Friday, June 17, 2016

সুফিবাদ আÍপরিচয়ের একমাত্র পথ (চতুর্ খণ্ড)

 তকদির সম্পর্কে সূক্ষè তত্ত্ব
যারা আমানু কেবলমাত্র তাদেরকেই লক্ষ করে আলাহ
বলছেন যে, যারা নিজেদের রিপুগুলোর খেয়াল-খুশিমতো চলার পথে বাধা দান
করে, যারা নিজেদের রিপুগুলো যা চায় তা দিতে অস্বীকার করে, যারা নিজেদের রিপুগুলোকে যেমন খুশি তেমন ধেই ধেই করে নাচতে
দেয় না, যারা নিজেদের রিপুগুলোর লোভনীয় স্বভাবের উপর তালা ঝুলিয়ে দিতে পেরেছে, যারা নিজেদের রিপুগুলো যা বলে তাই করার
গোলামি হতে মুক্তির তরে যুদ্ধ করছে এবং এই রিপু নামক দানব-দৈত্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়লাভ করেছে, তাদেরকেই ‘আলাহর
জন্য
নিহত হয়েছেন' বলে কোরান ঘোষণা করছে। কী সুন্দর ভাষার নিখুঁত কৌশল অবলম্বন করে বলা হয়েছে, যাতে অনেক রকম অর্থ করা
যায়। ভাষার কী বিজ্ঞানময় কৌশল! যার জন্য কোরান নিজেই যে কতবার বলছে যে, এই কোরান পাঠ করে কেউ পথ পাবে, আবার কেউ
পাবে না। কেউ প্রশংসায় অভিভূত হবে, আবার কেউ বিরূপ মন্তব্য ছুড়ে অস্বীকার করবে। আবার কেউ বুঝতে গিয়ে ভুল বুঝাটাকেই ঠিক
বুঝ মনে করবে। আবার কেউ নিজের বুঝটাকেই সঠিক এবং অন্যেরটা ভুল বলবে। যদি বলেন, এরকম কেন হয়? এর উত্তর হল,
তকদির। আপনার তকদিরে যা জন্মের আগেই লিখা হয়ে গেছে, উহা কেউ বদলিয়ে দিতে পারবে না। আবার এই ‘পারবে না'র মধ্যে
একটি সামান্য কিন্তু থেকে যায়। সেই কিন্তুটি আবার কী? তকদির কখনো কখনো বদলায়, তবে সেই বদলানোর পেছনে দোয়া থাকতে
হবে। কোন অলীয়ে কামেলের দোয়া থাকলে তকদির বদলিয়ে যায়। এছাড়া তকদির বদলানোর আর কোন পথ অধম লিখকের জানা
নাই। আপনার তকদিরে যদি জন্মের আগেই লিখা হয়ে থাকে যে, আপনাকে জাহানড়বামে ফেলে দেওয়া হবে তাহলে আপনি যতই ভাল
কাজই করুন না কেন, এমন কি জানড়বাতে প্রবেশ করতে মাত্র একটি পা বাকি আছে, তখন ফেরেস্তারা আপনাকে লাথি মেরে জাহানড়বামে
ফেলে দেবে। কারণ? কারণ আগেই যে জাহানড়বামে আপনার নাম রেজিস্ট্রি করে রাখা হয়েছে। আবার যদি আপনার তকদিরে জন্মের
আগেই লিখা হয়ে থাকে যে, আপনাকে জানড়বাতে নেওয়া হবে, তাহলে আপনি যত খারাপ কাজই করুন না কেন, এমনকি জাহানড়বামে প্রবেশ
করতে মাত্র একটি পা বাকি আছে, তখন ফেরেস্তা আপনাকে ধরে জানড়বাতে ঢুকিয়ে দেবে। কারণ? কারণ আগেই জানড়বাতে আপনার নাম
রেজিস্ট্রি করে রাখা হয়েছে। এই কথা শুনে আপনি হয়তো হতাশ হয়ে যাবেন। হতাশ হতে যাবেন কেন? আপনি হয়তো মনে মনে
বলছেন, ইহা অধম লিখকের কথা। মোটেই না। আমি অমন কথা লিখতে যাব কোন দুঃখে? হাদিসের বইগুলো পড়ে দেখুন না, তাহলেই
বুঝতে পারবেন। যদি বলেন, আমি এরকম হাদিস মানি না, তাহলে এই না মানাটাই আপনার তকদির। এতে আলাহর
কিছুই যায় আসে
