**সূফীবাদ,বাউলবাদ ও মানবতত্ত্ব ঃ
সূফীবাদ অনুসারে,প্রেমই মানুষের মূল পরিচয়,প্রেমই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানুষ আল্লাহর অননত্ম প্রেমের প্রতীক,আর এই প্রেমের মধ্য দিযেই বান্দার পক্ষে খোদার দিদার লঅভ সম্ভব। সম্ভব এজন্য যে,খোদা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার নিজের আদলে এবং মানুষের অনত্মরাত্মায় স’াপন করেছেন তার জাত ও সিফাত। তার মানে খোদা দূরে নয়;মানুষের মধ্যেই আছেন। অসীম কোধা ও সসীম বান্দার মধ্যে যে দূরত্ব তাই সূফীকে চালিত করে কোদার স্বরূপ উপলবিদ্ধ করার পর্যায়ে। এ পর্যায়ে (ফানা ও বাকা) উপনীত হয়েই মনসুর আল হাল্লাজ ঘোষনা করে দিলেন “আনাল হক্ক”। সূফীবাদ যেমন,বাউলবাদও তেমনি জোর দেয় প্রেমের ওপর। এই প্রেম দেহোত্তীর্ণ ও অতীন্দ্রিয় বটে;কিন’এর সূত্রপাত মানবদেহ থেকেই খোদার পীরিত (ঐশীপ্রেম) উদ্ভুত ও বিকশিত হয় ভাবের পীরিত (দৈহিক প্রেম) থেকেই। বাউল সম্রাট লালন মাঞ (১৭৭৪-১৮৯০) এর মতে,মানুষের এসেন্স বা অনত্মঃসার তার দেহেই নিহিত,এবং মানবাত্মা ও পরমানত্মার মধ্যে কোনো ভেদ নেই। খোদার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে মানুষের দেহেই খুজে পাওয়া যায় পরমস্রস্টাকে কোধাকে,দেহ মন অনত্মরাত্মাকে জরীপ করেই এবং দেহসাধনার মধ্য দিয়েই অনুসন্ধান করতে হয় বিশ্ববিধাতাকে। এ প্রসঙ্গে লালন শাহের বিখ্যাত গানঃ খাচার ভিথর অচিন পাখি কেমনে আসে যায় ধরতে পারলে মন বেড়ী দিতাম তাহার পায়। আঠ কুঠরী নয় দরজা আটা মধ্যে মধ্যে ঝড়কা কাটা,তাহার উপর আছে সদর কোঠা আয়না মহল তায়। মন তুই রইলি খাচার আশে খাচা যে তোর তৈরী কাচা বাশে কোনদিন খাচা পড়বে খসে লালন কয়,খাচা খুলে সে পাখী কোন খানে পালায়। লালনের এই মতের সঙ্গে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতের সাদৃশ্য দেখা যায়। একটু আগে আমরা দেখেছি প্লেটের মতে জড়দেহ আত্মার পিঞ্চার বা কয়েদখানাস্বরূপ। মৃত্যুতে দেহবিনাশের সঙ্গে আত্মার প্রজ্ঞাংশ মুক্ত হয়ে যায় দেহ থেকে এবং ফিরে যায় স্বর্গীয় আদি নিবাসে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও এ মতের প্রতিধ্বনি শোনা যায়;সীমার মাঝে,অসীম,তুমি বাজাও আপন সুর। আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।বস’ত,সৃষ্টির মধ্যেই নিহিত পরমস্রষ্টার সত্তা;সৃষ্টি ব্যতিরেকে স্রষ্টা ব্যতিরেকে সৃষ্টা মহাশুণ্য ছাড়া আর কিছুই নন। মুসলিম সুফিয়া মানুষকে দেখেছেন আল্লাহর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এবংয় বলেছেন মানুষ আল্লাহ থেকে দুরে থাকে শুধু ততক্ষণই,যতক্ষণ তার দৃষ্টি আচ্ছন্ন থাকে অজ্ঞতার অভিশাপ দ্বারা। অজ্ঞার এই আবরণ উম্মোচন করে মানুষ যখনই প্রবেশ করে জ্ঞানের আলোকে,তখনই বিলীন হয়ে যায় সসীম মানুষ ও অসীম স্রষ্টার যাবতীয় ভেদাভেদ এবং তখনই মানুষ নিজেকে শনাক্ত করে পরমস্রষ্টা আল্লাহর অবিচ্ছদ্য অংশ হিসেবে। একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় ফকির লালন শাহের ধ্যান-ধারণা ও কর্মসাধনায়। এ প্রসঙ্গে তাঁর বাণীঃ ক্ষেপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায়? আপন ঘর না ভুজে বাহিরে খুজে পড়বি ধাধায়। অন্যন্য সূফী ও বাউরদের কাছে যেমন লালন শাহের কাছেও তেমনি ধর্ম-বর্ণ গোত্র নয়,মানুষ ই ছিল প্রধ্ন। চন্ডীদাসের সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। মূলত এই বাণী বিঘোষিত অধিকাংশ লালন গীতিতে। এ ধরনেরই একটি গানঃ এমন মাবন আর কি হবে মন যা কারো ত্বরায় কারো এই ভবে। অননত্ম রূপ সৃষ্টি করলেন সাই শুনি মানবের উত্তম কিছুই নাই,দেব দেবতাগন করে অঅরধন জন্ম নিতে মানবে। এই মানুষে হবে মাধুজ্জ ভজন তাইতো মানুষরূপ গটলৈ নিরঞ্জন। এবার ঠকলে অঅর না দেখি কিনার। অধীন লালন তাই ভাবে। লালন পরবর্তী মরমি কবি ও আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে পাঞ্জু শাহ (১৮৫১-১৯১৪) বিশেষ ভাবে পরিচিত। লালনের মৃত্যুর পর তার ভাবশিষ্য হিসেবে পাঞ্জুশাহ এ অঞ্চলের বাউল সূফি ফকির মহলে বিশেস মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। লালন শাহ যেমন পাঞ্জু শাহ ও তেমনি অসীম পরমসত্তাকে খুজে পেতে চান সসীম মানুষের মধ্যে,পরম প্রেমাস্পদকে শনাক্ত করেন আত্মসত্তার মধ্যে,নির্ভেজাল প্রেম ও সাধন-ভজনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে তার কয়েকটি অনবদ্য উক্তিঃ জগৎ কর্তা পতিত পাবন,এই মানুষে করে বিরাজমান আবার,এই মানুষে সেই মানুষ আছে,সে ঘরের মাঝে ঘর বাধিয়ে কাজল কোঠায় রয়াছে। বৈষ্ণব ও সূফিদের আধ্যাত্মিক সাধনা যেমন পাঞ্জু শাহের সাধনাও তেমনি ছিল প্রেম ভুক্তির সাধনা। দৃষ্টানত্মস্বরূপ,বৈষ্ণব মতে জ্ঞানে নয়,কর্মেও নয়,প্রেমভক্তির মাধ্যমেই কেবল পরমসত্মার সান্নিধ্য অর্জণ সম্ভব। আর এ লক্ষ্য হাসিল করতে হলে ভক্তের উচিত ভগবানের মাধুর্যরূপ প্রত্যক্ষ করা। ভগবানের রূপ সব বস’তে উপসি’ত,আর তাই তার ভারবাসার প্রথম সোপান হিসেবেই ভারবাসতে হবে জগতের সকলকে। পাঞ্জু শাহের অভিমত ও অনুরূপ। তার মতে,জ্ঞানের কথা বলি আর শক্তির কথাই বলি,উভয় দিক থেকেই পরমসত্তা অসীম অপার । ফলে সসীম মানুষের চলতি ইন্দ্রিয় কিংবা সামান্য ভেদবুদ্ধি দিেয় এই অননত্ম অসীম সত্তার নাগাল পাওয়া অসম্ভব। কিন’প্রেমের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেমলীলায় অসীম নিজেই এসে ধরা দেন সসীমকে। পরমস্রষ্টা আল্লাহ তারই সৃষ্ট মানুষের প্রেমাস্পদস্বরূপ;আর এজন্য। তাকে পেতে হয় প্রেমের পথে স্বজ্ঞা বা অপরোক্ষ প্রেমানুভূতির মাধ্যমে এ প্রসঙ্গে পাঞ্জু শাহের বাণীঃ দধূর কর তছবি মালা মন-মালায় ধন মিলে। মনের মানুষ দমে জপে,বসাও হৃদকমলে। বাংলাদেশের লোক