মিশকাত ইত্যাদি)
১১. গাইরে মুকাল্লিদ আলেম উবাইদুর রহমান মোবারকপুরী (মিরআতুল মাফাতীহ) (১২)
১২. শাওকানী রাহ. (তুহফাতুয যাকিরীন)
১৩. শায়েখ বিন বায (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১/৯৩)
১৪. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. হাদীসটি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।  (৪/২৯৬, ২৬/১৪৭)


3→


এ হাদীসটি ভিন্ন সনদে হযরত আবুদ-দারদা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে- (فنبي الله حي يرزق) : “সুতরাং আল্লাহর নবী জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত”। -সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদীস ১৬৩৭

এ বর্ণনার সকল রাবী নির্ভরযোগ্য।
★ হাফেজ বূছিরী (মিছবাহুয যুজাজায়) 
★ ইমাম নববী (আল-আযকারে),
★ হাফেজ মুন্যিরী (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবে), 
★ ইবনে হাজার (তাহযীবুত তাহযীবে যায়েদ ইবনে আইমান-এর আলোচনায়), 
★ মুল্লা আলী কারী রাহ. (মিরকাতে) এবং 
★ শাওকানী রাহ. (নাইলুল আউতারে) ও 
★ শামসুল হক আযীমাবাদী (আওনুল মা‘বুদে) এর সনদকে জায়্যিদ তথা উত্তম বলেছেন। 

Note :
বিশেষত হাদীসের মূল অংশটি পূর্বোক্ত আউস ইবনে আউস বর্ণিত সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত। 
আর শেষ অংশটি সূরা বাকারার ১৫৪ নম্বর আয়াত ও সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ নম্বর আয়াত দ্বারা সমর্থিত। তাই হাদীসের প্রথম অংশের ন্যায় শেষ অংশটিও সহীহ।

4→



হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيّ َنَائِيًا مِنْهُ أُبْلِغْتُه.

“যে আমার কবরের পাশে আমার উপর সালাত পেশ করে আমি তা শুনি। এবং যে দূরে থেকে আমার উপর দরূদ পড়ে তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়”।

★ কিতাবুস সওয়াবঃ ইমাম আবু হাইয়ান ইবনু আবিশ শায়খ ইছফাহানী, 
★ ফাতহুল বারী ৬/৬০৫, 
★ আল-কাওলুল বাদী পৃ. ১৬০

যারা এ হাদীসকে শক্তিশালী বলেছেন-

১. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (ফাতহুল বারী ৬/৬০৫)
২. হাফেজ সাখাবী রাহ. (আল-কওলুল বাদী পৃ.১৬০)
৩. আল্লামা সুয়ূতি রাহ. (আল-লাআলিল মাছনূআহ ১/২৮৫)
৪. ইবনু র্আরাক্ব আল-কিনানী (তানযীহুশ্ শরীয়াহ, হাদীস ৫৪০)
৫. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া সম্ভবত এ শক্তিশালী সূত্রটি পাননি। তাই অন্য একটি দুর্বল সূত্র উল্লেখ করে বলেন : হাদীসের এ সূত্রে দুর্বলতা সত্তে¡ও বর্ণনাটির বিষয়বস্তু প্রমাণিত। অন্যান্য হাদীস দ্বারা এর সমর্থন পাওয়া যায়। (মাজমূউল ফাতাওয়া ২৭/১১৬-১১৭, আর-রাদ আলাল আখ্নাঈ, হিদায়াতুর রুওয়াত ফি তাখরীজিল মিশকাত-এর টীকা, আলবানী রাহ. ১/৪২১) 
৬. আল্লামা ইবনু আব্দিল হাদী। তিনিও ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর মত অন্যান্য হাদীস দ্বারা এ হাদীসের বিষয়বস্তু প্রমাণিত সাব্যস্ত করেছেন। 
৭. মাহমূদ সাঈদ মামদূহ (রাফউল মানারাহ লিতাখরীজি আহাদীসিত তাওয়াসসুল ওয়ায্ যিয়ারাহ)



5→


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ لِلَّهِ مَلائِكَةً سَيَّاحِين فِي الأَرْض ِيُبَلِّغُونِي عَنْ أُمَّتِي السَّلامَ.
“আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন”। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯১৪
যারা এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন:
১. ইমাম হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫৭৬, ২/৪২১)
২. ইমাম যাহাবী রাহ. হাকেমের সমর্থন করেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২/৪২১)
৩. হাফেজ ইবনুল কায়্যিম একে সহীহ বলেছেন। (জালাউল আফহাম পৃ.২৪)
৪. শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, হাদীসটি সহীহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। (সহীহ ইবনে হিব্বানের টীকা ৩/১৯৫)


6→


 হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لَاتَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا، وَلَاتَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا، وَصَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُم.

“তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না। আর আমার কবরে উৎসব করো না (বার্ষিক, মাসিক সাপ্তাহিক কোনো আসরের আয়োজন করো না)।আমার উপর সালাত পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছবে। 
★ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২০৪২; 
★ শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩৮৬৫
★ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন, এর সনদ সহীহ। 
(ফাতহুল বারী ৬/৬০৬, আরো দেখুন, মজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২৬/১৪৭)


7→

হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَا مِن أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ، إِلَّا رَدَّ اللَّهُ عَلَيّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَام.

‘(মৃত্যুর পর) যে কেউ আমাকে সালাম করবে, সেই আমাকে এ অবস্থায় (জীবিত) পাবে যে, আল্লাহ তাআলা আমার মধ্যে (এর পূর্বেই) রূহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। (অর্থাৎ মৃত্যুর পরই আমার রূহ আমার মধ্যে ফিরিয়ে দিয়ে জীবিত করে দেবেন) যাতে আমি তার সালামের জবাব দেই’। )সুনানে আবু দাউদ হা.২০৪১((১৮)
যারা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন
★ ইমাম নববী ও ইমাম সাখাবী রাহ. বলেন, হাদীসটি সহীহ। 
★ রিয়াযুস ছালিহীন; আল-মাকাছিদুল হাসানাহ) শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানী ও বর্ণনাটি তাঁর ‘আস-সহীহায়’ উল্লেখ করেছেন। (সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস ২২২৬)

হাদীসের অর্থঃ

হাদীসের অর্থ হল মৃত্যুর পরই আমার মধ্যে রূহ ফিরিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে জীবিত করবেন। আর এ জীবন কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। ফলে যে কেউ আমাকে সালাম করলেই জীবিত পাবে। আমি তার সালামের জবাব দেব। কেউ বলতে পারেন যে, হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হল- যখনই কেউ আমাকে সালাম করবে তখনই আমার মধ্যে রূহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর এর পূর্বে আমি মৃত ছিলাম। কিন্তু এ অর্থ সঠিক নয়। কারণ, ‘আল্লাহ তাআলা আমার রূহ আমার মধ্যে ফিরিয়ে দেন’ এ কথার অর্থ যদি হয়, ‘এর পূর্বে আমি মৃত ছিলাম’, তাহলে পূর্ববর্তী সকল হাদীসের সাথে এ হাদীস সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। নবী যদি শুধু সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য জীবিত হন, তাহলে ‘নবীগণ কবরে জীবিত নামায আদায় করেন’- মর্মে বর্ণিত হাদীসের কী অর্থ বাকী থাকে। অথচ সবগুলোই নবীজীর কথা। তাই এগুলোর এমন অর্থই করতে হবে যাতে পরষ্পরে সাংঘর্ষিক না হয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

→→ হাদীসের উল্লিখিত অর্থটি করেছেন শাস্ত্রের ইমাম আহমদ ইবনে হুসাইন আল-বাইহাকী রাহ. তাঁর ‘হায়াতুল আম্বিয়া’ গ্রন্থে ও হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানী রাহ. ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে। আল্লামা সুয়ূতী রাহ. আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্র ও হাদীসের বর্ণনার আলোকে এ ব্যাখ্যার যৌক্তিকতা ও যথার্থতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন হাদীসের শেষাংশের মূল রূপ হল- (إلا وقد رد الله علي روحي)। আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী রাহ.ও এটিকে হাদীসের যথার্থ অর্থ বলে উল্লেখ করেছেন।  

★ আল-হাবী, সুয়ূতী রহ. পৃ. ৫৫৭, ৫৬১; 
★ ফাতহুল বারী ৬/৬০৬; 
★ আল-ফাতাওয়াল কুবরা, লিল হাইতামী ২/১৩৫ হজ্ব অধ্যায়; 
★ মাকামে হায়াত পৃ.৪৩৫
এ হাদীসের আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন- ফাতহুল বারী, আল-কাউলুল বাদী, আল-বাদরুল মুনীর-লিল ইমাম ইবনুল মুলাক্কিন, ইম্বাউল আযকিয়া, সুয়ূতী।




ইমামগণ 
এর 
আকিদা 
থেকেঃ




❑ আরেফ বিল্লাহ্ ওয়ালী আল্লাহ্ হাযরাত সাইয়্যিদ আহমাদ কাবীর আর রিফায়ীঃ 

তৎ যামানার হাদিস ও ফিকাহ্ এর ইমামগনের এক কাফেলা নিয়ে হারামাইনে ক্বিরামে হাজ্জ সম্পাদন করে হাজী সাহেবানদের এক কাফেলা সঙ্গে নিয়ে খালি পায়ে রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের রওযা মুবারাক জিয়ারাতে গিয়ে সলাত ও সালাম পেশ করে রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম সালামের দাস্ত মুবারক চুম্বনের অনুনয় প্রকাশ করেন।
নবীজী রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম সালামের জবাব প্রদানপূর্বক দাস্ত মুবারাক বের করে দিলে নবীজী রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর সাইয়্যিদ আহমাদ কাবীর আর রিফায়ী রহ. নাবীজী রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের দাস্ত মুবারাক চুম্বনের সৌভাগ্য লাভ করেন।

তখন নব্বই হাজারেরও বেশী হাজী-যিয়ারতকারী উপস্থিত ছিলেন। সকলেই সালামের জবাব সমানভাবে শ্রবন করেছিলেন এবং উনাকে তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ ইমামগন নবীজী রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের দাস্ত মুবারাক চুম্বন করতে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেন। বিদায় হাজ্জের ভাষনে যেভাবে সকলে সমানভাবে শ্রবন করেছিলেন তখনও কারো সালামের জবাব শ্রবনে ব্যত্যয় ঘটেনি।
ইহা নাবীজী রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের বিশেষ বারযাকি জীবনের বিশেষ মু'জিযা।
নিম্নোক্ত কিতাবসমূহে উত্তম সনদে উক্ত ঘটনাটি বিস্তারিত ৬টি ভিন্ন সনদে বর্নিত হয়েছে:

★ মুখতাসার আখবার আল খুলাফা; ইমাম ইবনুস সায়ী র. (ওফাত ৬৭৪হি.)
★ আল হাওয়ী লিল ফাতাওয়ী; ইমাম জালালুদ্দিন আসসূয়ূতী র.
★ তারিখে ইবনে কাসীর; হাফিয ইবনু কাসীর (রহঃ)

সর্বপ্রথম ৪৪৫ হিজরীতে মানছ ইবনে মুহাম্মদ আল-কান্দারী নামক এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরে জীবিত থাকার উপর নানারূপ আপত্তি উত্থাপন করে। এবং এর উপর ভিত্তি করেই কিয়ামত পর্যন্ত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালত বাকি থাকাকে অস্বীকার করে।
তখন যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ইমাম আহমদ ইবনে হুসাইন আল-বাইহাকী রাহ. (মৃত্যু ৪৫৮ হি.) তার মত খণ্ডন করে ‘হায়াতুল আম্বিয়া’ নামে একটি কিতাব রচনা করেন। এতে তিনি নবীদের কবরে জীবিত থাকা বিষয়ক আকীদার দলিল-প্রমাণ তুলে ধরেন।
★ মাকামে হায়াত; পৃ., ৫৪।

❑ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্'র ইমামগনের আকিদাঃ

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্'র আকীদা হল, মৃত্যুর পর সকল নবীদের কবরে পুনরায় বিশেষ জীবন দান করা হয়েছে। 

® ইমাম বাইহাকী রাহ. তাঁর ‘আল ই‘তিকাদ’ গ্রন্থে বলেন-

والأنبياء عليهم الصلاة والسلام بعدما قبضوا ردت إليهم أرواحهم، فهم أحياء عند ربهم كالشهداء.