না। আপনি যা ইচ্ছে তাই রাগ করে বলতে পারেন, এবং এটাও জেনে রাখুন, এই যা ইচ্ছে তাই বলাটাও আপনপর তকদির। বড়
সাংঘাতিক রহস্য এই তকদির। আমার কথা শুনে যদি হাত-পা ছেড়ে বসে পড়েন, আর মনে মনে বলেন যে, যা হবার তাতো আগেই হয়ে
আছে তাহলে আর চিন্তা করে কী লাভ, এই রকম বলাটাও আপনার তকদির। আপনি যত বাহাদুরি আর লাফালাফিই করুন না কেন,
তকদিরের লিখন কিছুতেই খণ্ডাতে পারবেন না। তকদিরে যদি একসিডেন্টে মারা যাওয়া লিখা থাকে, অথবা কোন কঠিন রোগে ভুগতে
হবে, তাহলে তাই হবে। তখন ঐ অসহায় দার্শনিকের মত আপনার অবস্থা হবে, যে জীবনভর নাস্তিক থেকে মরার আগে নাকের উপর
বসা মাছিটিকে হাত দিয়ে সরাতে না পারায় শিষ্যদের শেষ কথাটি বলে গেলেন, ‘আজ আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করলাম, আলাহ
তুমি
আছ, এবং তোমার মহাশক্তির কাছে আÍসমর্পণ করলাম।' তকদিরের কথা শুনে কি কেবল আপনার একাই রাগ হয়? আমরাও কি
আপনার মত মানুষ নই? রাগ কি কেবল আপনাকে একাই দেওয়া হয়েছে? কিন্তু যেহেতু কিছু করার নেই তাই চিন্তা করি, যদি কোন
অলীয়ে কামেলের লাত্থি-গুঁতা খেয়ে মুখ বুঝে সহ্য করতে পারি এবং সেই অলীয়ে কামেলের যদি ইচ্ছা হয় যে বদলিয়ে দিলাম, তাহলে
আর কী, বদলে গেল। আমার কথাগুলো পড়ে মনে করবেন না যে কাঁচা হাতে লিখা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিয়াজত করার মত অনেক ধরনের
বই পড়েই এ কথাগুলো বলছি। তকদিরে টাকার অভাব ছিল না, তাই অনেক টাকার বই যখন তখন কিনেছি। একটু অহঙ্কার করছি?
খোদার কসম, অহঙ্কারের নিয়তে কথাগুলো বলছি না। তাই আমার নিয়তটা কী তাও আপনাকে জানিয়ে দিলাম।
এবার আসল কথায় আসা যাক। এই রিপু নামক পশুগুলোকে যারা আলাহে
ক পাবার জন্য খুন করে ফেলতে পেরেছেন, মেরে ফেলতে
পেরেছেন, হত্যা করতে পেরেছেন, তাদেরকে আলাহ
চিরজীবিত, অমর বলে ঘোষণা করেছেন। তাই ধমকের ভাষায় আলাহ
ঘোষণা
করেছেন, ‘বাল আহ্ইয়া' ‘বরং তারা জীবিত'। ‘এই জীবিত' কথাটি কিন্তু আপেক্ষিক সত্যের প্রশেড়ব নয়, বরং সার্বিক সত্য। দুনিয়ায় যা কিছু
দেখছেন, কোনটাই কিন্তু সার্বিক সত্য নয়। সব কিছু আপেক্ষিক সত্য। এই আপেক্ষিকতার মধ্যে আবার সময়সূচী নির্ধারণ করা থাকে।
ধরুন, কোনটা এক মিনিটের সত্য, কোনটা এক ঘণ্টার সত্য, এক দিনের সত্য, এক বছরের সত্য, একশত বছরের সত্য, এক কোটি
বছরের সত্য। এই প্রতিটি সময়ে বাস করা সত্যগুলো সবই আপেক্ষিক সত্য। ধরে নিলাম আমাদের জীবনগুলো শত বছরের আপেক্ষিক
সত্য। তারপর আর থাকবো না। হারিয়ে যাব। এই যে নেপাল নামক দেশটি দেখছেন, এই যে বিরাট হিমালয় পর্বত দেখতে পাচ্ছেন, যা
আপনার চোখ ও মন সার্বিক সত্য বলে ধরে নেবে। কিন্তু, দুঃখিত, ইহা সার্বিক সত্য নয় বরং ইহাও আপেক্ষিক সত্য। কারণ দুই কোটি
বছর পূর্বে এই নেপাল নামক দেশটি এবং এই বিশাল হিমালয় পর্বতটি ছিল না। এখানে ছিল এক বিরাট এবং ভয়াবহ মহাসাগর। যে