কবি ও আধ্যঅত্মিক সাধকদের মধ্যে এরপর যার নাম উল্লেখ্য,তিনি হলেন বৃহত্তম সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের জাতক হাসান রাজা (১৮৫৪-১৯২২)। গ্রাম বাংলার এই অখ্যঅত মনীষীর নাম ও মনীষা প্রথম শিক্ষিত মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মূলত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সৌজন্য ও আশীবাদে। উপলক্ষটা ছিল ১৯২৫ সালে বেনারসে অনুষ্ঠিত ভারতীয় দর্শন কংগ্রেরেসর প্রথম মহাসম্মেলন। ওই সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ যে লিখিত অভিভাষণ পাঠ করেন,তাতে তিনি আনুষ্ঠানিক দর্শন চিনত্মার বাইরেও গ্রাম বাংলায় বাউলবাদ নামে যে তত্ত্বচিনত্মার একটা স্বতন্ত্র লোকজ ধারা প্রচলিত আছে,তার কথা প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেন। উক্ত ভাষনে রবীন্দ্রনাথ ইতিপূর্বে অপরিচিত লোক কবি হাসান রাজার কাব্য সংকলন থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে তার মনীষার প্রশংষার করেন। যাই হোক,লালন ও পাঞ্জু শাহের গানগুলো যেমন হাসান রাজার গানগুলোও তেমনি দার্শনিক তত্ত্ব ও প্রসাদগুণে সমৃদ্ধ;এবং এ দুই পূর্বাচার্যের মতো তিনিও পরমসত্তা ও পরমাত্মার অনুসন্ধানের পাশাপাশি মানবসত্তা অহং আত্মত্ত্ব প্রভৃতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। আমরা জানি বাউল মতে,শেষ বিশ্লেষণে মানবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে কোনো ভেদ নেই যেটুকু ভেদ প্রতীয়মান হয় তা মানুষী অজ্ঞতা বা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে। এ মতেরই চমৎকার প্রতিধ্বনি শুনি হাসান রাজার গানেঃ আপন চিনিলে দেখ খোদা চেনা যায়। হাসান রাজায় আপন চিনিয়ৈ এই গান গায়। কিন’নিজেকে চেনার মাধ্যমে পরমসত্তাকে চেনার এবং তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার লক্ষ্যে অর্জণ সহজ কাজ নয় মোটেই;কারণ পাশ্চাত্য দার্শনিক প্লেটো এবং ফকির লালন শাহসহ অন্যান্য বাউলদের মতো হাসান রাজাও মনে করেন যে,সসীম মানবাত্মা বন্দি হয়ে আছে মানবদেহের পিঞ্জরে এবং এ থেকে মুক্তি পেতে হলে চাই যথার্থ প্রেমানুভুতি,চাই নির্ভেজাল সাধন ভজন। এ প্রসঙ্গে হাসন রাজার আক্ষেপ ঃ- মাটির পিঞ্জিরায় বন্দি হইয়া রে কান্দে হাসান রাজার মন ময়না রে। দেহের বন্ধনমুক্ত হয়ে পরমস্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের যে আকাঙ্খা প্রবলভাবে আন্দোলিত করে সূফি ও বৈষ্ণব মনকে,তা-ও বিশেষভাবে লক্ষণীয় হাসান রাজার গানেঃ আমি যাইমু ও যাইমু আল্লাহর সঙ্গে আল্লাহ বিনা হাসান রাজা কিছু নাহি সঙ্গে। বাউল মতে,মানবাত্মার মধ্যেই রয়েছে পরমাত্মার ঠাই,মানুষের মধ্যেই অনুসৃত আলেক সাই। এর অর্থ দাড়ায় এই যে মানবজীবনের ও মানবজ্ঞানের ভিত্তিতেই ও বিশ্বচরাচরের সবকিছু সত্য। এ মর্মবানীই