নামঃআল-হাসান
উপাধিঃআল মুজতাবা
ডাক নামঃআবু মোহাম্মাদ
পিতার নামঃআমিরুল মুমিনিন আলী ইবনে আবি তালিব(আঃ)
মায়ের নামঃখাতুনে জান্নাত ফাতিমা যাহরা(সা.আ.)
জন্মঃ ৩য় হিজরীর ১৫ই রমযান,মদীনা শরীফে।
শাহাদাতঃ ৫৩ হিজরীর ২৮শে সফর,জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
ইমাম হাসান ছিলেন হাফিয-ই-কুরান,৪০ বছরের কুরান লেখক,শের-ই-খোদা,ইমাম আলী আর মা ফাতিমা যাহরার ১ম সন্তান।তাঁর জন্মের শুভ সংবাদ পেয়ে তাঁর প্রিয় কন্যার বাড়িতে ছুটে আসেন। খুশীতে আত্নহারা হয়ে তিনি নবজাতককে কোলে তুলে নেন।রাসুল(সাঃ) তাঁর দান কানে আজান ও বাম কানে ইকামাত উচ্চারন করেন এবং তাঁর নাম রাখেন আল- হাসান।
শৈশবকালঃ
ইমাম হাসান তাঁর জীবনের ১ম ৭বছর মহানবীর আদরে সোহাগে কাটিয়ে দেন।মহানবীর হাতেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু।আল্লাহর নবীর অনুপম চরিত্র মাধুরযের ছোঁয়ায় তিনি ধন্য হয়েছেন।মহানবীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ছোঁয়া তাঁর মাঝে এত বেশী প্রভাব বিস্তার করেছিল যে একেবারে শিশু বয়সে তিনি অসাধারন প্রতিভাধর ছিলেন।কথিত আছে মহানবীর কাছে ওহী নাজিল হওয়ার পর তিনি তা অন্য সাহাবীদের পাঠ করে শুনাতেন।শিশু হাসান মুখে শুনে অবিকল সেই ওহী বলে দিতে পারতেন।
একবার হযরত ফাতিমার বাড়িতে মহানবী এসে শুনতে পেলেন মা ফাতিমা কতিপয় আয়াত তেলাওয়াত করছেন।মহানবী এই নতুন আয়াতগুলো এখনো ফাতিমাকে শেখাননি।কিন্তু ফাতিমা এগুলো শিখলেন কি করে এই ভেবে অবাক হয়ে গেলেন তিনি।হযরত ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করাতে তিনি জানালেন যে,শিশুপুত্র হাসানের কাছ থেকে তিনি তা শিখেছেন।
ধামিকতা ও উদারতাঃ
ইমাম হাসান অত্যন্ত ধরমপ্রান ও খোদাভীরু লোক ছিলেন।তিনি এতো বেশী নামাজ পড়তেন যে তাঁর শরীরের সেজদার জায়গাগুলোতে দাগ পড়ে গিয়েছিল।রাতের বেশীর সময় তাঁর আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীতে অতিবাহিত হতো।অনেক সময় দেখ গেছে তিনি আল্লাহর ভয়ে সারারাত ক্রন্দন করছেন।নিষ্পাপ ইমাম হওয়া সত্বেও নিজের কৃ্তকরমের জন্য সবসময় চিন্তিত থাকতেন।বছরের প্রায় সবসময় তিনি রোজা থাকতেন।কমপক্ষে তিনি ২৫ বার পায়ে হেঁটে মদীনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজ্ব পালন করেন।
তিনি খুব বেশী দান খয়রাত করতেন।একবার জনৈক বন্ধু ইমামের অতিরিক্ত দানের ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে ইমাম বলেন,আমি নিজের কোন জিনিস কাউকে দেই না।আল্লাহর দেয়া উপহারগুলো শুধু আমি নিজে তাঁর বান্দাদের কাছে পৌছে দেই।একাজ না করলে আমার ভয় হয় করুনাময় আল্লাহ তাঁর দেয়া উপহারগুলো আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন।
একবার জনৈক মুসাফির ইমামকে খুব গালমন্দ করেছিল।ইমাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং সব শুনতে পাচ্ছিলেন।লোকটা ইমামকে চিনত না।ইমাম এসে মুসাফিরকে তাঁর ঘরে নিয়ে যান এবং যথাসাধ্য আদর আপ্যায়ন করেন।খাওয়া-দাওয়ার পর বিদায় নেবার সময় মুসাফিরকে টাকা পয়সা দিয়েও সাহায্য করেন।মুসাফির তখনো তাঁর পরিচয় জানতে পারেনি,বাইরে এসে লোকজনের মুখে জানতে পেরে খুব লজ্জিত হয়ে পড়েন।ইমামের কাছে পরে এসে ক্ষমা চেয়ে নিজের দোষ স্বীকার করেন।
জ্ঞান ও সাহসিকতাঃ
সকল মুসলিম ঐতিহাসিক ও চিন্তাবিদ এ ব্যাপারে একমত যে ইমাম হাসান অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যাক্তি ছিলেন।পিতা হযরত আলীর পরে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সিক সিয়ে সমসাময়িককালে তিনি ছিলেন সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাক্তিত্ব।বিখ্যাত সাহাবী আবু সালামা থেকে বনিত আছে বিতরকমুলক প্রশ্ন ও জ্ঞানের জটিল সমস্যাবলী সম্পরকে সঠিক সিধ্বান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে ইমাম হাসান তাঁর মহান পিতা হযরত আলীর মতই প্রসিদ্বি অরজন করেন।
ইমাম হাসানের বক্তব্য,বানী ও উপদেশসমুহ বাগ্নীতা,সাহিত্য ও দরশনের বিচারে অনুপম শ্রেষ্টত্বের দাবীদার।এসব আগেকার মানুষের জন্যে যেমন ছিল কল্যানকর তেমনি ভবিষ্যতেও তা জ্ঞান ও কল্যানের উৎস হিসেবে সমাদৃত হবে।
একেবারে ছোটবেলা থেকেই ইমামের সাহস ও স্পষ্টবাদীতার পরিচয় পাওয়া যায়।একবার হযরত আবুবকর খোতবা দেয়ার জন্য মসজিদের মিম্বরে উঠে দাড়িয়েছিলেন।তা দেখে ছোট্ট বালক ইমাম হাসান এগিয়ে গিয়ে আবুবকরকে বলেন, ‘আমার পিতার মিম্বর থেকে নেমে আসুন’।
বড় হয়ে ইমাম মুসলমানদের সাথে বিভিন্ন যুধ্বে অংশগ্রহন করেন।পিতা হযরত আলীর(আঃ) সাথে সকল যুধ্বেই তিনি অংশগ্রহন করেন।তিনি ও তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন(আঃ) জীবনে কখনো যুধ্ব ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসেননি।যুধ্বক্ষেত্রে তাঁদের সহস ও বীরত্ব দেখে সকলেই অবাক হয়ে যেতেন।
তাঁর চরিত্র মাধুরয ছিল অসাধারন।তিনি এত বেশী উদার ও মহানুভব ছিলেন যে ভিক্ষুকদের পাশে বসতেও তিনি কুন্ঠাবোধ করতেননা।গরীব্দের কথা শুনার জন্য,তাদের অভাব অভিযোগ জানার জন্য তিনি মদীনার অলি-গলিতে ঘুরে বেড়াতেন।কেউ কোন সাহায্যের আশায় তাঁর কাছে এলে তিনি ফিরিয়ে দিতেননা।তিনি দুঃখী-অভাবগ্রস্তদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করতেন।
ইমামত
মহান পিতা আমিরুল মু’মিনিন ইমাম আলী(আ;)এর শাহাদাতের পর ইমাম হাসান ২য় ইমাম হিসাবে অভিষিক্ত হন।তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ জনসাধারনই তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।তিনি মুসলিম জাহানের নেতা হিসাবে স্বীকৃ্তি পেলেও সিরিয়ার গভরনর মুয়াবিয়া তাঁর বিরুধ্বে বিদ্রোহ ঘোষনা করে।মুয়াবিয়া ছিলেন উমাইয়া বংশের নেতা।রাজনৈ্তিক কারনে উমাইয়াদের সাথে নবী বংশের সাথে বিরীধ ছিল।
খেলাফত নিয়ে বিরোধ
