ভুমিকাঃ সিয়াম সন্বন্ধে কোরানে সংক্ষেপে যাহা আছে সিয়াম দর্শন বুঝিবার পক্ষে ইহাই যথেষ্ট হাদিস দ্বারা সিয়ামের স্বরূপ বাস্তবরূপ ধারণ করিয়া উহার দর্শনকে বিস্তারিত ও সহজভাবে মূর্ত করিয়া তুলিয়াছে।রমজানের সিয়াম সাধনার ব্যবস্থা অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক (Elastic) করিয়া রচনা করা হইয়াছে। যাহার যতটুকু সামর্থ বা যোগ্যতা আছে সে তাহা হইতে ততটুকু কল্যাণ আহরণ করিতে পারিবে। সিয়াম একটি সার্বজনীন সাধন ব্যবস্থা। আল্লাহ্তা’লা নিজেই বলিয়াছেনঃ “রমজান আমার জন্য, তাই আমি নিজ হাতে ইহার প্রতিফল দান করি এবং আমি নিজেই রমজানের সিয়াম সাধনার প্রতিফল।”রমজানের সিয়াম সাধনাকে সংক্ষেপে বলিতে গেলে ইহাকে ধর্মসমূহ হইতে তাগুত বর্জন করিবার প্রকৃষ্ট সাধনা বলা যাইতে পারে। এইজন্য একান্ত প্রাসঙ্গিক না হইলেও তাগুত সংক্রান্ত দুটি বাক্যের ব্যাখ্যা করা একান্ত প্রয়োজন মনে করি।উর্দ্দু এবং বাংলা ভাষায় প্রচলিত রোজা কথাটি ফারসি ভাষা হইতে গ্রহণ করা হইয়াছে। আরবিতে ইহাকে বলে সিয়াম। সিয়াম যে ব্যক্তি পালন করে তাহাকে বলে ‘সায়েম’ বা রোজদার। আমরা আরবি শব্দটিই ব্যবহার করিব।সিয়াম অর্থ Rejection, প্রত্যাখান, বর্জন, ত্যাগ, বিরত বা বারিত থাকা এবং যে ব্যক্তি বিরত বা বারিত থাকে তাঁহাকে সায়েম বলে। এখন কথা হইল সায়েম অর্থাৎ রোজদার কোন বিষয় হইতে বারিত হইয়া থাকিবে? এবং কি প্রত্যাখান করিবে? প্রত্যাখান করিবার এবং বারিত হইবার একমাত্র বিষয় হইল দুনিয়া তথা তাগুত। এই জন্যই যদিও তাগুত সংক্রান্ত বাক্যগুলোর মধ্যে কোরানের সিয়ামের উল্লেখ নাই তবুও সেই বাক্যসমূহ হইতে দুইটি মাত্র বাক্যের ব্যাখ্যা এই পুস্তিকায় প্রকাশ করিতে চেষ্টা করিলাম। একাগ্রভাবে সঠিক ধারায় রমজানের সিয়াম সাধনা করিতে পারিলে তাহাতে ক্বদর রাত্রির সন্ধান পাওয়া যায় যাহার ফলে সাধকের নিকট নাজেল হয় কোরান, হেদায়েতের ব্যাখ্যা এবং ফোরকান। এইজন্য রমজান মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নৈসর্গিক একটি রাত্রিকে ক্বদর রাত্রিরূপে পালন করিবার ব্যাবস্থা রাখা হইয়াছে। ক্বদর রাত্রি সিয়ামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকার কারণে ক্বদর রাত্রি বুঝাইবার উদ্দেশ্যে সূরা ক্বদরের ব্যাখ্যা এই পুস্তিকায় জুড়িয়া দেওয়া হইল। সেইরূপ একই কারণে “কাওসার” এর পরিচয় দেওয়ার জন্য সূরা কাওসারের ব্যাখ্যাও এর সঙ্গে সন্নিবেশিত করা হইল। গুরুবাদ এবং জন্মান্তরবাদ তথা রূপান্তবাদ কোরানের সকল কথার মধ্যে সুক্ষ্ম ও রূপকভাবে বিধৃত রহিয়াছে। ইহাকে অস্বীকার করিলে কোরান ও হাদিসে অংকিত জীবন দর্শন বুঝিয়া নেওয়া সম্ভবপর নয়।যখন যেমন বুঝিয়াছি তখন তেমন লিখিয়াছি। তাই বিজ্ঞ পাঠকের নিকট অনুরোধ রহিল যেন আমার লিখিত পুস্তকাদি বক্তব্যসমূহের পূর্বাপর অসামঞ্জস্যগুলি সংশোধন করিয়া লন। সিয়াম দর্শন গ্রন্থটি সর্বসাধারণের জন্য পাঠ্য নয়। ইহা সত্যসন্ধানী এবং চিন্তাশীল গবেষকদের জন্য। ___________________________________সদর উদ্দিন আহ্মদ চিশতী।
সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্ব,কোরবানি _________________________________________________________সি সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্ব,কোরবানি এবং অন্যান্য সকল ধর্মানুষ্ঠানের মূল চাবিকাঠি হইল সালাত। "ধর্ম" অর্থ phenonmenon সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া যাহা কিছু মস্তিষ্কে প্রবেশ করে তাহার সবকিছুকে ধর্ম বলে। ধর্মগুলির প্রতি মোহবিষ্ট হইয়া মস্তিষ্কে ধরিয়া রাখিলে সেগুলি মানুষকে সৃষ্টির সঙ্গে ধরিয়া রাখে। ইহাকে বলা হয় সংস্কার বা শিরিক। সুতারাং মনের মধ্য দিয়া আগমনকারী ধর্মসুমহের মোহ গ্রহণযোগ্য নয়, বরং পরিত্যাজ্য। ধর্মের মোহ পরিত্যাগ করিবার অনুশীলনকে সালাত বলে। সিয়াম অর্থ ধর্ম পরিহার বা পরিত্যাগ। পরিত্যাগ করার অনুশীলন (practice) বা পদ্ধতি হইল সালাত। যাকাত অর্থ আমিত্বের উৎসর্গ- Deniel of the self or the ego. আমিত্বের উৎসর্গ কখনও হইতে পারেনা যদি ধর্মসমূহকে মোহ দ্বারা ধরিয়া রাখা হয়। ধরিয়া রাখিলে পুনর্জন্মের উপাদান সৃষ্টি হয় এবং তাহা দ্বারা মানবীয় অস্তিত্ব বা আমিত্ব দির্ঘায়িত হয়। এইরূপ দুষ্ট আমিত্বের নিরসন করিতে চাহিলে সালাত করা অপরিহার্য, সুতারাং জাকাতের চাবিকাঠি সালাত। এই কারণে সালাত ও জাকাতের উল্লেখ অবিচ্ছেদ্যভাবে কোরানে বহুবার একযোগে করা হইয়াছে।কোরান বলিতেছেনঃ "হজ্জুল বাইতা" অর্থাৎ গৃহটির হজ্ব অর্থ অনু অনু করিয়া খুঁটিয়া খুঁটিয়া দেখা। আপন মানব দেহ ও মনকে অনু অনু করিয়া দেখা। বিশ্ব মানব দেহের প্রতীকী জাহেরি ঘর হইল কাবা ঘর। নফস দর্শন তথা আত্মদর্শনকে সালাত বলে। 'নফস দর্শন' অর্থ অসারতা দর্শন, অনাত্মা দর্শন। সুতারাং সালাত এবং হজ্ব একই বিষয়ের দুইরূপ বা দুই পর্যায় মাত্র। হজ্ব আত্মদর্শনের তথা আত্মত্যাগের চরম পর্যায় এবং সালাত হইল উহার প্রাথমিক এবং মৌলিক পর্যায়। সালাত সংসার জীবনের মধ্যে থাকিয়া গৃহের সহায়ক পরিবেশের মধ্যে ধর্মসমূহের স্বরূপ দর্শন করা আর হজ্ব বিশ্ব নাগরিক হইয়া অসীম মহা প্রকৃতির মধ্যে গৃহহারা অবস্থায় আপন রূপ দর্শন করা।হজ্ব সমাপনের দ্বারা পরিপূর্ণ আত্মদর্শন লাভ করিয়া পরমের জ্ঞানে জ্ঞানী হইয়া মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করার নাম কোরবানি। সুতারং সালাতের অনুশীলন ব্যতীত কোরবানি করা অসম্ভব। এইরূপ দেখা যায় সালাত কোরবানির চাবিকাঠি। কোরানের কোরবানি বুঝাইতে যে শব্দ ব্যবহার করা হইয়াছে তাহা হইল জবেহ। জবেহ অর্থ পবিত্র করা, শুদ্ধ করা। জিন এবং ইনসান জাতির মস্তিষ্কের অপবিত্রতা এবং কলুষ-কালিমা ধোলাই করিয়া শুদ্ধ ও পবিত্র করিয়া তোলার জন্যই কোরবানি। সমাজ শুদ্ধির জন্য প্রতিটি সমাজের দুই একজনকে কোরবানি হইতে হইবে। নতুবা প্রকৃত সমাজ কল্যাণ সুদূর পরাহত।
কোরানে সিয়াম (২:১৮৩-১৮৯) ১৮৩।অনুবাদঃ হে ইমানের মহড়াকারীগণ, তোমাদের উপর সিয়াম কেতাবস্থ করা হইল যেমন কেতাবস্থ করা হইয়াছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেন তোমরা তাকাওয়া কর, অথবা... কেতাবস্থা করা হইল যেমন কেতাবস্থা করা হইয়াছিল তোমাদের কবুলকৃতগণ হইতে যেন তোমরা আল্লাহর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হও, ব্যাখ্যাঃ আমানু(*1) অর্থ গুরুভক্ত সাধক। কেতাব(*2) অর্থ দেহ। গুরুভক্ত সাধকগনই কেবল একথা উপলব্ধি করিতে পারে যে, তাহাদের উপর সিয়াম দেওয়া হইয়াছে দেহস্থ করিয়া, অর্থাৎ দেহের সঙ্গে বিজড়িত করিয়া। প্রত্যেক মানব সত্তার সঙ্গে সিয়াম অর্থাৎ “দেহমন বিসর্জন” জড়াইয়া রহিয়াছে কিন্তু আমানু ব্যতীত সাধারণ অমনোযোগী লোকেরা তাহা উপলব্ধি করে না, যদিও সবাই জানে যে, মৃত্যু দ্বারা আপন সত্তা হইতে দেহমন বারংবার বিচ্ছিন্ন হইয়াই চলিতেছে।প্রথমত, সিয়াম কোন নূতন কথা নয় বরং সর্বকালের সর্বমানুষের জন্য প্রযোজ্য।দ্বিতীয়, আমানুগণ যাহাদিগকে গুরুরূপে কবুল করে তাহাদের মধ্য হইতে সম্যক গুরু বা কামেল মোর্শেদগণই কেবল সিয়ামকে দেহস্থ করিতে পারিয়াছেন অর্থাৎ তাঁহারা দেহমন হইতে আপন সত্তাকে স্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্বেই বিচ্ছিন্ন করিতে সক্ষম হইয়াছেন। সুতরাং আমানুগণের লক্ষ্য হইল দেহমন বর্জনের জন্য গুরুর কর্তব্যপরায়ণ হওয়া। ১৮৪। অনুবাদঃ গণনাকৃত সময় সমূহ সিয়াম, অতএব তোমাদের মধ্যে যে পীরিত অথবা ভ্রমণের উপর আছে তাহার গণনা পরবর্তী কাল সমূহের প্রতিটি হইতে (গ্রহণীয়)। এবং যে শরাঘাত খাওয়া তাহার উপর মুক্তিপণ রহিল একজন মিসকিনকে আহার্য দান। তারপর যে ব্যক্তি ততোধিক সৎকর্ম স্বেচ্ছায় করে উহা তাহার জন্য কল্যাণকর। এবং যদি সিয়াম কর, তোমাদের জন্য (তাহা) কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝিয়া থাক। ব্যাখ্যাঃ গণনাকৃত সময়সমূহই সিয়াম। এই কথার মধ্যেই সিয়ামের নিগুঢ় তত্ত্ব নিহিত আছে। সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া যাহা কিছু মস্তিষ্কের দিকে আসে তাহার প্রত্যেকটি বিষয় এক এক করিয়া হিসাব মত বর্জন করার পদ্ধতির নাম সিয়াম। পীরিত অবস্থায় এবং ভ্রমণরত অবস্থায় বিশয়গুলির প্রত্যেকটির আগমনকে গণনা করিয়া বর্জন করা সম্ভবপর হয় না। এইজন্য এইরূপ দুই অবস্থায় সিয়াম করা নিষেধ করা হইতেছে। তবে অবশ্য পালনীয় সিয়াম হিসাবে পরবর্তী সময়ে ইহা পূরণ করার নির্দেশ রহিল। যে ব্যক্তি গুরুভক্ত কিন্তু এখনও জীব পর্যায়ভুক্ত অর্থাৎ আমানু হয় নাই সে ব্যক্তি সিয়াম সাধনা করিতে যাইয়া বিষয়বস্তুর তীরাঘাত এত বেশী খায় যে, সিয়াম সাধনা তাহার পক্ষে সম্ভবপর হইয়া উঠে না, তাহার জন্য ব্যবস্থা হইল একজন গুরুভাই মিসকিনকে(*3) আহার্য দান করা। মিসকিন তাহাকেই বলে যে গুরুভক্ত বিষয়বস্তুর মোহ ত্যাগ করিয়া সর্বহারা হইয়া গিয়াছে। যদি কেহ একজন মিসকিনকে আহার্য দানের পরও অন্যান্য প্রকার সৎকর্ম করে তবে উহা অধিক কল্যাণকর কিন্তু যদি কেহ সিয়ামের গুরুত্ব উপলব্ধি করিয়া সকল প্রকার প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও সিয়াম সাধনায় দৃঢ়ভাবে লিপ্ত থাকে তবে উহা তাহার জন্য অবশ্য কল্যাণকর ১৮৫। অনুবাদঃ রমজান মাস ইহাতে কোরান নাজেল হয় যাহা মানুষের জন্য একটি হেদায়েত এবং হেদায়েতের একটি ব্যাখ্যা এবং ফোরকান। অতএব তোমাদের মধ্যে যে এই মাস কে প্রত্যক্ষ করে সে-ই সিয়াম করে। এবং তোমাদের মধ্যে যে পীরিত অথবা ভ্রমণের উপর আছে তাহার গণনা পরবর্তী কালসমূহের হইতে গ্রহণীয়। তোমাদের সহিত যাহা সহজ তাহাই আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন, এবং তোমাদের সহিত যাহা কঠিন তাহা ইচ্ছা করেন না; এবং গণনাটিকে কৃতকার্য করিয়া তোলার জন্য এবং যে হেদায়েত তোমাদিগকে দেওয়া হইয়াছে তাহার (আদর্শের) উপরে আল্লাহ্কে বড় করিয়া তোলার জন্য এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে পার। ব্যাখ্যাঃ “কোরান নাজেল হওয়া” সর্বকালীন এবং সর্বজনীন বিষয়। সাধকের নিকট তাঁহার আত্মদর্শনের পূর্ণাঙ্গ যে পাঠ তাহা হইতে নাজেল হয় বা বাহির হয় তাহাকেই বলা হইয়াছে কোরান(*4)। পূর্ণাঙ্গ সাধকের আত্মদর্শনের পাঠকে অর্থাৎ অভিব্যক্তিকে কোরান বলে। আরবী কোরান ইহাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। কোরানই মানুষের জন্য একমাত্র হেদায়েত। ইহা সাধকের “রমজান মাস” ব্যতীত অর্থাৎ শিরিক(5*) পরিত্যাক্ত কাল ব্যতীত অন্য সময়ে হয় না।চরম সাধক হইতে আগত কোরান অর্থাৎ পরম একজন গুরু হইতে আগত কোরান ইনসানের জন্য হেদায়েত। ইনসান হইতে নিম্ন পর্যায়ের মানুষের জন্য হেদায়েত নয়। সৎগুরু তাহার আপন হইতে আগত কোরান শিক্ষা দিয়া অধীনস্থ ভক্ত জীবগণকে ইনসান বানাইয়া থাকেন (৫৫:১)। এরূপ ইনসানের জন্য কোরান হেদায়েত। জীব প্রকৃতির মানুষের জন্য কোরান বোধগম্য বা যোগ্য নয়। গুরু হইতে যোগ্য শিক্ষা লাভের পর তাহারা কোরানের জ্ঞান লাভের যোগ্যতা অর্জন করে থাকে।সায়েমের নিকট তাঁহার সিয়াম কালের হেদায়েতের ব্যাখ্যা এবং ফোরকান(*7) নাজেল হয়। মানব জীবন সার্থকভাবে মুক্তির দিকে পরিচালনার জন্য সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের যত প্রকার হেদায়েতে (Guidence) প্রয়োজন হইতে পারে তাহার সর্বদিকে জ্ঞানে সায়েম পরিপূর্ণ হইয়া থাকেন। সিয়াম সাধনার সময়ে সিয়ামের ফলশ্রুতি স্বরূপ সায়েমের নিকট ফোরকান নাজেল হয়। অর্থাৎ ভাল-মন্দ প্রভেদ জ্ঞান তথা সর্ববিষয়ের পার্থককারী জ্ঞান নাজেল হয়, যাহাদ্বারা বস্তুর বন্ধন হইতে মুক্তিপথের সঠিক নির্দেশনা প্রাপ্ত হওয়া যায়।সিয়াম সাধনার সময়ে সিয়ামের ফলশ্রুতি স্বরূপ সায়েমের নিকট ফোরকান নাজেল হয়। অর্থাৎ ভাল-মন্দ প্রভেদ জ্ঞান তথা সর্ববিষয়ের পার্থক্যকারী জ্ঞান নাজেল হয়, যাহাদ্বারা বস্তুর বন্ধন হইতে মুক্তিপথের সঠিক নির্দেশনা প্রাপ্ত হওয়া যায়।সিয়াম করা অর্থ সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বারা দিয়া যাহা কিছু বিষয়বস্তু মস্তিষ্কে প্রবেশ করে তাহার মোহ বর্জন করা। এইরূপ বর্জনের গুরুত্ব যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় অর্থাৎ উপলব্ধি করে সেই ব্যক্তিই কেবল এই মাসে সিয়াম করে। অন্য লোকেরা কেবল পানাহারের সময়সূচীর বিধান পালন করিয়াই আত্মপ্রসাদ অনুভব করে।পীড়া এবং ভ্রমণ, এগুলো দৈহিক ও মানসিক উভয় প্রকার হইয়া থাকে। মানসিকভাবে পীড়িত এবং বিষয়বস্তুর উপর মানসিক ভ্রমণে রত ব্যক্তির পক্ষে সিয়াম পালন করা সম্ভবপর হয় না বিধায় তাহাদের প্রতি নির্দেশ হইল যেন তাহারা সিয়াম পালনের উপযুক্ত মানসিক যোগ্যতা অর্জনের পর উহা “পালন করিতে” যত্নবান হয়। “পালন করা” কথাটি এখানে নাই, গণনা করিবার কথা রহিয়াছে। কোরানের কথা হইলঃ পরবর্তী কালসমূহের অর্থাৎ প্রতিটি ধর্ম আগমনের কালসমূহের হইতে আগমনকারী প্রতিটি ধর্মই যেন তাহার জ্ঞাতসারে আগমন করে এবং বিদায় গ্রহণ করে। ইহার ফলে বস্তুবাদের মোহের ছাপ তথা শিরিক বা সংস্কার মস্তিষ্কে আবদ্ধ হইয়া থাকে না, সকলই পরিত্যাক্ত (Rejection) হইয়া যায়। ইহাই সিয়ামের মূল কথা। সিয়ামের অভ্যন্তরীণ কথাটি প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্যই আনুষ্ঠানিক সিয়াম পালনের ক্ষেত্রেও দৈহিকভাবে অসুস্থ এবং দৈহিক ভ্রমণকারীর সিয়াম পালন নিষিদ্ধ করিয়া তাহা পরে পালন করা ওয়াজেব অর্থাৎ অবশ্যই পালনীয় করা হইল।