সৌদি আরব হলো কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম দেশ। অন্য কোনো মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
রিয়াদের নিকটস্থ দিরিয়া নামের একটি কৃষিবসতির প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ। এই উচ্চাভিলাষীমরুযোদ্ধা ১৭৪৪ সালে আরবের বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ বিন ওয়াহাব [ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা]-এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে “দিরিয়া আমিরাত” গঠন করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে শিরক-বিদাত পালনের অভিযোগে এই দুজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। ওই “দিরিয়া আমিরাত”-ই বিশ্বের প্রথমসৌদি রাজ্য/আমিরাত। মুহাম্মদ বিন সৌদ তার পুত্র আবদুল আজিজের সাথে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মেয়েরবিয়ে দেন। এভাবেই সৌদ পরিবার ও ওয়াহাবী মতবাদের মিলনযাত্রা শুরু হয়। ১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন সৌদ-এরমৃত্যু হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হয়।
এই আবদুল আজিজ তত্কালীন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল ব্রিটেনের সাথে হাত মিলিয়ে তুরস্কের খলিফাদেরবিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকে। শ্বশুর ইবনে ওয়াহাবের ধর্মীয় মতবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তথাকথিতশিরক-বিদাত উচ্ছেদের নামে ব্রিটিশদের সাথে তুর্কি খিলাফত ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হয় আবদুল আজিজ। ১৭৯২সালে মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মৃত্যু হয়। ১৮০১/২ সালে আবদুল আজিজ তুর্কি খিলাফতের কাছ থেকে ইরাকদখল করে হজরত আলী (রা.) ও হজরত হুসেন (রা.)-এর মাজার শরিফ ভেঙে ফেলে। এর প্রেক্ষিতে ১৮০৩ সালেএকজন শিয়া মুসলিম আজিজকে দিরিয়ায় আসরের নামাজরত অবস্থায় হত্যা করে।
এর পর আবদুল আজিজের ছেলে সৌদ বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতায় এসে তুর্কিদের পরাজিত করে ১৮০৩ সালেমক্কা ও ১৮০৪ সালে মদিনা দখল করে নেয়। দুই পবিত্র নগরী দখল করে তারা ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। তারামক্কা-মদিনার বহু মুসলিমকে হত্যা করে। সবই করা হয় সেই শিরক-বিদাত উচ্ছেদের নামে! ওয়াহাবী মতবাদেরধর্মীয় শুদ্ধি অভিযানের অজুহাতে তারা বহু সাহাবীর কবরস্থান ধ্বংস করে। এমনকি খোদ মহানবী (সা.)-এরপবিত্র কবরে ছায়াদানকারী মিম্বরগুলোও এরা ভেঙে ফেলে! এসবই চলে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তানিয়ে।
খলিফা ২য় মাহমুদ
ইরাক-মক্কা-মদিনায় সৌদিদের এই ধ্বংসযজ্ঞে তত্কালীন তুর্কি খলিফাগণ ভীষণ রুষ্ট হন। ১৮০৮ সালেখলিফা ২য় মাহমুদ ক্ষমতাসীন হয়ে সৌদিদের দমনে শক্তিশালী সেনাদল পাঠান। ষড়যন্ত্রকারী ব্রিটিশরা এবারআর সৌদিদের বাঁচাতে পারেনি। ১৮১৮ সালে সৌদের ছেলে, তত্কালীন সৌদি শাসক আবদুল্লাহ বিন সৌদতুর্কিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
আবদুল্লাহ বিন সৌদকে বন্দী করে ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই পবিত্র নগরী ও বহু মসজিদ ধ্বংসেরশাস্তি হিসেবে খলিফা ২য় মাহমুদ-এর নির্দেশে আবদুল্লাহ বিন সৌদ ও তার দুই ছেলেকে ইস্তাম্বুলে প্রকাশ্যেশিরচ্ছেদ করা হয়।