“সকল নবীর রূহ কবজ করার পর তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা শহীদদের ন্যায় তাদের রবের কাছে জীবিত”।
★ আল ইতিকাদ পৃ.৪১৫ দারুল ফযীলাহ রিয়াদ;
★ আত-তালখীছুল হাবীর ২/২৫৪;
★ আল বাদরুল মুনীর ৫/২৯২

® হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন,

وقد تمسك به من أنكر الحياة في القبر، وأجيب عن أهل السنة المثبتين لذلك بأن المراد نفي الموت اللازم من الذي أثبته عمر بقوله: "وليبعثه الله في الدنيا ليقطع أيدي القائلين بموته" وليس فيه تعرض لما يقع في البرزخ، وأحسن من هذا الجواب أن يقال: إن حياته صلى الله عليه وسلم في القبر لا يعقبها موت بل يستمر حيا، والأنبياء أحياء في قبورهم، ولعل هذا هو الحكمة في تعريف الموتتين حيث قال :لا يذيقك الله الموتتين أي المعروفتين المشهورتين الواقعتين لكل أحد غير الأنبياء. (فتح الباري، باب لو كنت متخذا خليلا لتخذت أبا بكر خليلا)

“যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে জীবিত থাকাকে অস্বীকার করে তারা হযরত আবু বকর রা.-এর এ বক্তব্য দিয়ে দলিল পেশ করতে চায়-‘আল্লাহ আপনাকে দুইবার মৃত্যু দিবেন না’। আর আহলুস সুন্নাহ- যারা নবীর কবরে জীবিত থাকায় বিশ্বাস রাখেন, এদের পক্ষ থেকে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে, হযরত আবু বকর রা.-এর বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল উমর রা.-এর ভুল ধারণার খণ্ডন করা। উমর রা. বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলা নবীজীকে আবার দুনিয়াতে জীবিত করবেন ...’। এ কথার মধ্যে বারযাখে কী হবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। অবশ্য হযরত আবু বকর রা.-এর এ কথার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হল, কবরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জীবন পেয়েছেন তারপর আর কোনো মৃত্যু আসবে না। বরং তিনি বরাবরই কবরে জীবিত থাকবেন, আর নবীগণ কবরে জীবিত। ...।”
★ ফাতহুল বারী, আবু বকরের ফযীলত অধ্যায় ৭/৩৩

® শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার এ বক্তব্যে স্পষ্টই বলেছেন, আহলুস-সুন্নাহর বিশ্বাস হল, নবীগণ কবরে জীবিত।


হাফেজ সাখাবী রাহ. বলেন, হায়াতুল আম্বিয়া বিষয়ের উপর পুরো উম্মতের ইজমা রয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার মাক্কী আল-হাইতামী রাহ.ও তাই বলেছেন। 
★ আল-কাওলুল বাদী পৃ. ৩৪৯; 
★ আল-ফাতাওয়াল কুবরা লিল হাইতামী ২/১৩৫, হজ্ব অধ্যায়; 
★ হিদায়াতুল হায়ারান; 
★ মাযাহেরে হক্ব; 
★ আনওয়ারে মাহমূদ।


® শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াঃ

১. 
ইবনে তাইমিয়া বলেন-

فلا تتخذوا القبور مساجد، فإني أنهاكم عن ذلك. فهذه نصوصه الصريحة توجب تحريم اتخاذ قبورهم مساجد، مع أنهم مدفونون فيها، وهم أحياء في قبورهم، ويستحب إتيان قبورهم للسلام عليهم.

“...এ ধরনের হাদীসের সুস্পষ্ট উক্তি দ্বারা নবীদের কবরকে মসজিদ বানানো হারাম সাব্যস্ত হয়। তবে এ কথা সত্য যে, তারা তাতে সমাহিত আছেন এবং তাঁরা তাঁদের কবরে জীবিত। তাদের কবরে সালাম দেওয়ার জন্য উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব ”। 
★ মাজমুউল ফাতাওয়া, ২৭/৫০২

২. 
তিনি বলেন, “নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য নবীগণের দেহকে গ্রাস করা হারাম করে দিয়েছেন’। এ হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিনি নিকটবর্তী ব্যক্তির কাছ থেকে সালাত ও সালাম শুনেন, আর দূরবর্তী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাঁর কাছে সালাত ও সালাম পৌঁছে। 
★ মাজমুউল ফাতাওয়া ২৬/১৪৭,
 ৪/২৯৬; 


★ আর-রাদ আলাল আখনাঈ পৃ. ১৩১; 


★ জামিউ মাসাইলি ইবনে তাইমিয়া, ইশরাফ, বকর আবু যায়েদ ৩/১০৬ ৪/১৯১


৩. 
শায়খ আব্দুল্লাহ বিন ছালেহ বিন আব্দিল আযীয হায়াতুল আম্বিয়া বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া-এর আক্বীদার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, “নবীগণ কবরে জীবিত। তাদের জীবন শহীদদের জীবনের চেয়ে আরো পরিপূর্ণ। -সূরা বাকারা ১৫৪, সূরা আলে ইমরান ১৬৯
ইবনে তাইমিয়া -এর উপর অপবাদ আরোপকারীদের এ কথা যে, তিনি ‘হায়াতুল আম্বিয়া’য় বিশ্বাস করেন না- একেবারেই মিথ্যা। বরং তিনি নবীদের কবরে জীবিত থাকার বিষয় সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। ...হায়াতুল আম্বিয়ার দলিল হল নবীজীর হাদীস- ‘নবীরা কবরে জীবিত’।... 
★ দা‘আবিল মুনাবীন লিশাইখিল ইসলাম পৃ.২৯৪ 


® ইবনুল কাইয়্যুমঃ

তিনি উদ্ধৃত করেন, “মৃত্যুর পর শহীদগণ তাঁদের রবের কাছে জীবিত এবং রিযিকপ্রাপ্ত ও আনন্দিত। এটি দুনিয়ায় জীবিত মানুষেরর বৈশিষ্ট্য। শহীদদের অবস্থাই যেহেতু এমন তো নবীগণ তো এর আরো বেশি হকদার। পাশাপাশি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত যে, মাটি নবীদের দেহ খায় না। ... অনুরূপ বর্ণনাগুলোর সারকথা হল, এটা নিশ্চিত যে, নবীগণের মৃত্যুর অর্থ তাঁদেরকে আমাদের থেকে এমনভাবে আড়াল করে নেওয়া হয়েছে যে, আমরা অনুধাবন করতে পারি না, যদিও তারা বিদ্যমান (জীবিত)। যেমন ফেরেশতাগণ জীবিত কিন্তু তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে না।”। 
★ কিতাবুর রূহ পৃ. ৩৬, ৪৪
★ জালাউল আফহাম

® ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ.

ওয়াকী ইবনুল র্জারাহ-এর জীবনীতে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ইমাম যাহাবী রাহ. বলেন, “সাধারণ মৃতদের দেহ নষ্ট হয়ে যাওয়া, দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া এবং মাটিতে মিশে যাওয়ার মত নবীদের দেহেও তাই ঘটে এমন বিশ্বাস রাখা নিষেধ। বরং এক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত উম্মত থেকে ভিন্ন। তাঁর দেহ পঁচবেও না, মাটিতেও খাবে না এবং শরীরের ঘ্রাণও পরিবর্তন হবে না। বরং তিনি এখনো এবং সব সময়ই মিশক থেকে বেশি সুগন্ধিপূর্ণ। তিনি তাঁর কবরে জীবিত; বারযাখে তাঁর প্রাপ্য জীবনই তিনি পেয়েছেন যা সমস্ত নবীগণের চেয়েও পূর্ণাঙ্গতম। আর নবীদের হায়াত নিঃসন্দেহে শহীদদের হায়াতের চেয়ে পূর্ণাঙ্গতর ও উন্নততর যা কুরআনে স্পষ্ট উক্তিতেই বলা হয়েছে- “শহীদগণ রবের কাছে জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত”। (আলে ইমরান : ১৬৯) বর্তমানে আলমে বরযাখে তাঁদের (নবীদের) জীবন সত্য। কিন্তু তা সবদিক থেকে দুনিয়ার জীবনের মত নয়, আবার জান্নাতের জীবনের মতও নয়। বরং আসহাবে কাহফের জীবনের সাথে তাঁদের জীবনের কিছুটা মিল পাওয়া যায় ”। 
★ (সিয়ারু আলামিন নুবালা ৮/৯৯)


® আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ.
ইমাম ইবনে কাসীর রাহ. বলেন,  “মৃতদের শ্রবণ বিষয়ে ইবনে উমর রা.-এর বর্ণনাই উলামাদের নিকট সহীহ। এর অনেক সমর্থক বর্ণনাও রয়েছে। আবার এর সহীহ হওয়ার অনেক দিকও রয়েছে।... পূর্ববর্তী সালাফের সকলেই মৃতদের শুনতে পাওয়ার বিষয়ে একমত। আর এ বিষয়ে সালাফ থেকে মুতাওয়াতির (অসংখ্য সূত্র বিশিষ্ট) বর্ণনা রয়েছে যে, মৃতব্যক্তি কবর যিয়ারতকারীকে চিনতে পারে এবং তাতে আনন্দিত হয়।... ” 
★ সূরা রূম আয়াত : ৫২-এর অধীনে তফসীরে ইবনে কাসীর