বিঘোষিত হাসান রাজার গানেঃ মম আখি হইতে পয়দা আসমান জমিন কর্ণতে হইল পয়দা মুসলমানী দ্বীন শরীরে করিল পয়দা শক্ত আর নরম আর পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা ও গরম নাকেতে করিল পয়দা খোশবয় বদবয় আমি হইতে সর্বোৎপত্তি হাসন রাজায় কয়। গানের আপাত অর্থ-বিশ্লেষন থেকে হাসন রাজাকে একজন আতমগত ভাববাদী বলে মনে হতে পারে। ক্তিু প্রকৃতপক্ষে তিনি তা নন। কারণ,তার মতে আত্মসত্তা পরমসত্তার আধার হলেও পরমসত্তার ব্যাপ্তি ও উপসি’ত আত্মসত্তার মদ্যেই সীমিত নয় তিনি পর বলছেন- মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে।
এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজ মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে। এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজ মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে। এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজ মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে। এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজভান্ডারী,তথা আধ্যাত্মিক মানবিক সাধনার সব স্রোতধারা।
সূফীবাদ অনুসারে,প্রেমই মানুষের মূল পরিচয়,প্রেমই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানুষ আল্লাহর অননত্ম প্রেমের প্রতীক,আর এই প্রেমের মধ্য দিযেই বান্দার পক্ষে খোদার দিদার লঅভ সম্ভব। সম্ভব এজন্য যে,খোদা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার নিজের আদলে এবং মানুষের অনত্মরাত্মায় স’াপন করেছেন তার জাত ও সিফাত। তার মানে খোদা দূরে নয়;মানুষের মধ্যেই আছেন। অসীম কোধা ও সসীম বান্দার মধ্যে যে দূরত্ব তাই সূফীকে চালিত করে কোদার স্বরূপ উপলবিদ্ধ করার পর্যায়ে। এ পর্যায়ে (ফানা ও বাকা) উপনীত হয়েই মনসুর আল হাল্লাজ ঘোষনা করে দিলেন “আনাল হক্ক”। সূফীবাদ যেমন,বাউলবাদও তেমনি জোর দেয় প্রেমের ওপর। এই প্রেম দেহোত্তীর্ণ ও অতীন্দ্রিয় বটে;কিন’এর সূত্রপাত মানবদেহ থেকেই খোদার পীরিত (ঐশীপ্রেম) উদ্ভুত ও বিকশিত হয় ভাবের পীরিত (দৈহিক প্রেম) থেকেই। বাউল সম্রাট লালন মাঞ (১৭৭৪-১৮৯০) এর মতে,মানুষের এসেন্স বা অনত্মঃসার তার দেহেই নিহিত,এবং মানবাত্মা ও পরমানত্মার মধ্যে কোনো ভেদ নেই। খোদার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে মানুষের দেহেই খুজে পাওয়া যায় পরমস্রস্টাকে কোধাকে,দেহ মন অনত্মরাত্মাকে জরীপ করেই এবং দেহসাধনার মধ্য দিয়েই অনুসন্ধান করতে হয় বিশ্ববিধাতাকে। এ প্রসঙ্গে লালন শাহের বিখ্যাত গানঃ খাচার ভিথর অচিন পাখি কেমনে আসে যায় ধরতে পারলে মন বেড়ী দিতাম তাহার পায়। আঠ কুঠরী নয় দরজা আটা মধ্যে মধ্যে ঝড়কা কাটা,তাহার উপর আছে সদর কোঠা আয়না মহল তায়। মন তুই রইলি খাচার আশে খাচা যে তোর তৈরী কাচা বাশে কোনদিন