**মুনাফিক মুয়াবীয়া: কিছু দলীল এবং অপ্রীতিকর সত্য**
* অপ্রীতিকর সত্য :
কাফেরদের অনেক লান্ঞ্ছনার পরেও নবীজি নিজের মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করতে চাননি|কিন্তু যখন নিজের প্রাননাশের পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন তখন তিনি আল্লাহর অনুমতি নিয়ে মদিনাতে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন|রাতেরবেলা হযরত আলীকে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গোপনে হযরত আবুবকর রা . কে নিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হন|ইতিমধ্যে কাফিররা তা টের পেয়ে যায় এবং নবীজি এবং আবুবকর রা. কে ধরার জন্য একটি অনুসন্ধানী দল পাঠায়|এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়ালিদ ইবনে উতবাহ (মুয়াবিয়ার মামা), মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এবং মুয়াবিয়ার আরও দুই আপন বড় ভাই|এই সময় নবীজি এবং হযরত আবুবকর রা . 'ঘার আল থাউর' (cave of bull) নামের গুহায় আত্মোগোপন করে নিজেদের সুরক্ষিত রাখেন|মক্কা বিজয়ের আগে এইরকম কার্যকলাপ ছিল মুয়াবিয়া, তার পিতা আবু সুফিয়ান এবং মাতা হিন্দার(রাসূলকরিমের চাচা হযরত হামযা রা: এর কলিজা ভক্ষণকারীনি)|মক্কা বিজয়ের পর স্বার্থের কারণে এবং চাপে পরে তারা ইসলাম গ্রহন করে|
*সূত্র: এনসাইক্লোপেডিয়া অফ ইসলাম( pre islamic arab peninsula)/ উইকিপিডিয়া(মুয়াবিয়া অধ্যায়, pre islamic makka)
*কোরআন কি বলে:
নবীজিকে যারা স্বচক্ষে দেখেছে তারা সকলেই যদি সাহাবী হয়ে থাকেন তবে আবু লাহাব /জেহেলও সাহাবী হিসেবে গন্য হওয়ার অধিকার রাখে ! তাহলে মুয়াবিয়া সহ ঐ সময়ের সকল মক্কা এবং মদীনাবাসীও সাহাবী !! কখনোই নয়;এমন ভ্রান্ত একটা ধারণা আমাদের শিখিয়েছে কিছু কুলাঙার আলেম সম্প্রদায়; অথচ কারা সাহাবী হিসেবে গন্য হবেন তা কোরআনেই বলা আছে|কেবল মাত্র প্রথম দিকের মুহাজির এবং আনসাররা সাহাবীর মর্যাদা পাবেন,
কোরআন বলে~
"ওয়াসসা-বিকুনাল আউওয়ালুনা মিনাল মুহা-জিরিনা ওয়াল আনস্বা-রি ওয়াল্লাযীনাত্তাবা'ঊহুম বিইহসা-নির রাদিওয়াল্লা-হু আনহুম ওয়া-রাদু আনহু"
"মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম দিকের,যারা আন্তরিকতার সাথে অনুসরণ করেছে তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট (রাদিওয়াল্লা) এবং তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট" (সূরাহ-তওবা;100)|
সূরাহ তওবাহ : আয়াত ১০০
وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ
اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُم جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।
The vanguard (of Islam)- the first of those who forsook (their homes) and of those who gave them aid, and (also) those who follow them in (all) good deeds,- well- pleased is Allah with them, as are they with Him: for them hath He prepared gardens under which rivers flow, to dwell therein for ever: that is the supreme felicity.
মূলত নবীজির বহুদিনের পরীক্ষিত সাথিরাই প্রথম দিকে হিজরত করেছিলেন| মদীনাতে তাদের যারা আশ্রয় দিয়েছিল সেসব আনসাররা তাদের সব উতসর্গ করেছিল|সুতরাং তাদের মর্যাদা অনেক বেশি| আর মক্কা বিজয়ের পরে যারা মুসলমান হয়েছে তাদের মর্যাদা কখনোই এক সমান হতে পারে না,বরং তাদের মর্যাদা অনেক কম|
কোরআন বলে ~
"লা ইয়াসতাওয়ী মিনকুম মান আনফাক্বা মিন ক্বাবলিল ফাতহি ওয়া কাতালা;উলা ইকা আজামু দারাজাতাম মিনাল লাযীনা আনফাকু মিম বাদু ওয়া কাতালু"
"তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে সে সমান নয় তাদের যারা বিজয়ের পরে ব্যয় এবং যুদ্ধ করেছে বরং পদ মর্যাদায় পূর্বের তারা অধিক শ্রেষ্ঠ" (সূরাহ-হাদীদ:10)|সূরাহ হাদীদ : আয়াত ১০
وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যদা বড় তাদের অপেক্ষা, যার পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
And what cause have ye why ye should not spend in the cause of Allah.- For to Allah belongs the heritage of the heavens and the earth. Not equal among you are those who spent (freely) and fought, before the Victory, (with those who did so later). Those are higher in rank than those who spent (freely) and fought afterwards. But to all has Allah promised a goodly (reward). And Allah is well acquainted with all that ye do.