® ইবনুল কাইয়্যুমঃ

ইবনুল কায়্যিম বলেন, “আর আপনি কবরবাসীদেরকে শুনাতে পারবেন না” এ আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করাও ঠিক নয়। কারণ, উপস্থাপন ভঙ্গি থেকে আয়াতের এ অর্থ বুঝা যায় যে, কাফিরদের অন্তঃকরণ মৃত, আপনি তাদেরকে এমনভাবে শোনাতে পারবেন না যে, তারা এই শ্রবণের দ্বারা উপকৃত হবে। যেমন আপনি কবরবাসীকে এমনভাবে শোনাতে সক্ষম না, যেভাবে শোনালে তারা উপকৃত হয়। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, কবরবাসী কিছুই শুনতে পায় না। এটা কী করে হয়, অথচ
 (১) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মৃতব্যক্তি তাকে কবরস্থকারীদের (প্রস্থানকালে) জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।
 (২) এবং এও বলেছেন যে, বদরের নিহত কাফেররা তাঁর কথা ও সম্বোধন শুনেছে। 
 (৩) তাছাড়া তিনি মৃতব্যক্তিদের সালামের ক্ষেত্রে সম্বোধন পদ ব্যবহার করেছেন, যা এমন উপস্থিত ব্যক্তিকেই করা যেতে পারে, যে শুনতে পায়। এবং তিনি কবরে সালাম দেওয়াকে সুন্নত সাব্যস্ত করেছেন।
 (৪) এ কথাও বলেছেন যে, যে মুমিন তাদেরকে সালাম করে, তারা তার সালামের জবাব দেয়।

...প্রকৃতপক্ষে আয়াতের অর্থ হল: “আল্লাহ তাআলা যাদের শোনাতে চান না আপনি তাদের শোনাতে পারবেন না। (আপনার কথা শুনেও ওরা না শুনার মতই কোন উপকার পাবে না) আপনি তো শুধু সতর্ককারী। আপনাকে ভীতি প্রদর্শনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং আপনি সে সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হবেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যাদেরকে শোনাতে চান না, তাদের ব্যাপারে আপনাকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি।  
★ কিতাবুর রূহ, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া লাইব্রেরী ২য় প্রকাশ ২০০১ইং পৃ. ৭২-৭৩; মূল আরবী পৃ. ৪৬

কোরবানি

  কোরবানি


কোরবানি সম্পর্কে শরিয়তের যে বিধান রয়েছে তা আমরা সবাই জানি। কোরবানিতে যে পশু জবাই দেয়া হয় তা শরিয়তের
নিয়ম-কানুন তথা আইন মেনে এর গোস্ত ভাগবণ্টন করে গরিব-মিসকিন, আত্মীয়-স্বজনকে দিই ও নিজে গ্রহণ করে থাকি।
নবি ইব্রাহিম (আ.)-এর তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার জন্য যে ঘটনা তা জেনে আসছি। প্রিয় বস্তু
কোরবানি করার আদেশ পালন করতে যাওয়ার ঘটনা ছোট-বড় সবাইকে অবাক করে। নবি ইব্রাহিম (আ.) সে পরীক্ষায়
অবতীর্ণ হন এবং আলাহর সে প্রেমের পরীক্ষায় নবি ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) প্রেম দিয়েই পরীক্ষায়
ভালোভাবে উত্তীর্ণ হন। এ ঘটনাও সবার জানা। কিন্তু যে প্রশড়ব এসে যায় তা হলো, নবি ইব্রাহিম (আ.)-এর সাথে একজন আম
মানুষ তথা সাধারণ মানুষের তুলনা কি হয়? তুলনা হতে পারে না। নবি ইব্রাহিম (আ.)-এর ঘটনা আমাদের শিক্ষা নেওয়ার
অপূর্ব সুযোগ। কোরবানির বিষয়সমূহ গবেষণা তথা বিশেষণ করা প্রয়োজন। কোরবানির বিষয়সমূহ গবেষণার জন্য একজন
অন্তর্দৃষ্টিপ্রাপ্ত কামেল মোর্শেদ হলে উত্তম হয়।
আমার মোর্শেদ কেবলা ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন, তা হলো : জান
(জীবন) দেয়া সহজ, কিন্তু দিল দেয়া কঠিন। বিষয়টি এই জন্য বলা হলে যে অর্থশালী/ সম্পদশালী ধনী ব্যক্তির জন্য একটা
পশু কিনে জবাই করা যতখানি কঠিন কিংবা সহজ বরং তার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ হলো নিজের আমিত্বকে বিসর্জন করা।
আমিত্বকে বর্জন করা অতি সাধারণ মানুষের কাজ নয়। সাধক ব্যতীত এ বর্জন করার কাজটি সবাই করতে সক্ষম হবে না।
ভিতরের খানড়বাস সμিয় থাকলে সেই মানুষটি একা বা ‘উদুউনি’ (একা) নয়। সে একের অধিক বা বহু কিংবা আরবিতে যাকে
বলা হয় ‘উদুউনা’ (বা একের অধিক)। সাধারণ মানুষের নফ্সের সাথে অতি গোপনে মিশে থাকা খানড়বাস (মিন সাররিল ওয়াস
ওয়াসিল খানড়বাস : সুরা নাস)-কে তাড়ানোর গভীর ধ্যানসাধনা (মোরাকাবা-মোশাহেদা) না করার কারণে নিজের নফ্সের সাথে
মিশে থাকা আমিত্ব দীর্ঘায়িত হয়। সে অবস্থায় একজন সাধারণ তথা আম মানুষ পশু জবাই দিলেই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য
অর্জন হবে কি না তা গভীরভাবে অনুধাবন করলেই বোঝা যাবে। পশু জবাই দেয়া কোরবানিটিও ‘কোরবানি’ তা অস্বীকার করার
কোনো উপায় নেই। তবে একমাত্র চার পায়ের নিরীহ পশু জবাই করে কোরবানির আসল উদ্দেশ্যের কথা ভুলে গেলে
আত্মশুদ্ধির কিংবা ইব্রাহিম (আ.) নবির আদর্শের কোরবানির তাৎপর্য অর্জিত হয় না। সুরা হজের ৩৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়
স্পষ্টই বোঝা যায় যে কোরবানির গোস্ত, রক্ত কখনই আলাহর
দরবারে পৌঁছায় না, শুধু পৌঁছায় ‘তাকওয়া’। তাকওয়া
অর্জনের লক্ষে ‘জবাই’ আর ‘নির্বিচারে জবাই’ বিষয়টি এক কথা নয়। নিজের ভিতরের পশুরূপী নফ্সের খানড়বাসকে জবাই বা
সংশোধনের সাধনার দ্বারা আমিত্বকে বর্জন করাই উত্তম। তা না হলে শুধু নিরীহ পশু জবাইয়ের মাধ্যমে নিজের ভিতরের
খানড়বাসরূপী শয়তান তথা পশু হাসতে থাকে এবং এরূপ অবস্থা μমগাত চলতে থাকলে সংশোধনের কোনো সাধনাই থাকে না।
কোরবানি সম্পর্কে খুব ভালো গভীর আলোচনা করেছেন সুফি সাধক ও গবেষক সদর উদ্দিন আহম্মদ চিশতি তাঁর
কোরবাণী নামক গ্রন্থে এবং ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী রচিত সুফিবাদ আত্মপরিচয়ের একমাত্র পথ ১ম খণ্ডের
৩৬-৩৭ পৃষ্ঠায়। আমার বিশ্বাস, এ-বইগুলো পাঠ করলে পাঠক উপকৃত হবেন।
ধৈর্যগুণ ইয়া আইয়ুহালাজিনা আমানুস্তাউন বে সবরে ওয়া সালাতে ইনড়বালাহা মা আস সাবেরিন (আল-কোরান) Ñ
অর্থাৎ, “হে ইমানদারগণ! মস্তানি সাহায্য- (আলাহর দানকৃত বিশেষ দয়াগুণকে বুঝিয়েছেন) কামনা কর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে নিশ্চয়ই আমি ধৈর্যশীলদের সাথেই আছি।”
ধৈর্যগুণ আলাহরপছন্দনীয় একটি গুণ, যা আমানু অবস্থায় অর্জন করা কঠিন। আমানুর ইমান আর মোমিন ব্যক্তির ইমান
(বিশ্বাস) এক নয়। তাই আমানুদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন, মোমিনদেরকে নয়। কারণ, আমানুর মধ্যে বিশ্বাসের গভীরতা না
থাকায় সে আমানু কেমন করে কামনা করে আলাহর বিশেষ দয়া? তাই সে আমানু যেন সবুর (ধৈর্য) ও সালাত (আলাহর সাথে
যোগাযোগ) বজায় রাখেন। তারপর আলাহ আশ্বাস দিয়েছেন নিশ্চয়ই শব্দটি ব্যবহার করে ‘ইনড়বালাহ’ শব্দটির মাধ্যমে। ৫০০বার বা ৫০০০ বার যে কোনো তসবিহ্ মুখ দ্বারা নিমেষেই দ্রুত পড়ে শেষ করা সম্ভব, কিন্তু কোনো বিষয় সম্পর্কে আমানু ধৈর্যধারণ করতে হিমশিম খেয়ে যাবে।
ধৈর্যগুণ মন দিয়ে নিতে হয়, দেহ দিয়ে নয়। ধৈর্যগুণ নিতে মনকে পোড়াতে হয়। ধৈর্যগুণ অর্জন করতে আমানুদের মনের
সাধনার প্রয়োজন। অতি সাধারণ মানুষের ধৈর্যধারণ করতে অনেক কষ্ট হয়। সবর বা ধৈর্যের সাথে সালাতের বিষয়কে অর্থাৎ
রবের সাথে যোগাযোগের বিষয়টির প্রতি শর্ত আরোপ করেছেন। ধৈর্য বিষয়টি কী? ধৈর্য হচ্ছে মনের সাথে না মিলাতে পারা
এমন একটা কঠিন বিষয় যার উপর জয়লাভ করার চেষ্টারত থাকা। এক্ষেত্রে মনের মধ্যে খুব চাপ সৃষ্টি হয়। মন এক্ষেত্রে অস্থির
হয় সমস্ত বাঁধ ভেঙে ফেলার, কিন্তু এসব বিষয় হতে মনকে শান্ত স্থির রাখাই ধৈর্য। বিশ্বাসী ও সাধক না হলে ধৈর্যর বাঁধ ভেঙে
ফেলে।
তাওয়াক্কুল হচ্ছে আলাহর প্রতি ভরসা বা পূর্ণ আস্থা। পূর্ণ আস্থা অর্জন হলে সে ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হবে। বিশ্বাস
অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত কেউ আলাহর ওলি হতে পারে না (মাতলাউ’ল উলুম, প-ৃ ৪৫)। এখানে আরও দেখার বিষয় হলো যে
একজন ধৈর্যশীল ব্যক্তির ধৈর্য বাইরে হতে দেখা সম্ভব নয়। কারণ ধৈর্য কোনো আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়। এটা মন দ্বারা করার
প্রয়োজন হয়, দেহ দ্বারা নয়। এখন কথা হলো, ধৈর্য ও সালাতের মধ্যে ধৈর্য আগে না সালাত আগে? অবশ্যই ধৈর্য আগে।
ধৈর্যধারণ সম্ভব না হলে সালাত বা যোগাযোগের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। ধৈর্য ও সালাত প্রতিষ্ঠা হলে আলাহ
ধৈর্যশীলদের সাথেই আছেন। অর্থাৎ, ধৈর্য ও সালাত হলে শেষ পর্যন্ত ধৈর্যশীলদের সাথেই আলাহ
থাকবেন - এটাই আলাহ্র ঘোষণা।