এভাবেই প্রথম সৌদি আমিরাত (১৭৪৪-১৮১৮)-এর পতন হয় ও পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ আরবে উসমানিয়াখিলাফতের শাসনকর্তৃত্ব ফিরে আসে।
সৌদ পরিবারের দিরিয়ার আখড়া ১৮১৮ সালে ধ্বংস হয়ে গেলে প্রথম সৌদি আমিরাতের শেষ আমীর আবদুল্লাহরতুর্কি নামের এক পুত্র মরুভূমিতে পালিয়ে যায়। এই তুর্কি বিন আবদুল্লাহ পালিয়ে বনু তামিম গোত্রে আশ্রয়নেয়। পরে ১৮২১ সালে সে আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকরে।
১৮২৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহ উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিশরীয়দের হটিয়ে দিরিয়া ও রিয়াদ দখল করে নেয়।রিয়াদকে রাজধানী করে গঠিত এই “নজদ আমিরাত” ইতিহাসে দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য নামে পরিচিত। দ্বিতীয় সৌদিরাজ্যটি অবশ্য খুব কম এলাকাই দখলে নিতে পেরেছিল। এটি বেশিদিন টিকেওনি। এই নজদ আমিরাতের প্রধানকে“ইমাম” বলা হত এবং ওয়াহাবী মতাবলম্বীরাই ধর্মীয় বিষয়ে কর্তৃত্বশীল ছিল।
তবে এবার সৌদ পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কথিত ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহকে তাঁর এক জ্ঞাতিভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান বিদ্রোহ করে ১৮৩৪ সালে হত্যা করে। তবে ক্ষমতা পায়নি মুশারি। তুর্কির ছেলেফয়সাল এরপর নজদ আমিরাতের ইমাম হয়।
আবদুর রহমান বিন ফয়সাল
সৌদ পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। অবশেষে ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে উসমানিয়াদের অনুগতরাশিদী বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে। সৌদিদের শেষ ইমাম আবদুর রহমান বিন ফয়সালতার সাঙ্গোপাঙ্গসহ পালিয়ে যায়।
বিশাল বালুকাময় রুব আল খালি মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আবদুর রহমান তার পুত্র আবদুল আজিজকে নিয়েদক্ষিণপূর্বে মুররা বেদুইন গোত্রে গিয়ে পালায়। সেখান থেকে তারা বাহরাইনের রাজপরিবারের কাছে গিয়ে কিছুদিনআশ্রয় নেয়। তার পর ১৮৯৩ সালে আবদুর রহমান ও তার পুত্র শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ দালাল কুয়েতি আল-সাবাহরাজপরিবারের আশ্রয় পায়।
কুয়েতি রাজপরিবারের সহায়তায় সৌদিরা উসমানিয়া খিলাফতের কর্তৃত্বাধীন নজদে একের পর এক চোরাগুপ্তাহামলা চালাতে থাকে। ওয়াহাবী মতবাদের আলোকে পরিশুদ্ধ ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে উসমানিয়া খিলাফতেরবিরুদ্ধে এসব হামলা চলতে থাকে। কিন্তু এসব হামলায় সৌদিরা তেমন কোনো বড় সাফল্য পায়নি। ১৯০১ সালেসারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আবদুর রহমান তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের সব উদ্যম হারায়।
১৮৯৯ সালের জানুয়ারিতে কুয়েতের আমির মুবারক আল সাবাহ ব্রিটেনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেকুয়েতকে ব্রিটেনের করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত করেন। তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের প্রভাবেরবিরুদ্ধেই কুয়েত এই চুক্তি করে ব্রিটেনের সাথে।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ – বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা
সৌদ পরিবারের লড়াইটিও ছিল উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধেই। তাই ১৯০১ সালে সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলেপিতা আবদুর রহমান হতোদ্যম হলেও পুত্র আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ আবারও আশার আলো দেখে। আবদুলআজিজ ইবনে সৌদ ১৯০১ সালের শেষের দিকে কুয়েতের আমির মুবারকের কাছে উসমানিয়াদের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদআক্রমণের জন্য সাহায্য চায়। ব্রিটিশ মদদপুষ্ট কুয়েত সানন্দে ইবনে সৌদকে ঘোড়া ও অস্ত্র সরবরাহ করে।
১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইবনে সৌদ সৈন্যসহ রিয়াদের মাসমাক দুর্গ আক্রমণ করে। মাসমাকের উসমানিয়াঅনুগত রাশিদী প্রশাসক ইবনে আজলানকে হত্যা করে সৌদিরা। ইবনে সৌদ যুদ্ধজয় শেষে ইবনে আজলানেরছিন্নমস্তকটি নিয়ে দুর্গশীর্ষে আসে এবং নিচে সমবেত উদ্বিগ্ন রিয়াদবাসীর দিকে ছুঁড়ে মারে ।[1]
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের রিয়াদ আমিরাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি রাজ্যের সূচনা হয়।
এর পর সৌদিরা একে একে রাশিদীদের নজদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে থাকে। ১৯০৭ সালের মধ্যেসৌদিরা নজদের বিরাট এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
William Henry Irvine Shakespear
১৯০৯ সালে ব্রিটিশরা সামরিক অফিসার William Henry Irvine Shakespear-কে কুয়েতে নিয়োগ দিলে সৌদপরিবার আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। শেক্সপিয়ারকে ইবনে সৌদ সামরিক উপদেষ্টা বানিয়ে নেয়।[2]
১৯১৩ সালে সৌদিরা উসমানিয়া সৈন্যদের কাছ থেকে পূর্ব আরবের গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান হাসা শহর দখল করেনেয়। এর পর পার্শ্ববর্তী কাতিফ শহরও সৌদিরা দখলে নেয়।
পরের বছর ১৯১৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার মিত্রশক্তি জার্মানি-উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রিয়াদে ব্রিটিশরা শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদিদের সাথেউসমানিয়া অনুগত রাশিদীদের যুদ্ধ লাগায়।[3]
১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত এই যুদ্ধে রাশিদীরা জয়ী হয় ও শেক্সপিয়ারকে হত্যা করে। রাশিদীরাশেক্সপিয়ারের শিরশ্ছেদ করে ও তার হেলমেট উসমানিয়াদের কাছে হস্তান্তর করে। উসমানিয়ারা সৌদিদের সাথেব্রিটিশদের সম্পর্কের প্রমাণস্বরূপ শেক্সপিয়ারের হেলমেট মদিনার প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেখায়।
শেক্সপিয়ারকে হারিয়ে বিপর্যস্ত ইবনে সৌদ ১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের সাথে দারিন চুক্তি স্বাক্ষরকরে। ব্রিটিশদের পক্ষে ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য প্রধান মেজর জেনারেল স্যার পার্সি কক্স ওই চুক্তিতেস্বাক্ষর করেন। চুক্তি মোতাবেক সৌদি রাজত্ব ব্রিটিশদের করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত হয়।[4]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে জার্মান-উসমানিয়া খিলাফতের দুর্বল অবস্থাও আল-সৌদ পরিবারের সাথে ব্রিটিশদের সখ্য দেখে চিন্তিত হয়ে ওঠেন মক্কার উসমানিয়া সমর্থিত শাসকহুসাইন বিন আলী।
১৯১৫ সালের ১৪ জুলাই থেকে হুসাইন মিশরের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার হেনরি ম্যাকম্যাহনের গোপনে পত্রযোগাযোগ শুরু করেন। ৩০ জানুয়ারি ১৯১৬ পর্যন্ত এই পত্র আদান-প্রদান চলতে থাকে। উসমানিয়া খিলাফতেরঅন্তর্ভুক্ত বিশাল আরব ভূ-খণ্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা মতবিনিময় করে।[5]