খাচা পড়বে খসে লালন কয়,খাচা খুলে সে পাখী কোন খানে পালায়। লালনের এই মতের সঙ্গে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতের সাদৃশ্য দেখা যায়। একটু আগে আমরা দেখেছি প্লেটের মতে জড়দেহ আত্মার পিঞ্চার বা কয়েদখানাস্বরূপ। মৃত্যুতে দেহবিনাশের সঙ্গে আত্মার প্রজ্ঞাংশ মুক্ত হয়ে যায় দেহ থেকে এবং ফিরে যায় স্বর্গীয় আদি নিবাসে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও এ মতের প্রতিধ্বনি শোনা যায়;সীমার মাঝে,অসীম,তুমি বাজাও আপন সুর। আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।বস’ত,সৃষ্টির মধ্যেই নিহিত পরমস্রষ্টার সত্তা;সৃষ্টি ব্যতিরেকে স্রষ্টা ব্যতিরেকে সৃষ্টা মহাশুণ্য ছাড়া আর কিছুই নন। মুসলিম সুফিয়া মানুষকে দেখেছেন আল্লাহর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এবংয় বলেছেন মানুষ আল্লাহ থেকে দুরে থাকে শুধু ততক্ষণই,যতক্ষণ তার দৃষ্টি আচ্ছন্ন থাকে অজ্ঞতার অভিশাপ দ্বারা। অজ্ঞার এই আবরণ উম্মোচন করে মানুষ যখনই প্রবেশ করে জ্ঞানের আলোকে,তখনই বিলীন হয়ে যায় সসীম মানুষ ও অসীম স্রষ্টার যাবতীয় ভেদাভেদ এবং তখনই মানুষ নিজেকে শনাক্ত করে পরমস্রষ্টা আল্লাহর অবিচ্ছদ্য অংশ হিসেবে। একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় ফকির লালন শাহের ধ্যান-ধারণা ও কর্মসাধনায়। এ প্রসঙ্গে তাঁর বাণীঃ ক্ষেপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায়? আপন ঘর না ভুজে বাহিরে খুজে পড়বি ধাধায়। অন্যন্য সূফী ও বাউরদের কাছে যেমন লালন শাহের কাছেও তেমনি ধর্ম-বর্ণ গোত্র নয়,মানুষ ই ছিল প্রধ্ন। চন্ডীদাসের সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। মূলত এই বাণী বিঘোষিত অধিকাংশ লালন গীতিতে। এ ধরনেরই একটি গানঃ এমন মাবন আর কি হবে মন যা কারো ত্বরায় কারো এই ভবে। অননত্ম রূপ সৃষ্টি করলেন সাই শুনি মানবের উত্তম কিছুই নাই,দেব দেবতাগন করে অঅরধন জন্ম নিতে মানবে। এই মানুষে হবে মাধুজ্জ ভজন তাইতো মানুষরূপ গটলৈ নিরঞ্জন। এবার ঠকলে অঅর না দেখি কিনার। অধীন লালন তাই ভাবে। লালন পরবর্তী মরমি কবি ও আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে পাঞ্জু শাহ (১৮৫১-১৯১৪) বিশেষ ভাবে পরিচিত। লালনের মৃত্যুর পর তার ভাবশিষ্য হিসেবে পাঞ্জুশাহ এ অঞ্চলের বাউল সূফি ফকির মহলে বিশেস মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। লালন শাহ যেমন পাঞ্জু শাহ ও তেমনি অসীম পরমসত্তাকে খুজে পেতে চান সসীম মানুষের মধ্যে,পরম প্রেমাস্পদকে শনাক্ত করেন আত্মসত্তার মধ্যে,নির্ভেজাল প্রেম ও সাধন-ভজনের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে তার কয়েকটি অনবদ্য উক্তিঃ জগৎ কর্তা পতিত পাবন,এই মানুষে করে বিরাজমান আবার,এই মানুষে সেই মানুষ আছে,সে ঘরের মাঝে ঘর বাধিয়ে কাজল