“সহজ” অর্থ জান্নাতের(*6)জিন্দিগী এবং কঠিন অর্থ জাহান্নামের(*6) জিন্দিগী(৮৭:৮) (৯২:৭)। আল্লাহ্তা’লা রব রূপে মানুষের মধ্যে আছেন।তিনি কখনও ইচ্ছা করেন না যে, তিনি মানুষের কঠিন অবস্থার সঙ্গে অবস্থান করেন। বরং তিনি মানুষের সহজ অবস্থার সঙ্গে স্থায়ী হইয়া থাকিতে চাহেন। কিন্তু মানুষ কার্যকরভাবে ইচ্ছা না করিলে তাহার “সহজ জীবন” আল্লাহ্তা’লা দান করিতে পারেন না, অর্থাৎ জান্নাত এবং তদূর্ধ্বের স্থান দান করিতে পারেন না। ইহা তাহারই রচিত বিধান।অতএব সিয়ামের যে হেদায়েত বা নির্দেশ আমাদিগকে দেওয়া হইয়াছে সেই নির্দেশের উপরে আমল করিয়া আমাদের মধ্যে আল্লাহ্কে বর করিয়া তোলার জন্য ধর্মসমূহের গণনা কার্যের অনুশীলনকে কৃতকার্য করিয়া তোলা একান্ত প্রয়োজন। নির্ধারিত নিয়মে গণনা কার্য সম্পাদন করিতে থাকিলে বস্তুমোহের ছাপ তথা শিরিক হইতে মুক্ত হওয়া সম্ভব হইবে এবং ইহার ফলে আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে জাগ্রত হইয়া উঠিবেন। সকল হেদায়েত মানুষের নফসের উপরেই দেওয়া হয়, নফসের উপর আল্লাহ্কে বড় করিয়া তোলার জন্য হেদায়েত। নফস প্রাধান্য পাইলে মানুষের মধ্যে আল্লাহ্র জাগরণ হয় না। সিয়াম সাধনায় বস্তু মোহ বন্ধন হইতে মানুষ মুক্ত হইয়া যায়। মুক্ত মানুষ প্রকৃতিকে জয় করিয়া পুরুষে পরিণত হন এবং তখনই কেবল আল্লাহ্র প্রতি মুক্তির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সম্ভব হয়। ১৮৬। অনুবাদঃ এবং যখন আমার দাসগণ আমার সম্বন্ধে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তখন (বলুন) নিশ্চয় আমি নিকটে আছি। আহ্বানকারীর আহ্বানে আমি সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহ্বান করে, সুতরাং তাহারাও সাড়া দিক আমার জন্য এবং আমার সহিত ইমানের কাজ করুক যাহাতে তাহারা সুপথগামী হইতে পারে। ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ্র দাস যখনই আল্লাহ্কে ডাকে তখনই তিনি তাহার ডাকে সাড়া দেন কিন্তু সকল দাস তাহা শুনিতে পারে না। আল্লাহ্ মানুষের নিকটই আছেন কিন্তু মানুষের মন আল্লাহ্ হইতে দূরে সরিয়া থাকে। সিয়াম প্রসঙ্গে আল্লাহ্র সাড়া দেওয়ার উল্লেখ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ্ বলিতেছেনঃ “আমি যেহেতু আমার দাসে ডাকা সাড়া দিয়ে থাকি আমার ডাকে দাসেরও সাড়া দেওয়া উচিত। আমি আমার দাসগণকে সিয়াম পালনের জন্য ইহাতে সাড়া দিলে সে সুপথ প্রাপ্ত হইবে।” ১৮৭। অনুবাদঃ সিয়ামের রাত্রে তোমাদের নারীর দিকে অশ্লীলতা (অর্থাৎ শয়ন কর্ম) হালাল করা হইল। তাহারা তোমাদের লেবাস এবং তোমরা তাহদের লেবাস। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমরা তোমাদের নফসের খেয়ানত করিয়া থাক। অতএব তিনি তোমাদের উপর (করুণা) দৃস্তিপাত করিলেন এবং তোমরা তোমাদের নফসের খেয়ানত করিয়া থাক। অতএব তিনি তোমাদের উপর (করুণা) দৃষ্টিপাত করিলেন এবং তোমাদিগ হইতে স্নেহের ক্ষমা করিলেন। অতএব এখন তোমরা তাহাদের সহিত সহবাস কর এবং আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যাহা (অর্থাৎ যে সিয়াম) কেতবাস্থ করিয়াছেন তাহার আকাঙ্ক্ষা কর এবং খাও ও পান কর যতক্ষণ প্রভাতের কাল সুত্র হইতে সাদা সুত্র তোমাদের জন্য স্পষ্ট করা না হয়ঃ তারপর সিয়াম পূর্ণ কর রাত্রির দিকে। এবং তোমরা স্ত্রী সঙ্গম করিও না যতকাল অবস্থান লইয়া আছ মসজিদ সমূহের মধ্যে। ইহা আল্লাহ্র সীমারেখা সুতরাং ইহার (অর্থাৎ স্ত্রী সঙ্গমের) নিকটে যাইও না। এই রূপে আল্লাহ্ মানুষের জন্য তাঁহার পরিচয়ের ব্যাখ্যা দান করেন যেন তাহার তাকাওয়া করে। ব্যাখ্যাঃ প্রথম যখন সিয়াম পালনের নির্দেশ দেওয়া হয় তখন রাত্রিবেলা স্ত্রী সহবাস করা নিষেধ ছিল এবং সেহরী খাওয়ার বিধান ছিল না। সন্ধ্যা হইতে আরম্ভ করিয়া যতক্ষণ সায়েম জাগিয়া থাকিতে পারিবে ততক্ষণ পানাহার করিতে পারিবে। একবার ঘুমাইয়া পড়িলে পর জাগিয়া উঠিলেও পানাহার করা নিষিদ্ধ ছিল। ইহাতে দেখা গেলঃ১। কেহ কেহ স্ত্রী সহবাস না করার নিয়ম ভঙ্গ করিবার অপরাধ ব্যক্ত করিয়া উহার জন্য প্রায়াশ্চিত্ত হিসাবে রসুলাল্লাহ্ আ. এক এক করিয়া তিনটি ব্যবস্থার উল্লেখ করিয়া ইহাদের মধ্য হইতে যে কোন একটি উপযুক্ত ব্যবস্থার উল্লেখ করিয়া ইহাদের মধ্য হইতে যে কোন একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা ব্যক্তি বিশেষে দান করিতেন। যথাঃ ক) একজন ক্রীতদাস বা ক্রীতদাসীকে মুক্ত করা, খ) ষাটজন ক্ষুধার্তকে দু’বেলা খাদ্য দাণ করা, গ) রমজান মাসের পর ষাট দিন একাধারে সিয়াম পালন করা।২। কেহ কেহ কায়িক পরিশ্রমে শ্রান্ত হইয়া গ্রহে ফিরিয়া আসিত এবং সন্ধ্যার পর পানাহারের আগেই নিদ্রামগ্ন হইয়া যাইত। পরের দিন অনেকে কাজ করিতে যাইয়া ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অজ্ঞান হইয়া পড়িত। উক্ত সময় ছিল আরবের গ্রীষ্মকাল।এই দুই প্রকার অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্তা’লা সিয়াম পালনের আনুষ্ঠানিক বিধান সহজতর করিয়া দিলেন। তাই তিনি রাত্রিবেলা স্ত্রীর সহবাসের অনুমতি এবং সেহরী খাওয়ার সুবিধা দানের উল্লেখ করিয়া উক্ত বাক্য নাজেল করিলেন। এই দুইটি বিষয়ের উপর কয়েকটি ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ হাদিসে দেখিতে পাওয়া যায়।স্বামী স্ত্রী পরস্পরের লেবাসঃ অর্থাৎ স্বামী এবং স্ত্রী একজন অন্যজনের সমর্থক, সহায়ক এবং আনন্দ ও আরামদায়ক। সংসার সমুদ্রে পোতাশ্রয়। পোশাক যেমন শীতাতপ হইতে রক্ষা করে তেমনই একজন অন্যজনের মান ইজ্জত রক্ষাকারী ইসলামের বিধান এরূপযে, একে অন্যের পোশাকের মতন সাজাইয়া রাখিবে।এখানে সিয়াম প্রসঙ্গে লেবাসের অর্থ একটু বিশেষ রূপ গ্রহণ করিয়াছে। কোরান বলিতেছেনঃ লেবাসের মত তোমরা একে অপরকে জড়াইয়া থাকিতে অত্যন্ত পছন্দ কর বলিয়াই লোভের বশবর্তী হইয়া কেহ কেহ সিয়ামের বিধান ভঙ্গ করিয়াছ। আল্লাহ্র নির্দেশ ভঙ্গ করিয়া রাত্রিকালে গোপনে নফসের কি খেয়ানত অর্থাৎ ক্ষতি করিয়াছ তাহা আল্লাহ্ জানেন। অতএব তোমাদের প্রতি দয়া করিয়া আল্লাহ্ এ বিষয়ে স্নেহের ক্ষমা করিলেন। ইহাতে আইনের কড়াকড়ি ভাব শিথিল করা হইল এবং সেহরি প্রবর্তন করিয়া শাররিক কষ্টের লাঘব করা হইল এবং সিয়ামের যাহা লক্ষ্য সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইল।যৌন প্রক্রিয়ার অনুমোদন দানের মধ্যে যে হাকিকত রহিয়াছে তাহা বিশেষভাবে বিচার্য বিষয়। সাধক যখন সিয়াম সিদ্ধ হইয়া যাইবে তখন সে তাহার আপন সত্তা হইতে দেহমন বিচ্ছিন্ন করিয়া যে যৌনক্রিয়া করেন তাহা শুধুমাত্র দেহমনের প্রক্রিয়া এবং তাহা আপন সত্তা হইতে বর্জিত। যদি শরীয়তের বিধান হালাল করা না হয় তবে মহাপুরুষগণের বৈশিষ্ট্য স্বীকৃতি সমাজে থাকে না এবং দিনের বেলা পানাহার করিয়াও সিয়াম সাধনা যে পূর্ণতা লাভ করিতে পারে একথার সত্যতা জনমন হইতে বিলুপ্ত হইয়া যায়। আত্মসত্তা হইতে দেহমনকে বিচ্ছিন্ন করার নাম সিয়াম। এই বিচ্ছিন্নতা (অর্থাৎ দেহমনের মৃত্যু) প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দেহস্থ হইয়া আছে। মৃত্যু দ্বারা যে কোন সময় বিচ্ছিন্নতা সংগঠিত হইয়া যাইতে পারে। দেহমন হইতে এইরূপ বিচ্ছিন্নতার পূর্বেই সায়েম বিচ্ছিন্নতা অর্জন করে। ইহাকে কোরানের ভাষায় বলা হইয়াছে “মৃত্যুর আগে মরিয়া যাওয়া।”দিনের বেলা কিংবা রাত্রিবেলায় পানাহার অথবা স্ত্রী সঙ্গম করা বা না করার মধ্যে সিয়ামের গুরুত্ব তেমন নাই যেমন রহিয়াছে সিয়াম (অর্থাৎ বিচ্ছেদ) অর্জন করার কার্যকরী আকাঙ্ক্ষার মধ্যে।প্রভাত অর্থ মুক্ত জীবনের প্রভাত বা সূচনা। অর্থাৎ বস্তুমোহের অন্ধকার হইতে মুক্ত আলোকিত জীবনের প্রভাত। আলোর উদয় পথে পূর্ব গগনে সুতার মত কালরেখা হইতে সাদা রেখার উদয় না হওয়া পর্যন্ত সাধক পানাহার করিয়া থাকে। তারপর বিষয়বস্তু হইতে আলোর উদয় হইয়া গেলে সে নিজে তাঁহার সত্তাকে আর পানাহার করায় না। তখন যাহা পানাহার হইতেছে বলিয়া দেখা যায় তাহা তাঁহার দেহমনের ব্যাপার। সায়েমের আপন সত্তা সম্পূর্ণ মোহমুক্ত হইয়া বস্তুবাদে সকল অন্ধকার হইতে চিরমুক্তি লাভ করে। মরার আগে মরিয়া যাওয়ার ইহা একটি জ্ঞানবাদী ধারা।সপ্ত ইন্দ্রিয় পথে আগমনকারী বস্তুমোহের উপভোগের মাধ্যমে আলোর উদয় হইয়া গেলে এই সিয়াম অর্থাৎ বিচ্ছেদের আমল চালাইয়া যাইতে হইবে রাত্রির দিকে। সিয়াম একটি অস্ত্র। ইহা চালাইয়া যাইতে হইবে আপন অজ্ঞানতা, অস্পষ্টতা, আবিলতা ইত্যাদি সর্বপ্রকার রাত্রির দিকে সিয়াম নামক অস্ত্র চালাইয়া যাইতে হইবে। ইহাতে মোহবন্ধন হইতে অনন্ত আলোর দেশে প্রবেশ লাভ করা সম্ভবপর হইবে। সিয়াম সাধনা দ্বারা বস্তুর অন্ধকারের মধ্যে আলোর সন্ধান লাভের পর সিয়াম প্রচেষ্টা এমন ভাবে চালাইয়া যাইতে হইবে যেন কোন স্বাধীন আল্লাহ্ সত্তাকে মানুষের মধ্যে অবস্থিত শয়তান সত্তা ঢাকিয়া রাখিতে না পারে। আল্লাহ্ সত্তা এবং শয়তান সত্তার সমন্বয় হইল মানব সত্তা।মসজিদসমূহ বলিতে কি বুঝান হইয়াছে? সেজদা দেওয়ার স্থান কে মসজিদ বলে। যেখানেই আগমনকারী ধর্ম সমূহের উপর সেজদা হইয়া যায় উহাই মসজিদ। এইরূপ প্রতিটি ইন্দ্রিয় দ্বার এক একটি মসজিদ। আল্লাহ্ ছাড়া কোন ধর্মের উপর সেজদা করা শিরিক। সাধক যখন ইন্দ্রিয় দ্বারের উপর প্রহারারত থাকে তখন আগমনকারী ধর্মগুলি শিরিক বা সংস্কার সৃষ্টি করিতে পারে না। প্রহরারত অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম করার প্রশ্নই উঠে না। কেননা সিয়াম ব্যতীত অন্য কোন দিকে এক মুহূর্ত মনোযোগ দেওয়ার অবকাশ তাহাদের থাকে না। আর যাহারা মসজিদ নামক এবাদতখানায় এতেকাফ করে অর্থাৎ অবস্থান লয় তাহাদের জন্য স্ত্রী সঙ্গম নিষিদ্ধ করা হইল। আলাহ্র প্রতি তাকাওয়া অর্থাৎ কর্তব্যপরায়ণ হওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা দেওয়া হইল। অনুষ্ঠান পালনে এই ব্যবস্থা গ্রহণ না করিলে আল্লাহ্র পরিচয় লাভে বিলম্ব হয়। ১৮৮। অনুবাদঃ এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তোমাদের মাল অন্যায়ভাবে ভোগ করিও না। এবং হাকিমের দিকে ইহার দ্বারা উৎকোচ দিয়া থাক মানুষের মাল হইতে এক অংশ অন্যায়ভাবে ভোগ করিবার জন্য, এবং তোমরা ইহা (অর্থাৎ এই অন্যায়) বুঝ। ব্যাখ্যাঃ ইনসান অর্থ মানুষের মধ্যে সচেতন শ্রেণীর লোক। যেহেতু ইনসানগণ সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে সেইহেতু তাঁহাদিগকে নির্দেশ দেওয়া হইতেছে যেন তাহারা অন্যায়ভাবে একে অপরের মাল ভোগ করার জন্য হাকিমদিগকে উৎকোচ দিয়া প্রভাবান্বিত না করে। আল্লাহ্র সৃষ্ট সমস্ত সম্পদ ভোগদখল করিবার অধিকার সকলের জন্য। সুতরাং নিয়ন্ত্রণ অধিকার বলিয়া ইহা হইতে এক অংশ নিজদের ভোগে আনা অন্যায়। ইনসানগণ অসাম্যের এই অন্যায় অবশ্যই বুঝে। তথাপি হাকিমদিগকে অর্থাৎ সমাজের নিয়ন্ত্রকদিগকে সর্বদা মালের উৎকোচ দ্বারা তাহারা বস্তু ভোগের কর্মকাণ্ড অন্যায়ভাবে চালাইতেছে। ১৮৯। অনুবাদঃ (সাধকেরা) তোমাকে জিজ্ঞাসা করিতেছে নূতন চাঁদসমূহ সম্বন্ধে (অর্থাৎ সাধকের ধর্মসমূহের মধ্য হইতে জ্ঞানের আলো উদয় বিষয়ে)? বলিয়া দাওঃ এইগুলি ইনসানের জন্য এবং হজ্বের জন্য ওয়াক্ত করা রহিয়াছে। (অর্থাৎ গুরুভক্ত সাধক এবং আত্মদর্শনে নিয়োজিত ব্যক্তিগণের জন্য সময় নির্ধারিত করা বিষয়রূপে রহিয়াছে; জীব প্রকৃতির মানুষের জন্য নহে)। এবং ঘরে আসিবার মধ্যে কল্যাণ নাই যদি ইহার পিছন দিক দিয়া আসা হয়, বরং বিশেষ কল্যাণ রহিয়াছে তাকাওয়াকারীর জন্য (অর্থাৎ গুরুর প্রতি কর্তব্যপরায়ণের জন্য)। এবং ঘরটিতে প্রবেশ কর ইহার দ্বারগুলো হইতে। এবং আল্লাহ্র কার্যকারণকে ভয় কর যেন তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। ব্যাখ্যাঃ রসুলল্লাহকে (আঃ) তাঁহার ভক্তগণ নূতন চাঁদসমূহ উদয় হওয়া বিষয়ে অর্থাৎ ধর্মের মধ্যে জ্ঞানের উন্মেষ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি জবাব দিলেন যে, এইগুলি উদয় সাধকের জন্য এবং “হজ্বের জন্য” অর্থাৎ আত্মদর্শনের ব্যক্তির জন্য সময় সাপেক্ষ। ইনসানের অর্থাৎ সালাতী সাধকের পরিমাণ মত সাধনা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উহাতে চন্দ্র উদয় অর্থাৎ বস্তু জ্ঞানের উদয় আরম্ভ হয় না। সম্যক গুরু হইতে এই জ্ঞান অর্জনীয়।‘ঘরের পেছন হইতে প্রবেশ করা’ অর্থ অজ্ঞানতার সহিত আত্মদর্শনের চেষ্টা করা। আপন দেহের মধ্যে প্রবেশ করার দ্বার সম্বন্ধে গুরু হইলেন অভিজ্ঞ শিক্ষাদাতা। তাঁহার নির্দেশিত জ্ঞানের পথে আত্মদর্শনে অগ্রসর হইবার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত রহিয়াছে। কারণ আপন গৃহের জ্ঞান অর্জন বিষয়ে গুরুর জ্ঞান সুপরিপক্ক। সুতরাং গুরুর নির্দেশিত নিয়ম ব্যতীত আত্মদর্শনে অগ্রসর হওয়া উচিত নয়। আল্লাহ্র প্রতি তথা গুরুর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হইলে সাধনায় সিদ্ধিলাভ হয়।