----------ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী 

ইমাম হুসাইন (রা) এর হত্যায় ইয়াজিদের ভুমিকা :

ইমাম হুসাইন (রা) এর হত্যায় ইয়াজিদের ভুমিকা :


উমাইয়্যা বংশীয় খলিফা ইয়াযীদ ইবনে মু‘আবিয়া তার তিন বছরের শাসনামলে তিনটি বড় ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।


  • তার শাসনামলের প্রথম বছরে তার নির্দেশে ইমাম হুসাইন (আ.) সহ মহানবী (সা.)-এর পরিবারের পঞ্চাশজন শিশু, যুবক ও পৌঢ় ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়; 
  • দ্বিতীয় বছরে তার সেনাদল মদীনায় আক্রমণ চালায় এবং আশিজন সাহাবীসহ দশ হাজার লোককে হত্যা করে এবং এক হাজার মুসলিম নারীর শ্লীলতাহানি ঘটায়; 
  • তৃতীয় বছরে সে আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইরকে দমনের উদ্দেশে মক্কায় আক্রমণের নির্দেশ দেয় ও তার সৈন্যরা পবিত্র কাবা গৃহে অগ্নিসংযোগ করে।

এ প্রবন্ধে আমরা খেলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ইয়াযীদ ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত পর্যন্ত তাঁকে হত্যার যে সকল প্রয়াস চালিয়েছিল, হত্যার নির্দেশ দিয়ে যে পত্রগুলো সে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করেছিল এবং তাঁকে হত্যার পেছনে তার ভূমিকা থাকার অন্যান্য দলিল নিয়ে কয়েকটি শিরোনামে আলোচনা করব।



১. 

মদীনার গভর্নরের প্রতি ইয়াযীদের নির্দেশ : ‘হুসাইন বাইআত না করলে তাকে হত্যা কর’
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইয়াযীদ কেবল তার নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার সাপেক্ষেই ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যা করা থেকে নিবৃত্ত হত। ঐতিহাসিক ইয়াকুবী লিখেছেন : ‘ইয়াযীদ মদীনার গভর্নর ওয়ালীদ ইবনে ওকবাকে এ মর্মে পত্র লিখে যে, যখন আমার পত্র তোমার হাতে পৌঁছবে তখন হুসাইন ইবনে আলী ও আবদুল্লাহ্্ ইবনে যুবাইরকে ডেকে পাঠাও এবং তাদের থেকে বাইআত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ কর। যদি তারা অস্বীকার করে, তবে তাদের মস্তক বিচ্ছিন্ন করে আমার নিকট প্রেরণ কর।’
এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে ওয়ালীদ ইমাম হুসাইনকে স্বীয় প্রাসাদে ডেকে পাঠায়। ইমাম হুসাইন তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র আঁচ করে বনি হাশিমের যুবকদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। ওয়ালীদ ইমাম হুসাইনকে বাইআতের প্রস্তাব দিলে তিনি তার জবাবে বলেন : ‘হে আমীর! আমরা নবীর আহলে বাইত, রেসালতের খনি; আমাদের গৃহে ফেরেশতাদের আনা-গোনা হত, (তা ছিল) রহমত অবতীর্ণের ক্ষেত্র, মহান আল্লাহ্ সকল কল্যাণের শুরু করেছেন আমাদের থেকে এবং আমাদের মাধ্যমেই তার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। কিন্তু ইয়াযীদ হল দুষ্কৃতিপরায়ণ, মদ্যপায়ী, সে সম্মানিত ব্যক্তিদের হত্যাকারী এবং প্রকাশ্য পাপাচারী। সুতরাং আমার মত কেউ তার মত কারও হাতে বাইআত করতে পারে না।’
এরূপ জবাব শুনে ওয়ালীদ নিশ্চুপ থাকলেও মারওয়ান ইবনুল হাকাম ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার পরামর্শ দেয়। ওয়ালীদ ইসলামের বিধান মতে ইমাম হুসাইনকে হত্যা জায়েয নয় বলে তা করতে অস্বীকার করে। এ খবর ইয়াযীদের নিকট পৌঁছলে সে ওয়ালীদকে লিখে পাঠায় : ‘যখন আমার পত্র তোমার হাতে পৌঁছবে তখন দ্বিতীয়বারের ন্যায় মদীনার জনগণের নিকট বাইআত নিবে এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইরকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও। কারণ, সে আমাদের নিকট থেকে পালাতে পারবে না। কিন্তু হুসাইনকে হত্যা করে তার মাথা আমার নিকট পাঠিয়ে দাও। যদি তুমি তা কর, তবে তোমার জন্য উন্নত জাতের কিছু ঘোড়া ও আরো মূল্যবান অনেক উপহার পাঠাব।’
কিন্তু ইয়াযীদের পত্র ওয়ালীদের নিকট পৌঁছার পূর্বেই ইমাম হুসাইন মদীনা ত্যাগ করেছিলেন।
এর কিছুদিন পরই ইয়াযীদ ওয়ালীদকে দুর্বলতার অভিযোগে পদচ্যুত করে। এর কয়েক মাস পর ইয়াযীদ একইভাবে ইমাম হুসাইনের দূত মুসলিম ইবনে আকীলের তৎপরতার বিপক্ষে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগে কুফার গভর্নর নোমান ইবনে বাশীরকেও পদচ্যুত করে।

২. 

ইমাম হুসাইনের উক্তি : ‘আমাকে তারা হত্যা করবেই’
তাবারী বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কায় এক জনসমাবেশে লোকদের উদ্দেশ করে বলেন : ‘তোমরা কি জান, ইবনে যুবাইর কি বলছে?’ লোকেরা বলল : ‘না, আমরা জানি না। আল্লাহ্্ আমাদের আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন।’ ইমাম হুসাইন বললেন : ‘ইবনে যুবাইর আমাকে এ মসজিদে অবস্থানের কথা বলেছে এবং দাবি করেছে যে, আমার জন্য সৈন্য সংগ্রহ করবে। কিন্তু আমি আল্লাহ্্র শপথ করে তোমাদের বলছি, আমার জন্য মক্কার এক বিঘত দূরে নিহত হওয়া এর অভ্যন্তরে নিহত হওয়া অপেক্ষা শ্রেয়। আল্লাহ্্র শপথ, যদি আমি আত্মগোপন করি এবং কোন গুহায়ও আশ্রয় গ্রহণ করি, তবু তারা আমাকে খুঁজে বের করা পর্যন্ত বিশ্রাম গ্রহণ করবে না এবং তারা আমার সাথে তা-ই করবে যা তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ বিষয়গুলো থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, ইমাম হুসাইন (আ.) বনি উমাইয়্যার বিদ্বেষের তীব্রতা ও তাঁকে হত্যার অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবহিত ছিলেন।

৩. 

ইয়াযীদ ইমাম হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল
ইয়াকুবী বর্ণনা করেছেন : ‘হুসাইন (আ.) ইরাকের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন জানতে পেরে ইয়াযীদ কুফার গভর্নর হিসেবে উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদকে নিয়োগ দান করে এবং তাকে এ মর্মে পত্র লিখে পাঠায় : আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, কুফার লোকেরা হুসাইনকে ইরাকে আসার আহ্বান জানিয়ে পত্র লিখেছে। আমি নিশ্চিত, সে কুফার দিকে যাত্রা করেছে... যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তবে তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করেছ। আর যদি তা না কর, তবে আমি তোমাকে তোমার মৃত পূর্ব-পুরুষদের নিকট পাঠিয়ে দেব। সুতরাং সাবধান! এ সুযোগকে হাতছাড়া কর না।’


ইবনে আসাম বর্ণনা করেছেন : ‘হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহি, উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদকে লিখে পাঠায় যে, সে ইমাম হুসাইনকে কারবালায় অবরুদ্ধ করেছে। এখন তার করণীয় কী?’ ইবনে যিয়াদ জবাবে লিখে : ‘আমীরুল মুমিনীন ইয়াযীদ ইবনে মু‘আবিয়া পত্র মারফত আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি তার নির্দেশ পালন না করলে আমার সাথে যথেচ্ছ আচরণ, এমনকি আমাকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না।’
এ ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো এ সাক্ষ্য প্রদান করে যে, ইয়াযীদ স্বয়ং উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদের প্রতি ইমাম হুসাইনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল, এমনকি তার এ নির্দেশ পালন না করলে তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল।

৪. 