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মদদে মক্কার শাসক সেই হুসাইন বিন আলী উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহ তৈরিকরে। ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্সের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় বিশ্বাসঘাতক হুসাইন মিডল-ইস্টার্নফ্রন্টে উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুরু করলে বহু উসমানিয়া সৈন্য বন্দী হয় ও অবশেষে উসমানিয়ারা ১মবিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়।
ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্স – আরববিশ্বে আরব জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা – হলিউডের বিখ্যাত “Lawrence of Arabia” (১৯৬২) মুভিটি একেনিয়েই নির্মিত
১৩০০ বছর পর মধ্যপ্রাচ্য মুসলিম খিলাফতের হাতছাড়া হয়ে যায়।
পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশরা ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর হুসাইন বিন আলীর দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল্লাহকে জর্ডানেররাজত্ব ও তৃতীয় ছেলে ফয়সালকে ইরাকের রাজত্ব দেয়। হুসাইনকে রাখা হয় হেজাজ (পবিত্র মক্কা-মদিনা ওতাবুক অঞ্চল)-এর শাসক হিসেবে।
হুসাইন বিন আলী
এভাবে ১ম বিশ্বযুদ্ধ আল-সৌদ পরিবারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে। কেননা ব্রিটিশদের লেজুরবৃত্তির ক্ষেত্রেতাদের প্রতিপক্ষ হুসাইন পরিবার এগিয়ে যায় এবং যুদ্ধ শেষে হুসাইন ও তার দুই ছেলে মিলে তিন দেশের রাজত্বপায়। তবে নজদ (রিয়াদ ও তদসংলগ্ন অঞ্চল)-এর শাসক সৌদিরাই থেকে যায়।
দারিন চুক্তির আওতায় আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও মাসে ৫,০০০ পাউন্ডভাতা (দালালির পুরস্কার) পেতে থাকে।
যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে ১ম বিশ্বযুদ্ধের উদ্বৃত্ত বিপুল গোলাবারুদ দিয়ে দেয়। ওই ব্রিটিশ অস্ত্রও গোলাবারুদের সম্ভার নিয়ে সৌদিরা ক্রমধ্বংসমান উসমানিয়া খিলাফতের অনুগত রাশিদীদের ওপর দক্ষিণ-পশ্চিম আরব অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে। ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত লড়ে রাশিদীরা শেষ পর্যন্তসৌদিদের হাতে পুরোপুরি পরাজিত হয়। ফলে আরবে আল-সৌদ পরিবার নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েওঠে। ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত Percy Cox-এর মধ্যস্থতায় ১৯২২ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিতUqair Protocol-এর আওতায় ওই বিশাল অঞ্চলে সৌদি রাজত্ব স্বীকৃতি লাভ করে।[7]
এ-সময় পর্যন্ত আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কখনোই ব্রিটিশ অনুগত হেজাজের শাসক হুসাইনের সাথে সংঘাতেজড়ায়নি।
১৯২৪ সালের ৩ মার্চ আরেক ব্রিটিশ দালাল মুস্তাফা কামাল পাশা তুরস্কে অফিসিয়ালি খিলাফত বিলুপ্ত করে।সারা বিশ্বের মুসলিমদের সাথে মক্কার হুসাইন বিন আলীও মহানবী (সা.) আমল থেকে ১৩০০ বছর পর্যন্তচলমান মুসলিমদের রাষ্ট্র খিলাফতের পতনে ব্যথিত হন। পৃথিবী থেকে খিলাফত মুছে গেছে, এটা হুসাইনেরচেতনায় আঘাত করে। ব্রিটিশদের ক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও ৫ মার্চ হুসাইন নিজেকে মুসলিমদেরখলিফা ঘোষণা করেন।