টীকাভাষ্যঃ(*1) কোন একজন নবির প্রচারিত নীতিকে স্বীকার করিয়া তাঁহার নিকট অথবা তাঁহার নীতির অনুসারী প্রতিনিধির নিকট আত্মসমর্পণ করিলে তাহাকে বলা হয় মুসলিম, অর্থাৎ আত্মসমর্পণকারী।ইহার পর মোমিন হওয়ার জন্য ইমানের কাজ করিতে থাকিলে তাহাকে বলা হয় আমানু। কোরানের সকল নির্দেশ আমানুগণকেই দেওয়া হইয়াছে, যেহেতু ইহারা ইমান লাভের জন্য সকল প্রকার (মানসিক ও দৈহিক) সৎকাজ ব্যস্ত আছে।
(*2)"কেতাব" https://www.facebook.com/notes/601962603272329/ (*3) মিসকিন (৯:৬০)- অভাবী। মনকে যিনি বস্তুগতভাবে সম্পদশূন্য\বিশয়শূন্য করেছেন তিনি মিসকিন বা নিঃস্ব। তিনি বিষয়ের বিচারে যত অভাবী, গুণের বিচারে তত ধনী বটে। (*4)কোরানঃhttps://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%80/598321246969798
(*5) 'শেরেক' https://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95/603175223151067
(*6)জাহান্নাম এবং জান্নাতঃ-https://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%83-/603176743150915 (*7) ফোরকানঃ https://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%AB%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%83-/611081979027058
টীকাভাষ্যঃ(*1) কোন একজন নবির প্রচারিত নীতিকে স্বীকার করিয়া তাঁহার নিকট অথবা তাঁহার নীতির অনুসারী প্রতিনিধির নিকট আত্মসমর্পণ করিলে তাহাকে বলা হয় মুসলিম, অর্থাৎ আত্মসমর্পণকারী।ইহার পর মোমিন হওয়ার জন্য ইমানের কাজ করিতে থাকিলে তাহাকে বলা হয় আমানু। কোরানের সকল নির্দেশ আমানুগণকেই দেওয়া হইয়াছে, যেহেতু ইহারা ইমান লাভের জন্য সকল প্রকার (মানসিক ও দৈহিক) সৎকাজ ব্যস্ত আছে।
(*2)"কেতাব" https://www.facebook.com/notes/601962603272329/ (*3) মিসকিন (৯:৬০)- অভাবী। মনকে যিনি বস্তুগতভাবে সম্পদশূন্য\বিশয়শূন্য করেছেন তিনি মিসকিন বা নিঃস্ব। তিনি বিষয়ের বিচারে যত অভাবী, গুণের বিচারে তত ধনী বটে। (*4)কোরানঃhttps://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%80/598321246969798
(*5) 'শেরেক' https://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95/603175223151067
(*6)জাহান্নাম এবং জান্নাতঃ-https://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%83-/603176743150915 (*7) ফোরকানঃ https://www.facebook.com/notes/moula-sufi-sadar-uddin-ahmad-chishty/%E0%A6%AB%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%83-/611081979027058
জাহেরী এফতার করিবার সময় সমন্ধে মতভেদ: শিয়াদের মতে, সুন্নিদের রোজা একেবারেই হয় না। কারণ সুন্নিগণ সন্ধ্যায় এফতার করে। অল্পক্ষণের জন্য রোজা নষ্ট করিয়া ফেলে। অপরপক্ষে সুন্নিদের মতে, শিয়াদের রোজা মাকরূহ হইয়া যায়, যেহেতু প্রায় পনর মিনিট পরে তাহারা এফতার করে।যেহেতু এফতার শীঘ্রই করার তাগিদ কয়েকটি হাদিসেই দেখিতে পাওয়া যায় বলিয়া সূন্নি আলেমগণ মনে করেন, যেইহেতু সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের মতে এফতার করিতে হইবে, নতুবা এফতার বিষয়ে তাড়াহুড়া করার আদেশ লঙ্ঘনের জন্য উহা মকরুহ অর্থাৎ অবাঞ্চিত বা ত্রুটিপূর্ণ হইয়া যায়। শিয়া আলেমগণ মনে করেন যেহেতু কোরানে বলিতেছেন (২:১৮৭)"সিয়াম পূর্ণ কর রাত্রের দিকে " অতএব সন্ধ্যাকে রাত্রিরূপে গ্রহণ করা যায় না। কারণ, সন্ধ্যা রাত্রিও নয়, দিনও নয়। সূর্যাস্তের পর কিছুটা অন্ধকার হইলে তখন উহাকে রাত্রি বলা হয়।আসলে উভয় দল এ বিষয়ে ভুল মত প্রকাশ করিয়া থাকে। সিয়াম সাধনার হাকীকত বুঝিতে পারিলে দেখা যাইবে যে, উভয় দল এবিষয়ে ভ্রান্তির মধ্যে রহিয়াছে। এফতার সন্ধ্যায় হোক বা পনর মিনিট পরে হোক তাহাতে কিছুই যায় আসেনা। তথাপি সমাজ জীবনে সকলের জন্য সম্মিলিত একটি মত গ্রহণ করিয়া চলাই ভাল। ইহাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকে।সূরা মরিয়মের ২৬নং বাক্যে হযরত মরিয়ম কর্তৃক একটি সিয়াম পালন করার কথা এইরূপে উল্লেখিত আছে :"নিশ্চয় আমি আররহমানের জন্য মানত করিয়াছি একটি সওম সুতরাং আমি এই সময় কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলি না "দৈহিক অপবিত্রতার কারণে শরীয়তের বিধান মতে সদ্য সিয়াম পালন করা নিষিদ্ধ আছে। ইহাতে শিশুর খাদ্যাভাব হইতে পারে। এমতাবস্তায় হযরত মরিয়ম আল্লাহর নির্দেশে সিয়ামের মানত করেন কেমন করিয়া?যেহেতু দিনের বেলা খাদ্য ত্যাগের মধ্যে সিয়াম আবদ্ধ নয়, সেইহেতু মরিয়ম সেই নাজুক অবস্থায় সিয়াম পালন করিয়াছিলেন। ইহাতে প্রমাণ হয় সিয়াম সম্পূর্ণরূপে মনের ব্যাপার। খাদ্যের সময় নিয়ন্ত্রণ উহার একটি সাধারণ আনুষ্ঠানিক বিষয় মাত্র। সিয়াম সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। কথা বলিতে গেলে সিয়াম হইতে মনের যতটুকু বিচ্যুতি ঘটিয়া থাকে এবং তাহাতে সিয়াম ভাব যে পরিমাণে ব্যাহত হয় ২৪ ঘন্টার মধ্যকার আহারে সময় নির্ধারিত না করিয়া প্রয়োজন মত যখন ইচ্ছা পানাহার গ্রহণে তাহা হয় না। _________________________________________________________ হাদীসে সিয়াম
১।হযরত আবু হোরায়রা হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :যখন রমজান প্রবেশ করে আকাশের দরজা খুলিয়া যায় (অন্য একটি উক্তিতে আছে জান্নাতের দরজা খুলিয়া যায়), জাহান্নামের দরজা বন্ধ হইয়া যায় এবং শয়তান সমূহ শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় (এবং অন্য উক্তিতে আছে রহমতের দরজা খুলিয়া যায়)। (ঐক্যসম্মত)ব্যাখ্যা :"রমজান যখন প্রবেশ করে " এর অর্থ যাহার মধ্যে রমজানের সাধনা প্রবেশ করে অর্থাৎ দানা বাঁধে, তাহার রহস্য জগতের রুদ্ধদ্বার খুলিয়া যায়। এর কারণ নফসের কুপ্রবৃত্তির সমস্ত দরজা সে বন্ধ করিয়া ফেলিয়াছে। সুতরাং তাহার নফসের মধ্যে পাপ প্রবেশের সকল দ্বার বন্ধ হইয়া গিয়াছে। নফসের কু-প্রবৃত্তিগুলোর সকল দ্বার অর্থাৎ নরকের দ্বার বন্ধ করিলে রহমতের দ্বার তথা জান্নাতের দ্বার খুলিয়া যায়। সদ্ভাব সৎচিন্তা অন্তরে প্রবেশ লাভ করিতে থাকে এবং তাহার "পার্থিব জান্নাত " রচনা আরম্ভ হইয়া যায়।যাহার রমজানের সিয়াম সাধনার মশগুল হয় না তাহাদের জীবনে এবং তাহাদের মনের জগতে এই পরিবর্তন আসিতে পারে না। এইজন্য "রমজান প্রবেশ করিলে " কথা বলা হইয়াছে, "রমজান মাস আসিলে " কথা বলেন নাই। এই কারণে দেখা যায় রমজানের সিয়ামের ভাব সাধকের অন্তরে প্রবেশ করাইতে চাহিলে আরও দুইমাস আগে হইতে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা হাদীসে উল্লেখ আছে।ইবলিশ মানব অন্তরে প্রবেশাধিকার লাভ করার কারণে আমাদের প্রবৃত্তির সঙ্গে শয়তান মিশিয়া গিয়াছে। শয়তান শুধু বাহিরের জীব নয়। যদি শয়তান শুধুমাত্র বাহিরের জীব হইত এবং রমজান মাসে তাহাদিগকে বন্ধ করিয়া রাখা হইত তাহা হইলে সমস্ত জগতে কোথাও এতটুকু পাপ রমজান মাসে থাকিতে পারিত না। ____________________________________________ *২.সহল বিনে সাদ হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুরাল্লাহ (আঃ) বলিয়াছেন : “জান্নাতে আটটি দরজা আছে উহাদের মধ্যে একটির নামকরণ করা হইয়াছে “রাইয়ান”। উহাতে সায়েম (রোযাদার) ব্যতীত কেহই প্রবেশ লাভ করতে পারবে না। (ঐক্যসম্মত) ।। #ব্যাখ্যাঃ- জাহান্নামের দরজার সংখ্যা উল্লেখ করা হইয়াছে সাত এবং জান্নাতের দরজা হইল আটটি। পাপ প্রবেশের জন্য প্রবৃত্তির দ্বার সমূহকে সাত ভাগে ভাগ করিয়াছে। এই দ্বার গুলির মধ্য দিয়া পাপ প্রবেশ বন্ধ করিয়া দিলে এইগুলো জান্নাতের দ্বারে পরিণত হইয়া যায়। যেগুলো ছিল তাহার নরকের দ্বার সাধক সেগুলোকে স্বর্গের দ্বারে পরিণত করিয়া লয়। অর্থাৎ এই দ্বার গুলো দ্বারা ন্যায় ও সত্য ব্যতীত অন্যায় ও অসত্যের প্রবেশ বন্ধ করিয়া ফেলে। আপন প্রচেষ্টা দ্বারা মনের মধ্যে পাপ প্রবেশের দরজা গুলো বন্ধ করিলেই স্বর্গে যাওয়া যায়না, যদি আল্লাহর রহমতের দ্বার খুলিয়া দেওয়া না হয়। এইরূপে জান্নাতের দ্বার হইল আটটি। রহমতের দ্বার না খোলা পর্যন্ত পাপ প্রবেশের দ্বার গুলো চিরতরে বন্ধ হইয়া যায়না। সায়েমের (রোজাদারের) প্রবৃত্তিসমূহের কৃচ্ছ সাধনা দ্বারা রহমতের যে অষ্টম দ্বার খুলিয়া যায় তাহার নাম করণ করা হইয়াছে “রাইয়ান”। ইহা সায়েমের জন্য জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ দ্বার।_______________________________________________________________ *৩। হযরত আবু হোরাইরা হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ্ (সঃ) বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত রমজানের সিয়াম পালন করে এবং পুরষ্কারের আশা রাখে তাহার অতীতের সমস্ত গোনাহ্ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত রমজানে দাঁড়ায় (সালাতে) এবং পুরস্কারের আশা রাখে তাহার অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত কদর রাত্রিতে দাঁড়ায় এবং পুরস্কারের আশা রাখে তাহার অতীতের সমস্ত অপরাধ বা গোনাহ্ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। ( ঐক্যসম্মত )|| ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত পুরো রমজান মাস পালন করে তাহার অতীত জীবনের সমস্ত অপরাধ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। অপরাধ মাফ পাওয়া অর্থ জাহান্নাম হইতে মুক্তি পাওয়া। এই হাল সায়েমের অজ্ঞাত অবস্থায় থাকে না। রুহ প্রাপ্তি অথবা এলহামের ঘটনা দ্বারা সায়েম জানিতে পারে যে, তাহার গোনাহ্ মাফ হইয়া গিয়াছে। পুরস্কারের আশা হইল পার্থিব জান্নাত লাভ করা, যাহাকে "জান্নাতুন-নাঈম" বলা হইয়াছে। রুহ প্রাপ্তি, এলহাম প্রাপ্তি ইত্যাদি হইল এই জান্নাত লাভের প্রমাণ বা ঘটনা যাহা সাধকের জীবনে ঘটিয়া থাকে।এইরূপ পুরস্কারের আশা করিয়া সায়েম রমজান মাসে সালাতে দাঁড়ায়।"রমজানে দাঁড়ান"অর্থে বিশেষভাবে রাত্রিতে দাঁড়ান বুঝায় ।সায়েম ঘুম জয় করার পথে অগ্রসর হইতে থাকে এবং অবশেষে সিয়ামকে দাঁড় করিয়া ফেলে।উহার নীতির পতন তাহার আর ঘটে না । এমন ব্যক্তি অতীত জীবনে সমস্ত অপরাধ মাফ হইয়া যায়।যে ব্যক্তি ক্বদর রাত্রিতে ঈমানের সহিত দাঁড়ায় তাহার অতীত জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ হইয়া যায়। কিন্তু ক্বদর রাত্রি কয়জনের ভাগ্যে জুটে ? জীবনে একবার যাহার ক্বদর রাত্রি ঘটিয়াছে তাহার রুহ্ প্রাপ্তি হইয়া গিয়াছে এবং তাহার রুহ্ আত্ম-পরিচয় লাভ হইয়া গিয়াছে ( সুরা ক্বদরের প্রকৃত অর্থ দ্রষ্টব্য )। জাহেরী তারিখ মোতাবেক আনুষ্ঠানিক ক্বদর রাত্রিতে প্রায় সবাই সালাতে দাঁড়াইয়া থাকে। ইহাতে তাহাদের রুহ্ প্রাপ্তি অথবা ঈমান প্রাপ্তি অথবা আত্ম-পরিচয় প্রাপ্তি ঘটিয়া যায় কি? অতএব নিশ্চয় এই হাদিসটি মনগড়া সাধারন অর্থ বহন করে না।_______________________________________________________________ * ৭) আনাস ইবনে মালেক বলিয়াছেন, রমজান উপস্থিত হইল তাই আল্লাহর রাসূল (আঃ) বলিলেন ; “নিশ্চয় এই মাস তোমাদের নিকট আসিয়াছে এবং ইহাতে একটি রাত্রি আছে যাহা হাজার মাস হইতে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি উহা হইতে বঞ্চিত হইল নিশ্চয় সে উহার সমস্ত কল্যাণ হইতে বঞ্ছিত হইল। এবং উহার কল্যাণ হইতে বঞ্ছিত হয়না একেবারেই হতভাগ্য লোক ছাড়া । ( ইবনে মা’জাহ )।। #ব্যাখ্যাঃ এখানে ক্বদর রাত্রিকে হাজার মাস হইতে শ্রেষ্ঠ বলা হইয়াছে। এই কথা কোরানে সূরা ক্বদরেও উল্লেখিত হইয়াছে। ইহার অর্থ হাজার মাস যথাসাধ্য শুদ্ধভাবে এবাদত করিয়া মানুষ নিজ হইতে যতটুকু শুদ্ধির দিকে অগ্রসর হইতে পারিবে, একবার ক্বদর রাত্রির সন্ধান পাওয়া অর্থাৎ ক্বদর রাত্রিতে পৌঁছাইয়া যাওয়া তাহা হইতে উত্তম। সময়ের দৈর্ঘ্য দ্বারা এবাদতের মান নির্ণয় হয় না, বরং উহার গভীরতা দ্বারাই তাহার গুরুত্ব এবং সার্থকতা অর্জন হইয়া থাকে। রুহ্ প্রাপ্তি তথা জান্নাত প্রাপ্তি মানব জীবনের লক্ষ্য। সিয়াম সাধনা দ্বারা যদি কেহ লক্ষ্যে পৌঁছাইতে না পারে তবে সে ব্যক্তি হতভাগ্যই বটে। ক্বদর রাত্রি লাভ করাই হইল সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্য। যে ব্যক্তি উহা হইতে বঞ্চিত সে ব্যক্তি বাস্তবিক পক্ষে হতভাগ্য কারণ এই জীবনে তাহার জান্নাত প্রাপ্তি ঘটিল না।প্রসঙ্গক্রমে বলা যাইতে পারেঃ আমরা সকল সায়েমগণই এই হতভাগ্য দলের লোক বিধায় ক্বদর রাত্রিকে আমরা আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের রাত্রিরূপে গ্রহণ না করিয়া শুধু আনুষ্ঠানিক নৈসর্গিক রাত্রি বানাইয়া লইয়াছি---ইহার জন্য সূরা ক্বদরের অর্থও বদলাইয়া লইয়াছি। .................................................................................................... ১২।নবী আ. হইতে হযরত আবু হোরায়রা বর্ণনা করিয়াছেন যে, নিশ্চয় তিনি বলিয়াছেন যে, তাঁহার উম্মতের জন্য রহিয়াছে ক্ষমা রমজানের শেষ রাত্রিতে। জিজ্ঞাসা করা হইলঃ ইয়া রসুলাল্লা্হ্ উহা কি #ক্বদর #রাত্রি ? তিনি বলিলেন "না" কিন্তু নিশ্চয় একজন আমলকারীকে (অর্থাৎ কর্মীকে) তাহার মজুরি সম্পূর্ণ করে দেওয়া হয়। যখন তাহার আমল (কর্মকে) শেষ করে। (আহমদ)।। ব্যাখ্যাঃকোরানের কথা মতে আল্লাহর একজন দাসের ভাগ্যে ক্বদর রাত্রি সংঘটিত হইয়া উহার মধ্যে রুহ নাজেল হয় তথা আত্মপরিচয় নাজেল হইয়া বা লাভ হইয়া দাসের ক্ষমা প্রাপ্তি ঘটে। কিন্তু এই হাদিসে দেখা যায় উম্মতে মোহাম্মদিকে আল্লাহতালা একমাস সিয়াম পালনের মজুরি স্বরূপ নিশ্চয় ক্ষমা দান করিয়া থাকেন। ক্বদর রাত্রি প্রধানত ধ্যানযোগের ফলশ্রুতি। সিয়ামে উম্মতে মোহম্মদীর ক্বদর রাত্রি না হইলেও অর্থাৎ ধ্যানযোগ ছাড়াও কর্মযোগে আসিয়া তাহারা ক্ষমা পাইবার যোগ্য হইতে পারে, এর কারণ তাহাদের কর্মগুলো সকলই মহানবীর আদর্শের উপর হইয়া থাকে।