Friday, December 4, 2015

মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শরীয়ত সম্মতঃ

**মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শরীয়ত সম্মতঃ
ইব্‌নে তাইমেয়া নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম)এর রওজা মোবরক জিয়ারত করার উদ্দেশ্য সফর করাকে শিরক বলে অভিহিত করেছে। সে ছিল খারেজি সমপ্রদায় ভূক্ত। যুল খোয়াইছরা নামক জনৈক মুনাফিকের বংশে তার জন্ম। তার অনুসারী নজদের কুখ্যাত মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী ও ভারতের মুরতাদ মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী এবং তাদের অনুসারীগণ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে হারাম বলে মনে করেন। এরা ভ্রান- ও গোমরা অর্থাৎ পথভ্রষ্ট। আউলিয়া-এ কেরামের মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শরীয়ত মতে জায়েজ ও সুন্নাত। জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর বলতে আমরা বুঝি জীবিত ও পরলোক গমন করেছেন এবং নবী,রাসূল,অলী,পিতা-মাতা অপরাপর মুসলমান নর-নারীর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করাকে বুঝায়। (ওহাবী মজহাব জাওয়াহিরুল বিহার) সফরের উদ্দেশ্যে ও উপলক্ষ মোতাবেক ফসফরের হুকুম হয়ে থাকে। সফর পাঁচ প্রকার। যথাঃ ফরজ,ওয়াজিব,সুন্নাত,মোবাহ,হারাম। ১। উপলক্ষ যদি ওয়াজিব হয়,তাহলে এর জন্যে সফর করাও ওয়াজিব। যেমন। মান্নতি হজ্ব ওয়াজিব,সুতরাং এর জন্যে সফর করাও ওয়াজিব।
৩। উপলক্ষ যদি সুন্নাত হয়,তাহলে এর জন্যে সফর করাও সুন্নাত। ৪। উপলক্ষ যদি মোবাহ বা জায়েজ হয়,তাহলে এর জন্যে সফর করাও মোবহ এবং জায়েজ। যেমন-ব্যবসা বাণিজ্য ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে সাক্ষাতের জন্যে সফর করা।
৫। উপলক্ষ যদি হারাম ও নাজায়েজ হয়,তাহরে এর জন্যে সফর করাও হারাম ও নাজায়েজ। যেমন- চুরি করার জন্যে সফর করাও হারাম। যেহেতু চুরি করা অবৈধ ও মন্দ কাজ যেমন- উপরোক্ত শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ওরশ শরীফের জন্যে সফর করা সুন্নাত। কেননা ওরশ শরীফে অংশ গ্রহণ করা জিয়ারতের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। কাজেই মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা কুরআন শরীফ. হাদীস শরীফ ও ফকিহসমূহের বিধি সম্মত এবং রাসূল পাক (দঃ) ও আউলিয়া-এ-কামেলিনদের সুন্নাত। সুতরাং এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে পাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন- অর্থাৎ জলিলুল কদর পয়গাম্বর হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম) স্বীয় খাদেম ইউশা ইব্‌নে নূনকে সঙ্গে নিয়ে রোম ও পারস্য সাগরের মিলনায়তনে হযরত খিজীর (আলাইহিস সালাম)র নিকট হতে মরেফাতের বিদ্যা শিক্ষার জন্যে সাক্ষাত করে ছিলেন। সূরা কাহাফ,পারা-১৫,আয়াত-৬০) উল্লেখ থাকে,হযরত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)র নিকট এ সাক্ষাতের নির্দেশ মূলত মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকেই ছিল। তাই উক্ত ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়,পূণ্যাত্মাদের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া স্বয়ং আল্লাহরই নির্দেশ। আউলিয়া এ কামেলিন এবং পূণ্যাত্মাদের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্য সফল প্রসঙ্গে রাসূল পাক (দঃ) র বিশিষ্ট সাহাবী ও একনিষ্ঠ খাদেম হযরত আনাস বিন মালেক (রাদ্বিয়াল্লঅহু আনহু) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন- দোজাহানের সরদার নবী করীম (দঃ) প্রতি বৎসরের প্রারম্ভে গমন করতেন। সেখানে তশরীফ নিয়ে তাদেরকে সম্বোধন করে বলতেন,হে শহীদগণ! তোমরা দৈর্য ধারণ করছ বিধায় তোমাদের ওপর শানিত্ম বর্ষিত হোক,তোমাদের জন্য পরকালের বাসস’ান কতই উত্তম। ইসলামের চার খলিফা ও অনুরূপ ভাবেই জিয়ারত করতেন। (তাফসীল কবির-৫ম খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা,তাফসীর দোররে মানসুর ওয়াউল ওফা ২য় খন্ড ১১২ পৃষ্ঠা,ফাতেয়া-এ-শামী-১ম খন্ড ৬৬৫ পৃষ্ঠঅ দ্রষ্টব্য)। উল্লেখিত কোরান ও হাদীস শরীফ দ্বারা মাজার জিয়ারতের জন্যে সফর করা,প্রতি বৎসর ওরশ শরীফ পালন করা স্বয়ং শরীয়তের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (দঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাত হিসেবে উজ্জ্বল দৃষ্টান- ও প্রমাণ বহন করছে। বিশ্ব বরেণ্য হানাফী মজহাবের ফতোয়ার কিতাব দোররুল মোখতার নামক গ্রনে’র ভূমিকায় উল্লেখ আছে যে,শাফেয়ী মজহাবের প্রবর্তক ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) স্বীয় জন্মভূমি ফিলিসি-ন হতে বাগদাদের কুফা শহরে সফর করে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)র মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করে আসতেন ইমাম শাফেয়ী বলতেন;অর্থাৎ আমি ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) হতে বরকত গ্রহণ করে থাকি এবং তার মাজার শরীফে আসি। আমি কোন সমস্যার সম্মুখীণ হলে তার মাজারের পার্শ্বে দুরাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ তালার দরবারে তার উসিলায় সমস্যার সমধান প্রার্থনা করলে তা অতি সত্তর ফল পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে,ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) এর ভাষ্য মতে মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা অলী আল্লাহদের মাজার হতে বরকত গ্রহণ করা ও পার্থিব জীবনের সমস্যার সমাধান চাওয়া এবং এতে ফল প্রসূ হওয়া দিবা লোকের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সুতরাং যারা এ পূর্ণময় কর্মকান্ডকে শিরক,বিদায়াত ও হারাম বলে আখ্যায়িত করে নিঃসন্দেহে তারা নবী অলীর প্রকাশ্য শত্রু। আল্লাহ তাদের সকলকেই এ সমস- পথ হারা পথভ্রষ্ট দুশমনদের খপ্পর থেকে দ্বীন ও ঈমান হেফাজত করুন। আমিন।

1 comment: