Saturday, June 25, 2016

♥হযরত আলী(আঃ) ইসলামের দাওয়াতের কাজ

হযরত আলী(আঃ) ইসলামের দাওয়াতের কাজ সেরে নিজের বাড়ীর দিকে আসতেছেন হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন রাস্তার ডানপাশে একটা লোক পড়ে আছে।হযরত আলী(আঃ) লোকটির কাছে গিয়ে সালাম দিলেন ভাবলেন বেঁচে থাকলে সালামের উত্তর দিবে। লোকটি মাথা ঘুরিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল এই আমাকে সালাম দিলে কেন??আলী (আঃ) বলেন তুমি রাস্তার ধরে পড়ে আছ তাই সালাম দিলাম! লোকটি বলল তবুওও সালাম দিবে কেন তুমি কি সালামের উত্তর বোঝ???আলী(আঃ) চমকে গেলেন এবং বললেন আমি আপনার কাছেই বুঝতে চাই। এবার ফকির বলতেছে যার প্রতি সালাম দাও তার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হওয়া।কিন্তু আমার পেটে দুইদিন হয় কিছু যায়নি ক্ষুদার জ্বালায় পেটে আমার আগুন জ্বলতেছে ওই সালাম দেয়ার পুর্বে আমাকে কিছু খাবার দিতে তাহলে আমার পেট ঠান্ডা হত এবংসালামের দোয়া টা আমার কাজে লাগতো কিন্তু আমার পেটেই যখন ক্ষুদা তাই এই সালামের আমার কোন প্রয়োজন নেই।হযরত আলী(আঃ) চমকে গেলেন এখন ভাবলেন আল্লাহ বলেছেন """রাস্তার পাশে যদি কোন ভিক্ষুক তোমাদের নিকট খাবার চায় তাকে যদি খাবার নাও দিতে পার তাদের সাথে খারাপ ব্যববহার করো না।""" এবার আলী(আঃ) ফকিরকে বললেন ভাই আমি জানি না তোমার পেটে ক্ষুদা, আমি দাওয়াতের কাজ করে বাড়িতে যাচ্ছি আমার ব্যাগেও কোন খাবার নেই কিছু সামান্য দুরে আমার বাড়ি তুমি আমার সাথে আসো তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমাকে খেতে দিতে পারবো।এবার ফকির বলে ভাই আমি তোমাকে চিনিনা তারপর ও তুমি যেহেতু বললে তাহলে আমাকে কাধে করে নিতে হবে কারন তাকিয়ে দেখো ক্ষুদার কারনে আমার শরীরটা এত দুর্বল হেটে তোমার বাড়িতে যাওয়া সম্ভব না।আলী(আঃ) ভাবলেন আল্লাহ বলেছেন """ ভিক্ষুকে তোমরা ঘৃনা করোনা, তার চাওয়া কে তোমরা ফিরিয়ে দিও না!!! আলী(আঃ) এবার কাঁধে করে ফকিরকে বাড়ির দরজার সামনে নিয়ে আসলেন।বাড়ির সামনে যখন মাটিতে রাখতে যান হঠাৎ আলীর মনে পড়ে যায় আল্লাহ যখন হাসরের ময়দানে বলবেন "" তোমার দরজায় ভিক্ষা করতে গেলাম তুমি কেন ভিক্ষা দিলানা, বান্দা বলবে আল্লাহ আপনি তো ভিক্ষুক হতে পারেন না কবে আপনি আমার দরজায় ভিক্ষা করতে গেছিলেন? আল্লাহ বলবেন বান্দারে কোন ফকির যদি তোমার বাড়িতে ভিক্ষা করতে গেল আমি আল্লাহ ওই ফকিরের সাথে ছিলাম। আলী(আঃ) চিন্তা করলেন ফকিরের সাথেই যদি আল্লাহ থাকে তাহলে তাকে সরাসরি মাটিতে রাখা যাবে না।এবার আলী(আঃ) তার পোটলার ভিরত থেকে একটা পুরাতন কাপড় বের করলেন। এবার কাপড়টা যখন মাটিতে বিছাতে চায় আলী আবার ভাবলেন আল্লাহ বলেছেন -""আল্লাহর পথে যদি কিছু বিলাতে চাও বা দান করতে চাও তবে তোমার মহব্বতের জিনিষটাই বিলিয়ে দাও।"""
এবার আলী(আঃ) তার টোপলা থেকে তার গায়ে দেয়ার একটা চাদর ছিল সেটা বের করলেন চাদরটা কখনওই তিনি মাটিতে বিছান নি আলী(আঃ) ভিক্ষুকের জন্য চাদিরটা মাটিতে বিছিয়ে বসতে দিলেন। তারপর মাওলা আলী (আঃ) বাহির থেকে ঘরের ভিতরের উদ্দেশ্য সালাম দিলেন............!!