আমলের শেষ রাত্রিতে ক্ষমা প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করিলেন বলিয়াই তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল : উহাতে কি সায়েমের ক্বদর রাত্রি হইবে? তিনি বলিলেনঃ (কদর রাত্রি ব্যতীতই) ক্ষমা তাহার মজুরি। এই হাদিস উম্মতে মোহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্বের একটি প্রমান বহন করে। #টীকাভাষ্যঃ ক্বদর রাত্রি কি? https://www.facebook.com/notes/586678464800743/। ............................................................... ১৩.হযরত আবু বকর হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, রসুলুল্লাহ আ. বলিয়াছেন ঈদের মাস দুইটি, যাহা কমে না রমজান এবং জেলহজ্জ্ব। (ঐক্যসম্মত)|| #ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর বান্দার জন্য মাস হিসাবে আনন্দের মাস হইল রমজান এবং জেলহজ্জ্ব এবং তাহা কেন? রমজান মাসের সিয়াম পালন এবং জেলহজ্জ্ব মাসের হজ্জ্বব্রত পালন, এই দুইটি আল্রাহর দর্শনপ্রার্থী সাধকের জন্য মহা আনন্দের মাস। রজব এবং শাবান মাসের প্রস্তুতি গ্রহনের পর সায়েমের জন্য রমজান হইল সাধনালব্ধ পক্ক শস্য কর্তনের আনন্দদায়ক মাস। কারণ রবের দর্শন না হইয়া থাকিলেও রবের সঙ্গে তাহার এলহামের সংযোগ হইয়া গিয়াছে। এফতার এবং রবের দর্শন না হইয়া থাকিলেও তাহা নিকটবর্তী হইয়া গিয়াছে এই হইল রমজানের আনন্দ। রমজানের সাধনালব্ধ আনন্দ উপভোগের মধ্যে যাহা বাকি রহিল হজব্রত পালনের মধ্যে যাইয়া নিশ্চয় সেই আনন্দের পরিপূর্ণতা ঘটিবে। ইহাও লক্ষ্য করিবার বিষয় যে, ত্যাগের মধ্যেই সত্যিকার আনন্দের উপভোগ রহিয়াছে। আরও লক্ষ্য করিবার বিষয় হইল-- গৃহের সাধনার অসম্পূর্ণতা সম্পূর্ণ করিয়া তুলিবার জন্য গৃহের বাহির হইয়া হজ্ব পালন করিতে হয়। (one is indoor the other is outdoor)। ৩২।সালমা ইবনে মোহাব্বাক হইতে বর্নিত হইয়াছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :যাহার জন্য একটি বাহন রহিয়াছে, (যে বাহন) তাহাকে একটি সন্তুষ্টির বিষয়ের দিকে লইয়া যায় তবে সে রমজানের সিয়াম করুক যেখানেই তাহাকে জানাইয়া দেয় (অর্থাৎ যখনই যেখান হইতে বিষয়টি তাহার অবগতির মধ্যে আসে)। (আবু দাউদ)ব্যাখ্যা :সাধক সত্তা হইতে তাহার জীবদ্দশায় দেহমনের বিচ্ছেদ কে সিয়াম বলে। এখানে বাহন অর্থে মানব দেহকে বুঝাইয়াছে। শুধু দেহই নয়, যাহা কিছুর উপরে মন হামেল হয় বা আশ্রয় গ্রহণ করে তাহাকও বাহন বলা হইয়াছে। এই বাহন তাহাকে কোনো একটি বিষয়ের উপর যদি সন্তুষ্টির নির্ভরের দিকে লইয়া যায় তবে উহা হইতে ছুটিয়া যাইবার জন্য রমজানের সিয়াম করিবার নির্দেশ তাহাকে দেওয়া হইতেছে। সিয়াম সাধনা ব্যতীত মানব মন বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে ভ্রমণ করে এবং কোনো বিষয়কে তৃপ্তির আশ্রয়রূপে গ্রহণ করে। সাধক সৃষ্টিতে বন্দী হইয়া থাকিবার জন্য নয়। কোনো সাধক আমানু যখন জ্ঞানময় হালতের মাধ্যমে অবগত হইতে পারে যে, এই দেহ বা অন্য কোনো বাহন তাহাকে আর একটি দেহের আশ্রয়ের দিকে লইয়া যাইতেছে তথা পুনর্জন্মে ফেলিয়া দিতেছে তাহা হইলে তখনই সেখানেই সে যেন সিয়াম করে যাহাতে আর দেহ কারাগারে আশ্রয় লইতে না হয়। সাধক ব্যতীত সর্বসাধারণের এই উপলব্ধি বা জ্ঞানময় হাল আসে না, যে যতবড় পণ্ডিতই হোক না কেন। একমাত্র সালাতের প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই উপলব্ধি নিহিত আছে। .............................. ৩৩. জাবের হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, রসুলাল্লাহ্ আ. বিজয়ের বছর রমজানে মক্কার দিকে আসিলেন। তিনি কুরু আন গামিম পৌঁছা পর্যন্ত সিয়াম করিলেন সুতরাং লোকেরাও সিয়াম করিলেন। তারপর তিনি এক জগ পানি চাহিলেন। তারপর তাঁহার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া উহা উত্তোলন করিলেন, তারপর পান করিলেন। সুতরাং উহার পর তাঁহাকে বলা হইল যে, কিছু লোক অবশ্য সিয়াম করিয়াছে। অতএব তিনি বলিলেনঃ ইহারা লাঠিয়াল, ইহারা লাঠিয়াল (বা গোলযোগ সৃষ্টিকারী বিপথগামী) (মোসলেম) ব্যাখ্যাঃ পানাহারের নির্ধারিত সময়সূচী পালন করার মধ্যে সিয়াম নাই যদি প্রকৃতই সিয়াম পালন না করা হয়। যাহারা প্রকৃতই সিয়াম সাধক ছিলেন তাঁহারা দিনের বেলা রসুলের সঙ্গে সেই দিন পানাহার করিতে দ্বিধাবোধ করেন নাই, কারণ পানাহার গ্রহণের সময়সূচীকেই সিয়াম মনে করিয়াছিল তাহাদিগকে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী রসুলাল্লাহ্ আখ্যায়িত করিলেন। আজকাল এই জাতীয় সায়েমই আমাদের নিকট অধিক পরিচিত। এর কারণ হাকিকতে সিয়াম কি তাহার পরিচয়ও জগত হইতে শাসকগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন করিতে সক্ষম হইয়াছে। প্রকৃত নেতা কখনও নীতি ভঙ্গ করেন না। যাহারা মহাপুরুষ, সিয়াম তাঁহাদের স্বভাবের সঙ্গে কেতাবস্থ হইয়াই আছে। পানাহারের সামাজিক সময়সুচি ভঙ্গ করিলে সিয়াম কখনও ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। যাহারা বস্তুবাদী এবং অজ্ঞান তাহারা মহান নেতাকে চিনিতে পারে নাই তবুও নেতার নেতৃত্ব তাহাদের মানিয়া চলা উচিৎ ছিল। নেতাকে ভালোবাসার সহিত অনুসরণ করিতে থাকিলে এক সময় অবশ্য তাহাদের জ্ঞানোদয় হইবে, চিরকাল মুর্খ থাকিবে না। কিন্তু সম্যক নেতাকে মানিবার অভ্যাস না রাখিলে চিরকাল তাহারা নীতিভঙ্গকারী এবং সামাজিক গোলযোগ সৃষ্টিকারী হইয়াই আত্মপ্রকাশ করিবে। .................................................................................. ৩৬. আবু জার হইতে আছে যে, তিনি বলিয়াছেন যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেনঃ হে আবুজার, যদি তুমি মাসে তিন দিন সিয়াম কর তবে ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে করিও। (তিরমিজি, নেসাই)।। ব্যাখ্যাঃ রসুলাল্লাহ, প্রতি মাসে এই তিন দিন সিয়াম করিবার উপর তাগিদ দিয়াছেন। চন্দ্র মাসের এই তিনদিনকে “আইয়ামে ভোজ” বা আলোকিত দিন বলা হয়। এই তিনদিন একাধারে সিয়াম করার নাম আইয়ামে ভেজের সিয়াম। অপর একটি বর্ণনায় রসুলাল্লাহ্ আ. বলিয়াছেনঃ “যে ব্যক্তি সারা বছর সিয়াম করে সে আসলে সিয়াম করে না। প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম কর ইহাই সারা বছরের সিয়াম।” চন্দ্র মাসের এই তিনদিনকে আলোকিত দিন বলা হয়। তাহা এইজন্য যে, সারাদিন যেমন সূর্যের আলো থাকে সারারাত্রিও তেমনই পূর্ণ চাঁদের আলোকে উদ্ভাসিত থাকে। প্রকৃতপক্ষে সায়েমের জন্য তাঁহার সিয়ামের সময়টি আলোকিত সময়। সিয়াম অবস্থায় সায়েম থাকেন শিরিকমুক্ত, বস্তুবাদের কলুষ-কালিমার আবরণ মুক্ত। সুতরাং আইয়ামে ভেজ জাহেরে এবং বাতেনে উভয় দিক হইতে সায়েমের জন্য আলোকিত সময়। “প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম করা ইহাই সারা বছরের “সিয়াম” অর্থাৎ একাধারে নিয়মিতভাবে প্রতিমাসে তিন দিন সিয়াম সাধনা করা যায়। তবে দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় কর্ম সুন্দর অর্থাৎ উপাদানহীন হইয়া যায়। কাজেই প্রতিমাসে তিন দিনের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে সংযমের মধ্যে আনিতে পারলে সারা বছরের সিয়াম সাধনা হইয়া যায়। অপরপক্ষে যাহারা সারা বছর সিয়াম করে বলিয়া মনে করে, তাহারা শুধুমাত্র পানাহার গ্রহণের সময় নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে সিয়াম সাধনা পানাহারের সময়সূচী পালনের কোন ধার ধারে না। পানাহারের সময়সূচী পালনের মধ্যে গুরুত্ব আরোপিত থাকিলে সিয়াম সার্বজনীন হয় না এবং ইহা অনুষ্ঠান সর্বস্ব আঞ্চলিক একটি বিষয়রূপে পরিগণিত হইয়া যায়। ফলতঃ যে দেশে একাধারে কয়েক মাস সূর্য উদয় হয় না এবং গ্রীষ্মকালে কয়েক মাস সূর্য অস্ত যায় না সে দেশে সিয়াম প্রযোজ্য নয় কি? বিশ্বনবীর বিধান কখনও অসম্পূর্ণ এবং আঞ্চলিক বিষয় হইতে পারে না। অন্যান্য ধর্মানুষ্ঠানের মত সিয়ামকে যাহারা হাকিকতশূন্য করিয়া স্থুল সাম্রাজ্যবাদীরূপ দিয়াছে তাহাদের কবলে পড়িয়া মনুষ্য জাতি বিভ্রান্ত মধ্যে লাঞ্ছিত হইতেছে। .......................................................................................................... ৩৮।আবু হোরায়রা হইতে বর্নিত আছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :প্রত্যেক বিষয়বস্তুর একটা যাকাত (অর্থাৎ শুদ্ধিক্রিয়া) আছে এবং দেহের জাকাত হইল সিয়াম। (ইবনে মাজা)।। ব্যাখ্যা :দেহ আমাদের সত্তার জন্য কারাগার বা বন্দীশালা। ইহাতে আবদ্ধ হইয়া আমরা নানারূপ কলঙ্কে পতিত হই। সুতরাং ইহাকে ভালবাসা ভাল নয়। ইহার কারণেই আমাদের মনমানসিকতার মধ্যে কলুষ-কালিমা জন্ম লাভ করে এবং ইহার বন্ধন হইতে মুক্তি লাভ করা কঠিন হইয়া পড়ে। সিয়াম দেহের প্রতি আকর্ষণকে কমাইয়া দেয় এবং ইহার কলুষ-কালিমা দূর করিয়া ইহাকে শুদ্ধ ও পবিত্র করিয়া তুলে।দেহের জাকাত হইল সিয়াম। অর্থাৎ দেহের বন্ধনকে তথা দেহকে আপন অস্তিত্ব হইতে ত্যাগ করিতে পারিলে উহা পবিত্র হইয়া যায়। দেহের মোহ যে একান্ত পরিত্যাজ্য তাহা কোরানে বিভিন্ন রূপে পরিব্যক্ত আছে, যথা--- ''এবং যে ব্যক্তি তাহার রবের ঘরকে ভয় পায় তাহার জন্য দুইটি জান্নাত (৫৫ :৪৬)" আয়াতটির ব্যাখ্যা :মানব দেহেই রবের আত্মবিকাশ হইয়া থাকে। কারণ এখানেই তিনি জাগ্রত হইয়া উঠার জন্য সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করেন। এইজন্য মানব দেহকে কোরানে রবের ঘর বলা হইয়াছে। দেহ দুঃখময়। সুতরাং যে ব্যক্তি দেহ হইতে মুক্তি লাভের জ্ঞান অর্জন করিয়াছে সে দেহকে বন্দিশালা বা কারাগাররূপে ভয় পায়। অর্থাৎ জন্মচক্রে আর আবদ্ধ হইতে চায় না। এমন ব্যক্তির জন্য মাত্র দুইটি জান্নাত অতিক্রম করা বাকি থাকে। মুক্তপুরুষে পরিণত হইয়া জন্মচক্র জয় করিতে আর মাত্র দুইটি স্তর অতিক্রম করা তাহার জন্য প্রয়োজন হয়। জন্মচক্র অতিক্রান্ত ব্যক্তিগণই কেবলমাত্র প্রকৃতি জয় করিয়া পুরুষ হইতে পারিয়াছেন। এইজন্য কোরানে আলে রাসূল এবং আলে মোহাম্মদগণের দেহের সর্বনামে পুংলিংঙ্গ ব্যবহার করা হইয়াছে। ............................................................ ৩৯. হযরত উসমান ইবনে মাজয়ুন হইতে বর্ণিত আছেঃ "তিনি বলিয়াছেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আমাদিগকে খাসী হইয়া যাওয়ার অনুমতি দান করুন। আল্লাহর রসুল উত্তর করিলেন, "আমাদের মধ্য এমন কেহ নাই যিনি খাসী করিয়াছেন অথবা খাসি হইয়াছেন। নিশ্চয় সিয়ামই আমার উম্মতের জন্য খাসীকরণ"..... । (সারহুস্ সুন্নাত)|| ব্যাখ্যাঃ বস্তু মোহের চরম প্রতীক হইল নারী মোহ। আপন সত্তা হইতে দেহকে বিচ্ছিন্ন করিতে চাহিলে নারী মোহ অবশ্যই ত্যাগ করিতে হইবে। অথচ নারী মোহ এতই প্রবল যে ত্যাগ করা কঠিন ব্যাপার। এইজন্যই উক্ত সাহাবি খাসী হইবার অনুমতি চাহিয়াছিলেন। কিন্তু খাসী হইলেই মন হইতে এই মোহ উচ্ছেদ হয় না। সিয়াম সাধনা দ্বারা কেবল ইহা উচ্ছেদ করা সম্ভব। এই হাদিসের দ্বারাও সিয়ামের মূল সূত্র উদ্ঘাটিত হইয়াছে। অতএব দেহের পানাহারের সঙ্গে সিয়ামের কোন সম্পর্ক নাই। এফতার প্রাপ্ত প্রকৃত সায়েমের জন্মনিয়ন্ত্রণ তাঁহার ইচ্ছাধীন হইয়া গিয়াছে। ................................................................................ আবু হোরায়রা হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :প্রত্যেক বস্তুর জাকাত আছে এবং দেহের জাকাত হইল সিয়াম। (ইবনে মাজা)। #ব্যাখ্যাঃ জাক্কা অর্থাৎ "পবিত্র করা " কথা হইতে জাকাত শব্দ আসিয়াছে। জাকাত মানুষের মনের ব্যাপার। জাকাত অর্থ মনের স্বকীয়তা উতসর্গ। মনের উৎসর্গ দ্বারাই আল্লাহর সকাল দানের ভোগসমূহ পবিত্র হইয়া থাকে। কৃপণের মতো আমিত্ব দ্বারা সকল বস্তু মনের মধ্যে আকড়াইয়া রাখিলে তাহা মনের জন্য অপবিত্র হইয়া যায়। মনের লালসা হইতে উহাকে ত্যাগ করিয়া উপভোগ করিতে হয়। ইহাই জাকাতের সংক্ষিপ্ত হাকীকত। দেহের জাকাত হইল সিয়াম, যেমন মনের জাকাত তাহার আমিত্বের উৎসর্গ (যাহা কোরানে সর্বত্র লিখিত আছে) এবং ধনসম্পদের জাকাত শতকরা আড়াই ভাগ ত্যাগ করা নির্দিষ্ট করা আটটি খাতে ব্যয় হওয়ার জন্য।এখানে আমাদের বক্তব্য হইল "দেহের জাকাত "। দেহের কোন ভোগই পবিত্র বলিয়া গণ্য হইতে পারেনা যদি সিয়াম করা না হয়। অর্থাৎ সিয়াম ব্যতীত দেহের সকল চাহিদা অপবিত্র। দেহের অবাধ ভোগই অধর্ম, ইহার উপর সংযম ও নিয়মের বাধন প্রতিষ্ঠা করিয়া ইহাকে পবিত্র করিতে হয়। যাহাতে আর না আসিতে হয় দেহের বন্ধনে। "দেহের জাকাত হইল সিয়াম " অর্থাৎ দেহকেই চিরতরে বিসর্জন দেওয়া বা ত্যাগ করিয়া ফেলা। দেহ মানব জীবনের সকল শিরিকের ভাণ্ডার। বিগত সকল জীবনের বিষয়বস্তুর চাহিদা সমূহের ফলশ্রুতি হইল এই দেহ। দেহকে চিরতরে ত্যাগ করার সাধনার অপর নাম সিয়াম। সিয়াম অর্থ Rejection, বিসর্জন, ত্যাগ বা পরিহার।