রাজনৈ্তিক কুটবুধ্বিতে ধুরন্ধর ব্যাক্তি ছিলেন মুয়াবিয়া।খলিফা হযরত উমরের আমলে তিনি সিরিয়ার গভরনর পদ লাভ করেন।খলিফা উসমানের আমলে তাকে সমগ্র মুসলিম জাহানের এক-চতুরথাংশের এলাকার শাসক বানানো হয়।দীরঘকাল গভরনর হিসাবে থেকে মুয়াবিয়া ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠে।তার সৈ্ন্যবল ও অরথবল ছিল প্রচুর।তাছাড়া রাসুলের(সাঃ) সাহাবী ও ধারমিক হিসাবে পরিচয় দিয়ে নিজ শাসনাধীন এলাকায় জনগনের মনও জয় করেন।তার চালচলনে ধারমিকতার ভাব ফুটে উঠলেও আসলে তিনি ধারমিকতার ভান করতেন।
খলিফা উসমান হত্যার বিচারের অজুহাত দেখিয়ে জঙ্গে জামালে হযরত আয়েশার সাথে হযরত আলীর(আঃ) বিরোধকে পুঁজি করে মুয়াবিয়া নিজ এলাকায় আকটি আলী(আ;) বিরোধী জনমত গড়ে তোলার প্রয়াস পান।বাহ্যিকভাবে নিজের মধ্যে শরিয়তি ছাপ বজায় রেখে মুয়াবিয়া সুকৌশলে হযরত আলীর বিরুধ্বে প্রচারনায় লিপ্ত হন,নিরভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের বরননায় পাওয়া যায় তিনি জুময়ার খোতবাতেও হযরত আলীর বিরুধ্বে কুৎসা রটনা করতেন।তাঁর মরযাদাকে খটো করে জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করতেন।
মুয়াবিয়া যেমন হযরত আলীর খেলাফতকে অস্বীকার করেছিলেন তেমনি ইমাম হাসানের খেলাফতকেও অস্বীকার করে মুসলিম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ইমাম হাসানের বিরুধ্বে বিদ্রোহে ইন্ধ্বন যোগাতে থাকেন।বিভিন্ন জায়গায় মুয়াবিয়া বাহিনীর সাথে ইমাম হাসান বাহিনীর কয়েকটি খন্ডযুধ্বও হয়।হযরত আয়েশার সাথে হযরত আলীর যুধ্বের কারনে যে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃশটি হয়েছিল,ইমাম হাসান ও মুয়াবিয়ার মাঝে বিরোধেও ঠিক তেমনি মুসলিম জাতির মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।জনসাধারন ইমাম হাসানের যোগ্যতা ও মরযাদা মেনে নিয়ে ছিলেন তেমনি মুয়াবিয়াকেও অস্বীকার করতে পারেনি।কারন মুয়াবিয়া ধরমের মুখোশ পড়ে রাজনৈ্তিক খেলাতে অত্যন্ত পারদরশী ছিলেন।তিনি সাধারন জনগনকে বুঝতে দেননি যে ধরমবিরোধী কোন কাজ করছেন।মুয়াবিয়া নবী বংশকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি সেনাবাহিনীকে সুসংগঠিত করেন।লোভ ও ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন গোত্রপতিকে ও সেনাপতিকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেন এবং ইমাম হাসানের বিরুধ্বে যুধ্ব করার জন্য প্রস্তুত হন।
অপর দিকে ইমাম হাসানের বাহিনীতে মিশ্র প্রকৃ্তির লোক ছিল বেশী।অনেক খারেজী তাঁর বাহিনীতে ঢুকে পড়েছিল।আবার অনেকে যুধ্বের ফলাফল নিয়ে সন্দেহগ্রস্থ ছিল।একনিষ্ট আনুগত্যের সাথে যুধ্ব করার লোক খুব কমই ছিল।তাছাড়া মুসলিম জাতির রাজনৈ্তিক কোন্দলের খবর পারশ্ববরতী রাজ্যপগুলোর অজানা ছিল না।বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে শক্তিশালী রোমান সাম্রজ্যের এবং বিদ্রোহী খারেজীদের আক্রমনের সমুহ সম্ভাবনা ছিল।
উপাধিঃআল মুজতাবা
ডাক নামঃআবু মোহাম্মাদ
পিতার নামঃআমিরুল মুমিনিন আলী ইবনে আবি তালিব(আঃ)
মায়ের নামঃখাতুনে জান্নাত ফাতিমা যাহরা(সা.আ.)
জন্মঃ ৩য় হিজরীর ১৫ই রমযান,মদীনা শরীফে।
শাহাদাতঃ ৫৩ হিজরীর ২৮শে সফর,জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
ইমাম হাসান ছিলেন হাফিয-ই-কুরান,৪০ বছরের কুরান লেখক,শের-ই-খোদা,ইমাম আলী আর মা ফাতিমা যাহরার ১ম সন্তান।তাঁর জন্মের শুভ সংবাদ পেয়ে তাঁর প্রিয় কন্যার বাড়িতে ছুটে আসেন। খুশীতে আত্নহারা হয়ে তিনি নবজাতককে কোলে তুলে নেন।রাসুল(সাঃ) তাঁর দান কানে আজান ও বাম কানে ইকামাত উচ্চারন করেন এবং তাঁর নাম রাখেন আল- হাসান।
শৈশবকালঃ
ইমাম হাসান তাঁর জীবনের ১ম ৭বছর মহানবীর আদরে সোহাগে কাটিয়ে দেন।মহানবীর হাতেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু।আল্লাহর নবীর অনুপম চরিত্র মাধুরযের ছোঁয়ায় তিনি ধন্য হয়েছেন।মহানবীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ছোঁয়া তাঁর মাঝে এত বেশী প্রভাব বিস্তার করেছিল যে একেবারে শিশু বয়সে তিনি অসাধারন প্রতিভাধর ছিলেন।কথিত আছে মহানবীর কাছে ওহী নাজিল হওয়ার পর তিনি তা অন্য সাহাবীদের পাঠ করে শুনাতেন।শিশু হাসান মুখে শুনে অবিকল সেই ওহী বলে দিতে পারতেন।
একবার হযরত ফাতিমার বাড়িতে মহানবী এসে শুনতে পেলেন মা ফাতিমা কতিপয় আয়াত তেলাওয়াত করছেন।মহানবী এই নতুন আয়াতগুলো এখনো ফাতিমাকে শেখাননি।কিন্তু ফাতিমা এগুলো শিখলেন কি করে এই ভেবে অবাক হয়ে গেলেন তিনি।হযরত ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করাতে তিনি জানালেন যে,শিশুপুত্র হাসানের কাছ থেকে তিনি তা শিখেছেন।
ধামিকতা ও উদারতাঃ
ইমাম হাসান অত্যন্ত ধরমপ্রান ও খোদাভীরু লোক ছিলেন।তিনি এতো বেশী নামাজ পড়তেন যে তাঁর শরীরের সেজদার জায়গাগুলোতে দাগ পড়ে গিয়েছিল।রাতের বেশীর সময় তাঁর আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীতে অতিবাহিত হতো।অনেক সময় দেখ গেছে তিনি আল্লাহর ভয়ে সারারাত ক্রন্দন করছেন।নিষ্পাপ ইমাম হওয়া সত্বেও নিজের কৃ্তকরমের জন্য সবসময় চিন্তিত থাকতেন।বছরের প্রায় সবসময় তিনি রোজা থাকতেন।কমপক্ষে তিনি ২৫ বার পায়ে হেঁটে মদীনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজ্ব পালন করেন।
তিনি খুব বেশী দান খয়রাত করতেন।একবার জনৈক বন্ধু ইমামের অতিরিক্ত দানের ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে ইমাম বলেন,আমি নিজের কোন জিনিস কাউকে দেই না।আল্লাহর দেয়া উপহারগুলো শুধু আমি নিজে তাঁর বান্দাদের কাছে পৌছে দেই।একাজ না করলে আমার ভয় হয় করুনাময় আল্লাহ তাঁর দেয়া উপহারগুলো আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন।
একবার জনৈক মুসাফির ইমামকে খুব গালমন্দ করেছিল।ইমাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং সব শুনতে পাচ্ছিলেন।লোকটা ইমামকে চিনত না।ইমাম এসে মুসাফিরকে তাঁর ঘরে নিয়ে যান এবং যথাসাধ্য আদর আপ্যায়ন করেন।খাওয়া-দাওয়ার পর বিদায় নেবার সময় মুসাফিরকে টাকা পয়সা দিয়েও সাহায্য করেন।মুসাফির তখনো তাঁর পরিচয় জানতে পারেনি,বাইরে এসে লোকজনের মুখে জানতে পেরে খুব লজ্জিত হয়ে পড়েন।ইমামের কাছে পরে এসে ক্ষমা চেয়ে নিজের দোষ স্বীকার করেন।
জ্ঞান ও সাহসিকতাঃ
সকল মুসলিম ঐতিহাসিক ও চিন্তাবিদ এ ব্যাপারে একমত যে ইমাম হাসান অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যাক্তি ছিলেন।পিতা হযরত আলীর পরে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সিক সিয়ে সমসাময়িককালে তিনি ছিলেন সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাক্তিত্ব।বিখ্যাত সাহাবী আবু সালামা থেকে বনিত আছে বিতরকমুলক প্রশ্ন ও জ্ঞানের জটিল সমস্যাবলী সম্পরকে সঠিক সিধ্বান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে ইমাম হাসান তাঁর মহান পিতা হযরত আলীর মতই প্রসিদ্বি অরজন করেন।
ইমাম হাসানের বক্তব্য,বানী ও উপদেশসমুহ বাগ্নীতা,সাহিত্য ও দরশনের বিচারে অনুপম শ্রেষ্টত্বের দাবীদার।এসব আগেকার মানুষের জন্যে যেমন ছিল কল্যানকর তেমনি ভবিষ্যতেও তা জ্ঞান ও কল্যানের উৎস হিসেবে সমাদৃত হবে।
একেবারে ছোটবেলা থেকেই ইমামের সাহস ও স্পষ্টবাদীতার পরিচয় পাওয়া যায়।একবার হযরত আবুবকর খোতবা দেয়ার জন্য মসজিদের মিম্বরে উঠে দাড়িয়েছিলেন।তা দেখে ছোট্ট বালক ইমাম হাসান এগিয়ে গিয়ে আবুবকরকে বলেন, ‘আমার পিতার মিম্বর থেকে নেমে আসুন’।
বড় হয়ে ইমাম মুসলমানদের সাথে বিভিন্ন যুধ্বে অংশগ্রহন করেন।পিতা হযরত আলীর(আঃ) সাথে সকল যুধ্বেই তিনি অংশগ্রহন করেন।তিনি ও তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন(আঃ) জীবনে কখনো যুধ্ব ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসেননি।যুধ্বক্ষেত্রে তাঁদের সহস ও বীরত্ব দেখে সকলেই অবাক হয়ে যেতেন।
তাঁর চরিত্র মাধুরয ছিল অসাধারন।তিনি এত বেশী উদার ও মহানুভব ছিলেন যে ভিক্ষুকদের পাশে বসতেও তিনি কুন্ঠাবোধ করতেননা।গরীব্দের কথা শুনার জন্য,তাদের অভাব অভিযোগ জানার জন্য তিনি মদীনার অলি-গলিতে ঘুরে বেড়াতেন।কেউ কোন সাহায্যের আশায় তাঁর কাছে এলে তিনি ফিরিয়ে দিতেননা।তিনি দুঃখী-অভাবগ্রস্তদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করতেন।
ইমামত
মহান পিতা আমিরুল মু’মিনিন ইমাম আলী(আ;)এর শাহাদাতের পর ইমাম হাসান ২য় ইমাম হিসাবে অভিষিক্ত হন।তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ জনসাধারনই তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।তিনি মুসলিম জাহানের নেতা হিসাবে স্বীকৃ্তি পেলেও সিরিয়ার গভরনর মুয়াবিয়া তাঁর বিরুধ্বে বিদ্রোহ ঘোষনা করে।মুয়াবিয়া ছিলেন উমাইয়া বংশের নেতা।রাজনৈ্তিক কারনে উমাইয়াদের সাথে নবী বংশের সাথে বিরীধ ছিল।
খেলাফত নিয়ে বিরোধ