কোঠায় রয়াছে। বৈষ্ণব ও সূফিদের আধ্যাত্মিক সাধনা যেমন পাঞ্জু শাহের সাধনাও তেমনি ছিল প্রেম ভুক্তির সাধনা। দৃষ্টানত্মস্বরূপ,বৈষ্ণব মতে জ্ঞানে নয়,কর্মেও নয়,প্রেমভক্তির মাধ্যমেই কেবল পরমসত্মার সান্নিধ্য অর্জণ সম্ভব। আর এ লক্ষ্য হাসিল করতে হলে ভক্তের উচিত ভগবানের মাধুর্যরূপ প্রত্যক্ষ করা। ভগবানের রূপ সব বস’তে উপসি’ত,আর তাই তার ভারবাসার প্রথম সোপান হিসেবেই ভারবাসতে হবে জগতের সকলকে। পাঞ্জু শাহের অভিমত ও অনুরূপ। তার মতে,জ্ঞানের কথা বলি আর শক্তির কথাই বলি,উভয় দিক থেকেই পরমসত্তা অসীম অপার । ফলে সসীম মানুষের চলতি ইন্দ্রিয় কিংবা সামান্য ভেদবুদ্ধি দিেয় এই অননত্ম অসীম সত্তার নাগাল পাওয়া অসম্ভব। কিন’প্রেমের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেমলীলায় অসীম নিজেই এসে ধরা দেন সসীমকে। পরমস্রষ্টা আল্লাহ তারই সৃষ্ট মানুষের প্রেমাস্পদস্বরূপ;আর এজন্য। তাকে পেতে হয় প্রেমের পথে স্বজ্ঞা বা অপরোক্ষ প্রেমানুভূতির মাধ্যমে এ প্রসঙ্গে পাঞ্জু শাহের বাণীঃ দধূর কর তছবি মালা মন-মালায় ধন মিলে। মনের মানুষ দমে জপে,বসাও হৃদকমলে। বাংলাদেশের লোক কবি ও আধ্যঅত্মিক সাধকদের মধ্যে এরপর যার নাম উল্লেখ্য,তিনি হলেন বৃহত্তম সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের জাতক হাসান রাজা (১৮৫৪-১৯২২)। গ্রাম বাংলার এই অখ্যঅত মনীষীর নাম ও মনীষা প্রথম শিক্ষিত মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মূলত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সৌজন্য ও আশীবাদে। উপলক্ষটা ছিল ১৯২৫ সালে বেনারসে অনুষ্ঠিত ভারতীয় দর্শন কংগ্রেরেসর প্রথম মহাসম্মেলন। ওই সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ যে লিখিত অভিভাষণ পাঠ করেন,তাতে তিনি আনুষ্ঠানিক দর্শন চিনত্মার বাইরেও গ্রাম বাংলায় বাউলবাদ নামে যে তত্ত্বচিনত্মার একটা স্বতন্ত্র লোকজ ধারা প্রচলিত আছে,তার কথা প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেন। উক্ত ভাষনে রবীন্দ্রনাথ ইতিপূর্বে অপরিচিত লোক কবি হাসান রাজার কাব্য সংকলন থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে তার মনীষার প্রশংষার করেন। যাই হোক,লালন ও পাঞ্জু শাহের গানগুলো যেমন হাসান রাজার গানগুলোও তেমনি দার্শনিক তত্ত্ব ও প্রসাদগুণে সমৃদ্ধ;এবং এ দুই পূর্বাচার্যের মতো তিনিও পরমসত্তা ও পরমাত্মার অনুসন্ধানের পাশাপাশি মানবসত্তা অহং আত্মত্ত্ব প্রভৃতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। আমরা জানি বাউল মতে,শেষ বিশ্লেষণে মানবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে কোনো ভেদ নেই যেটুকু ভেদ প্রতীয়মান হয় তা মানুষী অজ্ঞতা বা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে। এ মতেরই চমৎকার প্রতিধ্বনি শুনি হাসান রাজার গানেঃ আপন চিনিলে দেখ খোদা চেনা যায়। হাসান রাজায় আপন চিনিয়ৈ এই গান গায়। কিন’নিজেকে চেনার মাধ্যমে পরমসত্তাকে চেনার এবং তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার লক্ষ্যে অর্জণ সহজ কাজ নয় মোটেই;কারণ পাশ্চাত্য দার্শনিক প্লেটো এবং ফকির লালন শাহসহ অন্যান্য বাউলদের মতো হাসান রাজাও মনে করেন যে,সসীম মানবাত্মা বন্দি হয়ে আছে মানবদেহের পিঞ্জরে এবং এ থেকে মুক্তি পেতে হলে চাই যথার্থ প্রেমানুভুতি,চাই নির্ভেজাল সাধন ভজন। এ প্রসঙ্গে হাসন রাজার আক্ষেপ ঃ- মাটির পিঞ্জিরায় বন্দি হইয়া রে কান্দে হাসান রাজার মন ময়না রে। দেহের বন্ধনমুক্ত হয়ে পরমস্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের যে আকাঙ্খা প্রবলভাবে আন্দোলিত করে সূফি ও বৈষ্ণব মনকে,তা-ও বিশেষভাবে লক্ষণীয় হাসান রাজার গানেঃ আমি যাইমু ও যাইমু আল্লাহর সঙ্গে আল্লাহ বিনা হাসান রাজা কিছু নাহি সঙ্গে। বাউল মতে,মানবাত্মার মধ্যেই রয়েছে পরমাত্মার ঠাই,মানুষের মধ্যেই অনুসৃত আলেক সাই। এর অর্থ দাড়ায় এই যে মানবজীবনের ও মানবজ্ঞানের ভিত্তিতেই ও বিশ্বচরাচরের সবকিছু সত্য। এ মর্মবানীই বিঘোষিত হাসান রাজার গানেঃ মম আখি হইতে পয়দা আসমান জমিন কর্ণতে হইল পয়দা মুসলমানী দ্বীন শরীরে করিল পয়দা শক্ত আর নরম আর পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা ও গরম নাকেতে করিল পয়দা খোশবয় বদবয় আমি হইতে সর্বোৎপত্তি হাসন রাজায় কয়। গানের আপাত অর্থ-বিশ্লেষন থেকে হাসন রাজাকে একজন আতমগত ভাববাদী বলে মনে হতে পারে। ক্তিু প্রকৃতপক্ষে তিনি তা নন। কারণ,তার মতে আত্মসত্তা পরমসত্তার আধার হলেও পরমসত্তার ব্যাপ্তি ও উপসি’ত আত্মসত্তার মদ্যেই সীমিত নয় তিনি পর বলছেন- মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে।
এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজ মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে। এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজ মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে। এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজ মিসছামিছি বলি আমি,সর্বব্যাপী হওরে তুমি সকলই তুমি অনত্মর্যামী,তুমি ভিন্ন কিছু নয়রে। হাসন রাজা নামটি দিয়ে রহিয়াছ ছাপাইয়ে সবই কর পরদা দিযে,দোষের ভাগী হওনারে। এর অর্থঃ সর্বব্যাপী ও অনত্মর্যামী সত্তাই একমাত্র সত্য। সে সতত্তাই বিশ্বকে সৃষ্টি করছে। বস’ত,হাসান াজার সর্বব্যাপী সত্তার ভিত্তিমূলক রয়েছে মানবসত্তা তার ইন্দ্রিয়সৃষ্ট জীবন এবং তার মনন,তার সামগ্রিক জীবন এই মানবিক ভাবধারায় হাসান রাজা সত্যিই অন্যান্য। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় সূফীবাদ,বাউলবাদ,মাইজভান্ডারী,তথা আধ্যাত্মিক মানবিক সাধনার সব স্রোতধারা।
No comments:
Post a Comment