১।হযরত আবু হোরায়রা হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :যখন রমজান প্রবেশ করে আকাশের দরজা খুলিয়া যায় (অন্য একটি উক্তিতে আছে জান্নাতের দরজা খুলিয়া যায়), জাহান্নামের দরজা বন্ধ হইয়া যায় এবং শয়তান সমূহ শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় (এবং অন্য উক্তিতে আছে রহমতের দরজা খুলিয়া যায়)। (ঐক্যসম্মত)ব্যাখ্যা :"রমজান যখন প্রবেশ করে " এর অর্থ যাহার মধ্যে রমজানের সাধনা প্রবেশ করে অর্থাৎ দানা বাঁধে, তাহার রহস্য জগতের রুদ্ধদ্বার খুলিয়া যায়। এর কারণ নফসের কুপ্রবৃত্তির সমস্ত দরজা সে বন্ধ করিয়া ফেলিয়াছে। সুতরাং তাহার নফসের মধ্যে পাপ প্রবেশের সকল দ্বার বন্ধ হইয়া গিয়াছে। নফসের কু-প্রবৃত্তিগুলোর সকল দ্বার অর্থাৎ নরকের দ্বার বন্ধ করিলে রহমতের দ্বার তথা জান্নাতের দ্বার খুলিয়া যায়। সদ্ভাব সৎচিন্তা অন্তরে প্রবেশ লাভ করিতে থাকে এবং তাহার "পার্থিব জান্নাত " রচনা আরম্ভ হইয়া যায়।যাহার রমজানের সিয়াম সাধনার মশগুল হয় না তাহাদের জীবনে এবং তাহাদের মনের জগতে এই পরিবর্তন আসিতে পারে না। এইজন্য "রমজান প্রবেশ করিলে " কথা বলা হইয়াছে, "রমজান মাস আসিলে " কথা বলেন নাই। এই কারণে দেখা যায় রমজানের সিয়ামের ভাব সাধকের অন্তরে প্রবেশ করাইতে চাহিলে আরও দুইমাস আগে হইতে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা হাদীসে উল্লেখ আছে।ইবলিশ মানব অন্তরে প্রবেশাধিকার লাভ করার কারণে আমাদের প্রবৃত্তির সঙ্গে শয়তান মিশিয়া গিয়াছে। শয়তান শুধু বাহিরের জীব নয়। যদি শয়তান শুধুমাত্র বাহিরের জীব হইত এবং রমজান মাসে তাহাদিগকে বন্ধ করিয়া রাখা হইত তাহা হইলে সমস্ত জগতে কোথাও এতটুকু পাপ রমজান মাসে থাকিতে পারিত না। ____________________________________________ *২.সহল বিনে সাদ হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুরাল্লাহ (আঃ) বলিয়াছেন : “জান্নাতে আটটি দরজা আছে উহাদের মধ্যে একটির নামকরণ করা হইয়াছে “রাইয়ান”। উহাতে সায়েম (রোযাদার) ব্যতীত কেহই প্রবেশ লাভ করতে পারবে না। (ঐক্যসম্মত) ।। #ব্যাখ্যাঃ- জাহান্নামের দরজার সংখ্যা উল্লেখ করা হইয়াছে সাত এবং জান্নাতের দরজা হইল আটটি। পাপ প্রবেশের জন্য প্রবৃত্তির দ্বার সমূহকে সাত ভাগে ভাগ করিয়াছে। এই দ্বার গুলির মধ্য দিয়া পাপ প্রবেশ বন্ধ করিয়া দিলে এইগুলো জান্নাতের দ্বারে পরিণত হইয়া যায়। যেগুলো ছিল তাহার নরকের দ্বার সাধক সেগুলোকে স্বর্গের দ্বারে পরিণত করিয়া লয়। অর্থাৎ এই দ্বার গুলো দ্বারা ন্যায় ও সত্য ব্যতীত অন্যায় ও অসত্যের প্রবেশ বন্ধ করিয়া ফেলে। আপন প্রচেষ্টা দ্বারা মনের মধ্যে পাপ প্রবেশের দরজা গুলো বন্ধ করিলেই স্বর্গে যাওয়া যায়না, যদি আল্লাহর রহমতের দ্বার খুলিয়া দেওয়া না হয়। এইরূপে জান্নাতের দ্বার হইল আটটি। রহমতের দ্বার না খোলা পর্যন্ত পাপ প্রবেশের দ্বার গুলো চিরতরে বন্ধ হইয়া যায়না। সায়েমের (রোজাদারের) প্রবৃত্তিসমূহের কৃচ্ছ সাধনা দ্বারা রহমতের যে অষ্টম দ্বার খুলিয়া যায় তাহার নাম করণ করা হইয়াছে “রাইয়ান”। ইহা সায়েমের জন্য জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ দ্বার।_______________________________________________________________ *৩। হযরত আবু হোরাইরা হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলুল্লাহ্ (সঃ) বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত রমজানের সিয়াম পালন করে এবং পুরষ্কারের আশা রাখে তাহার অতীতের সমস্ত গোনাহ্ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত রমজানে দাঁড়ায় (সালাতে) এবং পুরস্কারের আশা রাখে তাহার অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত কদর রাত্রিতে দাঁড়ায় এবং পুরস্কারের আশা রাখে তাহার অতীতের সমস্ত অপরাধ বা গোনাহ্ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। ( ঐক্যসম্মত )|| ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত পুরো রমজান মাস পালন করে তাহার অতীত জীবনের সমস্ত অপরাধ মাফ করিয়া দেওয়া হয়। অপরাধ মাফ পাওয়া অর্থ জাহান্নাম হইতে মুক্তি পাওয়া। এই হাল সায়েমের অজ্ঞাত অবস্থায় থাকে না। রুহ প্রাপ্তি অথবা এলহামের ঘটনা দ্বারা সায়েম জানিতে পারে যে, তাহার গোনাহ্ মাফ হইয়া গিয়াছে। পুরস্কারের আশা হইল পার্থিব জান্নাত লাভ করা, যাহাকে "জান্নাতুন-নাঈম" বলা হইয়াছে। রুহ প্রাপ্তি, এলহাম প্রাপ্তি ইত্যাদি হইল এই জান্নাত লাভের প্রমাণ বা ঘটনা যাহা সাধকের জীবনে ঘটিয়া থাকে।এইরূপ পুরস্কারের আশা করিয়া সায়েম রমজান মাসে সালাতে দাঁড়ায়।"রমজানে দাঁড়ান"অর্থে বিশেষভাবে রাত্রিতে দাঁড়ান বুঝায় ।সায়েম ঘুম জয় করার পথে অগ্রসর হইতে থাকে এবং অবশেষে সিয়ামকে দাঁড় করিয়া ফেলে।উহার নীতির পতন তাহার আর ঘটে না । এমন ব্যক্তি অতীত জীবনে সমস্ত অপরাধ মাফ হইয়া যায়।যে ব্যক্তি ক্বদর রাত্রিতে ঈমানের সহিত দাঁড়ায় তাহার অতীত জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ হইয়া যায়। কিন্তু ক্বদর রাত্রি কয়জনের ভাগ্যে জুটে ? জীবনে একবার যাহার ক্বদর রাত্রি ঘটিয়াছে তাহার রুহ্ প্রাপ্তি হইয়া গিয়াছে এবং তাহার রুহ্ আত্ম-পরিচয় লাভ হইয়া গিয়াছে ( সুরা ক্বদরের প্রকৃত অর্থ দ্রষ্টব্য )। জাহেরী তারিখ মোতাবেক আনুষ্ঠানিক ক্বদর রাত্রিতে প্রায় সবাই সালাতে দাঁড়াইয়া থাকে। ইহাতে তাহাদের রুহ্ প্রাপ্তি অথবা ঈমান প্রাপ্তি অথবা আত্ম-পরিচয় প্রাপ্তি ঘটিয়া যায় কি? অতএব নিশ্চয় এই হাদিসটি মনগড়া সাধারন অর্থ বহন করে না।_______________________________________________________________ * ৭) আনাস ইবনে মালেক বলিয়াছেন, রমজান উপস্থিত হইল তাই আল্লাহর রাসূল (আঃ) বলিলেন ; “নিশ্চয় এই মাস তোমাদের নিকট আসিয়াছে এবং ইহাতে একটি রাত্রি আছে যাহা হাজার মাস হইতে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি উহা হইতে বঞ্চিত হইল নিশ্চয় সে উহার সমস্ত কল্যাণ হইতে বঞ্ছিত হইল। এবং উহার কল্যাণ হইতে বঞ্ছিত হয়না একেবারেই হতভাগ্য লোক ছাড়া । ( ইবনে মা’জাহ )।। #ব্যাখ্যাঃ এখানে ক্বদর রাত্রিকে হাজার মাস হইতে শ্রেষ্ঠ বলা হইয়াছে। এই কথা কোরানে সূরা ক্বদরেও উল্লেখিত হইয়াছে। ইহার অর্থ হাজার মাস যথাসাধ্য শুদ্ধভাবে এবাদত করিয়া মানুষ নিজ হইতে যতটুকু শুদ্ধির দিকে অগ্রসর হইতে পারিবে, একবার ক্বদর রাত্রির সন্ধান পাওয়া অর্থাৎ ক্বদর রাত্রিতে পৌঁছাইয়া যাওয়া তাহা হইতে উত্তম। সময়ের দৈর্ঘ্য দ্বারা এবাদতের মান নির্ণয় হয় না, বরং উহার গভীরতা দ্বারাই তাহার গুরুত্ব এবং সার্থকতা অর্জন হইয়া থাকে। রুহ্ প্রাপ্তি তথা জান্নাত প্রাপ্তি মানব জীবনের লক্ষ্য। সিয়াম সাধনা দ্বারা যদি কেহ লক্ষ্যে পৌঁছাইতে না পারে তবে সে ব্যক্তি হতভাগ্যই বটে। ক্বদর রাত্রি লাভ করাই হইল সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্য। যে ব্যক্তি উহা হইতে বঞ্চিত সে ব্যক্তি বাস্তবিক পক্ষে হতভাগ্য কারণ এই জীবনে তাহার জান্নাত প্রাপ্তি ঘটিল না।প্রসঙ্গক্রমে বলা যাইতে পারেঃ আমরা সকল সায়েমগণই এই হতভাগ্য দলের লোক বিধায় ক্বদর রাত্রিকে আমরা আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের রাত্রিরূপে গ্রহণ না করিয়া শুধু আনুষ্ঠানিক নৈসর্গিক রাত্রি বানাইয়া লইয়াছি---ইহার জন্য সূরা ক্বদরের অর্থও বদলাইয়া লইয়াছি। .................................................................................................... ১২।নবী আ. হইতে হযরত আবু হোরায়রা বর্ণনা করিয়াছেন যে, নিশ্চয় তিনি বলিয়াছেন যে, তাঁহার উম্মতের জন্য রহিয়াছে ক্ষমা রমজানের শেষ রাত্রিতে। জিজ্ঞাসা করা হইলঃ ইয়া রসুলাল্লা্হ্ উহা কি #ক্বদর #রাত্রি ? তিনি বলিলেন "না" কিন্তু নিশ্চয় একজন আমলকারীকে (অর্থাৎ কর্মীকে) তাহার মজুরি সম্পূর্ণ করে দেওয়া হয়। যখন তাহার আমল (কর্মকে) শেষ করে। (আহমদ)।। ব্যাখ্যাঃকোরানের কথা মতে আল্লাহর একজন দাসের ভাগ্যে ক্বদর রাত্রি সংঘটিত হইয়া উহার মধ্যে রুহ নাজেল হয় তথা আত্মপরিচয় নাজেল হইয়া বা লাভ হইয়া দাসের ক্ষমা প্রাপ্তি ঘটে। কিন্তু এই হাদিসে দেখা যায় উম্মতে মোহাম্মদিকে আল্লাহতালা একমাস সিয়াম পালনের মজুরি স্বরূপ নিশ্চয় ক্ষমা দান করিয়া থাকেন। ক্বদর রাত্রি প্রধানত ধ্যানযোগের ফলশ্রুতি। সিয়ামে উম্মতে মোহম্মদীর ক্বদর রাত্রি না হইলেও অর্থাৎ ধ্যানযোগ ছাড়াও কর্মযোগে আসিয়া তাহারা ক্ষমা পাইবার যোগ্য হইতে পারে, এর কারণ তাহাদের কর্মগুলো সকলই মহানবীর আদর্শের উপর হইয়া থাকে।আমলের শেষ রাত্রিতে ক্ষমা প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করিলেন বলিয়াই তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল : উহাতে কি সায়েমের ক্বদর রাত্রি হইবে? তিনি বলিলেনঃ (কদর রাত্রি ব্যতীতই) ক্ষমা তাহার মজুরি। এই হাদিস উম্মতে মোহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্বের একটি প্রমান বহন করে। #টীকাভাষ্যঃ ক্বদর রাত্রি কি? https://www.facebook.com/notes/586678464800743/। ............................................................... ১৩.হযরত আবু বকর হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, রসুলুল্লাহ আ. বলিয়াছেন ঈদের মাস দুইটি, যাহা কমে না রমজান এবং জেলহজ্জ্ব। (ঐক্যসম্মত)|| #ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর বান্দার জন্য মাস হিসাবে আনন্দের মাস হইল রমজান এবং জেলহজ্জ্ব এবং তাহা কেন? রমজান মাসের সিয়াম পালন এবং জেলহজ্জ্ব মাসের হজ্জ্বব্রত পালন, এই দুইটি আল্রাহর দর্শনপ্রার্থী সাধকের জন্য মহা আনন্দের মাস। রজব এবং শাবান মাসের প্রস্তুতি গ্রহনের পর সায়েমের জন্য রমজান হইল সাধনালব্ধ পক্ক শস্য কর্তনের আনন্দদায়ক মাস। কারণ রবের দর্শন না হইয়া থাকিলেও রবের সঙ্গে তাহার এলহামের সংযোগ হইয়া গিয়াছে। এফতার এবং রবের দর্শন না হইয়া থাকিলেও তাহা নিকটবর্তী হইয়া গিয়াছে এই হইল রমজানের আনন্দ। রমজানের সাধনালব্ধ আনন্দ উপভোগের মধ্যে যাহা বাকি রহিল হজব্রত পালনের মধ্যে যাইয়া নিশ্চয় সেই আনন্দের পরিপূর্ণতা ঘটিবে। ইহাও লক্ষ্য করিবার বিষয় যে, ত্যাগের মধ্যেই সত্যিকার আনন্দের উপভোগ রহিয়াছে। আরও লক্ষ্য করিবার বিষয় হইল-- গৃহের সাধনার অসম্পূর্ণতা সম্পূর্ণ করিয়া তুলিবার জন্য গৃহের বাহির হইয়া হজ্ব পালন করিতে হয়। (one is indoor the other is outdoor)। ৩২।সালমা ইবনে মোহাব্বাক হইতে বর্নিত হইয়াছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :যাহার জন্য একটি বাহন রহিয়াছে, (যে বাহন) তাহাকে একটি সন্তুষ্টির বিষয়ের দিকে লইয়া যায় তবে সে রমজানের সিয়াম করুক যেখানেই তাহাকে জানাইয়া দেয় (অর্থাৎ যখনই যেখান হইতে বিষয়টি তাহার অবগতির মধ্যে আসে)। (আবু দাউদ)ব্যাখ্যা :সাধক সত্তা হইতে তাহার জীবদ্দশায় দেহমনের বিচ্ছেদ কে সিয়াম বলে। এখানে বাহন অর্থে মানব দেহকে বুঝাইয়াছে। শুধু দেহই নয়, যাহা কিছুর উপরে মন হামেল হয় বা আশ্রয় গ্রহণ করে তাহাকও বাহন বলা হইয়াছে। এই বাহন তাহাকে কোনো একটি বিষয়ের উপর যদি সন্তুষ্টির নির্ভরের দিকে লইয়া যায় তবে উহা হইতে ছুটিয়া যাইবার জন্য রমজানের সিয়াম করিবার নির্দেশ তাহাকে দেওয়া হইতেছে। সিয়াম সাধনা ব্যতীত মানব মন বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে ভ্রমণ করে এবং কোনো বিষয়কে তৃপ্তির আশ্রয়রূপে গ্রহণ করে। সাধক সৃষ্টিতে বন্দী হইয়া থাকিবার জন্য নয়। কোনো সাধক আমানু যখন জ্ঞানময় হালতের মাধ্যমে অবগত হইতে পারে যে, এই দেহ বা অন্য কোনো বাহন তাহাকে আর একটি দেহের আশ্রয়ের দিকে লইয়া যাইতেছে তথা পুনর্জন্মে ফেলিয়া দিতেছে তাহা হইলে তখনই সেখানেই সে যেন সিয়াম করে যাহাতে আর দেহ কারাগারে আশ্রয় লইতে না হয়। সাধক ব্যতীত সর্বসাধারণের এই উপলব্ধি বা জ্ঞানময় হাল আসে না, যে যতবড় পণ্ডিতই হোক না কেন। একমাত্র সালাতের প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই উপলব্ধি নিহিত আছে। .............................. ৩৩. জাবের হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, রসুলাল্লাহ্ আ. বিজয়ের বছর রমজানে মক্কার দিকে আসিলেন। তিনি কুরু আন গামিম পৌঁছা পর্যন্ত সিয়াম করিলেন সুতরাং লোকেরাও সিয়াম করিলেন। তারপর তিনি এক জগ পানি চাহিলেন। তারপর তাঁহার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া উহা উত্তোলন করিলেন, তারপর পান করিলেন। সুতরাং উহার পর তাঁহাকে বলা হইল যে, কিছু লোক অবশ্য সিয়াম করিয়াছে। অতএব তিনি বলিলেনঃ ইহারা লাঠিয়াল, ইহারা লাঠিয়াল (বা গোলযোগ সৃষ্টিকারী বিপথগামী) (মোসলেম) ব্যাখ্যাঃ পানাহারের নির্ধারিত সময়সূচী পালন করার মধ্যে সিয়াম নাই যদি প্রকৃতই সিয়াম পালন না করা হয়। যাহারা প্রকৃতই সিয়াম সাধক ছিলেন তাঁহারা দিনের বেলা রসুলের সঙ্গে সেই দিন পানাহার করিতে দ্বিধাবোধ করেন নাই, কারণ পানাহার গ্রহণের সময়সূচীকেই সিয়াম মনে করিয়াছিল তাহাদিগকে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী রসুলাল্লাহ্ আখ্যায়িত করিলেন। আজকাল এই জাতীয় সায়েমই আমাদের নিকট