আল্লাহর নবী(সঃ) বলেছেন -""তুমি যখন তোমার বাড়ির দরজায় যাবে বা অন্য কোন বান্দার বাড়ির দরজায় যাবে সর্ব প্রথম সালাম দিবে""। আলী(আঃ) যখন সালাম দিলেন তখন মা ফাতেমা ছিলেন অন্দর মহলে(পর্দামহল)।আল্লাহর নবী(সঃ) বলেছেন কোন স্বামী যদি দরজায় ডাক দেয় এবং তার বউ যদি কলিজার মহব্বত নিয়া স্বামীর জন্য দরজা খুলে দেয় তাহলে ওই বউটা শুধু স্বামীর জন্যই দরজা খুলল না সে যেন নিজের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিল।হযরত আলীর(আঃ) এর সালাম যখন মা ফাতেমার কানে পৌছেছে কলিজার মহব্বতে দৌড়ে আসতেছে দরজা খুলে দিতে কিন্তু একটু আসার পর মা ফাতেমা ঘূর্নি খেয়ে পরে যায়। হযরত আলী(আঃ) দরজার বাহিরে চমকে উঠেছেন কারন রাসুল(সঃ) বলেছেন মুমিন বান্দা শুধু চোখেই নয় তারা আর একটা চোখে দেখতে পায় তা হল আল্লাহর নুরের সাহায্যে।এবার আলী(আঃ) নিজেই দরজা খুলে বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখলেন ফাতেমা পড়ে আছে।হযতর আলী(আঃ) আস্তে করে হাঁটুগেড়ে বসে ফাতেমার কপালে হাত দিয়ে বললেন হাসান হুসাইনের মা এভাবে তুমি পড়ছ কেন?? মা ফাতেমা মুচকি হাসি দিয়ে বলতেছে স্বামী গো কলিজার মহব্বতে দরজা খুলতে চাইলাম কিন্তু তিন দিন ধরে না খাওয়ার কারনে আমার দেহ টা এত দুর্বল হয়ে গেছে আমি ঘূর্নি খেয়ে পড়ে গেছি, আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ স্বামীর জন্য দরজা খুলতে পারলাম না।আলী(আঃ) ছোট বাচ্চার মত কাঁদে আর বলে ফাতেমা রে কি সতীসাধ্য নারী আমি পাইছি যে তিন দিন না খাওয়া তারপরও স্বামীর মহব্বতে দরজা খুলতে চায়!!! আমি কোন দিন তোমাকে শান্তি দিতে পারলাম না। মা ফাতেমা বলে স্বামীগো আমার না খাওয়ার কথা শুনে আপনি মনে কষ্ট নিয়েন না আপনি কি জানেন আমাদের কলিজার টুকরা হাসান আর হুসাইন দুইদিন হল কোন কিছুই খায়নি না খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছে আমি মা হয়েও সন্তানদের কিছু দিতে পারিনি। হযরত আলী(আঃ) চমকে গেলেন বিবি তার তিন দিনের না খাওয়া, সন্তানেরা দুই দিনের না খাওয়া এমন সময় দরজা বসে আছে ফকির.......!!