ব্যস, এ-সুযোগটিই কাজে লাগায় খিলাফতের দীর্ঘদিনের শত্রু আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ। ব্রিটিশরাস্বাভাবিকভাবেই হুসাইনের নিজেকে খলিফা ঘোষণা করা মেনে নেয়নি এবং হেজাজের শাসক হিসেবে হুসাইনের ওপরথেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কালবিলম্ব না করে হেজাজ আক্রমণ করে এবং ১৯২৫ সালের শেষ নাগাদ পুরোহেজাজ দখলে নিয়ে নেয়। ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মক্কা-মদিনা-জেদ্দার গোত্রীয়নেতাদের সমর্থনে নিজেকে হেজাজের “সুলতান” ঘোষণা করে। ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ইবনে সৌদ আগের নজদও বর্তমান হেজাজ মিলিয়ে Kingdom of Nejd and Hejaz ঘোষণা করে। ৪ মাস পর সেই বছরের ২৭ মে জেদ্দাচুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom of Nejd and Hejaz-কে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।[8]
নতুন জেদ্দা চুক্তি, ১৯২৭-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ-সৌদের “Protectorate” স্ট্যাটাসের দারিন চুক্তি, ১৯১৫-এরসমাপ্তি ঘটে।
পরবর্তী ৫ বছর আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে আলাদা রেখেই শাসন করে। অবশেষে ১৯৩২সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবনে সৌদ তার দুই রাজত্বকে একত্রিত করে তার নিজের ও বংশের পদবি অনুসারেদেশের নাম “Kingdom of Saudi Arabia” (আরবি: المملكة العربية السعودية al-Mamlakah al-‘Arabiyyah as-Su‘ūdiyyah) ঘোষণা করে।
এভাবেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উসমানিয়া খিলাফতবিরোধী নীতির প্রকাশ্য সমর্থক হিসেবে, পদে পদেব্রিটিশদের মদদ নিয়ে, দালাল আল-সৌদ পরিবার ১৯৩২ সাল থেকে Kingdom of Saudi Arabia নামেমুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলে রেখে শাসন করে যাচ্ছে।
১. মিশরের মুরসি সরকারের পতনের পর সৌদি সরকারের ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ব্যাপকক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই দালাল রাজপরিবারের ইতিহাস তাই মুসলিম উম্মাহর জেনে রাখাপ্রয়োজন।
২. সৌদ পরিবার মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক উসমানিয়া খিলাফত ভাঙতে ওয়াহাবী মতবাদকেব্যবহার করেছিল। আর সৌদ পরিবার জেনে-বুঝে দালালি করেছে তত্কালীন বিশ্বমোড়ল ও খিলাফতেরশত্রু ব্রিটেনের।
৩. মাজারকেন্দ্রিক শিরকের চর্চা আর কবর জিয়ারত এক কথা নয়। মাজারকেন্দ্রিক শিরকপরিত্যাজ্য, কিন্তু কবর জিয়ারত একটি প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।
৪. এই নোটে বহু বই থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে – তবে তথ্যগুলো এতই ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে, কম-বেশিসব তথ্যই Wikipedia-য় আছে। এমন কি, সৌদি দূতাবাসের ওয়েব সাইটেও আছে [অবশ্যই ব্রিটিশদেরদালালির বিষয়টি বাদ দিয়ে][9]
৫. যারা সৌদি আরবের ইতিহাস সামগ্রিকভাবে একটি বই থেকেই জানতে চান, তারা Cambridge University Press থেকে ২০০২ সালে প্রকাশিত Madawi al-Rasheed-এর লেখা A History of Saudi Arabia বইটি পড়তে পারেন।
৬. প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সিন্দি রচিত ২২ পৃষ্ঠার নিবন্ধ/বুকলেট “The Direct Instruments of Western Control over the Arabs: The Shining Example of the House of Saud” এ-বিষয়ে একটি অনবদ্য রচনা।
তথ্যসূত্র
6. Jump up↑ Abdullah Mohammad Sindi, “The Direct Instruments of Western Control over the Arabs: The Shining Example of the House of Saud”
No comments:
Post a Comment