অধিক পরিচিত। এর কারণ হাকিকতে সিয়াম কি তাহার পরিচয়ও জগত হইতে শাসকগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন করিতে সক্ষম হইয়াছে। প্রকৃত নেতা কখনও নীতি ভঙ্গ করেন না। যাহারা মহাপুরুষ, সিয়াম তাঁহাদের স্বভাবের সঙ্গে কেতাবস্থ হইয়াই আছে। পানাহারের সামাজিক সময়সুচি ভঙ্গ করিলে সিয়াম কখনও ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। যাহারা বস্তুবাদী এবং অজ্ঞান তাহারা মহান নেতাকে চিনিতে পারে নাই তবুও নেতার নেতৃত্ব তাহাদের মানিয়া চলা উচিৎ ছিল। নেতাকে ভালোবাসার সহিত অনুসরণ করিতে থাকিলে এক সময় অবশ্য তাহাদের জ্ঞানোদয় হইবে, চিরকাল মুর্খ থাকিবে না। কিন্তু সম্যক নেতাকে মানিবার অভ্যাস না রাখিলে চিরকাল তাহারা নীতিভঙ্গকারী এবং সামাজিক গোলযোগ সৃষ্টিকারী হইয়াই আত্মপ্রকাশ করিবে। .................................................................................. ৩৬. আবু জার হইতে আছে যে, তিনি বলিয়াছেন যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেনঃ হে আবুজার, যদি তুমি মাসে তিন দিন সিয়াম কর তবে ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে করিও। (তিরমিজি, নেসাই)।। ব্যাখ্যাঃ রসুলাল্লাহ, প্রতি মাসে এই তিন দিন সিয়াম করিবার উপর তাগিদ দিয়াছেন। চন্দ্র মাসের এই তিনদিনকে “আইয়ামে ভোজ” বা আলোকিত দিন বলা হয়। এই তিনদিন একাধারে সিয়াম করার নাম আইয়ামে ভেজের সিয়াম। অপর একটি বর্ণনায় রসুলাল্লাহ্ আ. বলিয়াছেনঃ “যে ব্যক্তি সারা বছর সিয়াম করে সে আসলে সিয়াম করে না। প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম কর ইহাই সারা বছরের সিয়াম।” চন্দ্র মাসের এই তিনদিনকে আলোকিত দিন বলা হয়। তাহা এইজন্য যে, সারাদিন যেমন সূর্যের আলো থাকে সারারাত্রিও তেমনই পূর্ণ চাঁদের আলোকে উদ্ভাসিত থাকে। প্রকৃতপক্ষে সায়েমের জন্য তাঁহার সিয়ামের সময়টি আলোকিত সময়। সিয়াম অবস্থায় সায়েম থাকেন শিরিকমুক্ত, বস্তুবাদের কলুষ-কালিমার আবরণ মুক্ত। সুতরাং আইয়ামে ভেজ জাহেরে এবং বাতেনে উভয় দিক হইতে সায়েমের জন্য আলোকিত সময়। “প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম করা ইহাই সারা বছরের “সিয়াম” অর্থাৎ একাধারে নিয়মিতভাবে প্রতিমাসে তিন দিন সিয়াম সাধনা করা যায়। তবে দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় কর্ম সুন্দর অর্থাৎ উপাদানহীন হইয়া যায়। কাজেই প্রতিমাসে তিন দিনের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে সংযমের মধ্যে আনিতে পারলে সারা বছরের সিয়াম সাধনা হইয়া যায়। অপরপক্ষে যাহারা সারা বছর সিয়াম করে বলিয়া মনে করে, তাহারা শুধুমাত্র পানাহার গ্রহণের সময় নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে সিয়াম সাধনা পানাহারের সময়সূচী পালনের কোন ধার ধারে না। পানাহারের সময়সূচী পালনের মধ্যে গুরুত্ব আরোপিত থাকিলে সিয়াম সার্বজনীন হয় না এবং ইহা অনুষ্ঠান সর্বস্ব আঞ্চলিক একটি বিষয়রূপে পরিগণিত হইয়া যায়। ফলতঃ যে দেশে একাধারে কয়েক মাস সূর্য উদয় হয় না এবং গ্রীষ্মকালে কয়েক মাস সূর্য অস্ত যায় না সে দেশে সিয়াম প্রযোজ্য নয় কি? বিশ্বনবীর বিধান কখনও অসম্পূর্ণ এবং আঞ্চলিক বিষয় হইতে পারে না। অন্যান্য ধর্মানুষ্ঠানের মত সিয়ামকে যাহারা হাকিকতশূন্য করিয়া স্থুল সাম্রাজ্যবাদীরূপ দিয়াছে তাহাদের কবলে পড়িয়া মনুষ্য জাতি বিভ্রান্ত মধ্যে লাঞ্ছিত হইতেছে। .......................................................................................................... ৩৮।আবু হোরায়রা হইতে বর্নিত আছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :প্রত্যেক বিষয়বস্তুর একটা যাকাত (অর্থাৎ শুদ্ধিক্রিয়া) আছে এবং দেহের জাকাত হইল সিয়াম। (ইবনে মাজা)।। ব্যাখ্যা :দেহ আমাদের সত্তার জন্য কারাগার বা বন্দীশালা। ইহাতে আবদ্ধ হইয়া আমরা নানারূপ কলঙ্কে পতিত হই। সুতরাং ইহাকে ভালবাসা ভাল নয়। ইহার কারণেই আমাদের মনমানসিকতার মধ্যে কলুষ-কালিমা জন্ম লাভ করে এবং ইহার বন্ধন হইতে মুক্তি লাভ করা কঠিন হইয়া পড়ে। সিয়াম দেহের প্রতি আকর্ষণকে কমাইয়া দেয় এবং ইহার কলুষ-কালিমা দূর করিয়া ইহাকে শুদ্ধ ও পবিত্র করিয়া তুলে।দেহের জাকাত হইল সিয়াম। অর্থাৎ দেহের বন্ধনকে তথা দেহকে আপন অস্তিত্ব হইতে ত্যাগ করিতে পারিলে উহা পবিত্র হইয়া যায়। দেহের মোহ যে একান্ত পরিত্যাজ্য তাহা কোরানে বিভিন্ন রূপে পরিব্যক্ত আছে, যথা--- ''এবং যে ব্যক্তি তাহার রবের ঘরকে ভয় পায় তাহার জন্য দুইটি জান্নাত (৫৫ :৪৬)" আয়াতটির ব্যাখ্যা :মানব দেহেই রবের আত্মবিকাশ হইয়া থাকে। কারণ এখানেই তিনি জাগ্রত হইয়া উঠার জন্য সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করেন। এইজন্য মানব দেহকে কোরানে রবের ঘর বলা হইয়াছে। দেহ দুঃখময়। সুতরাং যে ব্যক্তি দেহ হইতে মুক্তি লাভের জ্ঞান অর্জন করিয়াছে সে দেহকে বন্দিশালা বা কারাগাররূপে ভয় পায়। অর্থাৎ জন্মচক্রে আর আবদ্ধ হইতে চায় না। এমন ব্যক্তির জন্য মাত্র দুইটি জান্নাত অতিক্রম করা বাকি থাকে। মুক্তপুরুষে পরিণত হইয়া জন্মচক্র জয় করিতে আর মাত্র দুইটি স্তর অতিক্রম করা তাহার জন্য প্রয়োজন হয়। জন্মচক্র অতিক্রান্ত ব্যক্তিগণই কেবলমাত্র প্রকৃতি জয় করিয়া পুরুষ হইতে পারিয়াছেন। এইজন্য কোরানে আলে রাসূল এবং আলে মোহাম্মদগণের দেহের সর্বনামে পুংলিংঙ্গ ব্যবহার করা হইয়াছে। ............................................................ ৩৯. হযরত উসমান ইবনে মাজয়ুন হইতে বর্ণিত আছেঃ "তিনি বলিয়াছেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আমাদিগকে খাসী হইয়া যাওয়ার অনুমতি দান করুন। আল্লাহর রসুল উত্তর করিলেন, "আমাদের মধ্য এমন কেহ নাই যিনি খাসী করিয়াছেন অথবা খাসি হইয়াছেন। নিশ্চয় সিয়ামই আমার উম্মতের জন্য খাসীকরণ"..... । (সারহুস্ সুন্নাত)|| ব্যাখ্যাঃ বস্তু মোহের চরম প্রতীক হইল নারী মোহ। আপন সত্তা হইতে দেহকে বিচ্ছিন্ন করিতে চাহিলে নারী মোহ অবশ্যই ত্যাগ করিতে হইবে। অথচ নারী মোহ এতই প্রবল যে ত্যাগ করা কঠিন ব্যাপার। এইজন্যই উক্ত সাহাবি খাসী হইবার অনুমতি চাহিয়াছিলেন। কিন্তু খাসী হইলেই মন হইতে এই মোহ উচ্ছেদ হয় না। সিয়াম সাধনা দ্বারা কেবল ইহা উচ্ছেদ করা সম্ভব। এই হাদিসের দ্বারাও সিয়ামের মূল সূত্র উদ্ঘাটিত হইয়াছে। অতএব দেহের পানাহারের সঙ্গে সিয়ামের কোন সম্পর্ক নাই। এফতার প্রাপ্ত প্রকৃত সায়েমের জন্মনিয়ন্ত্রণ তাঁহার ইচ্ছাধীন হইয়া গিয়াছে। ................................................................................ আবু হোরায়রা হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলাল্লাহ আ. বলিয়াছেন :প্রত্যেক বস্তুর জাকাত আছে এবং দেহের জাকাত হইল সিয়াম। (ইবনে মাজা)। #ব্যাখ্যাঃ জাক্কা অর্থাৎ "পবিত্র করা " কথা হইতে জাকাত শব্দ আসিয়াছে। জাকাত মানুষের মনের ব্যাপার। জাকাত অর্থ মনের স্বকীয়তা উতসর্গ। মনের উৎসর্গ দ্বারাই আল্লাহর সকাল দানের ভোগসমূহ পবিত্র হইয়া থাকে। কৃপণের মতো আমিত্ব দ্বারা সকল বস্তু মনের মধ্যে আকড়াইয়া রাখিলে তাহা মনের জন্য অপবিত্র হইয়া যায়। মনের লালসা হইতে উহাকে ত্যাগ করিয়া উপভোগ করিতে হয়। ইহাই জাকাতের সংক্ষিপ্ত হাকীকত। দেহের জাকাত হইল সিয়াম, যেমন মনের জাকাত তাহার আমিত্বের উৎসর্গ (যাহা কোরানে সর্বত্র লিখিত আছে) এবং ধনসম্পদের জাকাত শতকরা আড়াই ভাগ ত্যাগ করা নির্দিষ্ট করা আটটি খাতে ব্যয় হওয়ার জন্য।এখানে আমাদের বক্তব্য হইল "দেহের জাকাত "। দেহের কোন ভোগই পবিত্র বলিয়া গণ্য হইতে পারেনা যদি সিয়াম করা না হয়। অর্থাৎ সিয়াম ব্যতীত দেহের সকল চাহিদা অপবিত্র। দেহের অবাধ ভোগই অধর্ম, ইহার উপর সংযম ও নিয়মের বাধন প্রতিষ্ঠা করিয়া ইহাকে পবিত্র করিতে হয়। যাহাতে আর না আসিতে হয় দেহের বন্ধনে। "দেহের জাকাত হইল সিয়াম " অর্থাৎ দেহকেই চিরতরে বিসর্জন দেওয়া বা ত্যাগ করিয়া ফেলা। দেহ মানব জীবনের সকল শিরিকের ভাণ্ডার। বিগত সকল জীবনের বিষয়বস্তুর চাহিদা সমূহের ফলশ্রুতি হইল এই দেহ। দেহকে চিরতরে ত্যাগ করার সাধনার অপর নাম সিয়াম। সিয়াম অর্থ Rejection, বিসর্জন, ত্যাগ বা পরিহার।
এফতারঃ সাধারণভাবে আমরা যখন যাহা পানাহার করি তাহাই এফতার। পানাহার এবং দুনিয়া হইতে বিরত থাকার নাম সিয়াম। ''কামালিয়াত" অর্জন করা তথা সৃষ্টির মোহবন্ধন হইতে মুক্তি লাভের শক্তি অর্জন করার নাম হইল প্রকৃত এফতার। এফতার প্রাপ্ত হইলে মানুষ ভোগের অধীনতা হইতে দেহ ও মনকে মুক্ত করিয়া তুলিতে পারে। পানাহার করা উপভোগ তখন মানুষের স্বভাবগত হইয়া যায়। ইহা জান্নাতবাসীর অবস্থা। এফতার করিতে পারিলে পার্থিব জীবনেই দুনিয়া হইতে বিরত হওয়া যায়। কাজেই নিজ হইতে প্রকৃত এফতার করা যায় না। যিনি নিজে এফতার প্রাপ্ত হইয়াছেন তিনিই কেবল অন্য ব্যক্তিকে এফতার করাইতে পারেন। অবশ্য কাহাকেও এফতার করান কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যাহাকে এফতার করান হয় তাহা হইতে উন্নত মানের ব্যক্তি হইলেন তিনি যিনি এফতার করাইয়া থাকেন। নিজে এফতার প্রাপ্ত অর্থাৎ কামেল না হইলে অন্যকে এফতার করান সম্ভবপর নয়। ইহাই এফতারের হাকিকত।এফতার প্রাপ্ত হইলে সায়েম যে কল্যাণ লাভ করে সেই কল্যাণ যিনি তাহাকে এফতার করাইয়াছেন তিনিও প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। অর্থাৎ এফতার দানকারী ব্যক্তির মর্যাদা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়, যাহার ফলে তাঁহার কাঁধ হইতে জাহান্নামের আগুন চিরতরে ঝরিয়া পড়িয়া যায়। তিনি প্রতিষ্ঠিত কামেল। কামালিয়াত দাতা কামেল। সুতরাং সত্যিকার এফতার করিতে চাহিলে কিছুদিন কোন কামেল ব্যক্তির শিক্ষা ও দীক্ষার অধীন থাকিতে হয়।ফাতারা শব্দ হইতে এফতার। ফাতারা অর্থ দেহ-মন ভাঙ্গিয়া ফেলা যাহাতে পুনরায় দেহমনের সমন্বয়ে নবজন্ম লাভ না হয়। মন হইতে দেহের আকর্ষণকে একেবারে বিচূর্ণ করা।এই হাদিসের উল্লিখিত সত্যিকার এফতারের স্বরূপের বয়ান রসুলের মুখে শুনিয়া সালমান ফারসি বলিতেছেন যে, আমরা রসুলের আ. বক্তব্যের মধ্যখানে তাঁহাকে বলিয়া উঠিলামঃ ইয়া রসুলাল্লাহ্ আ. আমরা যে কয়জন এখানে উপস্থিত আছি তাহাদের কাহারও এমন সাধ্য বা সম্বল নাই যে, আমরা একজন সায়েমকে এইরূপ এফতার করাইতে পারি। জবাবে তৎক্ষণাৎ রসুলাল্লাহ্ তাঁহার বক্তব্যের মাঝখানে থামিয়া বলিলেনঃ আল্লাহ্ এই সওয়াব তাহাকে দান করেন যে একজন সায়েমকে এক চুমুক দুধ দ্বারা, একটি খেজুর দ্বারা অথবা তাহাও না থাকিলে পানীয় শরবত দ্বারা এফতার করায়।রসুলাল্লাহ্ আ. ইহাতে কি বুঝাইতে চাহিলেন? ধর্মপালন বিষয়টি অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক (Elastic)। এফতার করিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে, যে যতটুকু পার সাহায্য কর। হাকিকতে যাহাকে এফতার বলে তাহার সামর্থ্য না থাকলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় এবং রাত্রিতে পানাহার নামক জাহেরি যে আনুষ্ঠানিক এফতার রাখা হইয়াছে তাহা হইতে আমল শুরু কর। যে ব্যক্তি ধর্ম সাধনার যে পর্যায় থাকিবে সে ব্যক্তি তাহার সেই পর্যায়ের সৎ আমল করিয়া ক্রমশ উচ্চমানের দিকে অগ্রসর হইতে থাকিবে। প্রথমেই সর্বোচ্চ মানের মহৎ কাজ করা কাহারও পক্ষে সম্ভব নয়। ধর্মীয় ক্রমোন্নতি একটি বিরাট স্থিতিস্থাপক বিষয়। অতএব প্রত্যেক মানুষকে তাহার অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচার করা হয় এবং সেই অনুপাতে তাহার কর্তব্য এবং পুরষ্কার নির্ধারিত হয়।কিন্তু কাঁধ হইতে আগুন ঝারিয়া ফেলিতে হইলে সত্যিকার এফতার করাইবার শক্তি বা গুণ অর্জন করিতেই হইবে নতুবা যতকাল পূর্ণতাপ্রাপ্ত হইয়া মুক্তির দ্বার অতিক্রম করিতে না পারিবে ততকাল দুনিয়ার আগুন মানুষের ঘাড়ের উপর বোঝার মত কিছু চাপিয়া থাকিবেই।রসুলাল্লাহ্র আ. ভাষণের মাঝখানে সাহাবীদের এই প্রশ্নের জবাব দিয়া আবার তিনি তাহার বক্তৃতার মান পুরবর্তী পর্যায়ে (যথাস্থানে) রাখিয়া আবার বলিতে লাগিলেনঃ যে ব্যক্তি একজনকে সায়েমকে সন্তুষ্টি করে (অর্থাৎ এফতার তথা কামালিয়াত দান করিয়া সন্তুষ্ট করে) আল্লাহ্ তাহাকে আমার হাউজ হইতে শরবত পান করান। ..................
এফতার মাহাত্ম্য এবং এফতার রহস্য *হযরত সহল হইতে বর্ণিত আছে যে, রসুলাল্লাহ্ আ. বলিয়াছেনঃ মানুষের কল্যাণ লাভ বন্ধ হইবে না যতকাল তাহারা এফতারে তাড়াহুড়া করিবে। (ঐক্য সম্মত)ব্যাখ্যাঃ এফতার পর্যন্ত পৌছিবার জন্যই মানুষকে সিয়াম করিতে হইবে। আপন সত্তা হইতে দেহ-মনকে বিচ্ছিন্ন তথা মানবীয় আমিত্বের চির অবসান ঘটনাই #এফতার। সুতরাং এফতার হইতে আত্মদর্শন এবং সর্বপ্রকার জ্ঞানের উদয় হয়ে থাকে। যেহেতু এফতারপ্রাপ্ত সায়েম ব্যতীত অন্য কাহারো দ্বারা সমাজকল্যাণ সম্ভবপর নয় সেইহেতু এফতার পর্যন্ত পৌছিবার তাড়াহুড়া মানব সমাজে অবশ্যই থাকিতে হইবে। না থাকিালে সেই সমাজ সম্পূর্ণ বস্তুবাদী হইয়া যায় এবং তাহাদের দ্বারা কোন প্রকার সমাজকল্যাণ সম্ভবপর হয় না। নিছক বস্তুবাদী তথাকথিত কল্যাণ কোনো কল্যাণই নয়, বরং তাহাতে সমাজ হয় রাহুগ্রস্থ এবং কদাচারী। ...............