হযতর আলী(আঃ) চিন্তায় পড়ে গেলেন বিবি তার তিন দিনের না খাওয়া, সন্তানরা দুই দিনের এমন সময় দরজায় নিয়ে আসলাম ফকির!!যে ফকিরকে সালাম দিলে বলে সালামের দরকার নেই খেতে দিলে শান্তি পাই তার কাছে খালি হাতে কিভাবে যাই!!
আল্লাহর কুরআন বলে তোমরা পেরেশান হয়ো না যদি আল্লাহর কাছে কিছু পেতে চাও তাহলে ধৈর্য আর নামাজের ভিতর দিয়ে যাও,নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যকারীর সাথে আছেন।আলী(আঃ) এবার জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন, নামাজ শেষে দুই হাত বাড়িয়ে দরদী আল্লাহ তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই, মাবুদ গো রাস্তার ফকিরকে কাধে এনে দরজায় বসিয়ে রাখছি কিন্তু বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখি আমার চেয়ে বড় ফকির আর কেউ নাই।আমার বিবি ও সন্তানেরা খায় নি এমন সময় আমি খালি হাতে ফকিরের কাছে কিভাবে যাই তাই দুইহাত বাড়িয়ে ফকিরের কাঁদি।তুমি যদি এই আলী ফকিরকে কিছু দাও তাহলে আমিও রাস্তার ফকিরকে কিছু দিতে পারি।আল্লাহ তুমি ই তো বলেছ ফকিরকে ফিরানো যাবেনা তাই আমি ফকিরকে দরজায় বসিয়ে রাখছি কিন্তু তুমি এই আলী ফকিরকে ফিরিয়ে দাও তবে বুঝা যাবে তুমি বক্তা ভাল কিন্তু আমল ভাল না। এইভাবে আলী(আঃ) কাঁদে আর ফরিয়াদ করতেছে তখন আল্লাহ দরীয়ায় টান লাগছে বেহেশত থেকে এক পোটলা খাবার আলী(আঃ) এর কাছে এসে পরল(সুবহানআল্লাহ)  এত সুঘ্রানে হাসান হুসাইনের ঘুম ভেঙে যায় কারন খালি পেটে ঘুমও ঠিকমত হয়না।এবার আলী(আঃ) খাবার নিয়ে যখন দরজার কাছে যায় হাসান হুসাইন দৌড়ে এসে হাসান হাত বারিয়ে আর হুসাইন বাবার পা ধরে কাঁদে আর বলে মা ভালো না আজ দুদিন ধরে খেতে দেয় না কিন্তু বাবা কত ভাল আমাদের জন্য খাবার এনেছে। এবার আলী(আঃ) দু চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো এত ছোট বাচ্চারা দুইদিন না খেয়ে, শুকনা মুখে বারবার খাবার চায়, আলী(আঃ) একবার পোটালার দিকে আবার সন্তানের দিকে তাকায়। দুনিয়ার এমন কোন বাবা আছে সন্তানের শুকনা মুখের সামনে থেকে খাবার নিয়ে দরজায় ফকিরকে দিবে। আল্লাহর কুরআন বলে ""সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দরজার ফকিরকে ভুলে যাসনা""।আলী(আঃ) এবার দরজার ফকিরকে খাবার দিতে চায় হুসাইন এত জোরে পা ঝাপটে ধরেছে যে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই আর হাসান হাত বাড়িয়ে কাঁদেতেছে!!! আলী জোরে পা হেচকা টান দিয়েছে হুসাইন আছাড় খাওয়ার মত পড়ে আছে হাসান দৌড়ে বাবার কাছ থেকে একটু দুরে গিয়ে দাড়িয়েছে কারন হুসাইনকেই এত জোরে হেচকা টান দিছে আমাকে যদি চড় মারে আমি তো বাঁচবোই না।হুসাইনকে ঠেকনার মত রেখে আলী(আঃ) দরজার কাছে যায় হাসান দৌড়ে এসে হুসাইনের মাথাটা উরুর উপর নিয়া কাঁদে আর ও হুসাইন ভাই তুমি না বললে বাবা ভাল আর মা ভাল না কিন্তু বাবার হাতে খাবার পোটলা থাকার পরও বাবা খাবার দিল না।হুসাইন এবার ডাক দিয়া বলে ও বাবা তুমি আমাকে মারছ বাবা তুমি আমাকে চিন আলী(আঃ) দুইটা পা থরথর করে কাপতেছে কারন আলী(আঃ) জানে হুসাইন কে!!!