রাজনৈ্তিক কুটবুধ্বিতে ধুরন্ধর ব্যাক্তি ছিলেন মুয়াবিয়া।খলিফা হযরত উমরের আমলে তিনি সিরিয়ার গভরনর পদ লাভ করেন।খলিফা উসমানের আমলে তাকে সমগ্র মুসলিম জাহানের এক-চতুরথাংশের এলাকার শাসক বানানো হয়।দীরঘকাল গভরনর হিসাবে থেকে মুয়াবিয়া ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠে।তার সৈ্ন্যবল ও অরথবল ছিল প্রচুর।তাছাড়া রাসুলের(সাঃ) সাহাবী ও ধারমিক হিসাবে পরিচয় দিয়ে নিজ শাসনাধীন এলাকায় জনগনের মনও জয় করেন।তার চালচলনে ধারমিকতার ভাব ফুটে উঠলেও আসলে তিনি ধারমিকতার ভান করতেন।
খলিফা উসমান হত্যার বিচারের অজুহাত দেখিয়ে জঙ্গে জামালে হযরত আয়েশার সাথে হযরত আলীর(আঃ) বিরোধকে পুঁজি করে মুয়াবিয়া নিজ এলাকায় আকটি আলী(আ;) বিরোধী জনমত গড়ে তোলার প্রয়াস পান।বাহ্যিকভাবে নিজের মধ্যে শরিয়তি ছাপ বজায় রেখে মুয়াবিয়া সুকৌশলে হযরত আলীর বিরুধ্বে প্রচারনায় লিপ্ত হন,নিরভরযোগ্য ঐতিহাসিকদের বরননায় পাওয়া যায় তিনি জুময়ার খোতবাতেও হযরত আলীর বিরুধ্বে কুৎসা রটনা করতেন।তাঁর মরযাদাকে খটো করে জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করতেন।
মুয়াবিয়া যেমন হযরত আলীর খেলাফতকে অস্বীকার করেছিলেন তেমনি ইমাম হাসানের খেলাফতকেও অস্বীকার করে মুসলিম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ইমাম হাসানের বিরুধ্বে বিদ্রোহে ইন্ধ্বন যোগাতে থাকেন।বিভিন্ন জায়গায় মুয়াবিয়া বাহিনীর সাথে ইমাম হাসান বাহিনীর কয়েকটি খন্ডযুধ্বও হয়।হযরত আয়েশার সাথে হযরত আলীর যুধ্বের কারনে যে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃশটি হয়েছিল,ইমাম হাসান ও মুয়াবিয়ার মাঝে বিরোধেও ঠিক তেমনি মুসলিম জাতির মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।জনসাধারন ইমাম হাসানের যোগ্যতা ও মরযাদা মেনে নিয়ে ছিলেন তেমনি মুয়াবিয়াকেও অস্বীকার করতে পারেনি।কারন মুয়াবিয়া ধরমের মুখোশ পড়ে রাজনৈ্তিক খেলাতে অত্যন্ত পারদরশী ছিলেন।তিনি সাধারন জনগনকে বুঝতে দেননি যে ধরমবিরোধী কোন কাজ করছেন।মুয়াবিয়া নবী বংশকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি সেনাবাহিনীকে সুসংগঠিত করেন।লোভ ও ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন গোত্রপতিকে ও সেনাপতিকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেন এবং ইমাম হাসানের বিরুধ্বে যুধ্ব করার জন্য প্রস্তুত হন।
অপর দিকে ইমাম হাসানের বাহিনীতে মিশ্র প্রকৃ্তির লোক ছিল বেশী।অনেক খারেজী তাঁর বাহিনীতে ঢুকে পড়েছিল।আবার অনেকে যুধ্বের ফলাফল নিয়ে সন্দেহগ্রস্থ ছিল।একনিষ্ট আনুগত্যের সাথে যুধ্ব করার লোক খুব কমই ছিল।তাছাড়া মুসলিম জাতির রাজনৈ্তিক কোন্দলের খবর পারশ্ববরতী রাজ্যপগুলোর অজানা ছিল না।বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে শক্তিশালী রোমান সাম্রজ্যের এবং বিদ্রোহী খারেজীদের আক্রমনের সমুহ সম্ভাবনা ছিল।
No comments:
Post a Comment