*হযরত আবু হোরায়রা হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, রসুলাল্লাহ্ আ. বলিয়াছেন যে, আল্লাহ্ তা'লা বলিয়াছেনঃ আমার বান্দাগণের মধ্যে আমার নিকট তাঁহারাই প্রিয় যাঁহাদের এফতার শীঘ্রই হয়। (তিরিমিজি)।।ব্যাখ্যাঃ এই হাদিসের প্রবক্তা আল্লাহ্ নিজেই। তিনি বলিতেছেনঃ"যে বান্দা শিঘ্র এফতার করে সেই বান্দা আমার বেশী প্রিয়।" এর অর্থ মৃত্যুর যত আগে যে মানুষ এফতার করে সে তত বেশী আল্লাহ্র প্রিয় হইতে পারে। সমাজ তাহা হইতে ধর্মের সেবা এবং আল্লাহ্র পথের হেদায়েত অধিক লাভ করতে পারে। যে ব্যক্তি পূর্ণতা প্রাপ্ত হওয়ার অল্পদিন পর মৃত্যুবরণ করেন তাহা দ্বারা ঐরূপ সেবা বেশী হইতে পারে না। এইজন্যই যিনি যত আগে এফতার করেন তিনি আল্লাহ্র তত বেশী প্রিয় হইয়া থাকেন। ___________________________..................... *আবু হোরায়ারা হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে রসুলাল্লাহ্ আ. বলিয়াছেনঃ মানুষ যে তাড়াহুড়া করে তাহার কারণে ধর্মের প্রকাশ কমায় না, ইহার জন্যই ইহুদী এবং খৃস্টানগণ এফতারে দেরি করে। (আবু দাউদ, ইবনে মা'জা )।।ব্যাখ্যাঃ সপ্ত ইন্দ্রিয় দিয়া যে সকল ধর্ম দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ ইত্যাদিরূপে আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে সেগুলি গ্রহণ করা বিষয়ে মানুষ স্বভাবত তাড়াহুড়া করিয়া থাকে যাহার ফলে মানুষ ধর্মের ডিপো হইয়া থাকে। এইগুলির মোহ সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করার না #এফতার। যাহারা আমানু অর্থাৎ ইমানের সাধক তথা মুক্তির পথের পথিক তাহারা সেরাতুল মোস্তাকিমের উপর থাকিয়া ধীরস্থিরভাবে জ্ঞানের সহিত ধর্মসমূহকে গ্রহণ করে যাহার ফলে তাহাদের মস্তিষ্ক ধর্মের ডিপোতে তথা সংস্কারের ডিপোতে পরিণত হয় না। সুতরাং তাহারা শীঘ্রই এফতার প্রাপ্ত হইয়া মুক্তি লাভ করিয়া থাকে। অপরপক্ষে তৎকালীন ইহুদী এবং খ্রিস্টানগণ তাহাদের ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া আগত ধর্ম (Phenomenon) সমূহ গ্রহণ ও বর্জন ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে অর্থাৎ অসাবধান থাকে। সেই কারণে তাঁহাদের এফতারে বিলম্ব হইয়া যায়, অর্থাৎ জন্মচক্র দীর্ঘায়িত হয়।
*হযরত আবু হোরায়রা হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, রসুলাল্লাহ্ আ. বলিয়াছেন যে, আল্লাহ্ তা'লা বলিয়াছেনঃ আমার বান্দাগণের মধ্যে আমার নিকট তাঁহারাই প্রিয় যাঁহাদের এফতার শীঘ্রই হয়। (তিরিমিজি)।।ব্যাখ্যাঃ এই হাদিসের প্রবক্তা আল্লাহ্ নিজেই। তিনি বলিতেছেনঃ"যে বান্দা শিঘ্র এফতার করে সেই বান্দা আমার বেশী প্রিয়।" এর অর্থ মৃত্যুর যত আগে যে মানুষ এফতার করে সে তত বেশী আল্লাহ্র প্রিয় হইতে পারে। সমাজ তাহা হইতে ধর্মের সেবা এবং আল্লাহ্র পথের হেদায়েত অধিক লাভ করতে পারে। যে ব্যক্তি পূর্ণতা প্রাপ্ত হওয়ার অল্পদিন পর মৃত্যুবরণ করেন তাহা দ্বারা ঐরূপ সেবা বেশী হইতে পারে না। এইজন্যই যিনি যত আগে এফতার করেন তিনি আল্লাহ্র তত বেশী প্রিয় হইয়া থাকেন। ___________________________..................... *আবু হোরায়ারা হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে রসুলাল্লাহ্ আ. বলিয়াছেনঃ মানুষ যে তাড়াহুড়া করে তাহার কারণে ধর্মের প্রকাশ কমায় না, ইহার জন্যই ইহুদী এবং খৃস্টানগণ এফতারে দেরি করে। (আবু দাউদ, ইবনে মা'জা )।।ব্যাখ্যাঃ সপ্ত ইন্দ্রিয় দিয়া যে সকল ধর্ম দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ ইত্যাদিরূপে আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে সেগুলি গ্রহণ করা বিষয়ে মানুষ স্বভাবত তাড়াহুড়া করিয়া থাকে যাহার ফলে মানুষ ধর্মের ডিপো হইয়া থাকে। এইগুলির মোহ সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করার না #এফতার। যাহারা আমানু অর্থাৎ ইমানের সাধক তথা মুক্তির পথের পথিক তাহারা সেরাতুল মোস্তাকিমের উপর থাকিয়া ধীরস্থিরভাবে জ্ঞানের সহিত ধর্মসমূহকে গ্রহণ করে যাহার ফলে তাহাদের মস্তিষ্ক ধর্মের ডিপোতে তথা সংস্কারের ডিপোতে পরিণত হয় না। সুতরাং তাহারা শীঘ্রই এফতার প্রাপ্ত হইয়া মুক্তি লাভ করিয়া থাকে। অপরপক্ষে তৎকালীন ইহুদী এবং খ্রিস্টানগণ তাহাদের ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া আগত ধর্ম (Phenomenon) সমূহ গ্রহণ ও বর্জন ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে অর্থাৎ অসাবধান থাকে। সেই কারণে তাঁহাদের এফতারে বিলম্ব হইয়া যায়, অর্থাৎ জন্মচক্র দীর্ঘায়িত হয়।
সিয়াম সাধনায় তারাবীর ভুমিকাঃ রাত্রি ও দিন মিলাইয়া ২৪ ঘণ্টার সিয়াম ধরা হয়। দিনের বেলায় পানাহার ইত্যাদি ত্যাগ করিয়া দেহের সুখ-স্বাচ্ছন্দ কিছুটা সঙ্কুচিত করিয়া দুনিয়া হইতে মনকে বিরত রাখিবার চেষ্টা করিয়া আপন রবের সংযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করা এবং অপরপক্ষে রাত্রিবেলা দেহকে পানাহারে পুষ্ট করিয়া দুনিয়া হইতে মনকে বিরত রাখিবার চেষ্টার মাধ্যমে আপন রবের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সংকল্প গ্রহণ করা হইল রমজানের সাধনা। দুনিয়া বর্জিত ভোগের মধ্যে যোগ অর্থাৎ উপভোগের মধ্যে যোগ এবং ত্যাগের মধ্যে যোগ, এই উভয় প্রকার মহড়া মিলাইয়াই কেবল যোগ সাধনা পরিপূর্ণতা লাভ করিতে পারে। একটির অবর্তমানে অপরটি দুর্বল, অসহায়। একটি অপরটির পরিপূরক বা সম্পূরক। উপভোগ ও ত্যাগ এই উভয় অবস্থায় দুনিয়া ত্যাগ করিয়া থাকার বিশেষ প্রকার একটি মহড়া গ্রহণ করার নাম হইল রমজানের সিয়াম সাধনা। রাত্রে কোরান তেলাওয়াত করা, তারাবীর সালাত করা, ‘রাত্রে দাঁড়ান’ এর অভ্যাস করা ইত্যাদি নানা প্রকার অতিরিক্ত কাজের মহড়া গ্রহণ করিয়া, ঘুম কমাইয়া রাত্রি জাগরণের অভ্যাস করা, তসবিহ-তাহলিল করা ইত্যাদি নানা প্রকার যোগক্রিয়ার সমাবেশে রাত্রের সিয়াম পালন করা যাইতে পারে। রাত্রিবেলার যোগসাধনের জন্য মহড়াসমুহের মধ্যে তারাবীহ অন্যতম বিশিষ্ট একটি অনুশীলন।‘তারাবিয়াত’ হইতে তারাবীহ। তারাবিয়াত অর্থ ধীরতা, স্থিরতা। একাকী ধীরে, সুস্থে-আপন মর্জি মাফিক (with free style) পালন করিবার সালাত হইল তারাবীহ। তারাবিতে বচন ধীর, মন স্থির এবং ধ্যান নিবিড় হইতে হইবে। তারাবীহ সাধারণত ৪ রাকাত, ঊর্ধ্বে ৮ রাকাত, ধীরে দীর্ঘায়িত করিয়া পড়িতে হইবে, এই সালাত অত্যন্ত কল্যাণকর কিন্তু ইহা ঐচ্ছিক। পালন না করিলেও কোন অপরাধ হইবে না। ইহা জামাতে না হইয়া অবশ্যই একাকী হইতে হইবে। রমজান মাসের খুব কম সংখ্যক দিনই রসুলাল্লাহ আনুষ্ঠানিক এই সালাত পালন করিয়া দেখাইয়া গিয়াছেন। মসজিদ ঘরে আমাদের সমাজ যেভাবে জামাত করিয়া ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হয় তাহা তারাবীর অন্তর্নিহিত নীতি বিরোধী। এই ব্যবস্থা রসুলাল্লাহর দেহত্যাগের প্রায় ৭ বছর পড়ে হযরত ওমর নব বিধান (বেদাত) হিসাবে প্রচলন করেন। তারপর হযরত আলীর শাসনামলে ইহা উচ্ছেদ করা হয়। তারপর আমির মাবিয়ার রাজত্বকাল হইতে আজ পর্যন্ত এই নব বিধান একটানা চলিয়া আসিতেছে। *এশার নামাজ নিজেই কি যথেষ্ট দীর্ঘ নয়? তবে তাহার উপর আবার চার রাকাতের মত তারাবীহ কেন?উত্তরঃ- তারাবীহ আসিয়া উপস্থিত হয় গুণ কীর্তনকারীর মনের গতানুগতিকতাকে থামাইয়া দিয়া প্রার্থনাকারীকে নুতনভাবে সাবধান করিয়া দেওয়ার জন্য। প্রভু নিকটেই আছেন অথচ তাঁহার সঙ্গে সংযোগ হইলনা কেন? এইজন্যই তারাবীতে বচন ধীর হবে মন স্থির হবে, ধ্যান নিবিড় হবে। আমার আশা এবং তোমার ভাষা এক হয়ে যাবে তবেই তারাবীহ। তুমি যাহা কহ সেই তো আমার ভাষা হবে, কারণ তুমিই তো বলেছঃ-“নাহনু আক্বরাবু ইলাইহে মিল হাবলুল অরিদ”।তথাঃ- আমি আছি কাছে তুমি হারাও পাছে তাই বারে বারে বলি আমি আছি কাছে। এখানেই তারাবীর পরম সার্থকতা।
*সালাতুল ঈদ মাঠে সম্পন্ন করিবার বিধান কেন? গৃহে সাধনায় থাকিয়া আপন প্রকৃতিকে জয় করার পর যখন তাহার এফতার হইয়া যাইবে তখন হইতে বাহিরের জগতের সঙ্গেই তাহার কর্মকাণ্ড শুরু হইবে। আত্মশুদ্ধির পর সামাজশুদ্ধির কর্তব্য আসিয়া হাজির হইবে। এইজন্য সাধনার দিন শেষে প্রত্যেক এলাকার সকল সায়েম একত্রিত হইয়া এফতার প্রাপ্তির আনন্দ দিবস উদ্যাপন করিবে এবং তাহা সম্ভব হইলে গৃহের বাহিরে অন্য দশজনকে লইয়া করিবে। সুতরাং এই ঈদ অনুষ্ঠানে প্রধানত দুইটি বিষয় থাকিবেঃ একটি এফতার প্রাপ্তির প্রশংসা এবং অপরটি রবের শুকরিয়া। আপন প্রকৃতি জয় করিবার পর সায়েমের বিশ্বপ্রকৃতি জয়ের অভিযান শুরু হইল।এফতারের পূর্বে গৃহের আশ্রয় প্রয়োজন ছিল। এফতার হইয়া গেলে বিশ্বপ্রকৃতি তাহাকে আশ্রয় দিবে। এখান হইতে সে সৃষ্টির উপর প্রভুত্ব লাভ করিতেছে। আজ হইতে তাহার জীবনে নূতন কাণ্ডকীর্তি শুরু হইবে। গৃহে আপন রবের দাসত্ব করিয়া বিশ্বরবে রূপান্তরিত হইল। কাবার তোয়াফ তাহার সার্থক হইয়া গেল। এখন তিনি সর্বকালের এবং সর্বজনীন।সিয়াম ঘরের এবাদত, যে কারণে সফর অবস্থায় সিয়াম করা কোরানে নিষেধ আছে। অপরপক্ষে হজ্ব বাহিরের এবাদত। ঘরের শান্ত ও আরামের পরিবেশ ত্যাগ করিয়া উদ্ভ্রান্ত প্রেমিকের মত মাওলার সন্ধানে বাহির হইয়া যাওয়া। ত্যাগের সঙ্কীর্ণ ও শান্ত পরিবেশে যাহা সম্পূর্ণ হইয়া উঠে নাই; বিস্তৃর্ণ, বিশাল ও অনিশ্চিত পরিবেশে তাহা অর্জনের জন্য মস্তান হইয়া অসীম বিশ্বে তাঁহার বিশ্বরূপ দর্শন করাই হইল হজ্ব। রমজানের সিয়াম আপন রবের সঙ্গ লাভের সাধনা আর হজ্ব বিশ্ব রবের অসীম রূপ দর্শনের সাধনা। রমজানের যেটুকু অসম্পূর্ণতা ছিল বা থাকিবে তাহার সমাপ্তি ঘটান হজ্ব।
*সালাতুল ঈদ মাঠে সম্পন্ন করিবার বিধান কেন? গৃহে সাধনায় থাকিয়া আপন প্রকৃতিকে জয় করার পর যখন তাহার এফতার হইয়া যাইবে তখন হইতে বাহিরের জগতের সঙ্গেই তাহার কর্মকাণ্ড শুরু হইবে। আত্মশুদ্ধির পর সামাজশুদ্ধির কর্তব্য আসিয়া হাজির হইবে। এইজন্য সাধনার দিন শেষে প্রত্যেক এলাকার সকল সায়েম একত্রিত হইয়া এফতার প্রাপ্তির আনন্দ দিবস উদ্যাপন করিবে এবং তাহা সম্ভব হইলে গৃহের বাহিরে অন্য দশজনকে লইয়া করিবে। সুতরাং এই ঈদ অনুষ্ঠানে প্রধানত দুইটি বিষয় থাকিবেঃ একটি এফতার প্রাপ্তির প্রশংসা এবং অপরটি রবের শুকরিয়া। আপন প্রকৃতি জয় করিবার পর সায়েমের বিশ্বপ্রকৃতি জয়ের অভিযান শুরু হইল।এফতারের পূর্বে গৃহের আশ্রয় প্রয়োজন ছিল। এফতার হইয়া গেলে বিশ্বপ্রকৃতি তাহাকে আশ্রয় দিবে। এখান হইতে সে সৃষ্টির উপর প্রভুত্ব লাভ করিতেছে। আজ হইতে তাহার জীবনে নূতন কাণ্ডকীর্তি শুরু হইবে। গৃহে আপন রবের দাসত্ব করিয়া বিশ্বরবে রূপান্তরিত হইল। কাবার তোয়াফ তাহার সার্থক হইয়া গেল। এখন তিনি সর্বকালের এবং সর্বজনীন।সিয়াম ঘরের এবাদত, যে কারণে সফর অবস্থায় সিয়াম করা কোরানে নিষেধ আছে। অপরপক্ষে হজ্ব বাহিরের এবাদত। ঘরের শান্ত ও আরামের পরিবেশ ত্যাগ করিয়া উদ্ভ্রান্ত প্রেমিকের মত মাওলার সন্ধানে বাহির হইয়া যাওয়া। ত্যাগের সঙ্কীর্ণ ও শান্ত পরিবেশে যাহা সম্পূর্ণ হইয়া উঠে নাই; বিস্তৃর্ণ, বিশাল ও অনিশ্চিত পরিবেশে তাহা অর্জনের জন্য মস্তান হইয়া অসীম বিশ্বে তাঁহার বিশ্বরূপ দর্শন করাই হইল হজ্ব। রমজানের সিয়াম আপন রবের সঙ্গ লাভের সাধনা আর হজ্ব বিশ্ব রবের অসীম রূপ দর্শনের সাধনা। রমজানের যেটুকু অসম্পূর্ণতা ছিল বা থাকিবে তাহার সমাপ্তি ঘটান হজ্ব।
#সিয়ামের #হাকিকতঃ
যদিও এই পুস্তক #সালাত লেখার উদ্দেশ্য নয় তথাপি সিয়ামের কথা ব্যক্ত করিবার উদ্দেশ্যে তুলনামূলকভাবে একটি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করি। আল্লাহ্র সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপক প্রচেষ্টার নাম সালাত। তাই সালাত কখনও পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিতে পারে না। মানুষের সমগ্র জীবনের সকলই কর্মকেই সালাতে রূপান্তরিত করিবার বিশেষ নির্দেশ রহিয়াছে কোরান ও হাদিস গ্রন্থে। নফস কিন্তু সালাতের প্রচেষ্টাগুলিকে গুলিকে গ্রহণ করিতে রাজী থাকে না। তাহার নিকট দুনিয়া অধিক পছন্দনীয়। এইজন্য নফসের অভিব্যক্তিগুলি সর্বদাই আমাদিগকে দুনিয়ার দিকে লইয়া আসিতে চেষ্টা করে। সিয়াম আসিয়া তখন রবের সঙ্গে সংযোগ প্রচেষ্টাকারীকে এই বিষয়ে বিশেষ সাহায্য করিয়া থাকে। সিয়াম সাধনা নফসকে দুনিয়ার সকল প্রকার সংযোগ হইতে বিরত করিয়া রাখে এবং জীবনকে সহজতর করিয়া রাখে।এখানে পাঠকের নিকট একটি প্রশ্ন—জান্নাত কি সজীব? অথবা বাগানবাড়ির মত এক প্রকার নির্জীব পদার্থ? উত্তরঃ #দুনিয়া যেমন নির্জীব নয়, সজীব এবং সক্রিয়, জান্নাতও তেমনই সজীব এবং সক্রিয়। উভয়ের কর্মধারা ভিন্নমুখী। যদি বাগান বা ঘরবাড়ির মতো নির্জীব নয়, সজীব এবং সক্রিয়, জান্নাতও তেমনই সজীব এবং সক্রিয়। উভয়ের মধ্যে পরস্পর প্রবেধ শুধু ইহাই যে, উভয়ের কর্মধারা ভিন্নমুখী। যদি বাগান বা ঘরবাড়ির মতো নির্জীব কিছু হইয়া থাকে তাহা হইলে জান্নাত নিজেকে সাজাইয়া লয় কেমন করিয়া? উহাকে সাজাইয়া দেওয়া হয়।আল্লাহতালা প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন নহেন। প্রকৃতির সকল নিয়ম তাঁহার অধীন। তিনি মুখাপেক্ষিতা বিহীন, বেনেয়াজ। মানুষকে প্রকৃতির অসংখ্য নিয়মের অধীন করিয়া পানাহার ইত্যাদির উপর মুখাপেক্ষী করিয়া সৃষ্টি করা হইয়াছে। রমজানের সাধনা দ্বারা সাধক আল্লাহ্র স্বভাব অর্জন করার চেষ্টা গ্রহণ করে, যাহাতে আল্লাহতা’লার সহায়তায় সেও আল্লাহ্র স্বভাব অর্জন করার চেষ্টা গ্রহণ করে, যাহাতে আল্লাহতা’লার সহায়তায় সেও প্রকৃতির উপর জয়লাভ করিতে পারে।সেইজন্য চিন্তার গতিধারা আহার, নিদ্রা ইত্যাদির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিয়া মনকে এমন এক পর্যায়ে লইয়া যাইবার চেষ্টা করে যেন আল্লাহ সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে সৃষ্টির সকল অধীনতামূলক বন্ধনী হইতে মুক্তিদান করেন।এইরূপ #শেরেক হইতে মুক্তির সাধনা হইল রমজানের সাধনা। এফতার প্রাপ্তি দ্বারা এই শেরেকের অবসান ঘটে।মনকে আল্লাহ্র স্মরণে মত্ত রাখিতে চাহিলে শারীরিক শক্তির যেমন প্রয়োজন আছে, শরীর ভাল থাকিলে নফসের অভিব্যক্তিগুলি সতেজ থাকে এবং এবাদতের মধ্যে শ্রান্তি কম আসে এবং উহাতে আনন্দ ও উৎসাহ থাকে; তেমনই ইহাও সত্য যে, সবল দেহে সবল নফসকে সত্যের পথচারী করিতে গেলে সে তাহার নিজস্ব চিন্তার গতি ত্যাগ করিয়া থাকিতে চায় না। সবল নফস সাধারণত স্বেচ্ছাচারী হয়। সে তাহার স্বকীয়তা ভুলিয়া থাকে না। সে তাহার আপন অস্তিত্ব বা আমিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াই রাখে এবং আল্লাহ্র এবাদত বা সেবা যথেষ্ট করিয়াছে বলিয়া ধারণা করে।