আলী(আঃ) এর সামনে অনেক ঘটনাই চলে আসতেছে।আল্লাহর রাসুল(সঃ) ই বলেছেন হুসাইন আমার চেয়ে অনেক বড়।হযরত আলী (আঃ) কি করবে তারপরও হুসাইনের দিকে না তাকিয়ে যখন কাঁদতে কাঁদতে দরজা খুলে ফকিরের কাছে যায়,দেখতে পাইলো ফকির বাহিরে দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসতেছে। হযরত আলী (আঃ) রাগ করে বলতেছে-এই ফকির রাস্তার মাঝে পড়েছিলে তোমারে কাধে করে এনে দামী চাদরের মধ্য বসিয়ে রাখছি, যেই ফকির হাটতে পারেনা নরতে পারেনা কাধে করে বাড়িতে নিয়ে আসলাম সেই ফকির দাড়িয়ে মুচকি হাসতেছো তোমার কি সরম নাই? ফকির উত্তর দিল """ওয়ালাইকুমুসসালাম"" হযরত আলী(আঃ) চমকে গেলেন ফকিরকে যখন সালাম দিলাম তখন ফকির রাগ করল সালামের উত্তর দিলনা এখন আমি যখন রাগ করলাম এখন সালামের উত্তর দাও তুমি কেমন ফকির গো এর রহস্য কি?? ফকির বলে আলীরে আমি দুনিয়ার কোন ফকির না আমি হলাম আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা।হে আলী তুমি এমন একজন মহান ব্যক্তি তোমার দুই সন্তান জান্নাতের সরদার হবে,তুমি এমন এক মহান ব্যক্তি যার স্ত্রী জান্নাতের নারীদের নেত্রী হবে, তুমি এমন এক মহান ব্যক্তি তোমার ডিগ্রি ""আসহাদুল্লাহ হিল গালীব"" তুমি এক আলী হয়ে এত ডিগ্রি কিভাবে পাও!! আল্লাহ বলেছে ফেরেস্তারারে আমি আলীকে নিজ থেকে কোন ডিগ্রি দেইনি, সব আমার আলী অর্জন করেছে।হে আলী তাই মানুষ ফকির সেজে পরিক্ষা শুরু করে দিলাম... আলীরে তুমি আল্লাহর কুরআন কে এত বিশ্বাস আর ভালবাস যে রাস্তার ফকিরকে কাধে করে বাড়িতে নিয়ে আসো,নিজের নতুন চাদর বিছিয়ে বসতে দিছ,বিবি তিন দিনের না খাওয়া আর সন্তানরা দুই দিনের না খাওয়া তাদের মুখের সামনে থেকে খাবার এনে ফকিরকে দিছ আলীরে সবকিছুর চাইতে আল্লাহর কুরআনকে দাম দিবার কারনে এই মুহুর্তে আল্লাহ তোমার জন্য একটা ডিগ্রি নাজিল করেছেন """আলী কারামাল্লাহ্ আযয়াহু""(সুবাহানআল্লাহ)
রাসুল পাক( সঃ) বলেছেন নবী মুসা(আঃ) শুধু নিজে কারামাল্লাহ্ হইছে কিন্তু তার উম্মতেরা কেউ হইতে পারেনি কিন্তু আমার উম্মতের ভিতর আলীর মত বান্দাদের কারামাল্লহ্ র টুপি পরিয়ে হযরত মুসা(আঃ) এর সাথে আল্লাহ জান্নাত দিয়া দিবেন।
বিঃদ্রঃ আল্লাহ ও তার প্রভু মুহাম্মদ(সঃ) এর ভালবাসায় কোন সজনপ্রিতী চলে না!!! নিজেকে অস্বীকার করেই আল্লাহ ও মুহাম্মাদ(সঃ)কে পাইতে হয়।

No comments:

Post a Comment