ইবনে যিয়াদ ইমাম হুসাইনের বিষয়ে নিজের থেকে কখনই কোন পদক্ষেপ নেয়নি
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত পর্যন্ত ইয়াযীদ ও ইবনে যিয়াদের মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ ছিল। কারণ, ইয়াযীদ তাকে নির্দেশ দিয়েছিল সে যেন সবসময় তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং ছোট-বড় সব বিষয়েই তাকে পত্র (দূত) মারফত অবহিত করে। তাবারী লিখেছেন : ‘মুসলিম ইবনে আকীল এবং হানীকে হত্যার পর ইবনে যিয়াদ তাঁদের উভয়ের মাথা কেটে সিরিয়ায় ইয়াযীদের নিকট প্রেরণ করে। ইয়াযীদ তাদের কর্তিত মাথা দেখার পর বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে ইবনে যিযাদকে একটি পত্র লিখে। তাতে সে উল্লেখ করে : ‘আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, হুসাইন কুফার দিকে যাত্রা করেছে। তার সঙ্গে যারা যোগাযোগ রাখে তাদের প্রতি কড়া নজরে রাখ এবং তাদের শনাক্ত করার জন্য কুফায় গুপ্তচরদের নিয়োগ কর ও তাদের গ্রেফতার কর। যে কোন অজুহাতে হোক তার অনুসারীদের বন্দি কর। আর কুফায় যা-ই ঘটে না কেন, আমাকে অবহিত কর। তোমার ওপর আল্লাহ্ রহমত বর্ষিত হোক।’
ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন : ‘যখন ইয়াযীদ জানতে পারে যে, ইমাম হুসাইন কুফার দিকে রওয়ানা হয়েছেন তখন সে ইবনে যিয়াদের নিকট দূত প্রেরণ করে নির্দেশ দেয় তাঁর সাথে যুদ্ধ করার ও তাঁকে (জীবিত অথবা মৃত) সিরিয়ায় পাঠানোর।’

ইবনে আসামের বর্ণনায় এসেছে : ইবনে যিয়াদ গভর্নর হিসেবে কুফায় প্রবেশের পরই কুফার জনগণের উদ্দেশে বক্তব্যে বলে : ‘ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়া আমার নিকট পত্র এবং চার হাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ও দুই লক্ষ দিরহাম প্রেরণ করে এ অর্থ তোমাদের মধ্যে বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। সে আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, আমি যেন তোমাদেরকে তার শত্রু হুসাইন ইবনে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠাই এবং তোমাদের তার আনুগত্যের দাওয়াত দেই।’

আল্লামা সুয়ূতী লিখেছেন : ‘ইয়াযীদ এক পত্রে তার নিযুক্ত কুফার গভর্নর ইবনে যিয়াদকে হুসাইনের সঙ্গে যুদ্ধের ও তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেয়।’
এ বর্ণনাগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, কুফায় যা কিছু ঘটত, ইয়াযীদ সে বিষয়ে শুধু অবহিতই ছিল না; বরং ইবনে যিয়াদ যা করত তা তার নির্দেশ অনুযায়ী ও তার অনুমতি সাপেক্ষেই করত। ফলে ইবনে যিয়াদের কর্মের দায় প্রথমত ইয়াযীদের ওপরই বর্তায়।





৫. 

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হত্যায় ইয়াযীদ আনন্দ ও দম্ভ প্রকাশ করেছিল
ইবনে আসাম, আবুল ফারাজ ইসফাহানী এবং ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কর্তিত পবিত্র মাথা ইয়াযীদের নিকট নেয়া হলে সে আনন্দিত হয়ে ইবনে যেবারার নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করে তার মনোভাব প্রকাশ করে :

لعبت هاشم بالملک فلا خبر جاء و لا وحی نزل
لستُ مِن خندف ان لم انتقم مِن بنی احمد ما کان فعل
قد قتلنا قرم ساداتهم و عدلنا میل بدر فاعتدل

‘বনি হাশিম রাজত্ব নিয়ে খেলা করেছে। প্রকৃতপক্ষে কোন ঐশী বার্তাও আসেনি, আর কোন ওহীও অবতীর্ণ হয়নি। আমি যদি বনি আহমাদ অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)-এর বংশধরদের থেকে যা সে করেছিল তার প্রতিশোধ না নেই তবে আমি খিনদিফের (সন্তানদের) অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমরা তাদের নেতাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়কে হত্যা করেছি এবং বদরের (নিহতের প্রতিশোধ গ্রহণ করে) সমান সমান হয়েছি।’
এ কবিতায় ইয়াযীদ রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং ইমাম হুসাইনের হত্যাকে বদরের যুদ্ধের প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করেছে। এভাবে সে তার অন্তরের বিশ্বাসকেই ব্যক্ত করেছে।
ইবনে আসির বর্ণনা করেছেন : ‘হুসাইনের শাহাদাতের পর তাঁর পবিত্র মাথা ইয়াযীদের কাছে প্রেরিত হলে সে তার হাতের লাঠি দিয়ে তাঁর গলায় আঘাত করে কবিতা পাঠ করছিল।’
যদি ইয়াযীদ ইমাম হুসাইনের হত্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে থাকে তবে কেন তাঁর গলায়, কোন কোন বর্ণনা মতে পবিত্র ঠোঁট ও দাঁতে আঘাত করে দম্ভের সাথে কবিতা আবৃত্তি করছিল। এ ঘটনায় ইমাম হুসাইনের প্রতি তার বিদ্বেষ সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়েছে।

আল্লামা সুয়ূতী লিখেছেন : ‘ইমাম হুসাইন ও তাঁর পিতার বংশের লোকদের হত্যার পর ইবনে যিয়াদ তাঁদের মস্তকগুলোকে সিরিয়ায় প্রেরণ করলে ইয়াযীদ প্রথমে আনন্দিত হয়, কিন্তু পরে যখন মুসলমানদের মধ্যে তার প্রতি অসন্তোষ ও ঘৃণার আশংকা করল তখন সে বাহ্যিকভাবে অনুশোচনা প্রকাশ করে। সুতরাং মানুষের ইয়াযীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার রয়েছে।’

৬. 

ইমাম হুসাইনকে হত্যার পর ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদকে পুরস্কৃত করেছিল
ইমাম হুসাইনকে হত্যার পর ইয়াযীদ, ইবনে যিয়াদকে তার পদে শুধু বহালই রাখেনি; বরং এ ঘটনার কয়েক মাস পর যখন সে তার সঙ্গে সিরিয়ায় দেখা করতে যায় তখন সে ইবনে যিয়াদকে আলিঙ্গন করে তার কপালে চুম্বন করে নিজ সিংহাসনের পাশে বসায় এবং এক গায়ককে তাকে সম্বর্ধনা দানের জন্য গান গাইতে বলে। সে তার সাকীকে মদ পরিবেশনের নির্দেশ দেয়। অতঃপর সে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ইবনে যিয়াদ ও ওমর ইবনে সাদকে দশ লক্ষ দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) দান করে। এমনকি সে এক বছরের জন্য ইবনে যিয়াদকে ইরাকের (কুফা ও বসরার) বার্ষিক খাজনার পুরোটাই গ্রহণের অনুমতি দেয়।

ইবনে আসির লিখেছেন : ‘ইমাম হুসাইনকে হত্যা করার পর ইবনে যিয়াদ তাঁর পবিত্র মস্তক ইয়াযীদের নিকট প্রেরণ করলে সে তার প্রতি খুবই খুশী হয়। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারে যে, জনগণ তার এ কর্মে সন্তুষ্ট নয় তখন কৃত্রিমভাবে শোক প্রকাশ শুরু করে। এ কারণেই ইয়াযীদ তার মৃত্যু পর্যন্ত তাকে কুফার গভর্নর হিসেবে বহাল রাখে। এমনকি ইবনে যিয়াদই কুফার মিম্বারে ইয়াযীদের মৃত্যুর ঘোষণা দেয়।’
তাবারীও ইমাম হুসাইনকে হত্যা করার পর ইয়াযীদের নিকট ইবনে যিয়াদের মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয় বর্ণনা করেছেন।



৭. 

আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস ইয়াযীদকে ইমাম হুসাইনকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস ইয়াযীদকে এক পত্রে লিখেন : ‘হে অবৈধ সন্তান! তুমিই হলে সেই ব্যক্তি যে তার পাপিষ্ঠ ও কলুষ হাত দিয়ে হুসাইনকে হত্যা করেছে। আমি কখনই এ কথা ভুলে যাইনি যে, তোমার হাত রক্তে রঞ্জিত। তুমি হুসাইনসহ বনি হাশিমের এমন ব্যক্তিদের হত্যা করেছ যাঁরা সকলেই উজ্জ্বল, দীপ্তিময় আলো এবং অন্ধকারে নিপতিতদের জন্য পথপ্রদর্শক তারকাস্বরূপ ছিলেন।’
ইবনে আব্বাস একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী এবং মহানবীর চাচা হযরত আব্বাসের সন্তান। তিনি কারবালার ঘটনার সময় জীবিত ছিলেন এবং ঐ ঘটনা সংঘটনের (আশুরার) দিনে তিনি দ্বিপ্রহরে স্বপ্ন দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ্্ (সা.) ক্রন্দনরত ও দুঃখভারাক্রান্ত অবস্থায় কারবালা ময়দান থেকে ইমাম হুসাইনের রক্ত সংগ্রহ করছেন। স্বপ্নেই রাসূল (সা.) তাঁকে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের সংবাদ দেন। নিঃসন্দেহে তিনি ইয়াযীদকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেননি।

৮. 

কারবালার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হযরত যায়নাব বিনতে আলী (আ.) ইয়াযীদের সামনেই তাকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হত্যাকারী বলেছেন
মহানবী (সা.)-এর বংশের বন্দি নারী, শিশুসহ তাঁর আহলে বাইতের মহান ব্যক্তিদের পবিত্র মস্তকগুলো নিয়ে যখন ইবনে যিয়াদের সৈন্যরা সিরিয়ায় পৌঁছে তখন ইয়াযীদ তাদেরকে তার সামনে উপস্থিত করার নির্দেশ দেয়। ইমাম হুসাইনের পবিত্র মস্তকের ওপর ইয়াযীদের দৃষ্টি পড়া মাত্রই সে তার হাতের লাঠি দিয়ে তাঁর পবিত্র গলা, ঠোঁট ও দাঁতে আঘাত করতে থাকে এবং ইবনে যেবারার কবিতাটি আওরাতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে হযরত যায়নাব ইয়াযীদের উদ্দেশে অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে তার ইসলামের বাহ্যিক মুখোশ উন্মোচন করেন। তিনি ইয়াযীদের সকল কর্মকা-কে অনৈসলামিক এবং ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও গোত্রীয় আক্রোশপ্রসূত প্রমাণ করে এক দীর্ঘ বাগ্মিতাপূর্ণ বক্তব্য দান করেন। বক্তব্যের এক স্থানে তিনি বলেন :

‘হে ইয়াযীদ! তুই এ মহাঅপরাধ করার পর নিজেকে পাপী ও অপরাধী না ভেবে এবং এ অপরাধ কত বড় তা চিন্তা না করে বলছিস : ‘হায়! আমার পিতারা যদি এখানে উপস্থিত থাকত।’ তুই কি মনে করেছিস তারা এ কথা শুনে আনন্দে অভিভূত হয়ে তোকে বলত : ‘হে ইয়াযীদ! তোর হাত পঙ্গু না হোক।’ তুই এ ধরনের ঔদ্ধত্যমূলক কথা বলছিস এবং বেহেশতের যুবকদের সর্দারের দাঁতে আঘাত করছিস! তুই কতটা নির্লজ্জ! হ্যাঁ, এরূপ উদ্ভট ও অসংগত কথা তোর জন্যই সাজে। কারণ, তুই হচ্ছিস ঐ ব্যক্তি যে পূর্বের ক্ষতকে উন্মুক্ত করেছিস এবং যার হাত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বংশধরদের রক্তে রঞ্জিত। তুই আবদুল মুত্তালিবের বংশের তারকাদের হত্যা করেছিস এবং আমাদের মূলকে কর্তন করেছিস। আর এখন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পূর্বপুরুষদের ডাকছিস, আর ভাবছিস ওরা তোর আহ্বান শুনতে পাচ্ছে। শীঘ্রই তুইও তাদের সাথে মিলিত হবি এবং এমন শাস্তির সম্মুখীন হবি যে, তখন আকাক্সক্ষা করবি, যদি পূর্বেই তোর হাতগুলো পঙ্গু, আর তোর জিহ্বা মূক হয়ে যেত।’



৯. 

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ইয়াযীদকে তাঁর পিতার হত্যাকারী বলে সম্বোধন করেছেন
ইমাম যায়নুল আবেদীনও সিরিয়ায় অবস্থানকালে ইয়াযীদের উপস্থিতিতে কয়েকবার তাকে তাঁর পিতার হত্যাকারী বলে অভিহিত করেছেন। ইয়াযীদ ইমাম সাজ্জাদকে উদ্দেশ করে যখন বলে : ‘তুমি কি ঐ ব্যক্তির সন্তান যাকে আল্লাহ্ হত্যা করেছেন?’ ইমাম জবাবে বলেন : ‘আমি হলাম আলী, যার পিতাকে তুমি হত্যা করেছ।’ অতঃপর তিনি পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন :

وَ مَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَلِدًا فِيهَا وَ غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَ لَعَنَهُ وَ أَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا

‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ্ তার প্রতি ক্রোধান্বিত হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’
যখন ইয়াযীদ লক্ষ্য করল যে, হযরত যায়নাব (আ.) এবং ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর বক্তব্য তার দরবারে উপস্থিত ব্যক্তিদেরও প্রভাবিত করছে এবং পরিবেশ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন সে তার মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বলে। মুয়াজ্জিন আজানে রাসূল (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দান শুরু করলে ইমাম তাকে থামার নির্দেশ দিয়ে ইয়াযীদকে উদ্দেশ করে বলেন : ‘হে ইয়াযীদ! যে মুহাম্মাদ (সা.)-এর কথা তুমি বলছ; সে কি তোমার পূর্বপুরুষ, না আমার? যদি তুমি তাঁকে নিজের পূর্বপুরুষ বলে দাবি কর, তবে তুমি মিথ্যা বলছ। আর যদি তিনি আমার পূর্বপুরুষ হন তবে কেন তুমি তাঁর বংশধরদের হত্যা করেছ?’

১০. 

ইয়াযীদ সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি
আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ কিছু সংখ্যক আলেম ইয়াযীদের কাফির হওয়াকে নিশ্চিত বলেছেন এবং তাকে লানত করা জায়েয বলেছেন এবং তারা নিজেরাও তাকে লানত করেছেন। তন্মধ্যে আহমাদ ইবনে হাম্বাল, ইবনে যাওযী, কাযী আবু ইয়ালী, জাহিয, আল্লামা তাফতাযানী এবং আল্লামা সুয়ূতীর নাম উল্লেখযোগ্য।
আল্লামা তাফতাযানী বলেন : ‘ইমাম হুসাইনকে হত্যার পর ইয়াযীদের সন্তুষ্টি ও আনন্দ প্রকাশ এবং মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রতি তার নিকৃষ্ট আচরণ তার অসংখ্য মন্দ কর্মের কিছু নমুনা মাত্র যা বিভিন্ন গ্রন্থে ও সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আমরা তার বংশের পরিচয় দেখব না; বরং তার ঈমানের প্রকৃত অবস্থা দেখব। মহান আল্লাহ্ তাকে ও তার পক্ষাবলম্বীদের লানত করুন।’
ইয়াযীদের সকল গুরুতর অপরাধকে তুলে ধরে জাহিয বলেছেন : ‘এ বিষয়গুলো তার নিষ্ঠুরতা, কপটতা ও অধার্মিকতার প্রমাণ। নিঃসন্দেহে সে দুর্বৃত্ত ও অভিশপ্ত। যে কেউ তাকে সমর্থন করবে সে নিজেকেই অসম্মানিত করবে।’
বারযানজী তাঁর ‘ইশাআ’ গ্রন্থে এবং হাইসামী তাঁর ‘সাওয়ায়েকুল মুহরিকা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : ‘আহমাদ ইবনে হাম্বলকে তাঁর পুত্র যখন বলেন যে, আল্লাহ্ কিতাবে আমি ইয়াযীদকে লানত করার সপক্ষে কোন দলিল পাই না। তখন তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা মুহাম্মাদের ২২ ও ২৩ নং আয়াত দু’টি তেলাওয়াত করেন :

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن أَن تُفْسِدُواْ فىِ الْأَرْضِ وَ تُقَطِّعُواْ أَرْحَامَكُم أُوْلَئكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَ أَعْمَى أَبْصَرَهُمْ

‘তোমরা কি আশা কর যে, তোমরা কর্তৃত্বের অধিকারী হলে ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে থাকবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? (যারা এরূপ করবে) তারাই হল সে সকল লোক যাদের আল্লাহ্ অভিসম্পাত (স্বীয় রহমত হতে দূর) করেন এবং তাদের কর্ণে বধিরতা ও তাদের চক্ষুতে অন্ধত্ব সৃষ্টি করেছেন।’
অতঃপর তিনি বলেন : ‘ইয়াযীদ যা করেছে তার থেকে বড় কোন বিপর্যয় ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার নমুনা আছে কি?’

আল্লামা আলুসী বলেন : ‘যদি কেউ বলে ইয়াযীদের কোন দোষ ছিল না এবং সে কোন অপরাধ করেনি, তাই তাকে লানত করা যাবে না; নিঃসন্দেহে সে ইয়াযীদের অন্যতম সহযোগী এবং তার দলের অন্তর্ভুক্ত।’ 


  • তথ্যসূত্র
  • ১. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খ-, পৃ. ২৪১; ইবনে আসাম, আল ফুতুহ, ৩য় খ-, ৫ম অধ্যায়, পৃ. ১০-১১।
  • ২. ইবনে আসাম, আল ফুতুহ, ৩য় খ-, ৫ম অধ্যায়, পৃ. ১৫-১৮।

সিয়াম (রোজা)


সিয়াম (রোজা)