এই অবস্থা হইতে তাহাকে ফানাফিল্লাহ্র চরম সত্য বুঝাইতে হইলে অনাহার ক্লিষ্ট করিয়া হতাশার মধ্যে ফেলিয়া দিতে হয়। তখন নফস নিজের অসহায় অবস্থা বুঝিতে পারে এবং আরো বুঝিতে পারে যে, বস্তুর উপর নির্ভর ব্যতীত সে কত অসহায়, কত দুর্বল। আল্লাহ্র অলিগণ বস্তু নির্ভরতা ত্যাগ করিয়া আল্লাহ্ প্রদত্ত “নিজস্ব” পানাহার প্রাপ্ত হইয়া কতই না শক্তিমান হইয়াছেন। সাময়িকভাবে স্থাপতি সাময়িক বস্তুজগতের এই সকল সাময়িক শক্তি এবং সম্পদ কত যে হীন, দুর্বল এবং কত অকিঞ্চিতকর এই উপলব্ধি নফসের মধ্যে বদ্ধমূল করিয়া তোলাই হইল রমজানের উপবাসের প্রধান উদ্দেশ্য।সমগ্র সৃষ্টি অসীম অখণ্ড একক একটি অস্তিত্ব এবং তাহা সত্য দ্বারা বা সত্যসহ বিকাশ করা হইয়াছে। সুতরাং সৃষ্টির কোথাও মিথ্যা, অন্যায় বা কলঙ্ক নাই। কিন্তু এই অখণ্ডের সত্যের উপরে আমাদের জন্য কালো পর্দা পড়িয়া আছে যাহার কারণে এই মহাসত্য আমরা উপলব্ধি বা দর্শন করিতে পারি না। এই পর্দা বা আবরণ মনের মধ্যে। ইহা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যমূলক সৃষ্টি এবং ইহাই দুনিয়া। মন হইতে এই পর্দা সরাইলেই দেখা যাইবে সমগ্র সৃষ্টিই স্রষ্টার “আয়াত”। অর্থাৎ স্রষ্টা রাব্বুল আলামীনরূপে সারা সৃষ্টির মধ্যে নিজেকেই নিজে বিকশিত ও বিলম্বিত করিয়া আপন ব্যাখ্যা আপনিই প্রকাশ করিয়া চলিয়াছে। সুতরাং সমগ্র সৃষ্টি তাঁহারই তফসির। এইজন্য কোথাও মিথ্যা আরোপ করার স্থান নাই। সৃষ্টির কোন বস্তুর কোন অস্তিত্বও নাই। উহা তাঁহারই সেফাতের প্রকাশ, উহা তাঁহারই আংশিক সেফাতের পরিচয়বহ। কিছুই তাঁহা হইতে বিচ্ছিন্ন নয়।সৃষ্টিময় তৌহিদের এইরূপটি প্রত্যক্ষ করিতে চাহিলে মানুষকে তাহার আমিত্বের আবরণ হইতে ছুটিয়া আসিতে হইবে। অন্যান্য সৃষ্টির মত মানুষ ও আল্লাহ্র দ্বীনের দ্বারা পরিচালিত হইতেছে। কিন্তু তাহার আমিত্বের মধ্যে বাস করার কারণে এবং মানব রচিত বিধানসমূহ পালন করার কারণে আল্লাহ্ দ্বীন উপলব্ধি করিতে পারে না, তাই তাহাকে আপন রবের উপর নির্ভরের সাধন করিতে হয়—অর্থাৎ আপন রবের নির্দেশে চলাফেরা, খাওয়া-পরা ইত্যাদি সবকিছু করার চেষ্টা করিতে হয়। নিজ ইচ্ছামত কোন কিছুই না করার অনুশীলন বা মহড়া করিতে হয়। নিজ ইচ্ছামত কোন কিছুই না করার অনুশীলন বা মহড়া করিতে হয়। সিয়াম সাধনা এইরূপ একটি মহান সাধনা। এইরূপে আনুষ্ঠানিকভাবে একমাস রমজানের আমল হইল সারা বছরের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ। ক্ষুৎপিপাসায় অন্তরকে না জ্বালাইলে অন্তরে তৌহিদ প্রেমের আগুন সহজে জ্বলে না।এইরূপে দেখা যায় সালাত ও সিয়াম পরস্পর অঙ্গাঙ্গী। একই বিষয় ও ভাবের ওপিঠ ওপিঠ। দুনিয়া হইতে মনকে বিরত রাখিলেই আদদ্বীনের অবস্থান লাভ হয় এবং তাহাতে সালাত অর্থাৎ আপন রবের সঙ্গে সংযোগ আসিয়া মানুষ কর্মযোগী অর্থাৎ সৎ-আমলকারী “#সালেহ্” হইয়া উঠে।
যদিও এই পুস্তক #সালাত লেখার উদ্দেশ্য নয় তথাপি সিয়ামের কথা ব্যক্ত করিবার উদ্দেশ্যে তুলনামূলকভাবে একটি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করি। আল্লাহ্র সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপক প্রচেষ্টার নাম সালাত। তাই সালাত কখনও পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিতে পারে না। মানুষের সমগ্র জীবনের সকলই কর্মকেই সালাতে রূপান্তরিত করিবার বিশেষ নির্দেশ রহিয়াছে কোরান ও হাদিস গ্রন্থে। নফস কিন্তু সালাতের প্রচেষ্টাগুলিকে গুলিকে গ্রহণ করিতে রাজী থাকে না। তাহার নিকট দুনিয়া অধিক পছন্দনীয়। এইজন্য নফসের অভিব্যক্তিগুলি সর্বদাই আমাদিগকে দুনিয়ার দিকে লইয়া আসিতে চেষ্টা করে। সিয়াম আসিয়া তখন রবের সঙ্গে সংযোগ প্রচেষ্টাকারীকে এই বিষয়ে বিশেষ সাহায্য করিয়া থাকে। সিয়াম সাধনা নফসকে দুনিয়ার সকল প্রকার সংযোগ হইতে বিরত করিয়া রাখে এবং জীবনকে সহজতর করিয়া রাখে।এখানে পাঠকের নিকট একটি প্রশ্ন—জান্নাত কি সজীব? অথবা বাগানবাড়ির মত এক প্রকার নির্জীব পদার্থ? উত্তরঃ #দুনিয়া যেমন নির্জীব নয়, সজীব এবং সক্রিয়, জান্নাতও তেমনই সজীব এবং সক্রিয়। উভয়ের কর্মধারা ভিন্নমুখী। যদি বাগান বা ঘরবাড়ির মতো নির্জীব নয়, সজীব এবং সক্রিয়, জান্নাতও তেমনই সজীব এবং সক্রিয়। উভয়ের মধ্যে পরস্পর প্রবেধ শুধু ইহাই যে, উভয়ের কর্মধারা ভিন্নমুখী। যদি বাগান বা ঘরবাড়ির মতো নির্জীব কিছু হইয়া থাকে তাহা হইলে জান্নাত নিজেকে সাজাইয়া লয় কেমন করিয়া? উহাকে সাজাইয়া দেওয়া হয়।আল্লাহতালা প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন নহেন। প্রকৃতির সকল নিয়ম তাঁহার অধীন। তিনি মুখাপেক্ষিতা বিহীন, বেনেয়াজ। মানুষকে প্রকৃতির অসংখ্য নিয়মের অধীন করিয়া পানাহার ইত্যাদির উপর মুখাপেক্ষী করিয়া সৃষ্টি করা হইয়াছে। রমজানের সাধনা দ্বারা সাধক আল্লাহ্র স্বভাব অর্জন করার চেষ্টা গ্রহণ করে, যাহাতে আল্লাহতা’লার সহায়তায় সেও আল্লাহ্র স্বভাব অর্জন করার চেষ্টা গ্রহণ করে, যাহাতে আল্লাহতা’লার সহায়তায় সেও প্রকৃতির উপর জয়লাভ করিতে পারে।সেইজন্য চিন্তার গতিধারা আহার, নিদ্রা ইত্যাদির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিয়া মনকে এমন এক পর্যায়ে লইয়া যাইবার চেষ্টা করে যেন আল্লাহ সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে সৃষ্টির সকল অধীনতামূলক বন্ধনী হইতে মুক্তিদান করেন।এইরূপ #শেরেক হইতে মুক্তির সাধনা হইল রমজানের সাধনা। এফতার প্রাপ্তি দ্বারা এই শেরেকের অবসান ঘটে।মনকে আল্লাহ্র স্মরণে মত্ত রাখিতে চাহিলে শারীরিক শক্তির যেমন প্রয়োজন আছে, শরীর ভাল থাকিলে নফসের অভিব্যক্তিগুলি সতেজ থাকে এবং এবাদতের মধ্যে শ্রান্তি কম আসে এবং উহাতে আনন্দ ও উৎসাহ থাকে; তেমনই ইহাও সত্য যে, সবল দেহে সবল নফসকে সত্যের পথচারী করিতে গেলে সে তাহার নিজস্ব চিন্তার গতি ত্যাগ করিয়া থাকিতে চায় না। সবল নফস সাধারণত স্বেচ্ছাচারী হয়। সে তাহার স্বকীয়তা ভুলিয়া থাকে না। সে তাহার আপন অস্তিত্ব বা আমিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াই রাখে এবং আল্লাহ্র এবাদত বা সেবা যথেষ্ট করিয়াছে বলিয়া ধারণা করে।এই অবস্থা হইতে তাহাকে ফানাফিল্লাহ্র চরম সত্য বুঝাইতে হইলে অনাহার ক্লিষ্ট করিয়া হতাশার মধ্যে ফেলিয়া দিতে হয়। তখন নফস নিজের অসহায় অবস্থা বুঝিতে পারে এবং আরো বুঝিতে পারে যে, বস্তুর উপর নির্ভর ব্যতীত সে কত অসহায়, কত দুর্বল। আল্লাহ্র অলিগণ বস্তু নির্ভরতা ত্যাগ করিয়া আল্লাহ্ প্রদত্ত “নিজস্ব” পানাহার প্রাপ্ত হইয়া কতই না শক্তিমান হইয়াছেন। সাময়িকভাবে স্থাপতি সাময়িক বস্তুজগতের এই সকল সাময়িক শক্তি এবং সম্পদ কত যে হীন, দুর্বল এবং কত অকিঞ্চিতকর এই উপলব্ধি নফসের মধ্যে বদ্ধমূল করিয়া তোলাই হইল রমজানের উপবাসের প্রধান উদ্দেশ্য।সমগ্র সৃষ্টি অসীম অখণ্ড একক একটি অস্তিত্ব এবং তাহা সত্য দ্বারা বা সত্যসহ বিকাশ করা হইয়াছে। সুতরাং সৃষ্টির কোথাও মিথ্যা, অন্যায় বা কলঙ্ক নাই। কিন্তু এই অখণ্ডের সত্যের উপরে আমাদের জন্য কালো পর্দা পড়িয়া আছে যাহার কারণে এই মহাসত্য আমরা উপলব্ধি বা দর্শন করিতে পারি না। এই পর্দা বা আবরণ মনের মধ্যে। ইহা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যমূলক সৃষ্টি এবং ইহাই দুনিয়া। মন হইতে এই পর্দা সরাইলেই দেখা যাইবে সমগ্র সৃষ্টিই স্রষ্টার “আয়াত”। অর্থাৎ স্রষ্টা রাব্বুল আলামীনরূপে সারা সৃষ্টির মধ্যে নিজেকেই নিজে বিকশিত ও বিলম্বিত করিয়া আপন ব্যাখ্যা আপনিই প্রকাশ করিয়া চলিয়াছে। সুতরাং সমগ্র সৃষ্টি তাঁহারই তফসির। এইজন্য কোথাও মিথ্যা আরোপ করার স্থান নাই। সৃষ্টির কোন বস্তুর কোন অস্তিত্বও নাই। উহা তাঁহারই সেফাতের প্রকাশ, উহা তাঁহারই আংশিক সেফাতের পরিচয়বহ। কিছুই তাঁহা হইতে বিচ্ছিন্ন নয়।সৃষ্টিময় তৌহিদের এইরূপটি প্রত্যক্ষ করিতে চাহিলে মানুষকে তাহার আমিত্বের আবরণ হইতে ছুটিয়া আসিতে হইবে। অন্যান্য সৃষ্টির মত মানুষ ও আল্লাহ্র দ্বীনের দ্বারা পরিচালিত হইতেছে। কিন্তু তাহার আমিত্বের মধ্যে বাস করার কারণে এবং মানব রচিত বিধানসমূহ পালন করার কারণে আল্লাহ্ দ্বীন উপলব্ধি করিতে পারে না, তাই তাহাকে আপন রবের উপর নির্ভরের সাধন করিতে হয়—অর্থাৎ আপন রবের নির্দেশে চলাফেরা, খাওয়া-পরা ইত্যাদি সবকিছু করার চেষ্টা করিতে হয়। নিজ ইচ্ছামত কোন কিছুই না করার অনুশীলন বা মহড়া করিতে হয়। নিজ ইচ্ছামত কোন কিছুই না করার অনুশীলন বা মহড়া করিতে হয়। সিয়াম সাধনা এইরূপ একটি মহান সাধনা। এইরূপে আনুষ্ঠানিকভাবে একমাস রমজানের আমল হইল সারা বছরের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ। ক্ষুৎপিপাসায় অন্তরকে না জ্বালাইলে অন্তরে তৌহিদ প্রেমের আগুন সহজে জ্বলে না।এইরূপে দেখা যায় সালাত ও সিয়াম পরস্পর অঙ্গাঙ্গী। একই বিষয় ও ভাবের ওপিঠ ওপিঠ। দুনিয়া হইতে মনকে বিরত রাখিলেই আদদ্বীনের অবস্থান লাভ হয় এবং তাহাতে সালাত অর্থাৎ আপন রবের সঙ্গে সংযোগ আসিয়া মানুষ কর্মযোগী অর্থাৎ সৎ-আমলকারী “#সালেহ্” হইয়া উঠে।
সিয়াম সম্পর্কিত কিছু কথাঃ- ১. সিয়াম ও এফতারঃ- দুনিয়া হইতে মনকে বিরত বা বারিত করিয়া রাখিবার আমল বা কার্যক্রম প্রচেষ্টাকে সিয়াম বলে। যিনি সিয়ামে প্রতিষ্ঠিত হইয়া মনকে মুক্ত করিয়াছেন, বস্তুর বেড়াজাল ভাঙ্গিয়া তাহার এফতার হইয়া গিয়াছে। ফাতের শব্দ হইতে এফতার। ফাতের অর্থ ভেঙ্গে ফেলা, ছিঁড়িয়া ফেলা, বিদীর্ণ করা। ইহা বস্তুমোহের বেড়া ভাঙ্গা ব্যতীত আর কিছুই নহে। (শব্দ সংজ্ঞা, কোরান দর্শনঃ সদর উদ্দিন আহ্মদ চিশতী)
২.সিয়াম একটি অস্ত্র। ইহা চালাইয়া যাইতে হইবে আপন অজ্ঞানতা ও অন্ধকারের দিকে। অর্থাৎ আপন সত্তার মধ্যে অবস্থিত সর্বপ্রকার অজ্ঞানতা, অস্পষ্টতা, আবিলতা ইত্যাদি সর্বপ্রকার রাত্রির দিকে সিয়াম নামক অস্ত্র চালাইয়া যাইতে হইবে। ইহাতে সকল মোহবন্ধন হইতে আলোর দেশে প্রবেশ লাভ করা সম্ভবপর হইবে। সিয়াম সাধনা দ্বারা বস্তুর অন্ধকারের মধ্যে আলোর সন্ধান লাভের পর সিয়াম প্রচেষ্টা এমনভাবে চালাইয়া যাইতে হইবে যেন কোন বিষয়েই স্বাধীন আল্লাহ্ সত্তা ঢাকিয়া রাখিতে না পারে। আল্লাহ্ সত্তা এবং শয়তান সত্তার সমন্বয়ে হইল মানব সত্তা।
৩. প্রাকৃতিক মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুবরণ না করিতে পারিলে মানুষ মুক্তিলাভ করিতে পারে না, যাহার ফলে মৃতের জগতেই সে বাস করে এবং জন্মমৃত্যুর আবর্তে সে বন্দি হইয়া থাকে। আত্মসত্তা হইতে দেহমনকে বিচ্ছিন্ন করার নাম সিয়াম। এই বিচ্ছিন্নতা (অর্থাৎ দেহমনের মৃত্যু) প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দেহস্থ হইয়া আছে। মৃত্যু দ্বারা যে কোন সময় বিচ্ছিন্নতা সংঘটিত হইয়া যাইতে পারে। দেহমন হইতে এইরূপ বিচ্ছিন্নতার পূর্বেই সায়েম বিচ্ছিন্নতা অর্জন করে। ইহাকে কোরানের ভাষায় বলা হইয়াছে "মরার আগে মরিয়া যাওয়া।" ৪.সিয়াম ও সালাত পরস্পর (Complementary) একই বিষয়ের এপিট-ওপিঠ। সিয়াম দুনিয়া হইতে বিরতির ক্রিয়া করে আর সালাত আদদ্বীনের সঙ্গে তথা রবের সঙ্গে সংযোগের ক্রিয়া করে। ৫.সালাত ও সিয়াম পরস্পর অঙ্গাঙ্গী। একই বিষয় ও ভাবের ওপিঠ ওপিঠ। দুনিয়া হইতে মনকে বিরত রাখিলেই আদদ্বীনের অবস্থান লাভ হয় এবং তাহাতে সালাত অর্থাৎ আপন রবের সঙ্গে সংযোগ আসিয়া মানুষ কর্মযোগী অর্থাৎ সৎ-আমলকারী “সালেহ্” হইয়া উঠে। ৬. সিয়াম অর্থই দুনিয়া হইতে তথা আগুন হইতে তথা জাহান্নামের জ্বালা হইতে মনকে বিরত করিয়া রাখিবার চেষ্টা করা। সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া যাহা কিছু মনের মধ্যে মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়া শিরিকরূপে উহাতে জমা হইয়া যায় তাহা উচ্ছেদ করিবার সাধন পদ্ধতি হইল সালাত, উচ্ছেদ করিবার মনভাব হইল সিয়াম। শিরিক বা সৃষ্টি মোহ মস্তিষ্ক হইতে উচ্ছেদ বা পরিহার করার মনোভাব কাহারও দৃঢ় বা বদ্ধমূল হইলে তাহাকে সায়েম বলে। সায়েমের মন সবকিছু পরিহার করে যদিও তাহার দেহ উহা গ্রহন করে। ইহাকেই বলে উপভোগ। জগতবাসী ভোগী, সায়েম উপভোগ কারী।
২.সিয়াম একটি অস্ত্র। ইহা চালাইয়া যাইতে হইবে আপন অজ্ঞানতা ও অন্ধকারের দিকে। অর্থাৎ আপন সত্তার মধ্যে অবস্থিত সর্বপ্রকার অজ্ঞানতা, অস্পষ্টতা, আবিলতা ইত্যাদি সর্বপ্রকার রাত্রির দিকে সিয়াম নামক অস্ত্র চালাইয়া যাইতে হইবে। ইহাতে সকল মোহবন্ধন হইতে আলোর দেশে প্রবেশ লাভ করা সম্ভবপর হইবে। সিয়াম সাধনা দ্বারা বস্তুর অন্ধকারের মধ্যে আলোর সন্ধান লাভের পর সিয়াম প্রচেষ্টা এমনভাবে চালাইয়া যাইতে হইবে যেন কোন বিষয়েই স্বাধীন আল্লাহ্ সত্তা ঢাকিয়া রাখিতে না পারে। আল্লাহ্ সত্তা এবং শয়তান সত্তার সমন্বয়ে হইল মানব সত্তা।
৩. প্রাকৃতিক মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুবরণ না করিতে পারিলে মানুষ মুক্তিলাভ করিতে পারে না, যাহার ফলে মৃতের জগতেই সে বাস করে এবং জন্মমৃত্যুর আবর্তে সে বন্দি হইয়া থাকে। আত্মসত্তা হইতে দেহমনকে বিচ্ছিন্ন করার নাম সিয়াম। এই বিচ্ছিন্নতা (অর্থাৎ দেহমনের মৃত্যু) প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দেহস্থ হইয়া আছে। মৃত্যু দ্বারা যে কোন সময় বিচ্ছিন্নতা সংঘটিত হইয়া যাইতে পারে। দেহমন হইতে এইরূপ বিচ্ছিন্নতার পূর্বেই সায়েম বিচ্ছিন্নতা অর্জন করে। ইহাকে কোরানের ভাষায় বলা হইয়াছে "মরার আগে মরিয়া যাওয়া।" ৪.সিয়াম ও সালাত পরস্পর (Complementary) একই বিষয়ের এপিট-ওপিঠ। সিয়াম দুনিয়া হইতে বিরতির ক্রিয়া করে আর সালাত আদদ্বীনের সঙ্গে তথা রবের সঙ্গে সংযোগের ক্রিয়া করে। ৫.সালাত ও সিয়াম পরস্পর অঙ্গাঙ্গী। একই বিষয় ও ভাবের ওপিঠ ওপিঠ। দুনিয়া হইতে মনকে বিরত রাখিলেই আদদ্বীনের অবস্থান লাভ হয় এবং তাহাতে সালাত অর্থাৎ আপন রবের সঙ্গে সংযোগ আসিয়া মানুষ কর্মযোগী অর্থাৎ সৎ-আমলকারী “সালেহ্” হইয়া উঠে। ৬. সিয়াম অর্থই দুনিয়া হইতে তথা আগুন হইতে তথা জাহান্নামের জ্বালা হইতে মনকে বিরত করিয়া রাখিবার চেষ্টা করা। সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া যাহা কিছু মনের মধ্যে মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়া শিরিকরূপে উহাতে জমা হইয়া যায় তাহা উচ্ছেদ করিবার সাধন পদ্ধতি হইল সালাত, উচ্ছেদ করিবার মনভাব হইল সিয়াম। শিরিক বা সৃষ্টি মোহ মস্তিষ্ক হইতে উচ্ছেদ বা পরিহার করার মনোভাব কাহারও দৃঢ় বা বদ্ধমূল হইলে তাহাকে সায়েম বলে। সায়েমের মন সবকিছু পরিহার করে যদিও তাহার দেহ উহা গ্রহন করে। ইহাকেই বলে উপভোগ। জগতবাসী ভোগী, সায়েম উপভোগ কারী।
(সিয়াম দর্শনঃ সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী)
No comments:
Post a Comment