সাগরটির নাম পর্যন্ত বইতে লিখা হয়ে থাকে। সেই ভয়াবহ সাগরটির নাম ছিল টেথাস। প্রচণ্ড ভূকম্পনের ফলেই এই দেশ আর পর্বতের
জন্ম। এই কথাগুলো শুনতে যেন কেমন লাগে। কিন্তু নমুনা হিসাবেই যদি পদ্মানদীর কথা বলি? কত সুন্দর সুন্দর গ্রাম, নদীবন্দরগুলোকে
গ্রাস করে আবার যেখানে গভীর পানি ছিল সেখানেই কী সুন্দর বিরাট চর পড়ে গেছে। সেই চরে আবার নূতন করে আবাস তৈরি করা।
তাই যা কিছু দেখছেন সবই আপেক্ষিক সত্য। কেবল প্রশড়বটি হল, ইহা কতদিনের সত্য হয়ে থাকবে? আমার একথাগুলো কিন্তু কোরান
অনেক আগেই ঘোষণা করেছে। সূরা রহমান নিশ্চয়ই পড়েছেন। তাই ‘বাল আহ্ইয়া' ‘বরং তারা জীবিত' কথাটি আপেক্ষিক সত্য নয় বরং
সার্বিক সত্য। কারণ এই জীবিতদেরকে নিয়েই তিনি এক, অদ্বিতীয় হয়েও আমরা রূপ ধারণ করেন। এই আমরা রূপেই তিনি তথা আলাহ
হেদায়েত করেন, রেজেক দান করেন, রূহ ফুৎকার করেন। এই বিষয়ে কোরানের একটি স্থানেও আলাহে
ক আমি রূপে পাবেন না। পাবেন
আমরা রূপে। এই আমরা রূপটাই হল রবের চেহারা। সব কিছু ফানা হয়ে যাবে। ধ্বংসস্তূপে সবকিছু পরিণত হওয়াই নিয়ম। কেবল
ব্যতিμম হল রবের চেহারা। কারণ রবের চেহারা হল সার্বিক সত্য।
মুতু কাবলা আনতা মুতু তথা ‘মরার আগে মরে যাও' কথাটির আসল অর্থ হল, আলাহর
জন্য খুন হয়ে যাওয়া এবং এই ধরনের খুন
হতে পারলে সবাই মৃত বলে জানবে এবং মৃত লাশ দেখে কে-না মনে করবে? কিন্তু এখানেই আলাহর
প্রচণ্ড ধমক। সাবধানবাণী উচ্চারণ
করা হল। বলা হল, নাÑকখনোই তারা মৃত নয়, বরং তারা জীবিত এবং আরেকটা ধমক দেওয়া হল এই বলে যে, তোমরা যা বুঝ না,
জান না, আমি তা জানি। এই ধমক দেবার প্রয়োজন আছে। কারণ, আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো দেখছে মৃত, অথচ ইন্দ্রিয়গুলোর মাধ্যম ছাড়া
সেই জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে আলাহর
জন্য কোরবানি করতে পারলেই জন্ম নেয় শুদ্ধ ইন্দ্রিয়, এবং সেই
পরিশুদ্ধ ইন্দ্রিয়গুলো অর্জিত হলেই বুঝা যাবে যে, কোন অলীয়ে কামেল মারা যান না। কারণ তারা যে মারা যাবার আগেই ইন্দ্রিয়গুলোকে
আলাহর
জন্য কতল করে দিয়েছেন। যেমন আমরা দইয়ের পাতিলকে ব্যাকটেরিয়ার ভাগাড় বলে মনে করতে পারি না, কারণ আমাদের
স্থূল ইন্দ্রিয়গুলো ব্যাকটেরিয়া দেখতে পায় না। যেমন বাতাসে কথা, গান, এমনকি মানুষের ছবিগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে বললে স্থূল ইন্দ্রিয়
মেনে নিতে চায় না, যদি না রেডিও এবং টেলিভিশনে তা দেখানো হয়।
 চেরাগে জান শরীফ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী

1 comment:

  1. হালারপুত একটা ভন্ড। এর অনেক তাবীল আছে। শালা জ্ঞানপাপী গণ্ডমূর্খ কোথাকার ?

    ReplyDelete