সুবেহ সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার (খাদ্য গ্রহণ) হতে বিরত রেখে, যৌন অশীলকাজ হতে বিরত থেকে, অযথা
কথাবার্তা ও ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি হতে বিরত থেকে শরিয়তের নির্ধারিত বিধিসমূহ যথাযথ পালনের নামই রোজা বা সিয়াম।
সিয়াম পালনের সাথে সেহরি ও ইফতারের শর্ত যুক্ত আছে। সিয়াম পালনের মধ্যে সংযমী হওয়ার বিশেষ শিক্ষা রয়েছে।
বছরের মধ্যে ১২ মাসের একটি মাসকে সিয়াম সাধনার মাস বা রোজার মাস হিসেবে আলাহ নির্ধারণ করেছেন যাতে আমরাযাবতীয় অন্যায়, অশীলতাও নফ্সের খামখেয়ালীপনার হাত হতে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হই। এই সিয়াম সাধনাখারাপ কাজ হতে বেঁচে থাকার এক অভিনব কৌশল শিক্ষা দেয়। শুধুমাত্র উপবাস বা অনাহারে থাকা নয়, বরং সংযমী হয়েইসলামের ধর্মীয় অনুশাসনসমূহ যথাযথ পালনের নাম সিয়াম বা রোজা। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে সিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণস্তম্ভ। ইসলামে প্রতি বছরের মধ্যে ইহাকে রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। মানুষ নিজের নফ্সের ইচ্ছাধীন থাকতেচায়। এরূপ চলতে থাকলে দিনের পর দিন মানুষ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তাই সিয়ামের বিধান ঐরূপ একঘেঁয়েমি ওনফ্সের খামখেয়ালীপনার হাত হতে নিজেকে সংযম ও সচেতনতা শিখায়। শরিয়তের এরূপ বিধান পালনে ধর্মীয়, সামাজিক ও
নিজের আত্মশুদ্ধির এমনকি দেশের কল্যাণের বিষয়টি রয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠির চরিত্র সংশোধনের মধ্যে। কোরানুল মাজিদ-এর সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে আলাহসিয়ামের গুরুত্ব দিয়ে বলছেন :
ইয়া আইউহাল (ওহে) লাজিনা (যারা) আমান ু (ইমান এনেছ) কুতিবা (ফরজ করা হয়েছে) আলাইকুম (তোমাদের উপর)
সিয়াম (রোজা) কামা (যেমন) কুতিবা (ফরজ করা হয়েছিল) আলা (উপর) আললাজিনা (যারা) মিন (হতে) কাবলিকুম
(তোমাদের পূর্বে) আললাকুম্ (হয়তো তোমরা) তাত্তাকুন (তোমরা তাকওয়া কর)। (হুবহু অনুবাদ : বাবা জাহাঙ্গীর)।
“ওহে, যারা ইমান আনিয়াছ, ফরজ করা হইয়াছে তোমাদের উপর রোজা, যেমন ফরজ করা হইয়াছিল তাদের (যারা) উপর
তোমাদের পূর্ব হইতে, হয়তো (সম্ভবত) তোমরা তাকওয়াকে (গ্রহণ) করিবে।”
আমানু তথা যারা ইমান এনেছে তাদেরকে রোজার বিধানটি পালনের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে যা অবশ্যই পালনীয় এবং
যা পালনে বান্দার কল্যাণ নিহিত আছে তাকওয়া অর্জনের মধ্যে। সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে হাকিকতের তাৎপর্য তথা মর্যাদা অনেক
ঊর্ধ্বে। মানুষের মন হতে সব ধরনের জাগতিক আশা আকাক্সক্ষা দূরীভূত করার চেষ্টা হচ্ছে এক অভিনব কৌশল। মনের মধ্যে
বিভিনড়ব চাওয়া-পাওয়া লেগেই থাকে। তাদেরকে অন্তর বা দেল হতে মুছে ফেলার জন্য সর্বদা সাধনায় থাকা কর্তব্য।
সিয়াম একটি সাধন অবস্থা, যার জন্য রজমান মাসকে একটি সিয়াম সাধনের মাসও বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো মাস
হিসেবে পালনেই সীমাবদ্ধ নয় সাধকের জন্য, বরং সাধক আলাহর
সাথে মিলনের আশায় নিজের নফ্সের মধ্যে মিশে থাকা
অতি গোপন খানড়বাস নামক শয়তান তথা ছয় রিপুর (লোভ, মোহ, মাৎসর্য, কাম, μোধ, এবং অহংকার) কবল হতে নিজেকে
মুক্ত করার সাধনায় সদা সর্বদা খেয়াল রাখা কর্তব্য। নিজের মনের মধ্যে বাইরের কলুষিত বস্তুবাদ, লোভ-মোহ যাতে প্রবেশ
করে ক্ষতি সাধন করতে না পারে তার জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। সাধক যখন সিয়াম সাধন করার জন্য সচেষ্ট হয় তখনই
সিয়ামের প্রকৃত সময়। আনুষ্ঠানিক সময় নির্ধারণ করেও যদি সে-মোতাবেক সিয়াম সাধনের কার্য যথাযথ সম্পাদিত না হয় তবে
সিয়াম পালন হবে না। যে ব্যক্তি সিয়াম সাধনারত থাকে তাকে সায়েম বলা হয়। সিয়ামরত ব্যক্তির দুনিয়াবি এলেম বা
জাগতিক ব¯ু—বাদী এলেম থাকে না। জাগতিক বিষয়াদি মন হতে বাদ দেওয়ার সাধনকৌশল অবলম্বন করা একজন সায়েমের
কর্তব্য।
সিয়াম পঞ্চস্তম্ভের/ পঞ্চভিত্তির অন্যতম ভিত্তি। সিয়াম ছয় রিপুর কবল হতে মুক্ত হওয়ার হাতিয়ার। সিয়াম নিজের মধ্যে ডুব
দেওয়ার এক কৌশল। সিয়াম আত্মসংযমী হওয়ার সাধনা। সিয়াম শুধুমাত্র ক্ষুধা-তৃষ্ণা হতে বিরত থাকা নয়। সিয়াম দুনিয়ার
জ্বালা-যন্ত্রণা হতে মুক্ত হওয়ার পথ। সিয়াম নিজের মধ্যে ধৈর্যগুণ সৃষ্টি করার হাতিয়ার। সিয়াম আত্মদর্শনের সাধনা। সিয়াম
নিজেকে নিজে দেখার ও চেনার সাধনা। সিয়াম ইন্দ্রিয়সমূহের লাগামহীনতাকে লাগাম দেয়ার সাধনা। সিয়াম নিজের মধ্যে
আর এক সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টির করার সাধনা। সিয়াম ত্যাগী হওয়ার শিক্ষা দেয়। সিয়াম অল্পে তুষ্ট হতে সাহায্য করে। সিয়াম
কামভাবকে তালা দেয়। সিয়াম নিজেকে নিজের মধ্যে পাইয়ে দেয়। সিয়াম একা হওয়ার সাধনা। সিয়াম নিজ ইচ্ছায় বস্তুমোহ,
ইহকাল ও পরকালের সুখ সম্ভোগের খায়েশ পরিত্যাগ করা শিক্ষা দেয়। সিয়াম নফসের খাময়েখালীপনাকে দূর করে দেয়।
সিয়াম আত্মিক শক্তি আনয়ন করে। সিয়াম কোনো দুর্ভেদ্য বিষয়ের উপর জয়লাভ করতে শিক্ষা দেয়। সিয়াম আপন রবের
সাথে সংযোগ স্থাপন করার সাধনা। সিয়াম তাই পুরস্কার দেয় তার আপন রবকে Ñ যে রব তার মধ্যেই বসবাস করে অতি সুপ্ত
অবস্থায় জাতরূপে (নুরে মোহাম্মদিরূপে)।
“সিয়াম পূর্ণ কর রাত্রির দিকে।” (সুরা বাকারা : ১৮৭)। সিয়াম শুধুমাত্র
পানাহার ত্যাগেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাত্রির গভীরে ধ্যানসাধনা তথা মোরাকাবা মোশাহেদা সিয়ামের একটি প্রধান অংশ। সিয়াম
পালনের জন্য রাত্রে সিয়াম সাধক জাগরণ করেন রবের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য, গভীর ধ্যানসাধনায় মগড়ব থাকেন বিশেষ
রহমতের আশায়। এই বিশেষ রহমত (রেজেক) হিসেবে যা পেয়ে থাকেন সাধক তা বস্তুগত খাবার খেয়ে যে শক্তি অর্জিত হয়
তার চেয়ে যথেষ্ট কল্যাণকর। রাত্রিতে এবাদতের একাগ্রতা ও নিবিড়তা থাকে। দিনের বেলায় কর্মব্যস্ততায় মানুষ এবাদতের
জন্য তা পায় না। আলাহ
তাঁর প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুলাহ
(সা.)-কে সম্বোধন করে সুরা মোজাম্মেল-এ রাত্রিতে জাগরণ
করতে গিয়ে যে শিক্ষা দিয়েছে, সে আয়াতসমূহ জ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করা প্রয়োজন। আয়াতসমূহ (সুরা মোজাম্মেল) :
(১) হে বস্ত্রাবৃত, (২) রাত্রিতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে, (৩) অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম, (৪) অথবা
তদপেক্ষা বেশি এবং কোরান আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে, (৫) আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ
বাণী, (৬) নিশ্চয়ই এবাদতের জন্য রাত্রিতে ওঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল, (৭) নিশ্চয়ই দিবাভাগে
রয়েছে আপনার কর্মব্যস্ততা, (৮) আপনি আপনার পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন এবং একাগ্রচিত্তে তাতে মগড়ব হোন।
বিশেষভাবে লক্ষনীয় (৬) নং আয়াতের মর্মবাণী সম্পর্কে। এবাদতের জন্য রাত্রি জাগরণে ‘প্রবৃত্তি দমন’ হয় বা সাহায্য করে
এবং (৭) নং আয়াতের মধ্যে দিনের ‘কর্মব্যস্ততার’ কথার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আরও অবাক হতে হয় এই সুরার (২০) নং
আয়াতের মর্মবাণী হতে। ২০ নং আয়াতে আছে :
“আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্য দণ্ডায়মান হন রাত্রি প্রায় দু’তীয়াংশ, অর্ধাংশ ও এক তৃতীয়াংশ এবং
আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দণ্ডায়মান হয়।”
আলাহ
আগেই জানেন যে, তার প্রিয় নবি মুহাম্মদুর রাসুলাহ
(সা.) রাত্রিতে জাগরণ করেন এবং তাঁর (নবিজির) সঙ্গীদের
একটি দলও রাত্রে জাগরণ করেন এবাদতের জন্য। গবেষণায় দেখা যায় বন্দেগি বা এবাদতের জন্য রাত্রি উত্তম সময় এবং
দিবাভাগে কর্মব্যস্ততা থাকে।
সিয়াম সম্পর্কে চিশতিয়া তরিকার শিরোমণি হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি যাঁকে আমরা সম্মান করে খাজা বাবা বলে
সম্বোধন করে থাকি, তারই রচিত দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিন কেতাবের বাংলায় অনুবাদ করেছেন জনাব জেহাদুল ইসলাম ও ড.
সাইফুল ইসলাম খাঁন Ñ এই কেতাবে আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর নিকট সিয়াম/ রোজা সম্পর্কে যেভাবে
বর্ণনা করেছেন তা হলো উক্ত কেতাবের ৪৩৭, ৪৩৮ এবং ৪৩৯ পৃষ্ঠায়। রোজার হাকিকত সম্পর্কে ঐ ব্যাখ্যা সত্যিই অবাক
করে দেয়।

জাকাত

জাকাত


শরিয়তের বিধান মোতাবেক বছরের মোট সম্পদ বা অর্থের উদ্বৃত্তের উপর নির্দিষ্ট শতকরা হারে গরিব মিসকিনকে টাকা-পয়সা
সম্পদের দানকে জাকাত বলে। এ প্রকার জাকাতের বিধান ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। জাকাতের এ বিধানটি ইসলাম ধর্মে
পালনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন আলাহ কোরানুল মাজিদ-এ। গরিব দুঃখী-কাঙাল মানুষ জাকাতের এরূপ অর্থ দ্বারা তাদের দুঃখ
কিছুটা হলেও লাঘব করতে সমর্থ। ইসলামের এই জাকাতের বিধানটি আমাদের অতি সম্মানের চোখে দেখতেই হবে। সকল
মুসলিম নর-নারীকে আলাহর সন্তুষ্টি ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের জন্য এ জাকাতের যথাযথ আদায় অবশ্যই কর্তব্য এবং এতে
দেশের কল্যাণ নিহিত।
হাকিকতে জাকাতের বিধান শুধুমাত্র অর্থের নয়, বরং অর্থের পাশাপাশি মনের মধ্যে জমে থাকা বা আশ্রিত থাকা লোভ-মোহ
বর্জন করাকে বুঝায়। মনের মধ্যে যে অতি লোভনীয় বিষয়সমূহ প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে বিভিনড়বমুখী অপ্রয়োজনীয় দিকে মনকে
বিভক্ত করে তা বর্জন অথবা বাদ দেয়ার নাম হাকিকতের জাকাত। এক কথায় মানবীয় আমিত্বের উৎসর্গের নাম জাকাত।
বস্তুগত কোনো দান, যেমন : টাকা-পয়সা কিংবা অর্থের দানকে হাকিকতে জাকাত হিসাবে গণ্য করা হয় না। শরিয়ত
মোতাবেক যে জাকাতের বিধান রয়েছে তা দ্বারা সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্য হয় একথা অকপটে স্বীকার করতে হবে,
কিন্তু নিজের চরিত্র রচনা করা তথা শুদ্ধি হওয়ার জন্য হাকিকতি জাকাত হতে হয়। তবে শরিয়তি জাকাত ও হাকিকতি যে
জাকাত এই দু’প্রকার জাকাতের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মানুষের মধ্যে হাজারও কু-চাহিদা আঠার মতো লেগেই
থাকে। এ প্রকার খারাপ চাহিদা মন হতে আলাদা তথা বাদ দেয়া সাধকের কর্তব্য। মুক্তির জন্য এসব লোভ-মোহ মুছে ফেলা
কিংবা বাদ দিতে সক্ষম না হলে মানুষের লোভের মাত্রা দিন দিন শুধু বেড়েই যায়। মনের মধ্যে এরূপ লোভ মোহযুক্ত খারাপ
বিষয়সমূহ সহজে বাদ দেওয়া সম্ভব হয় না। এ প্রকার জাকাত মন হতে দিতে হলে মনের সাধনা করা প্রয়োজন আর প্রয়োজন
একজন কামেল গুরু বা মোর্শেদের।
উভয় প্রকার জাকাতের প্রয়োজন। সমাজ গঠনের জন্য অর্থগত জাকাত আর নিজের মনের মধ্যে লাগামহীন চাহিদা, লোভ-
মোহ দূর করতে গুরু বা মোর্শেদ প্রদত্ত সাধনা প্রয়োজন। উভয় প্রকার জাকাতের সেতুবন্ধন হওয়া প্রয়োজন।
আমি যদি অন্যায়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করেই যাই অথবা লোভকে লাগাম না দিয়ে অর্থ পেতেই চাই অথবা পেয়েই ঐ সকল
অবৈধ ধন-রতেড়বর শরিয়ত মোতাবেক জাকাত দিয়েই যাই তবে গরিব-দুঃখী-কাঙাল মানুষের দুঃখ লাঘব তথা দূর করতে সমর্থ
হবো, কিন্তু নিজের আত্মশুদ্ধির পথে কোনো উপকারই হবে না। যার কারণে বড় বড় মুনি ঋষিগণ অর্থের জাকাতের চেয়ে বরং
মনের মধ্যে যে লাগামহীন চাহিদা অদৃশ্য শিকলে বন্দি হয়ে আছে বা শিকলে আবদ্ধ হতে চায় সেগুলোকে গুরুসাধনা দ্বারা বাদ
দেয়াকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। যে সাধক তার জন্য এ প্রকার জাকাতের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাকাতের সাথে সালাতের এক
গভীর সম্পর্ক আছে, যার কারণে কোরান-এ সালাত ও জাকাতের বর্ণনা এক সঙ্গে আসছে। পরিশেষে আবার বলতে চাই যে,
হাকিকি জাকাতটি তখনই হয়, যখন মোর্শেদপ্রদত্ত মোরাকাবা-মোশাহেদা করে। মনের লোভ-মোহ দূর করে মনকে জঞ্জালমুক্ত
করাই জাকাত।
হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র.), আমরা যাঁকে খাজা বাবা বলে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি, তাঁর রচিত
কেতাব দিওয়ান-ই-মুঈনুদ্দিন (অনুবাদ করেছেন সম্মানিত জেহাদুল ইসলাম ও ড. সাইফুল ইসলাম খান)-এ জাকাত সম্পর্কে
নবিজির হাদিসের জ্ঞানগভীর ব্যাখ্যা পাই জাকাতের হাকিকত সম্পর্কে এবং তা হলো উক্ত কেতাবের ৪৪২ পৃষ্ঠা এবং জাকাত
সম্পর্কে উক্ত কেতাবের কিছু ব্যাখ্যা নিমড়বরূপ :
জাকাতের হাকিকত
[রাসুল (সা.) আরো বলেন] কাজেই বান্দার প্রধান কর্তব্য হলো নফসানিয়াতের অন্ধকার থেকে মুক্তি অর্জন করে মারেফতে
এলাহি মোতাবেক আকল ও আজাদি হাসেল করা। এতে সে জাকাতে হাকিকি আদায় করার উপযুক্ততা লাভ করবে। শরিয়ত
যে জাহেরি জাকাত ফরজ করেছে তার উদ্দেশ্য হলো ধনী ব্যক্তিগণ জাকাতের অসিলায় গরিব-আতুর ও মিসকিনকে সাহায্য
করবে এবং এতে তাদের অভাব কথঞ্চিত লাঘব হবে।




---ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা -ঈমান আল সুরেশ্বরী।

হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী (রহ)এর মাজার


হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী (রহ)এর মাজার ও মসজিদঃ

 মাজার ও মসজিদের নির্মানকাল ও নির্মাতাঃ চতুর্দশ শতাব্দীর কোন এক সময় এই প্রাচীনতম মসজিদ নির্মান করেন ধর্ম প্রচারার্থে ইয়ামেনের শাসনকর্তা মুয়াজ ইবলে জিবল এর বংশের হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী (রহ)বাংলায় আগমন করে এই মসজিদ নির্মান করেন

 স্থ্যাপত্য রীতিঃ ১৫৭৬ খিঃ পর্যন্ত নির্মিত ইমারত সমূহকে সুলতানী স্থ্যাপত্য রীতি ও ৫৭৬খিঃ এর পর থেকে ১৭৫৭খিঃ এর মধ্যে নির্মিত ইমারত সমূহকে মোঘল রীতির আওতাভুক্ত করা হয় এই মসজিদটি সুলতানী আমলের উতক্রিষ্ট ও সবচেয়ে অধিক পরিচয়বাহী একটি ইমারত নামকরন ও সংখিপ্ত ইতিহাসঃ হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী (রহ) এর নাম অনুসারে এই এলাকার নামকরন করা হয় শাহজাদপুর ১১৯২-৯৬ সালের মধ্যে কোন এক সময় হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী (রহ) ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং যাত্রা পথে বোখারা শরীফে আগমন করেন সেখানে শাহ জালাল উদ্দিন বোখারী (রহঃ)এর সাথে কিছুক্ষন সময় অতিবাহিত করে বাংলার পথে যাত্রা শুরু করেন ও এই অঞ্চলে আগমন করেন ,শাহ জালাল উদ্দিন বোখারী(রহঃ)তাকে এক জোড়া কবুতর উপহার দেন যাহা জালালী কবুতর নামে পরিচিত আজও বাবার মাজারে এই কবুতর দেখতে পাওয়া যায় হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী(রহঃ) ইসলাম প্রচার শুরু করলে ততকালীন সুব-বিহারের অমুসলিম অধিপতি রাজা বিক্রম কেশরীবাবা হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী(রহ)এর আগমনের খবর শুনে বাবা মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী(রহঃ)কে ইসলাম প্রচারে বাধাপ্রদানের উদ্দেশ্যে যুদ্ধের জন্য তার সেনাবাহিনী প্রেরন করে কিন্তু তার সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয় , পর পর তিনবার রাজার সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে ফিরে যায় পরবর্তীতে পূর্ববর্তী যুদ্ধ্যে পরাজিত রাজার একজন সৈনিক গুপ্তচর হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন ও শেষ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আসরের নামাজ আদায়ের সময় সেজদারত অবস্থায় হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী (রহ)এর ছিরচ্ছেদ করা হয় ও মস্তক মোবারক সুব-বিহারের রাজধানী মঙ্গলকোটে রাজার নিকটে উপস্থিত করা হয় মস্তক মোবারক রাজার সন্মুখে হাজির করার সাথে সাথে অলৌকিকভাবে হযরত মখদুম শাহদ্দৌলা ইয়ামেনী (রহ) এর উষ্ঠাধর হতে সুবহানা রাব্বল আলাউচ্চারিত হতে থাকে , এতে রাজা ভয় পেয়ে যায় ও রাজার প্রধান সেনাপতি ইসলাম ধর্ম কবুল করেন এবং রাজা স্থানীয় মুসলমানদের ডেকে বাবার মস্তক মোবারক সমাহিত করার নির্দেশ দেয় যে স্থানে মস্তক মোবারক সমাহিত করা হয় সেই স্থান আজও ছের মোকামনামে পরিচিত অন্যদিকে দেহ মোবারক কফিনে করে মসজিদের দশরশি মোকামে সমাধীস্থ করা হয় পরবর্তীতে কফিনটি সরিয়ে বর্তমান স্থানে সমাহিত করা হয় ।।

(সংখেপিত)

হযরত জিন্দা শাহ মাদার (র)


হযরত জিন্দা শাহ মাদার ()
আওলিয়ার পবিত্র মাজার শরিফইহা বর্তমানে ভারতের কান পুরে অবস্থিত হযরত জিন্দা শাহ মাদারের সম্পূর্ণ
নাম হল হযরত সৈয়দ বাদিউদ্দিন জিন্দা শাহ মাদার উনার পিতা মাতা দুই জনই মহানবী () এর বংশ ধর
ছিলেন হযরত শাহ্ মাদার আওলিয়ার তাওরাত , জবুর, ইঞ্জিল, কুরআন এই আসমানি কিতাব মুখস্ত ছিল আখেরি জামার গাউসুল আজম হযরত ইমাম মেহেদি () এর রূহ মোবারক রাসুলে পাকের হুকুমে তাকে এই আসমানি কিতাব শিক্ষা দেন যা অন্য কোন আওলিয়ার মুখস্ত ছিল না মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি ৩০ পারা কুরআনের হাফেজ হয়ে যান হযরত শাহ্ মাদার আওলিয়ার কখনও ক্ষুধা , তৃষ্ণা লাগত না রাসুলে পাকের হাতে জান্নাতি ফল খাওয়ার পর থেকেই তার আর কখনও ক্ষুধা বা তৃষ্ণা লাগে নি জন্য উনি কোন খাবারও খেতেন না শাহ্ মাদার আওলিয়ার জামা মোবারক কখনও ময়লা বা নষ্ট হত না, উনি যেমন নতুন জামা পড়তেন তা বছরের পর বছর নতুনই থাকত , তার কোন পরিবর্তন হত না তার এই মর্যাদা ছিল রাসুল পাকের দুয়ার ফজিলত , যা তিনি লাভ করেছিলেন
শাহ্ মাদার আওলিয়াকে জিন্দা পীর বলা হয় কারন তিনি মৃত্যুর পরও মানুষের সাথে জীবিত মানুষের মত
মেলা মেশা করতেন এবং ইসলামের শিক্ষা দিতেন কথিত আছে শাহ মাদার আওলিয়ার চোখে আল্লাহর এত নূর চমকাত যে কোন লোকই তার চেহরা মোবারকে দৃষ্টি দিয়ে স্থির থাকতে পারত না, সাথে সাথেই মাথা নত করতে বাধ্য
হত হযরত জিন্দা নবী খাজা খিজিরের নিকট হইতে তিনি ইলমে লা দুন্নি লাভ করেছিলেনযার ফলে তিনি ছিলেন
বাতেনি জ্ঞানের মহাসাগর শাহ্ মাদার এর সাথে হযরত বড় পীর পিরানের পীর গাউসুল আজম আব্দুল কাদির জিলানি () এর ভালো বন্ধুত্ব ছিল বড় পীরের অসম্ভব জালালির কারনে যখন অজু ছাড়া বড় পীরের নাম
নেয়ার অপরাধের দরুন মানুষের মস্তক আপনা আপনি দুইভাগ হয়ে যেত তখন বড় পীরের এই জালালি তবিয়ত কমানোর জন্য সর্ব প্রথম শাহ মাদার আওলিয়া বড় পীরকে সুপারিশ করেন শাহ মাদারের সুপারিশে বড় পীর তার এই
জালালি ভাব গোপন করে ঠাণ্ডা সিমালি ভাব প্রকাশ করতে শুরু করেন তারপরেও বড় পীরের শরীরে সারা
জীবন একটা মশাও বসার সাহস পায় নাই
শাহ মাদার আওলিয়ার মাজার শরিফও খুব জালালি তবীয়ত প্রাপ্তবর্তমান উক্ত মাজার শরিফে আল্লাহর বিশেষ
নেকবান মানুষ ছাড়া কেউই প্রবেশ করার অনুমতি নেইযদি কেউ জোর করে প্রবেশ করে তাহলে সাথে সাথে তার
গায়ে আগুনের জালা পোড়া শুরু হয়ে যায় জন্য মানুষ বাইরে থেকে জিয়ারত করে নিজের জীবন ধন্য করে থাকে
আজও লাখ লাখ মুসলমান এই মহান আওলিয়ার মাজার শরিফ জিয়ারত করে আল্লাহর পাকের কাছে উনার উসিলায়
শিফা লাভ করে থাকেন কিন্তু একদল ভণ্ড ওয়াহাবি ধর্মের অনুসারিরা অলি-আওলিয়াদের নিন্দা করে এবং
গীবত গাঁয় আল্লাহপাক আমাদের মুসলমানদেরকে সেই সব ফিতনা বাজ ছদ্মবেশী ওয়াহাবি মুসলমানদের থেকে
ইমান হেফাজত করুক আমিন