মুয়াবিয়া হিজরত করেনি এবং মক্কা বিজয়ের পরে সে মুসলমান হয়েছে অতএব তাকে সাহাবী বলার প্রশ্নই আসেনা|যারা এসব জেনেও মুয়াবিয়াকে সাহাবী মানে তারা নির্দ্বিধায় পথভ্রষ্ট||
*কিছু দলিল:
মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও খেলাফত উচ্ছেদঃ
ক্ষমতা মুয়াবিয়ার হস্তগত হলে ইসলামী খেলাফত এর অবসান ঘটে এবং রাজতন্ত্রের সুত্রপাত ঘটে। মুয়াবিয়ার বায়াত এর পর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস মুয়াবিয়ার উদ্দেশে বলেন- হে রাজা আপনার প্রতি সালাম। (ইবনুল আসির ৩য় খণ্ড) মুয়াবিয়া নিজেও বলেছেন আমি মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজা। (আলবিদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড) হাফেজ ইবনে আসীর বলেন-মুয়াবিয়া কে খলিফা না বলে রাজা বলা সুন্নত। কারন মহানবী সাঃ বলেন আমার পর ত্রিশ বছর খেলাফত থাকবে অতঃপর বাদশাহির আগমন ঘটবে। হিজরি ৪১ সালে ইমাম হোসেন আঃ এর খেলাফত ত্যাগের মাধ্যমে সে মেয়াদ পূর্ণ হয়। ( আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড) মুয়াবিয়াকে ইমাম হাসান এর হত্যাকারী উল্লেখ করে আল্লামা আব্দুর রহমান জামি রাঃ তার বিখ্যাত কিতাব শাওয়াহেদূন নবুয়ত কিতাব এ লিখেন –হযরত ইমাম হাসান আঃ কে মুয়াবিয়ার আদেশেই তার স্ত্রীর মাধ্যমে বিষ দেয়া হয়েছিল।
*বিশিষ্ট সাহাবা হাজর ইবনে আদি রাঃ কে জীবিত দাফনঃ
মুয়াবিয়ার নির্দেশে ৭০ হাজার এর অধিক মসজিদ এ যখন রাসূলকরিম, মওলা আলী আঃ ও তার পবিত্র বংশধরদের গালিগালাজ ও অভিসম্পত দেয়া হচ্ছিল তখন হযরত হাজর ইবনে আদি কুরআন ও হাদিস থেকে শেরে খোদা মওলা আলীর শানে বর্ণিত তা পাঠ করতে লাগলেন। অতঃপর মুয়াবিয়ার নির্দেশে হাজর বিন আদি রাঃ ও তার সাত জন সঙ্গিকে হত্যা করা হয়অত্যন্ত নির্মম ভাবে। মুয়াবিয়ার নির্দেশে তাদের কে জীবিত মাটিতে পুতে মারা হয় যাতে কেহ মুয়াবিয়ার আদেশ অমান্য করার সাহস না পান।( এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরন তাবারী ৪র্থ খন্ড,ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড,আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খন্দ,ইবনে খালদুন ৩য় খণ্ড) এই নির্মম হত্যা কাণ্ডের পর আবুল আওলিয়া হযরত হাসান বসরি রাঃ অভিমত প্রকাশ করেন যে, এ অহেতুক হত্যাকাণ্ডের কারনে মুয়াবিয়ার নিষ্কৃতি নেই। ( ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ৮ম খণ্ড) এই ঘটনা থেকে বিরত থাকার জন্য হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ আগেই পত্রের মাধ্যমে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু মুয়াবিয়া হযরত আয়েশার এই কথা শুনেন নি। পরে হযরত আয়েশা রাঃ মুয়াবিয়ার সাক্ষাতে আসলে বলেন “–হে মুয়াবিয়া তুমি হাজর কে হত্যা করতে গিয়ে আল্লাহকে একটুকুও ভয় করলে না?” (আল ইস্তিয়াব ১ম খণ্ড, তাবারী ৪র্থ খণ্ড) এই সব মুনাফিক হত্যাকারী দের সম্পর্কে আল্লাহ্ কুরআন এ বলেন-
“কোন মুসলমান কে যে স্বেচ্ছায় হত্যা করবে তার শাস্তি দোজখে এবং সেথায় সে চিরস্থায়ী হবে, তার উপর আল্লাহর লানত” (সুরা নেছা ৯৩) |
*বায়তুল মালের লঙ্ঘন:
বায়তুল মাল হচ্ছে খলিফা বা সরকারের নিকট আল্লাহ্ ও জনগনের আমানত। অথচ মুয়াবিয়া রাজা হবার পর বায়তুল মাল কে নিজের মালে পরিনত করেছেন। বায়তুল মালে জনগনের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। তিনি তার ইচ্ছা মোতাবেক ভোগ ও বণ্টন করতেন। বায়তুল মালের হিসাব চাওয়ার অধিকার কারো থাকল না। জনগণ কে নির্ভর করতে হত বাদশাহর দান দাক্ষিণ্যর উপর। (ইবনুল আসীর ৪র্থ খণ্ড,আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৯ম খণ্ড) নও মুসলিম দের উপর জিজিয়া করঃ ইসলামের বিস্তার এর ফলে মুসলমান বেড়ে যায় ফলে জিজিয়া কর কমে যায়। তাই বায়তুল মালএর আয় হ্রাস পায় যা মুয়াবিয়ার ভোগ বিলাস এ ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। তাই মুয়াবিয়া নও মুসলিম দের মধ্যে জিজিয়া কর আরোপ করা হয়। যা সম্পূর্ণ কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী। সাধারন মানুষের ইসলাম গ্রহন এর চাইতে ও মুয়াবিয়ার ধন সম্পদ বৃদ্ধি করাই ছিল তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (ইবনুল আসীর ৪র্থ খণ্ড) মুয়াবিয়া কুরআন এর আদেশ লঙ্ঘন করে গনিমত এর মালের মূল্যবান সোনা চাঁদি নিজেই রেখে দিতেন। (আত তাবারী, আল ইস্তিয়াব ১ম খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড)|||
No comments:
Post a Comment